স্কুলের পিকনিকে হিন্দু ছাত্রদের গরুর মাংস খাওয়ানো হয়েছিলো। আপত্তি করায় হেড মাস্টার অকপট বলেছিলো, একদিন গরুর মাংস খেলে কিছু হয় না… গরুর মাংস না খেলে পিকনিকে আসিস কেন?…
হিন্দুদের প্রসাদে কোন রকম মাংসই থাকে না। এগুলো বানানো হয় চাল ডাল আর সবজি দিয়ে। শুকোর কিংবা কাছিমের মাংস দিয়ে প্রসাদ বানিয়ে মুসলিমদের খাওয়ানো হলে ভারত নেপালের মত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেই মুসলিমরা রক্তের বন্যা বইয়ে দিবে। বাংলাদেশের মত দেশে এরকম ঘটনা ঘটলে হিন্দুদের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হবে। হিন্দুরা এগুলো বংশ পরম্পরায় জানে। হিন্দুদের প্রসাদ খেলে মুসলিমরা হিন্দু হয়ে যাবে না। উল্টো সুলতানী আমল/মুঘর আমলে মুসলিম শাসকদের হাতে সম্ভ্রান্ত্র হিন্দুদের জোর করে গরুর মাংস খাইয়ে ‘জাত মেরে’ হিন্দু সমাজ চ্যুত করে তাদের মুসলিম বানানোর ঘটনা ঘটত। এসব ঘটনায় এতখানি সামাজিক অভিঘাত লেগেছিলো যে পরবর্তীকালে প্রবাদ গড়ে উঠেছিলো, ‘পড়েছি মুঘলের হাতে, খানা খেতে হবে একসাথে’। এই প্রবাদের জড়িয়ে আছে মুঘলদের খাবারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করা ছিলো বিরাট অপরাধ। ব্রাহ্মণ হিন্দুদের পাতে গরুর মাংস দিয়ে তাদের ‘জাত মেরে’ মুসলিম করাই ছিলো উদ্দেশ্য। হিন্দুদের জাতপাতময় কুৎর্সিত সমাজ এই ‘জাতমারা’ কর্মসূচীবে সফল করতে সুযোগ করে দিয়েছিলো। মুসলিমদের ধর্মীয়ভাবে ভিন্ন ধর্মীয়দের তৈরি খাবার খাওয়া নিষেধ নয়। তবে ধর্মীয় দেবদেবীদের সামনে উৎসর্গ করা খাবার খাওয়া তাদের জন্য বারণ। হিন্দুদের প্রসাদ খাওয়া যে হারাম এটা সব মুসলিম বাচ্চাদের পারিবারিকভাবে শেখানো হয়। সেই প্রসাদ মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীরা ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ মন্ত্র জপতে জপতে গ্রহণ করবে- এরকম হাস্যকর নাটক যতই অবিশ্বাসযোগ্য হোক হিন্দুদের উপর আরেকটা রামু-নাসিরনগর চাপানোর সুযোগ কোন ঈমানদার মুসলিম ছাড়তে চাইবে না। তাই ঘটনা রটিয়ে ছড়িয়ে পড়তে দেরী লাগেনি। এসব ঠুংক অভিযোগ ভাইরাল করতে মুসলিমরা ঈমানী দায়িত্ব নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে। বাংলাদেশের মত সাম্প্রদায়িক মুসলিম দেশে ইসকনের সাহস হবে মুসলিম বাচ্চাদের প্রসাদ খাওয়াবে ‘হরে কৃষ্ণ’ বলিয়ে? ইসকন আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী ধর্মীয় সংগঠন না হলে এতক্ষণে চট্টগ্রামে ইসকন মন্দিরে হামলা ভাংচুর চালানো হত। হাটহাজারী মাদ্রাসা ইসকনের প্রসাদ বিতরণ কার্যক্রমকে কাজে লাগিয়ে বড় রকমের শো-ডাউন করতে চাইছে যাতে চট্টগ্রামের হিন্দুরা নিশ্চিত করেই নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করে। এই নিরাপত্তাহীনতা হিন্দুদের পলায়ণপর মনোভাব থেকে দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত আসবে- এটা মোল্লারা জানে। বাংলাদেশকে ১০০ ভাগ মুসলিম দেশ বানানোর জন্য কখনো নাসির নগর, কখনো রামু, কখনো মালোপাড়া, কখনো শ্যামলকান্ত্রি ঘটিয়ে ভীতি ছড়িয়ে দিতে হবে…।
যে স্কুলে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম নিয়ে প্রসাদ খাওয়ার অভিযোগ উঠিয়েছে মুসলিমরা, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলম ফেইসবুকে পোস্ট লিখে জানিয়েছেন পুরো ঘটনাকে মিথ্যাভাবে রটানো হয়েছে। স্কুলে কেবলমাত্র হিন্দু স্টুডেন্টদের আলাদাভাবে প্রসাদ খাওয়ানো হয়েছিলো। যদিও স্কুলের বার্ষিক মিলাদের জিলাপী হিন্দু শিক্ষার্থীদের মাঝেও বিলানো হয়। এসব নিয়ে কোনদিন কথা উঠেনি। গরুর মাংস খাওয়ানোর পর এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ঠ হবার প্রশ্ন কেউ তুলেনি। কিন্তু হাটহাজারীর ঘটনা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হবার পর হিন্দুদের প্রতি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠদের হিংসাক্ত মনোভঙ্গি ঘটনাকে দ্রুত কোথায় নিয়ে যাবে এখনি বলা মুশকিল। বলা হচ্ছে, এদেশের হিন্দুরা ধর্মভীরু শান্তশিষ্ঠ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগিয়ে বড় রকমের সাম্প্রদায়িক অশান্তি লাগানোর তালে আছে। ভারতের মুসলিমদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলানো হচ্ছে, এদিকে বাংলাদেশে মুসলিমদের ‘হরে কৃষ্ণ’ বলিয়ে প্রসাদ খাওয়ানো হচ্ছে- দুটো জিনিস পাশাপাশি ধরে হাটহাজারীর ‘মুসলিম ছাত্র জনতা ঐক্য পরিষদ’ নামে আহমদ শফীর মাদ্রাসার ছাত্ররা বড় রকমের সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি করতে চাইছে। আমরা এর আগে দেখেছি কাবার উপর শীবের ছবি বসানোর অভিযোগ একজন ঈমানদার মুসলিমের কাজ প্রমাণিত হবার পরও আইন সেই ঈমানদার মুসলিমকে ছুয়োও দেখেনি। উল্টো পাবলিক আক্রশ থামাতে হিন্দু রসরাজকেই জেলে আটকে রাখা হয়েছিলো।
ভারতে মুসলিমদের ধরে ধরে জয় শ্রীরাম বলানো হচ্ছে- এরকম শোরগোল ভারতীয় মুসলিম ও বামপন্থিরা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মুসলিম ভারতে যায় চিকিৎসা করতে, ভ্রমণ করতে, ব্যবসা করতে। পলিট্রিক্যাল কারণে ভারতের বিরোধীদলগুলো এবং তাদের অনলাইন এক্টিভিস্টরা ভারতে মুসলিমদের মারতে মারতে জয় শ্রীরাম বলানোর ঘটনা এমনভাবে প্রচার করছে যেন ভারত এক ভীতিকর দেশ যেখানে মুসলিমদের কোন রকম নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশীদের ভারত অভিজ্ঞতা বলতে গেলে ডালভাত। রোজ এত মানুষ ভারত ভ্রমণ করে আসছে তাদের প্রত্যেকে ভারতের রেস্টুরেন্টে গরুর মাংস খেয়ে আসছে। ভারতে যারা অবস্থান করছে তারাও জানে জয় শ্রীরাম বলিয়ে মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনাগুলো ফুলেফেপে ফানুসের মত সাজিয়েছে রাজনৈতিক কারণ থেকে। দুপারেই এইসব রটনা অতিরঞ্জন আর বানোয়াট ঘটনাগুলোর ফয়দা তুলছে সাম্রাজ্যবাদী মুসলিম জাতীয়তাবাদী মুসলিমরা। হাটহাজারীর ঘটনা একটা বার্তা দিচ্ছে। আগে কাবার উপরে শিবের ছবি দিয়ে, নয়ত কুরআন নিজেরা পুড়িয়ে হিন্দুদের উপর দোষ চাপিয়ে বুঝানো হত ইসলামকে হিন্দুরা অপমান করছে তাই এদের উপর প্রতিশোধ নিতে হবে। হাটহাজারীর ঘটনা সাজানো হয়েছে ‘হিন্দুত্ববাদ’ দিয়ে। কালের কন্ঠ লিখেছে ‘হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন’ উল্লেখ করে। যারা কিনা মুসলিমদের হরে কৃষ্ণ বলিয়ে প্রসাদ খাইয়ে মুসলিমদের ইমান-আকিদা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। স্পষ্ট এখানে ইসলামের উপর হিন্দুত্ববাদ চাপানো হচ্ছে দেখানোর চেষ্টা চলছে। ইসকন যেহেতু পাশ্চত্যের সাহেবদের হিন্দু বানাচ্ছে- কাজেই এদেশের মুসলিমদের হিন্দু বানানোর ষড়যন্ত্রে হিন্দুরা লিপ্ত- এরকম একটি হিউমার ছড়াতে পারলে হিন্দুদের দেশভাগের গ্রাফটা এক লাফে কোথায় যাবে ভেবে দেখেছেন?