রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিলেন? সত্য জানুন।।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা
করেছিলেন? মুফতী ফয়জুল করীমের ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় সে
বলছে।

(এখানে
ক্লিক করুরন
)‘হেন্দুরা’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধীতা করেছিল কারণ মুসলমান
ছেলেরা লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত হোক এটা ‘হেন্দুরা’ চায়নি। তাই রবীন্দ্রনাথ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়ার সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন…।

আসলইতিহাস বলার আগে খানিকটা কথা না বললেই নয়। ফয়জুল করীমের মত সোজাসাপ্টা
ইসলামপন্থি নেতাদের দোষ খুব কম।
মুসলমান পরিচয়ে দেশভাগ করেছিল যে
‘প্রগতিশীল মুসলমান বাঙালীরা’- তারাই সুযোগ পেলে রবীন্দ্রনাথকে
সাম্প্রদায়িক প্রমাণ করতে চেয়েছে সব সময়। ফয়জুল করীম বাংলা সাহিত্যের ধার
ধারেন না। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিলেন- এরকম ইতিহাস জানার সুযোগ তার নেই। এই ইতিহাস
যারা সৃষ্টি করেছে তারাই ৪৭ সালে দেশভাগ করেছিল। লাহোর প্রস্তাব অর্থ্যাৎ
হিন্দুদের খেদিয়ে শুধু মুসলমানদের নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবী যারা
করেছিল তারা কেউ মোল্লা-মুন্সি ছিল না। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সাহেবকে তো
আর মুফতী ফয়জুল করীমের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না- তাই না? এটা তো কেউ
অস্বীকার করতে পারবে না- পূর্ববঙ্গকে খাৎনা যারা করেছিলেন তারা কেউই
পীর-মাশায়েক মুফতি-মাওলানা ছিলেন না।

এবার আসুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা
রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন কিনা জানা যাক। ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে কোলকাতার গড়ের মাঠে একটা সমাবেশ
অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দাবী করা হয় রবীন্দ্রনাথ সেই সভার সভাপতিত্ব করেছিলেন!
দেখা যাক প্রমাণপত্র কি বলে। প্রথমে জানতে হবে ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ
রবীন্দ্রনাথ কোথায় ছিলেন। এর দালিলিক প্রমাণই বলে দিবে আসলেই রবীন্দ্রনাথ
সেদিন কোলকাতায় উপস্থিত ছিলেন কিনা। দেখা যাচ্ছে ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখনকার পূর্ববঙ্গের আজকের বাংলাদেশের শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে
অবস্থান করছিলেন! রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা চিঠিতে তারিখ দেখা যাচ্ছে ১৯১২
সালের ২৮ মার্চ তিনি শিলাইদহ বসে চিঠি লিখেছেন শান্তিনিকেতনের
ব্রহ্মচর্যাশ্রমের শিক্ষক জগাদন্দ রায়কে। চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ নিজেকে অসুস্থ
বলে দাবী করেছিলেন। আরো কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথ পুত্র ও
পুত্রবধূসমেত যে ২৪ মার্চ ১৯১২ সালে শিলাইদহের উদ্দেশ্যে কোলকাতা ছেড়েছিলেন
তা ঠাকুরবাড়ির ক্যাশ বইয়ের ভাউচারের কপি রয়ে গেছে। এ বিষয়ে Kuloda Roy লিখেছেন।(কুলদা রায়ের) লেখাটি পড়তে চাইলে-

এখানে ক্লিক করুরন

রবীন্দ্রনাথের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল ইতিহাসের অংশ। তাই
পাকিস্তান সৃষ্টির কুশিলব ‘বাঙালী মুসলমান প্রগতিশীলরা’ রবীন্দ্রনাথকে
সাম্প্রদায়িক চিহিৃত করতে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো তার বিপক্ষে চাক্ষুস
প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু নিজেদের তৈরি ইতিহাসের সপক্ষে আজতক কোন প্রমাণ তারা
দাখিল করতে পারেনি। সবশেষে দুটো কথা বলতে চাই। তিক্ত সত্য কেউই মেনে নিতে
চায় না। মুফতি ফয়জুল করীম যেভাবে বঙ্গের মুসলমানদের হযরত ওমের বংশধর,
শাহজালালের বংশধর বলে ‘হেন্দুদের’ থেকে পৃথক করেছেন সেটা মুফতি সাহেবের
জিহাদী মেজাজটুকু বাদ দিলে সলিমুল্লাহ খান, শামসুজ্জামান খানদের সঙ্গে
দুরত্ব খুব বেশি নয়। দেখান তো, গুটিকয়েক ‘সামাজ্যবাদীদের দালাল, ইসলাম
বিদ্বেষী ইয়াহুদি চক্রের এজেন্ট নাস্তেক’ ছাড়া আর কোন প্রতিবাদ হয়েছে? ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় সুশান্ত পালকে নিয়ে যে নাচনকুর্দনটা হয়েছিল- এখন সেটা কোথায়
গেলো?