অরুন্ধতী রায় সম্ভবত মানসিকভাবে মুসলিম। ভারতের বহু বামপন্থি এরকম মানসিকভাবে মুসলিম হতে দেখেছি। অরুন্ধতী রায়ের এরকম নির্লজ্জ্ব পাকিস্তান বন্দনার (তবু যদি সত্যতা থাকত) আর কোন কারণ দেখতে পাচ্ছি না। পাকিস্তান কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হলে এখানে তার কমিউনিজমের প্রতি পক্ষপাত ধরা যেতো। কিন্তু পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিলো ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক পরিচয়ে এবং এখন পাকিস্তান কট্টর মুসলিম একটি রাষ্ট্র। গোটা উপমহাদেশে জঙ্গি সাপ্লাই নেয়ার দায়িত্ব তারা নিয়েছে। সেই রাষ্ট্রের প্রতি অরুন্ধতী রায়ের ভালোবাসার মানসিক মুসলিমপ্রীতি ছাড়া অন্য কোন ধরতে পারছি না। ভারত শাসিত কাশ্মির স্বাধীন হোক এটা অরুন্ধতীর ক্ষমতা থাকলে নিজ হাতে করে দিতেন। তিনি কিন্তু পাকিস্তান শাসিত কাশ্মির, চীন শাসিত কাশ্মিরের স্বাধীনতা চান না। ভারত ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাক কিন্তু পাকিস্তান থেকে চেলুচ আলাদা হোক কখনো চান না। ভারতীয় বামপন্থিদের সংখ্যালঘুদের প্রতি বন্ধুত্ব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেটা অস্বাভাবিক সেটা হচ্ছে তাদের মানসিকভাবে মুসলিম হওয়া। ইসলামে জিহাদ করে রাষ্ট্র দখল করার কনসেপ্ট যে খুবই মহান একটি পন্থা এবং জিজিয়া কর যে খারাপ কিছু নয়, এটা বামপন্থিদের ইতিহাস পাঠ না করলে জানা হতো না। ভারতবর্ষে ওয়াহাবী থেকে খিলাফত আন্দোলনকে বামপন্থিরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন হিসেবে সন্মান ও শ্রদ্ধা করে গেছেন। অথচ ভারতে হিন্দু মুসলমানের মাঝে যে বিরাট ফারাক থেকে পাকিস্তানের সৃষ্টি সেই ফারাক এইসব ধর্মীয় কনসেপ্ট থেকে সৃষ্ট আন্দোলন আরো বৃহৎ করে তুলেছিলো। ভারতে যদি ‘হিন্দুত্ববাদ’ বলতে কিছু থেকে থাকে তাহলে ‘ওয়াহাবী’ ‘ফরাজী’ ‘খিলাফতী’ আন্দোলনগুলো কি ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন? কিছুদিন আগে জাকির নায়েক মালয়েশিয়ার হিন্দুদের প্রতি কটাক্ষ করে বলেছে, মালয়েশিয়ার হিন্দুরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুগত…। তাহলে ভারতবর্ষে তুরস্কের খিলাফত ও খলিফার জন্য আন্দোলন করা, তুরস্কের খলিফাকে নিজেদের খলিফা বলে দাবী করা আন্দোলনকে কমিউনিস্টরা কেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন বলে চালান?
কমিউনিস্টদের দেশে দেশে ইসলামিক টেরোরিস্টদের সহযোগী বলে তাদের বিরোধীরা। এরকম দাবীর নেপথ্যে অরুন্ধতীর মত বাম বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য থেকে তৈরি হয়। সারা বিশ্বে ইসলামিক টেরোরিস্টদের কমন শত্রু আমেরিকা ও তার মিত্ররা। বামরা মনে করেন শত্রুর শত্রু তাদের বন্ধু। যে কারণে ভারতের শত্রু পাকিস্তান মাওবাদীদের বন্ধু? পাকিস্তান তার সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে ছিলো এবং বলা হয়েছিলো পূর্ব পাকিস্তানী নারীদের ধর্ষণ করতে যাতে তারা পাঞ্জাবী পাঠানী মুসলমানদের সন্তান ধারণ করে বাঙালী জাতির ‘আধা হিন্দুত্ব’ ত্যাগ করে প্রকৃত সাচ্চা ঈমামানদার মুসলমান হতে পারে। দ্বিতীয়ত, পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ চলে যাওয়া হিন্দুদের তখনো একটা বড় অংশ পাকিস্তানে থেকে গিয়েছিলো। সেই হিন্দুদের সম্পত্তি ও নারীরা হচ্ছে ইসলামের জিহাদের সংজ্ঞায় গণিমতের মাল। হিন্দু নারীদের গণহারে মুসলমানদের জন্য গণিমতের মাল ঘোষণা করা হয়েছিলো। যতখানি বর্বরতা পূর্ব পাকিস্তানে ৭১ সালে চালানো হয়েছিলো তার তুলনা কেবল ন্যাৎসিদের ইহুদীদের উপর চালানোর সঙ্গে তুলনা চলে। পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী হিন্দুদের উপর হলোকাস্ট চালিয়েছিলো। অরুন্ধতীর মত বুদ্ধিজীবী সেই ইতিহাস জানবেন খুব স্বাভাবিক। বেলুচদের ইতিহাসও তার অজানা নয়। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীকে খারাপ করতে হবে। যেভাবেই হোক তাদের খুনি বানাতে হবে। ভারতীয় সেনা প্রধান মানকেশ, জ্যাকব, অরোরা প্রত্যেকেই স্মৃতিকথা লিখেছিলেন ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ছিলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্র বাহিনী। তারা দেখেছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে নারী নির্যাতন আর নদী বুকে লাশের স্তুপ! অনুন্ধতীর মুসলিম মানসিক মন সেসব ধাতব্যে আনতে নারাজ। অরুন্ধতি বলেছেন, ‘The state of Pakistan has not deployed its own army against its own people in the way the indian, the democratic Indian state has.’ সরল বাংলা করলে কথাটার মানে দাঁড়ায় ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর মত তাদের নিজেদের মানুষদের উপর হামলা করেনি’।
অনুন্ধতীর একার এ রোগ হয়নি। ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের প্রতি দুহাতে সমর্থন জানান বাম বুদ্ধিজীবী দার্শনিক মিশেল ফুকো। তিনি আধুনিক চিন্তা চেতনার ইরানকে মধ্যযুগীয় শাসনে নিয়ে যাওয়া খমোনীর ইসলামী বিপ্লবকে সমর্থন করে বলেন, ‘ইরানের এই বিপ্লবকে ‘ইসলামিক’ বা ‘মৌলবাদী’ তকমায় না ফেলে এটাকে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে ইরানের মহান এক বিপ্লব হিসেবে দেখা উচিত…। অথচ ইরানের রেজা শাহের নারী মন্ত্রী ফারুক পারসা যিনি নারীদের শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেছিলেন এবং নারীদের কিছুতে ১৮ বছরের আগে বিয়ে না দেয়ার আইন করেছিলেন তাকে খোমিনি ‘বেশ্যা’ আখ্যা দিয়েছিলো কারণ সে মাহনাজ আফকামির (ইরানের নারীবাদী) শিষ্য যারা আল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে নারীদের ঘর থেকে বের করে এনে। ফারুক পারসার ফাঁসি কার্যকর করা হলো ইরানের একটি পতিতালয়ে! খোমিনি সমগ্র ইরানে ঘোষণা করে দিলেন, কুফরি পারিবারিক আইন বাতিল করে কুরআনের নিয়ম অনুয়ায়ী নারীদের বিবাহ, তালাক, সম্পত্তির অধিকার ও অন্যান্য বিষয় মান্য করা হবে। নারী পুরুষকে পৃথক করে দেয়া হলো। হিজাব বা বোরখা ছাড়া নারীদের ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। বস্তুত সমগ্র ইরানে ইসলামিক বিপ্লব তাদের এক হাজার বছর পিছনে টেনে নিয়ে গেলো। সেই ইরানকে যখন মিশেল ফুকোর মত চিন্তক তাত্ত্বিক দার্শনিক উচ্ছ্বাসিত সমর্থন জানান তখন তারা আসলে কোন জিনিসটাকে সমর্থন করেন?
অনুন্ধতী এই গোটা উপমহাদেশে ঠিক কোন জিনিসগুলোকে তার লেখায় কথায় বারবার সমর্থন করে চলেছেন? বামপন্থা রাজনীতিই বা কোথায় যাচ্ছে? কেন ভারতীয়রা বামপন্থার উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে?
উত্তর তো আমার লেখাতেই আছে…।