জানলে প্রাচীন ভারত বর্ষের কথা
অসম্পুর্ন রয়ে যাবে। যে
উত্তরাপথের কথা আমরা আগেই
জেনেছি, প্রাচীন কালের বানিজ্য পথ,
যা মধ্য এশিয়া কে
(মেসোপটেমিয়া –ইরাক সিরিয়া থেকে
ইরান হয়ে হিন্দুকুশের উত্তর
পশ্চিম দিক দিয়ে তিব্বত
হয়ে চীনে চলে গিয়েছিলো
,যাকে বলে ‘সিল্ক রুট’)
ভারত বর্ষের উত্তর দিকটাকে
যুক্ত করে রেখেছিলো ।
সেই “উত্তরাপথ”র সংগে যুক্ত
ছিলো এই কম্বোজ জাতির
দেশ “কম্বোজ”। কম্বোজ
এবং গান্ধার রাজ্য সম সাময়িক
এবং প্রাচীন পুথিতে প্রায় একই
সংগে
বর্ননা করা আছে।
কম্বোজের সীমা গান্ধার এর
সংগে এসে মিশেছিলো।
অক্সাস (আমুদরিয়া) নদীর অববাহিকায় এই
কম্বোজ জাতির উৎপত্তি এবং
বাহ্লীক দেশ (ব্যাক্ট্রিয়া) এর
পশ্চিমে এবং গান্ধার পুবে।
হিন্দু কুশের দুই দিকেই
এই রাজ্যের বিস্তৃতি ছিলো। আফগানিস্তানের ‘নুরীস্তান
‘ “ যার পুর্বনাম ‘কাফিরিস্তান’প্রদেশ এই কম্বোজ
রাজ্যের অন্তর্গত ছিলো। বর্তমানে পাকিস্তান
অধিকৃত কাশ্মীরের দক্ষিন পশ্চিমে ‘রাজৌরী
অবধি এই কম্বোজ রাজ্যের
পুর্ব সীমা। কম্বোজ জাতি
এবং তাদের রাজ্যের বিশেষ
উল্লেখ রয়েছে মহাভারতে এবং
‘টলেমী’র ভুগোলে।
কম্বোজ সৈন্য মহাভারতের যুদ্ধে
সক্রিয় অংশ গ্রহন করেছিলো।
তাদের রাজা ‘সুদক্ষিনা’ কৌরব
পক্ষে যুদ্ধ করে এবং
রাজা সুদক্ষিনা অর্জুনের সংগে যুদ্ধ করে
মারা যান। কম্বোজ দের
গোত্র ‘জাঠ’। এরা
‘ঋষি কমডিল্য’র বংশ ধর।
গান্ধার দের প্রতিবেশী, হিন্দুকুশের
দুই দিকে বসবাস কারী,
প্রাচীন ভারতের ’১৬ টি মহাজনপদ’
এর একটি পুর্ব দিকে
চলে আসতে শুরু করে
চাইনীজ এবং হুন জাতির
বংশ ধর ‘কুষান’ জাতি
যখন ধীরে ধীরে তাদের
মুলভুমি তিব্বত থেকে নীচে
নেমে এসে হিন্দু কুশ
পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে।
কুষান রাজ ‘কনিষ্ক’র
সময় এদের রাজ্য কুষান
সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলে, এই কম্বোজ
জাতির একটি গোষ্টী প্রাচীন
‘প্রাগজোতিষপুর’ (আসাম) এবং বাংলায়
গৌড় দখল করে। এর
আগেও পারস্যের ‘আসিমেনিড’ সাম্রাজ্যের অধীশ্বর ‘সাইরাস’-১ (৫৫৮ থেকে
৫৩০ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দে) কম্বোজ অধিকার করে,
কম্বোজ দের বিখ্যাত শহর
‘কাপিসি” ধ্বংস করে দেয়।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কুষান দের
মুল ভারত থেকে সরিয়ে
দিলে কম্বোজ জাতি তাদের
নিজ ভুমিতে ফিরে আসে।
তারা মৌর্য্য সম্রাট কে নাম
মাত্র কর দিয়ে প্রায়
স্বাধীন ভাবেই বাস করে।
ততোদিনে, উদবাস্তু কম্বোজ গোষ্টি (কুষান
রাজ কনিষ্ক দ্বারা বানানো),
যারা আসাম এবং বাংলাদেশের
গৌড় অঞ্চল নিয়ে এক
রাজ্য স্থাপন করে তাদের
এক ‘রাজা ধর্মপাল’ দক্ষিনের
চোল রাজা রাজেন্দ্র চোলের
কাছে পরাজিত হন। পরাজিত
ধর্মপাল পালিয়ে চলে যান
বর্তমান কম্বোডিয়া তে। সেখানে তিনি
মিলিত হন, কম্বোজদের আর
এক গোষ্টি যারা কুষান
দের থেকে পালিয়ে নেপাল
তিব্বত হয়ে বেশ কিছু
আগেই কম্বোডিয়া তে এসে বাস
শুরু করে। এই জাতিকে
ইন্দোচাইনীজ ইতিহাসে “কাম” (কাপিসি= কামিসি=কাম) বলে। (সোর্স—
The hisory of Cambodia, + আমার
নিজস্ব ভাবে কম্বোডিয়াতে ৪
বার ভ্রমন কালীন অভিজ্ঞতা)। এই
কাম জাতির পদবী ছিলো
‘বর্মন’। বাংলা
থেকে উদবাস্তু ‘পাল কম্বোজ’ এবং
নেপাল তিব্বত হয়ে উদবাস্তু
‘কাম’ কম্বোজেরা মিলে এক রাজ্য
গঠন করে বর্তমান “কম্বোডিয়া’তে। যাদের প্রথম
রাজা “সুর্য্যবর্মন’ তৈরী করেন “আঙ্কোর
ভাট” মন্দির, যা সারা পৃথিবীর
সব থেকে বড়ো ‘বিষ্ণু
মন্দির”।
সেটা ১১১৩ থেকে ১১৫০
শতাব্দীর কথা। মন্দিরটা বানাতে
তাই ৩৭ বছর সময়
লেগেছিলো। সেই ‘কাম’ জাতির
নাম অনুসারে আজো কম্বোডিয়ার আর
এক নাম “কেমর দেশ”—Khemor
Republic of Cambodia আর পল পটের “কেমর
রুস”।।
মুলত ‘পামীর গ্রন্থি’থেকে
বেরিয়ে আসা হিন্দুকুশ পর্বতের
দুইদিকে বাস করতো যে
“কম্বোজ” জাতি, তারাই খ্রীষ্ট
পুর্ব ষষ্ট শতাব্দীতে পারস্য
সম্রাটের, খ্রীষ্ট পুর্ব চতুর্থ শতব্দীতে
(৩২৭ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দে) আলেকজান্ডারের দ্বারাএবং পরে ‘হুন জাতির’
একটি গোষ্টি ‘কুষান’ দের দ্বারা
ঘর ছাড়া হয়ে চারিদিকে
ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরে নেপাল
এবং তিব্বত, দক্ষিনে ও একটি গোষ্টি
যায়, আর পুর্ব দিকে
এরা প্রথমে বাঙ্গলা এবং
পরে সেখান থেকেও দক্ষিনের
চোল রাজা রাজেন্দ্র র
দ্বারা উৎখাত হয়ে বর্তমান
‘কম্বোডিয়া’ তে রাজ্য স্থাপন
করে।
প্রায় এক হাজার বছর
ধরে উদবাস্তু হয়ে এই জাতি
ভারতের উত্তর, দক্ষিনে এবং
পুবে ঘুরে বেড়ায়, আর
এদের ইতিহাস চন্দ্রগুপ মোর্য্য
র অনেক আগে। এরা
আলেকজান্ডারের বাহনীর সংগে সংগেও
বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে। সেই
যুদ্ধের ইতিহাস ও আছে।
আলেকজান্ডার তার ১২ বছরের
আগ্রাসনের জীবনে এই ‘কম্বোজ’দের থেকে যতো
খানি প্রতিরোধ পেয়েছিলেন সেটা পারস্য সম্রাট
‘দারায়ুস–২’ এর কাছ
থেকেও পাননি। সেই মহান
ব্যাক্তি ( The Great) কম্বোজ দের ওপরে
যে নিষ্ঠূর হত্যালীলা চালান তা আলেকজান্ডারের
ইতিহাসে বর্নিত আছে। মাত্র
২০০ বছরের ব্যাবধানে নৃসংশ
ভাবে অত্যচারিত হয়ে, তাদের সবচেয়ে
সুন্দর এবং উন্নত শহর
“কাপিসা” ধংস হয়ে যাবার
পর এরা আর ‘কুষান’
দের মোকাবিলা করতে পারেনি। ইহুদীদের
মতো ছড়িয়ে পড়ে ভারতের
নানা দিকে, এমনকি ভারতের
বাইরে।
ঐতিহাসিকেরা, (ব্রিটিশের ভাড়া করা এবং
বাম পন্থী লেখকেরা—রাহুল
সাংকৃত্যায়ন থেকে শুরু করে
হাল আমলের ইরফান হাবিব
এবং রোমিলা থাপার,) এই
কম্বোজ জাতিকে ‘ইন্দো–ইরানিয়ান’ বা
কেউ কেউ, ‘ইন্দো–ইউরেশিয়ান’
(ভোলগা নদীর পাশ থেকে
আসা) নামে আখ্যায়িত করেন
এবং তাদের বলেন “আর্য্য”।
হরপ্পা–মহেঞ্জোদারো থেকে শুরু করে গুজরাট–রাজস্তানের বিস্তৃত অঞ্চলে, সরস্বতী–সিন্ধু নদীর অববাহিকায় যে প্রাচীন সভ্যতা প্রায় ৬০০০ থেকে ৯০০০ বছর আগেই গড়ে ঊঠেছিলো,সেই সভ্যতাকে এরা ‘প্রাক আর্য্য’, ‘প্রাক বৈদিক’ বলে দূরে সরিয়ে রাখেন। মাত্র ২০০ বছরের কাছাকাছি আবিষ্কৃত এই সভ্যতার পুর্ন বিবরন আজো আমরা পাইনি। তবে সেটা বর্তমান পাকিস্তানের হরপ্পা –মহেঞ্জোদারো ছাড়িয়ে রাজস্থান–গুজরাটে (লোথাল) বের হয়ে পড়ছে। সেই সভ্যতার শহর নির্মান প্রনালী, পয়ঃপ্রনালী, উন্নত মানের জল সরবরাহ পদ্ধতি, চিকিৎসা পদ্ধতি, এমনকি দাঁতের চিকিৎসা যে আমাদের বর্তমান যুগের থেকেও অনেক উন্নত ছিলো, সেটা কিছু কিছু বিদেশী পন্ডিতেরা ‘তেতো বড়ি’ গেলার মতো এখন মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু বাম পন্থীরা সেই সভ্যতাকে ‘সনাতনি–হিন্দু–আর্য্য’ সভ্যতা নাম কিছুতেই দেবেন না বলে হাড় ভাংগা পন করেছেন।।