মুসলমানদের শত্রু কারা?

#মুসলমানদের শত্রু কারা?
লিখেছেন : দিয়ার্ষি আরাগ দিপু

নাস্তিকদের ভাবনায় মুসলমানদেরকে যেসকল ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আরও মুসলমান হওয়ার সুবিধা দিতে আগ্রহী ; সে বা তারা মুসলমান আলোকিত হোক, এটা দেখতে চায় না। আর এরাই মুসলমানদের আসল শত্রু। এরা চায় না মুসলমান মানুষ হোক, এরা চায় ওরা চিরকাল এক ধর্মান্ধ জাতিগোষ্ঠী রূপেই থেকে যাক।
সাধারণত পাঁচ ধরনের মানুষ মুসলমানদের বাঁশ দেয়!
এবং মুসলমান সেই বাঁশ খেয়ে খুব তৃপ্তি অনুভব করে, মাদকাসক্ত ব্যক্তি যেমন মাদক পেলে খুশি হয়, তেমন।

এই পর্যায়ে মুসলমানদের প্রথম শত্রু মোল্লারা।
হ্যাঁ, মোল্লারা। এরা মুসলমানদেরকে অমুসলিমদের ঘৃণা শেখায়। একটা মাত্র বই পড়তে শেখায়। নারীদের পণ্য বানিয়ে রাখে। প্রশ্ন করতে নিষেধ করে দেয়। এমনকি নিজেদের মধ্যেও বিভেদ তৈরি করে রাখে। মোল্লাদের টার্গেট থাকে মানুষ নয়, আজ্ঞাবহ মুসলমান বানাতে। এই মোল্লারা সাধারণত নির্বোধ, লোভী, বিকৃতমনা এবং ইন্দ্রীয়সর্বস্ব হয়। পনেরোশ বছর ধরে মানু‌ষেরটা খেয়ে, মানু‌ষেরটা পরে, মানুষেরটা নিয়ে এরা মানুষের মনেই অন্ধকারের চাষাবাদ করছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসলামপন্থী কমিউনিস্টরা।
হ্যাঁ। এই কমিউনিস্টরা ইসলামের সমস্ত সন্ত্রাসকে পুঁজিবাদ ও আমেরিকার অস্ত্র বিক্রির ষড়যন্ত্র বলে প্রমাণ করতে সিদ্ধহস্ত। এরা কোরআনের জেহাদি আয়াতের মধ্যেও আমেরিকার ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়।
সবকিছুই নাকি বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থার ফলাফল, মালিক শ্রেণীর লোভ। মুসলমান টেরোরিস্ট কর্তৃক শ্রীলঙ্কার গির্জায় বোমা হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সর্বভারতীয় একজন বামনেত্রী কবিতা কৃষ্ণান  টুইটার বার্তায় বলেছেন, এসব বৌদ্ধদের কাজ। বলুন তো এই মিথ্যাচারের উদ্যেশ্য কী, মুসলমানদের প্রতি ভালোবাসা না এদেরকে বোকা বানিয়ে রেখে ভোটের ধান্ধা করা?
বাংলাদেশের একসময়ের জ্ঞানপাপী ছাগু  আহমেদ ছফার যোগ্য উত্তরসূরী ফরহাদ মজহার ও সলিমুল্লাহ খানরা ওসামা বিন লাদেনকে কমিউনিস্ট বিপ্লবী বলে গলা ফাটিয়ে ফেলত! এদের পাতিরা ছড়িয়ে আছে সারা বাংলা জুড়ে। এছাড়া হিন্দু কমিউনিস্টগুলোও শুধু ভোটের ধান্ধায় মুসলমানদের আরও মুসলমান হতে প্ররোচিত করে। উদ্দেশ্য, বোকা করে রাখা, চির প্রতিবন্ধী করে রাখা। কমিউনিস্টরা যখন ধর্মের পক্ষে সাফাই গায়, ধর্মপালনের অধিকার চায়, তখন স্পষ্টই বুঝা যায় এরা সমাজতন্ত্র -সাম্যবাদ কী,সেটাই আসলে জানে না। কিন্তু মুসলমানদের সাপোর্ট দিয়ে আরও অন্ধকারের অতলে পাঠিয়ে দেয় ঠিকই।

তৃতীয় পর্যায়ে আছে মডারেট মুসলমানরা।
এরাই সবচেয়ে বিপদজনক। এরা ধর্মের তথা ইসলামের অপব্যাখ্যা, ভিন্ন ব্যাখ্যা এবং রংচঙে ব্যাখ্যা দিতে ওস্তাদ। এরা মানুষের স্বভাব ধর্ম মানবতা ও চাপানো ধর্ম রিলিজিয়নকে গুলিয়ে এককরে ফেলে প্রচলিত ধর্মগুলোকে সাপোর্ট দিয়ে যায়। আপনি একটা উদাহরণ দিয়ে ধর্মের ভয়াবহতা বুঝাতে চাইবেন, এরা সমস্বরে চিৎকার করবে, এটা সঠিক ব্যাখ্যা না, আসলে কোনো ধর্মই খারাপ না!
ছয়বছরের শিশু বিয়ে করা সুন্নত, যদি বলেন, ওরা বলবে , এসব ইহুদীদের ষড়যন্ত্র। এরা আবার নতুন ইতরামি শুরু করেছে, কোরআনের মধ্যে তারা আর এক কোরআন আবিষ্কার করেছে, তার নাম দিয়েছে সত্য কোরআন।
এরা কবিতা লেখে,
“কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর!
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর।”
কিন্তু এরাই আবার বাচ্চাকে নামাজ পড়ার জন্য পেটাবে।
এরা গলা ফাটিয়ে ফেলবে, সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নাই। অথচ সন্ত্রাসীরাই বলছে, আমরা ধর্মীয় কারণে খুন করেছি।
এরা বলবে, ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান, আমরা সকলে মিলেই ঈশ্বর। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে ঈশ্বরকে খুঁজতে জুম্মায় হাজির হবেই হবে। এদের জীবনাচরণের সাথে এদের কবিতার কোনো মিল নেই! এরা প্রত্যেকে হুজুরদের পাচাটা। এরাই ধর্মের ইতরামিগুলোকে বিভিন্ন কৌশলে ঢেকে রেখে ধর্মগুলোকে সুরক্ষা দিচ্ছে, আর মুসলমানদেরকে মানুষ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না।
কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটবে, এরা যথাসাধ্য ঢেকে রাখবে। আর ঢাকতে না পারলে বলবে, এটা সহি ইসলাম না!
এরা নামাজের রুমে বিবি আয়েশা, বেডরুমে মিয়া খলিফা আর ড্রয়িংরুমে গণতন্ত্রের মানসকন্যা(😁) শেখ হাসিনা।

চতুর্থ পর্যায়ে আপনি ইসলাম দরদী নাস্তিকদের রাখতে পারেন।
এরা সব ধর্মকেই সমান দৃষ্টিতে দেখার পরিবেশ তৈরি করবে। শত শত হুজুর রেপ করলেও এরা তারস্বরে চিৎকার করে বলবে, পরিমল মাস্টারও তো রেপিস্ট ছিল!
শতশত মন্দির ও মূর্তিভাঙার পর চিৎকার করবে, হিন্দুরা কি বাবরী মসজিদ ভাঙে নাই?
এদের কাজ হচ্ছে সব ধর্মকে সমান খারাপ বলা, এবং বেশি খারাপ ধর্মটাকে আপেক্ষিক সুবিধা পাইয়ে দেয়া।
অধিকাংশ এক্স মুসলিম নাস্তিক নিজেদের সেভ করতে, নিজ গোত্রের কাছে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে এবং নিজেকে চাপাতির কোপ থেকে বাঁচাতে ইসলামের পাশাপাশি অনবরত অন্য ধর্মগুলোকেও যৌক্তিক অযৌক্তিক এবং অপ্র‌য়োজনীয় আক্রমণ করে। এরা অনেকেই আবার কমিউনিস্টও!
এরা আসলে নিজের অজান্তে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ভয়ঙ্করতম ধর্ম ইসলামের ইতরামিকে দীর্ঘস্থায়ী করার পক্ষে কাজ করছে। এরা কেউটে না মেরে ডোরা সাপ মারতে চায়। এরা হায়েনা এবং ইঁদুরের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায়, যাতে হায়েনা ইঁদুরকে সহজেই গিলে ফেলতে পারে।
ভূয়া নাস্তিকদের মধ্যে সবচেয়ে চতুর এরাই। দীর্ঘদিন কেটে যায় এদের বুঝতে। কিছুদিন পর পর প্রায়ই এটা আবিষ্কার হয় যে দীর্ঘদিন নাস্তিকতা করা ব্যক্তিটি একজন সাম্প্রদায়িক মানুষ এবং অনেকেই আসলে গুপ্তচর। অভিজিৎ রায়, সামাদ এবং শাহজাহান বাচ্চুকে এই জাতীয় বন্ধুরাই হত্যা করেছে। হাতুড়ে ডাক্তার মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী সমন্ধে করা আমার দুইবছর আগের সতর্কতা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে।
একজন নাস্তিক নামধারী সাম্প্রদায়িক মানুষ খুবই বিপদজনক। বিপদজনক অন্যান্য নাস্তিকদের জন্য, বিপদজনক মুসলিমদের জন্য। কারণ এরা সুকৌশলে ইসলামের পক্ষে কাজ করে আর মুসলিমদের নিক্ষেপ করে আরও অন্ধকারে।

এরপর সবশেষে রাজনৈতিক নেতারা। যারা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ধর্মকে ব্যবহার করে এসেছে চিরকাল । এরা মানুষকে ধর্মান্ধ ও নির্বোধ দেখতে চায় কারণ এতে তাদের ক্ষমতা, শোষণ, নিপীড়ন ও দুর্নীতি যায়েজ করতে সহজ হয়। যেহেতু ইসলাম বেশি আগ্রাসী ধর্ম তাই তারা টার্গেট করে মুসলমানদের অনুভূতিরই লিঙ্গসেবা করে। নারী নেতারা আরও বেশি, কারণ এরা জানে ইসলামে এদের নেতৃত্বই হারাম। প্রচুর মসজিদ থাকার পরও শেখ হাসিনা শতশত মডেল মসজিদ বানাচ্ছেন, মেয়েদের তেঁতুল বলার পরেও একজন নারী হয়েও তিনি হেফাজতের পা চাটছেন। ভণ্ড নাস্তিক মমতা বানার্জী মুসলিম ভোটের আশায় নামাজে পর্যন্ত বসে যাচ্ছেন। এরা জানে মুসলিমরা তাদের অন্ধত্বের সাপোর্ট পেলে মহাখুশি হয়, আর এরাও সেই সুযোগটাই নেয়। ইয়াহিয়া ধর্মকে ব্যবহার করে খুনখারাবি করেছেন, জিন্নাহ, যিনি কিনা ছদ্মবেশী নাস্তিক তিনিও ধর্মকে ক্ষমতার জন্য ভয়াবহতমভাবে ব্যবহার করে খুনখারাবি করেছেন। এদের উদ্দেশ্য একটাই মানুষকে বোকা বানিয়ে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করা। আর মুসলমানরাও এইসব সাপোর্ট খুব পছন্দ করে, যেমন ইয়াবাখোরকে ইয়াবা সাপ্লাই দিলে খুশি হয়। মোদী,শেখ হাসিনা, মমতা এরা প্রত্যেকেই ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার করছেন। উদ্দেশ্য একটাই মানুষকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতায় টিকে থাকা।
দুনিয়াজুড়ে রাজনৈতিক নেতারা ধর্মকে তাদের রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়েছেন। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন আর পিছিয়ে যাচ্ছেন নির্বোধ ধার্মিকরা, বিশেষ করে মুসলমানরা।

#তাহলে মুসলমানদের বন্ধু কারা? খুবই সহজ।
যারা বলেন অন্ধকার থেকে আলোতে আসুন, তারা। যারা বলেন, আরও বই পড়ুন, তারা। যারা বলেন “সবার উপরে মানুষ সত্য,তাহার উপর নাই “, তারা। যারা বলেন, বিশ্বাস এবং সন্দেহ দুটোই যুক্তিযুক্ত হওয়া উচিত, তারা। যারা বলেন, ভালোবাসাই সর্বোচ্চ ক্লাস, তারা। যারা বলেন, আমরা সবকিছু ও সবাই মিলেই ঈশ্বর, তারা। যারা বলেন, সৃষ্টিকে আঘাত করা মানে সৃষ্টিকর্তাকেই আঘাত করা, তারা। যারা বলেন, বিনাপ্রশ্নে কোনো কিছুই মেনে নেয়া যায় না, তারা।
নাস্তিক, মানবতাবাদীরা মানবতার কথা প্রচার করে , মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালবাসার তাগিদ দেয়। একটা মানবিক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে। তারাই আসলে মুসলমানদের বন্ধু। তারা চায়, মুসলমান অন্ধকার থেকে আলোতে আসুক, তারা চায় মুসলমান মানুষ হোক। আর সেজন্যই তারা ধর্মের নিপাত চায়, চায় অন্ধকারের অবসান। তারা আলোর কথা বলে।

আর সর্বশেষ কথা তো একজনই বলবেন, তিনি আমাদের মানবধর্মের ঈশ্বর, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
শুনুন কী বলেছিলেন বহুবছর আগে :
ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে
অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।
নাস্তিক সেও পায় বিধাতার বর,
ধার্মিকতার করে না আড়ম্বর।
শ্রদ্ধা করিয়া জ্বালে বুদ্ধির আলো,
শাস্ত্রে মানে না, মানে মানুষের ভালো।
হে ধর্মরাজ, ধর্মবিকার নাশি
ধর্মমূঢ়জনেরে বাঁচাও আসি।