আপনি কি জ্ঞানী মানুষ? কী বলছে ‘মহাভারত’?
একান্ত প্রয়োজন, প্রকৃত অর্থেই আপনি জ্ঞানী কি না। সেই কারণে প্রথমেই
প্রয়োজন এটা জানা যে, ঠিক কাকে ‘জ্ঞান’ বলবেন। এইখানেই ঘটে সমস্যা। ‘জ্ঞান’
যে ঠিক কী, তা ঠাহর করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় যদি প্রাচীন
গ্রন্থের শরণ নেওয়া যায়, তা হলে বোধ হয় অন্যায় হবে না। যদি ‘মহাভারত’-এর
দিকে তাকানো যায়, দেখা যাবে ‘জ্ঞান’ নামক ধারণাটিকে নিয়ে বার বার কথা বলেছে
এই মহাকাব্য। এবং প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তিদের উদাহরণ দিয়ে মহাভারত বোঝাতে
চেয়েছে কাকে বলা যায় ‘জ্ঞান’।
মহাভারত-এ সবথেকে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি কে- এই প্রশ্ন উঠলে এই গ্রন্থের তন্নিষ্ঠ
পাঠকদের একটা বড় অংশই চোখ বুজে বিদূরের নাম করবেন। গোটা মহাভারত জুড়ে
বিদূরের উপস্থিতি এমন এক বাতাবরণ সৃষ্টি করে, যা সেই কাব্যের কাহিনিকাঠামোয়
নিয়ত ঝড় তোলা রাজনীতি আর সংঘাতকে পেরিয়ে তাকে এক অন্য মাত্রায় স্থিত করে।
মহাভারত-এর রচয়িতা ব্যাসদেবের সন্তান বিদূর জন্মগ্রহণ করেছিলেন নিয়োগ
প্রথায় এক শূদ্রাণীর গর্ভে। এহেন জন্মবৃত্তান্তই তাঁকে ঋদ্ধ করেছিল। নিজের
ভিতরে জ্ঞান ও বাস্তবতার সম্মীলন ঘটাতে তিনি সমর্থ হয়েছিলেন। পরবর্তী জীবনে
তিনি কুরুকুলপতি ধৃতরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। সেই কাজেও
তিনি বার বার প্রজ্ঞা ও মেধার পরিচয় রাখেন। স্বয়ং বিদূর নিরূপণ করেছিলেন
প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তির পরিচয় কী হতে পারে, কী দেখে বোঝা যায় একজন ব্যক্তি
প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন কি না।
ধৃতরাষ্ট্রের বিবিধ প্রশ্নের উত্তরে বিদূর জ্ঞানী ব্যক্তির লক্ষণ সম্পর্কে
যা ব্যক্ত করেছিলেন, তা এই প্রকার-
• মানুষ জ্ঞানী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। জ্ঞান তাকে অর্জন করতে হয়। এই অর্জনে
তাকে সাহায্য করে তার স্বভাব, তার সিদ্ধান্ত, তার ব্যক্তিত্ব।
• জ্ঞানী ব্যক্তির উপলব্ধি অন্তর থেকে জাত। তাঁরা কষ্টসহিষ্ণু এবং কোনও
প্রোরচনাতেই স্বধর্মচ্যুত হন না।
• যে ব্যক্তির ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা প্রবল উত্তাপ, প্রচণ্ড ঠান্ডা, অন্যের
প্ররোচনা, প্রাচুর্য কিংবা দারিদ্র্যের মধ্যেও অবিচল থাকে, তিনিই প্রকৃত
জ্ঞানী।
আরও পড়ুন
‘মহাভারত’ জুড়ে উঁকি দেয় এক রহস্যময় সংখ্যা। ব্যাখ্যা কী এই আশ্চর্যের?
ঠিক ক’টি মিথ্যাকথা বলেছিলেন ‘সত্যবাদী’ যুধিষ্ঠির?
‘মহাভারত’ কি সত্য ঘটনা? কী বলছে আজকের গবেষণা?
• যে ব্যক্তি অন্যের কথা নিষ্ঠার সঙ্গে শোনেন, তাঁর বিচারক্ষমতা বিপুল। তনি
অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ করেন না। তিনি নিঃসন্দেহে জ্ঞানী।
• কোনও সম্মানে যিনি গর্বিত হন না, অপমানেও ভেঙে পড়েন না, তিনি জ্ঞানী।
• যাঁর শিক্ষা বুদ্ধির দ্বারা চালিত এবং বুদ্ধি শিক্ষার দ্বারা মার্জিত,
তিনিই জ্ঞানী।
• সুখে-দুঃখে, গৌরবে-লজ্জায় যিনি নির্বিকার থাকতে পারেন, তিনিই প্রকৃত
জ্ঞানী।
• যে বস্তুকে কখনওই লাভ করা যায় না, তার পিছনে ছুটে জ্ঞানী ব্যক্তিরা কখনওই
সময় নষ্ট করেন না।
• জ্ঞানী ব্যাক্তিরা নিজের ক্ষমতার সীমাকে জানেন, তার বাইরে গিয়ে তাঁরা
কখনওই কাজ করেন না।
• যে ব্যক্তি যে কোনও পরিস্থিতিতে কথা বলতে সক্ষম, যিনি যেকোনও ধর্ম ও যে
কোনও শাস্ত্রের বিষয়ে কথা বলার অধিকার রাখেন, তিনি নিঃসন্দেহে জ্ঞানী।
• ফলের দিকে না তাকিয়ে যিনি কর্ম সম্পাদন করে যান, তিনি জ্ঞানী। যিনি কোনও
কাজের মাঝখানে বিরাম নেন না, তিনি জ্ঞানী।