ফ্রান্সের ৭ জন খেলোয়ার আফ্রিকান কালো মুসলমান, তাই ফ্রান্সকে সমর্থন করছেন আপনি। এরপর অবশ্যই আপনাকে ‘কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসী’ ‘মুসলমান জঙ্গি’ এই পরিচয়গুলোকে ঠিকঠাক গিলতে হবে কিন্তু!
এটা অবশ্যই পশ্চিমা সেক্যুলারিজমের বিজয়। ফ্রান্স মানুষের ধর্মীয় পরিচয়, গায়ের রং, জাতীয়তা কিছুই দেখেনি। উন্নত জীবন পেতে ফ্রান্সে আসা এইসব মানুষদের ফরাসীরা আশ্রয় দিয়ে নিজেদের সমমানের নাগরিত্ব দিয়ে সন্মানিত করেছে। ভবিষ্যতে তাদের মধ্যেই হয়ত কেউ ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীও হতে পারে। কোন আরব রাষ্ট্র কিন্তু অনারব অমুসলমানকে নাগরিত্ব দিবে না। কোন ইসলামী রাষ্ট্র কিন্তু বিধর্মীকে তাদের রাষ্ট্র প্রধান করবে না। আপনি যখন কোন অমুসলিম দেশে একজন মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান, খেলোয়ার, অভিনেতা, গায়ক, বিজ্ঞানী হলে গর্ব প্রকাশ করেন তখন আপনি আয়োডিনের ঘাড়তির জন্য বুঝতে পারেন না আপনার মুসলিম ভাইটি ঐ তথাকথিত অমুসলিম দেশে রাষ্ট্র প্রধান, নেতা, খেলোয়ার হতে পেরেছে কারণ আপনার ভাষায় ‘কাফেররা’ চেয়েছে বলেই। ঐ অমুসলিমরা সুযোগ দিয়েছে বলেই। তারা ধর্মের বিচার করেনি। মানুষ হিসেবে যোগ্যকে মূল্যায়ন করেছে। বীরকে ধর্মীয় পরিচয়ে খর্ব করে রাখেনি। এটি কেবল মাত্র সেক্যুলারিজমেই সম্ভব। আপনার ইসলামি রাষ্ট্রে বিধর্মীকে এই সুযোগ দিবে না। তারা হবে মুসলিমদের জিন্মি অর্থ্যাৎ দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আপনার নুন্যতম বিচারবোধ থাকলেই আপনি বুঝতে পারবেন কেমন রাষ্ট্র ব্যবস্থা মানুষকে ধর্মীয় জাতিগত বৈষম্য থেকে রেহাই দিতে পারে।
ফ্রান্সে ইসলামী জঙ্গি হামলার পর যে সব বামাতীরা জঙ্গিদের ধর্মীয় পরিচয় যারা সামনে এনেছিল তাদের ‘মুসলিম বিদ্বেষী’ বলেছিলো। সেইসব ভারতীয় ও বাংলাদেশী বামাতীদেরই দেখছি ফ্রান্স দলে ৭ জন ‘মুসলিম খেলোয়ার’ উল্লেখ্য করে ফ্রান্সকে সমর্থন জানাচ্ছে!
থলের বিড়াল এক সময় না এক সময় বেরিয়ে পড়বেই। পশ্চিমাদের উপর ইসলামি জঙ্গিদের সন্ত্রাসের আগুনে বামাতীদের মনের খুশি চাপা থাকে না। এ কারণেই বামাতীদের ফেইসবুক পেইজ আইডির সঙ্গে এখন আর ইসলামী গ্রুপগুলোর পেইজগুলোর তফাত করা যায় না। একই রকম করে এরা ফিলিস্তিন, ট্রাম্প, বিশ্বকাপ ফুটবল, রোহিঙ্গা, জঙ্গিবাদ, মোদি, আইএসকে হ্যান্ডেল করে। প্রগবা’র ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলিম কিনা সেটি কেমন করে তথাকথিত মানবতাবাদীরা খুঁজে বের করে? তাহলে হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গে এদের তফাত কি? বাংলাদেশের খবরের কাগজগুলো ফ্রান্সে ৭ মুসলিম খেলোয়ার থাকায় আহ্লাদে আটখানা- এরাই ভারতের ‘হিন্দুত্ববাদের উত্থানে’ চিন্তিত! আপনি দিনকে দিন মুসলমান হবেন, প্রাক্টিস করবেন, মুসলিম জাতীয়তাবাদ প্রচার করবেন, উশকাবেন আর অন্যকে ‘হিন্দুত্ববাদী’ ‘জায়নবাদী’ বলে তপড়াবেন- বাহ! আপনি মুসলমান ভাই ভাই এই চিন্তা করেও অসাম্প্রদায়িক আর বাকীরা সব সাম্প্রদায়িক…!
ছোট্র একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে লেখাটা শেষ করে দেই। আহমদ ছফা পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে স্বাধীন হবার তাগিদ দিয়েছিলো। বলেছিলো এটা তারা করলে বাংলাদেশ থেকে উনারা সমর্থন জানাবেন। পশ্চিমবঙ্গ নাকি ভারতের সঙ্গে থেকে বাংলা ভাষা সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে হিন্দি ও মাল্টি ভাষা সংস্কৃতির চাপে। বাংলাদেশ যেহেতু একটি ভাষা ও সংস্কৃতি (আহমদ ছফাও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠিদের গোণায় ধরেননি!) তাই এখানেই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি টিকে থাকবে… ইত্যাদি। তো, এটাই যদি সংস্কৃতি ভাষার টিকে থাকার রহস্য হয় তাহলে কি ফ্রান্স অভিবাসীদের আশ্রয় দিয়ে ভুল করছে? যখন ফরাসীদের অনেকেই এই অভিবাসন বিরোধীতা করছে তখন ছফার মত চিন্তা করা মানুষই তাদের গালি দিচ্ছে বর্ণবাদী বলে! পশ্চিমের ডানপন্থিরা যখন ইউরোপীনায় সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে আরব আফ্রিকান মুসলমানদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বলছে তখন তাদের বলছি বর্ণবাদী ডানপন্থি, আর পশ্চিমবঙ্গকে নছিয়ত দিচ্ছি স্বাধীন হতে! ইউরোপীয়ান সেক্যুলাররা বলছে মাল্টি কালচার তাদের গর্ব। সেই মাল্টি কালচারের জোরে ওখানে টিউলিপ রুমানা নামের কোন বাঙ্গালী নারী এমপি হলে আমরা এখানে বসে গর্ব করছি। আর নিজেরা মুসলিম জাতীয়তাবাদ, বাঙালী জাতীয়তাবাদ রোপন করছি। রোজ নিজেদের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র করছি আর অন্যকে উশকাচ্ছি ক্ষুদ্র হতে। আমরা সত্যি হিপোক্রেট!