বাংলাদেশের নুসরাত মারা যাবার পর নতুন গান শুরু হয়েছে, দেশে ইসলামী আইন থাকলে এই হুজুরকে এখন পাথর ছুড়ে হত্যা করা হতো। আমাদের প্রচলিত আইনের ম্যারপ্যাচ আর টাকার খেলার কাছে অপরাধী এক সময় সহজেই জামিন নিয়ে বেরিয়ে বিচারকে প্রভাবিত করতে থাকে। তাছাড়া বিচারের কালবিলম্বে জনগণ এমনেই হতাশ। অতিত এই হতাশ অভিজ্ঞতাকে উশকে দিয়ে শরীয়া আইনে এই লম্পট হুজুরকে পাথর ছুড়ে হত্যা যে কত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যেতো- এর মাধ্যমে শরীয়ার মার্কেটিং করা হয়ে গেলো, দুই- পর্দা হচ্ছে নারীর নিরাপত্তা’ জাতীয় ইসলামিক ভাষ্য যে কতখানি অবাস্তব সেটি মাদ্রাসার ছাত্রীদের একের পর এক রেইপের কাহিনী সামনে চলে আসায় শরীয়া আইন টেনে এনে সেটাকে আড়াল করার একটা চেষ্টা হলো।
প্রথমেই বলে রাখি ইসলামে ধর্ষণের কোন সংজ্ঞা নেই। যেটি আছে তার নাম ব্যাভিচারি। মানে বিয়ে ছাড়া দুইজন নারী পুরুষ যখন সেক্স করে সেটাই হলো ব্যাভিচার। এর শাস্তি হলো, ব্যাভিচারি বা ব্যাভিচারিনী যদি বিবাহিত হয় তাহলে তাকে পাথর ছুড়ে হত্যা করতে হবে যতক্ষণ না মৃত্যু নিশ্চিত হয়। যদি অবিবাহিত হয় তাহলে একশ ঘা বেত্রাঘাত। শুনলে মনে হতে পারে এগুলো বুঝি যারা ধর্ষণ করে তাদের জন্যও প্রযজ্য। কিন্ত ইসলামে ধর্ষণকারী সম্পর্কে কোন কিছু বলাই নেই। উল্টো খুব বাজে একটা আইন আছে- যদি কেউ কোন নারী বা পুরুষ সম্পর্কে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে আসে তার বিচার করতে হবে চারজন সাক্ষির স্বীকারোক্তি নিয়ে যারা ঘটনাটি দেখেছেন। যদি কোন নারী অভিযোগ করে তার সঙ্গে কোন পুরুষ ঐরকম আচরণ করেছে তবে তাকে অবশ্যই চারজন সাক্ষি নিয়ে আসতে হবে ঘটনার সত্যতা যারা জানেন। সুরা নূরের এই সম্পর্কে ইসলামী আইন হিসেবে বলে দেয়া হয়েছে এভাবে- ‘যারা সাধ্বী রমণীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর স্বপক্ষে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশি বার কশাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; এরাই তো সত্যত্যাগী’ (সুরা নূর, আয়াত-৪)। এখানে নবীর বালিকা স্ত্রী আয়েশার উপর এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলো। আয়েশার সতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠায় কুরআনে এই আয়াত নাযিল হয়। তবে এই আয়াত কেবলমাত্র ‘সাধ্বী রমণী’ সম্পর্কে ধরা যাবে না- এখানে নারী-পুরুষ যে কারোর উপর অভিযোগ উঠলে অভিযোগকারীকে চারজন সাক্ষি আনতে হবে। সেটা করতে সে ব্যর্থ হলে তাকে আশিটি দোররা মারা হবে। কুরআনের এই আইনের বাস্তব প্রয়োগটি কেমন তার একটি উদাহরণ দেখাই। সারা বিশ্বে আলোচিত ছিলো ইরানের রেহানে জব্বারি যিনি তার ধর্ষককে খুন করেছিলেন। প্রথমে যখন ইরানের শরীয়া আদালতে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে রেহানে জব্বারি যান তখন তিনি উপযুক্ত সাক্ষি আনতে ব্যর্থ হন যারা তার ধর্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করছিলো! বলাই বাহুল্য ধর্ষণের এরকম কোন সাক্ষি হয় না ধর্ষক ও ধর্ষিতা দুজন ছাড়া। এক্ষেত্রে মেডিকেল পরীক্ষাই সত্যকে সামনে এনে দেয়। কিন্তু ১৪০০ বছর আগের একজন উটের রাখালের পক্ষে জানা সম্ভব নয় যে একদিন সায়েন্স কতদূর এগুবে। যাই হোক, ইসলাম যেহেতু ১৪০০ বছরে আগে আটকে আছে তাই সেই আইনের বিধান সেখানেই আটকে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ইরানের ইসলামিক আদালত রেহানে জব্বারিকে ‘অসত্য অভিযোগ’ আনার জন্য তিরস্কার করে বেত্রাঘাত করে। অপমানিত রেহানে তাই সিদ্ধান্ত নেন তার ধর্ষণকারীকে সে নিজেই শাস্তি দিবে। ধর্ষক ছিলো ইরানের একজন গোয়েন্দা এজেন্ট। রেহানে পিছন থেকে তাকে ছোরা মেরে হত্যা করে। আদালত এই হত্যার জন্য রেহানেকে ফাঁসির আদেশ দেয়।
বাংলাদেশে যেদিন শরীয়া আইন পাশ হবে তখন সুরতানদের মত মেয়েরা ভয়েও তার ধর্ষণের কথা প্রকাশ করবে না। এখন তো অন্তত ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়, লোকজন জানতে পারে, তখন সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। যদি এখন দেশে ইসলামিক শরীয়া প্রচলিত থাকত তাহলে মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল সিরাজ-উদ দৌলার নামে অভিযোগ করে নুসরাতকেই আদালত আশিটি দোররা মেরে সাজা দিতো। কারণ নুসরাতের গায়ে যেদিন হাত দিয়েছিলো হুজুর- সেদিন তো সামনে তৃতীয় কোন ব্যক্তি ছিলো না। এই হচ্ছে ইসলামিক আইনের তেলেসমাতি। এসব কারণেই জাকির নায়েক পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন আমেরিকার মত ফ্রি দেশে যে পরিমাণ ধর্ষণ হয় সে তুলনায় ইসলামী শরীয়া আছে এমন দেশে ধর্ষণের পরিমাণ শূন্য! যেখানে ধর্ষণ প্রমাণ করাই অসাধ্য সেখানে ধর্ষণের কোন রেকর্ড থাকবে কি করে?
নুসরাতের মৃত্যু আমাদের বুকের ভেতর গভীর আঘাতের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের হাজার হাজার মহিলা মাদ্রাসায় যে পরিমাণ মেয়ে পড়ছে তারা সকলেই এইদেশটাকে ইসলামিক শরীয়া আইনে পরিচালিত করার একেকজন সাপোর্টার হয়ে তৈরি হচ্ছে। ইসলামের সব রকম নারী নিপীড়নের এরা বরব সমর্থক। ভারতের মাদ্রাসা ছাত্রীরা তিন তালাক বিলের বিরোধীতা করেছে। তারা মুসলিম পুরুষদের তালাকের স্বাধীনতায়, বহু বিবাহ ও যুদ্ধবন্দিনী নারী বা দাসী সঙ্গমের পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী নুসরাতের মৃত্যুর পর কঠর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। তিনি আইন আদালতের বাইরে গিয়ে কঠর হবেন কিভাবে? একজন সিরাজ-উদ দৌল্লার প্রতি কঠরতা আরোপ নিশ্চয় এই সিস্টেমকে বদলে দিবে না? হুজুরদের রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন করে, মাদ্রাসা শিক্ষাকে বাড়বাড়ন্ত করে দিয়ে এদেশের মূল স্পিড থেকে সেরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নুসরাতের ঘটনার পর চরমোনাই পীরের দল ইসলামীক আন্দোলন বলেছে, এ ধরণের ঘটনা পর সরকারের উচিত বাধ্যতামূলকভাব স্কুল কলেজ সহ সারাদেশে বোরখা পরার আইন করা!…
আমরা হয়ত সেই দিনটির খুব নিকটে বসে আছি যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বোরখা পরতে বাধ্য হবেন!