মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালালে এদেশে তার কোন বিচার হয় না। কিন্তু সেটা থামাতে ফেইসবুকে পোস্ট লিখলে পোস্টদাতাকেই ‘সাম্প্রদায়িক উশকানির’ অভিযোগ ৫৭ ধারায় মামলা হয়। দেশে দেশে ব্লাসফেমি পাস করাই হয় এ জন্য। এটা মুষলমানদের দেশ। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠরা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সমতলে হিন্দু-বৌদ্ধের উপর, পাহাড়ে আদিবাসীদের উপর হামলা করবে, কিন্তু এ জন্য হামলার উশকানিদাতাদের কিছুই হবে না। উল্টো গণভবনে চায়ের দাওয়াত পাবে তাদের কেউ কেউ। আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় লেখক ইমতিয়াজ মাহমুদকে (Imtiaz Mahmood) ৫৭ ধারায় মামলা দেয়া হয়েছে কারণ তিনি পাহাড়ে সেটেলার বাঙালী মুষলমানদের হামলা লুটপাটের বিষয়টি সবার নজরে এনেছিলেন। বড় ধরণের ক্ষতি আর বিপর্যয় থেকে রেহাই পাওয়া উদ্দেশ্যেই তিনি সবাইকে সজাগ করতে চেয়েছেন। অতিতে বড় ধরণের সাম্প্রদায়িক হামলা আক্রমণের চক্রান্তকে এক্টিভিস্টরা লেখালেখি করে আগেভাবে সবাইকে সজাগ করে থামিয়ে দিয়েছে। এটাই ৫৭ ধারার জন্মদাতাদের গাত্রদাহের অন্যতম কারণ। পাহাড়ে জাতিগত বিদ্বেষ নিপীড়নের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়াচ্ছে তারা সবাই ৫৭ ধারার চোখে তাই অপরাধী। যারা সারাদেশে ধর্মীয় সম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে, সরকারী দলের হিন্দু সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে কথা বলছে- তারা সকলেই ৫৭ ধারার চোখে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ছড়াচ্ছে…।
৫৭ ধারা কোন ফ্যাক্ট নয়। ফ্যাক্ট হচ্ছে ব্লাসফেমি মানসিকতার। বঙ্গবন্ধুর কথিত ছবি বিকৃতির অভিযোগে ৫৭ ধারাতে মামলা হয়নি শুনেছি। তবু একজন ইউএনও গ্রেফতার হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ছবি ঠিক মত আঁকতে না পারলে ভবিষ্যতে কারুর ফাঁসিও হয়ে যেতে পারে! কারণ সবাই বলছে ইউএনও সাহেব একটি শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর যে ছবিটি নিমন্ত্রণপত্রে ছেপেছেন সেখানে বঙ্গবন্ধুকে ‘বিকৃত’ করা হয়নি। তাহলে কি সত্যিই ছবিটাতে ‘বিকৃতি’ বলতে কিছু পাওয়া যেতো তখন ইউএনও সাহেবকে জেলের ঘানি টানতে হতো? বঙ্গবন্ধুর ছবি যেহেতু মারাত্মক একটি বিষয় তাই শিশুদের এটি আঁকতে বারণ করাই শ্রেয়। আরো জরুরী বিষয় হচ্ছে- দ্রুত বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকার উপর আওয়ামী লীগের নিজস্ব শরীয়ত অনুযায়ী বিধিবিধান ঠিক করে দেয়া শিল্পীদের জন্য। নইলে ছবি এঁকে জেলে যাবার ঘটনা সামনে ঘটতে শুরু করবে এবং সেটা ৫৭ ধারাতেই…।
৫৭ ধারাকে চকচকে ধারালো করেছেন শেখ হাসিনা। আইনের এই ধারটি দিয়ে এখন ইসলাম, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনাকে রক্ষা করা হচ্ছে। ব্লাসফেমি চিরকালই সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কারণ এটি দ্বারা তারা নাস্তিক, ভিন্নমতালম্বী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, রাজনৈতিক সংখ্যালঘুদের সাইজ করতে ব্যবহার করে থাকে। আওয়ামী লীগ যখন রাজনৈতিকভাবে সংখ্যালঘু হয়ে যাবে তখন ৫৭ ধারার এই ধারালো অংশটি দিয়েই তাদের উপর সবচেয়ে ভাল করে ব্যবহার করা হবে।
লেখক, পাঠক