তিনি জন্ম গ্রহণ করেন হুগলী
জেলার ত্রিবেণীতে। তাঁর পূর্বপুরুষ পেশায় ছিলেন কর্মকার বা লৌহজীবি।
কিন্তু বেশ কয়েক পুরুষ আগে তাঁরা ছিলেন লিপিকার। তাম্রপটে, অস্ত্রশস্ত্রে
অলঙ্করণ বা নামাঙ্কনের কাজে তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। তাঁর চরিত্রেও
পূর্বপুরুষদের এই শিল্পবৃত্তির গুনপনার প্রকাশ ঘটে। তাঁর পূর্বপুরুষেরা
প্রথমে ছিলেন হুগলী জেলার অন্তঃপাতী জিরাট বালাগড়ের অধিবাসী, পরে
ত্রিবেনীতে গিয়ে বসবাস শুরু।
কর্মজীবন
১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলকিন্স যখন হুগলীতে ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেডের লেখা অ্যা গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল লেঙ্গুয়েজ
বইটি মুদ্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তখন পঞ্চানন তাঁর প্রযুক্তি জ্ঞান নিয়ে
বাংলা হরফ প্রস্তুতের কাজে উইলকিন্স কে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। বইটির
মুদ্রণে ছেনিকাটা, ঢালাই করা চলনশীল বা বিচল যে ধাতব হরফ ব্যবহার করা হয়,
তা উইলকিন্স এবং পঞ্চাননের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছিলো। ১৭৭৯ সালে তদানীন্তন গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের উৎসাহে উইলকিন্সের পরিচালনাধীনে কলিকাতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর
ছাপাখানায় তিনি কাজ শুরু করেন। ১৭৮৫ সালে পুরোদমে এই সরকারি ছাপাখানা
চালু ছিল, পঞ্চানন সেখানে কাজ করতেন। হরফ নির্মাণের কলাকৌশল তিনি উত্তমরূপে
আয়ত্ত করেছিলেন। ১৭৯৯-র দিকে তাঁর সংগে উইলিয়াম কেরির
সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয় এবং সে বছরই তিনি কেরীর প্ররোচনায় শ্রীরামপুর
মিশনের প্রেসে যোগদান করেন। একটি পুরানো মেশিন নিয়ে এই প্রেসের কাজ শুরু
হয়। কিন্তু পঞ্চাননের মেধা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অল্প
দিনের মধ্যে এটি এশিয়ার বৃহত্তম অক্ষর তৈরির কারখানা অর্থ্যাৎ টাইপ ফাউন্ড্রিতে পরিণত হয়। ১৮০১ সালে তাঁর তৈরি হরফে বাংলায় বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট এর কেরীকৃত অনুবাদ ছাপা হয়। ১৮০৩ সালে তিনিই প্রথম ভারতবর্ষে নাগরী ভাষায় হরফ নির্মাণ করেন। কেরীর সংস্কৃত ব্যাকরণ মুদ্রণের জন্য তিনি নাগরী ভাষায়
হরফ তৈরি করেন। পরে তিনি আরও ছোট ও সুন্দর এক সাঁট বাংলা হরফ তৈরি করেন।
বাংলা মুদ্রণশিল্পে দীর্ঘকাল তাঁর তৈরি হরফের প্রচলন ছিলো। পঞ্চানন তাঁর
জামাতা মনোহর কর্মকারকে
সযত্নে তাঁর সমস্ত জ্ঞান ও কলাকৌশল শিখিয়ে যান; মনোহর পরিশ্রম, সাধনা ও
মেধার বলে আরবি, ফার্সি, গুরুমুখি, মারাঠি, তেলুগু, বর্মি, চৈনিক প্রভৃতি
অন্তত চৌদ্দটি বিভিন্ন ভাষার হরফ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।