ভাইজান, আফা, আপ্নেগো দ্যাশে হিন্দু আছেনি ?
——————————————————
হিন্দুরা নাকি ব্যবসা করে বাংলাদেশে কিন্তু বাড়ি কেনে ভারতে। টাকা জমায় ভারতে!! বাংলাদেশের অনেক হিন্দুদের আত্নীয়-স্বজন দেশভাগ বা একাত্তরে ভারতে চলে গেছে। অনেকেই নিজের আপনজনদের কাছে পেতে ভারতে চলে যায় ।
বাংলাদেশে বসবাস করায় ঝামেলা মনে করে বলেই তারা ভারতে যায়, এটা তেতো সত্য!। হিন্দুর যদি পান থেকে চুন খসে, আর কোন বাছ-বিচার নেই! সাথে সাথে ‘ড্যাডা কা বাচ্চা, কাভি নেহি আচ্ছা’। আচ্ছা এই মনোভাবের মধ্যে আপনার থাকতে ভাল লাগবে? ১৯৪১ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ ভাগ ছিলো হিন্দু। ভারতভাগ নামক সার্কাসের পর ২২ ভাগ। পাকিস্তানেই ২৩ বছরে নেমে ১৩.৫ ভাগে। এরপর বিএনপি-জামাত জোটের কল্যানে ৮ ভাগের কাছাকাছি। অনেক মেধাবী নামকরা ভারতীয় হিন্দু আছে যারা বর্তমানে সারা বিশ্বে সম্মানিত, অথচ তারা বা তাদের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশের অধিবাসী ছিলো! ভাবুন কতটা লজ্জার!! ছিঃ ছিঃ। মুমিনরা যদি মুমিনগিরি না করতো তাহলে এই সকল মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারতো আজ! কিন্তু না! তারা যে মুসলমান আগে, মানুষ পরে! ১৯৭১ এর কথা আসলে অনেক মুসলিম বলে “যুদ্ধের সময় হিন্দুরা ভারতে ভাগছে”। যুদ্ধের সময় প্রায় ৮০ লাখ বা তারও বেশী মুসলিমও “ভারতে ভাগছে”!! দুই পাকিস্তানের “সাচ্চা মুসলিম”রা না ভাগলে ছাড়তো ?
গুজরাটে’র দাঙ্গায় মুসলিম হত্যা হয়েছে! ব্যাস! হিন্দু মার । আর ২০০১-০২ সাল তো সবকিছুকে হার মানায়। শুধুমাত্র হিন্দু হবার অপরাধে দক্ষিনবঙ্গের জেলাগুলোয় কি হয়নি? খুন-লুন্ঠণ এবং সেইসাথে ইসলামের সবচেয়ে প্রিয়কর্ম ধর্ষণ, সব মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল! এক হাজারের বেশী ধর্ষণ হয়েছিলো যার মধ্যে শিশু ধর্ষণ , মা-মেয়ে-পুত্রবধূ কে এক বিছানায় গণধর্ষণের ঘটনাও ছিলো। মহানবী হযরত মুহাম্মদ নাকি কা-রদের অত্যাচারে হিযরত করেছিলেন, কিন্তু হিন্দুরা মুসলিমদের অত্যাচারে দেশ ছাড়লে বিরাট দোষ !! ভারতে হিন্দুরা কেউ শখে যায়না ! আর ভারত সরকারও বাংলাদেশ থেকে খেঁদানো হিন্দুদের সাদরে আপ্যায়ন করে নেয় না!!
সুরঞ্জিত সেন দুর্নীতির দায়ে ধরা পরার পর দেখা গেলো তার মন্ত্রনালয়ে নিয়োগ পাওয়া সকলেই হিন্দু। ব্যাস!! “দেখলা তো, হিন্দুরা খালি নিজেদের ভালো বোঝে”। হিন্দুরা ক্রিকেটে ভারত সাপোর্ট করে কিন্তু সব মুসলিম পাকিস্তান করেনা। এই কথাটা আরেকটা ধ্রাস্টামি! অলি-গলিতে, মসজিদে-ময়দানে ওয়াজ মাহফিলে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে হিন্দু ধর্ম নিয়ে, এমনকি দেব-দেবীদের কাপড়-যৌনতা নিয়ে যে অসুস্থ আলোচনা হয় তা একজন হিন্দু ধর্মালম্বী সহজভাবে নেবে??
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বাদ পরছে না। এ টি এন বাংলা চ্যানেলের ইসলামী অনুষ্ঠানের আলোচক মাওলানা তারেক মুনাওয়ার বলেছে: “এই বাংলাদেশ শাহজালাল-শাহপরানের দেশ, কাজী নজরুলের দেশ কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুইর্যা’র দেশ না”। যে ব্যাক্তি বাংলা সাহিত্যকে ১০০ বছর এগিয়ে দিয়েছেন তিনিও ধর্মের কাছে রেহাই পাচ্ছেন না !!
এদেশের খ্রীষ্টান বা বৌদ্ধদের চেয়ে হিন্দুরা অনেক বেশী নির্যাতিত! একটাই কারন ধর্ম, যা কোনদিন সকল মানুষের মাঝে সম্প্রীতি আনতে পারেনি, পারবেওনা। এই পৃথিবীতে ধর্মের কারনে যত যুদ্ধ-হত্যা-লুন্ঠন-ধর্ষণ হয়েছে অন্য কোনো কারনে তার সিকিভাগও হয়নি!
তাই বাংলাদেশের ‘ড্যাডা’রা এবার ভালোয় ভালোই রাস্তা মাপেন, তবেই রক্ষে……..