সম্রাট আকবরের কিছু অজানা ইতিহাস……।।

ভারত বর্ষের ইতিহাসে খুবই কম সংখ্যক কিংবদন্তির নামের পূর্বে “মহান”অথবা  ইংরেজি “The Great” প্রত্যয়ে ভূষিত হয়েছেন। আমি সেই তিন মহানের নাম স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি – আলেকজান্ডার, সম্রাট অশোকা এবং সম্রাট আকবর। নামেরপূর্বে এই “মহান”ভূষণে অতি সহজে অলংকৃত হয়নি।
এর জন্য তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক অবিস্মরণীয় কর্ম কান্ড করতে হয়েছিল। এই পুণ্য ভূমি একের পর এক পুণ্যবান জন্ম দিয়েছেন যেমন রাম,কৃষ্ণ, বিক্রমাদিত্য, পৃথ্বীরাজ,রানা প্রতাপ ও শিবাজী এর মত আরও সামান্য কয়েকজন। কিন্তু ইতিহাসবিদরা কেউ তাদেরকে “মহান” অথবা “The Great” বলে আখ্যায়িত করেননি।

এটার একটাই কারন হতে পারে। “মহান”উপাধিতে প্রাপ্ত হওয়া খুবই শক্ত কাজ। মহান উপাধিতে ভূষিত হতে হলে আপনাকে শুধু মাত্র তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে নির্মম খুনী হতে হবে। এবং আপনাকে অবশ্যই হিন্দুত্ববাদের মূল স্রোতে কোন না কোনভাবে আঘাতকারী হতেই হবে। এই সন্ত্রাসীদের নামের তালিকায় প্রথমেই আসবে আলেক্সজান্ডারের নাম যিনি সমস্ত বিশ্ব জয়ের অভিলাষের অগণিত মানুষ হত্যার পৈশাচিক আনন্দে মেতে উঠেছিলেন। পরবর্তীতে পোরাস (Porus) দের কাছে অনাকঙ্খিত ভাবে পরাজিত হয় এবং জীবন বাঁচানোর জন্য লজ্জাজনক ভাবে পালিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মহান ইতিহাসবিদগণ এটাকে পোরাসের পরাজয় বলে মনে করেন। মনে হচ্ছে তারা ইতিহাসবিদ কম, কবি ও সৃষ্টীশীল লেখক বেশী। কিন্তু অপর পক্ষে গ্রীক ইতিহাসবিদগন  আলেক্সজান্ডারের এই পরাজয় স্বীকার করেছেন! কিন্তু এই ব্যাপারটি ছাড়াও মূল বিষয়টি হচ্ছে তিনি আক্রমণ করেছেন এবং অসংখ্য প্রাণ হত্যা করেছেন তাই তিনি “মহান“।
তার পরেই আসে রাজা অশোকার নাম যিনি তার শাসনামলে অসংখ্য মানুষ হত্যা করে এবং হঠাৎ করেই তার অনুশোচনা উদয় হয়। এমনকি একজন জনপ্রিয় সৃষ্টিশীল ইতিহাসবিদ রাজা অশোকার অগণিত স্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম এক স্ত্রীর সাথে তার প্রেমের গল্প নিয়ে একটি চলচিত্র পর্যন্ত তৈরী করেছেন। কিন্তু মোদ্দাকথা হচ্ছে তিনি “মহান” উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন কারন অনুতপ্ত হওয়ার পূর্বে তিনি অগণিত তাজা প্রানের রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন যা তখনকার সময়ের অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে ছিলেন এবং হিন্দুত্ববাদের মূল স্রোত থেকে পথ বিচ্যুত হয়ে ছিলেন।
সম্রাট অশোকার মৃত্যুর পরে আরও কয়েকশ বছর ঐ রকম কৃতিত্বের কেউ পুরনরাবৃত্তি করতে পারেনি। তারপরে এলো বর্বর লুটেরাদের যুগ। যারা পশ্চিম এশিয়া থেকে এসেছিল ইসলামের ঝাণ্ডা হাতে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছিল। তাহলে কে “মহান” উপাধির মত এমন লোভনীয় গুণবাচক বিশেষণে বিশেষিত হবেন তা নিয়ে দীর্ঘ শতাব্দী ধরে একটা বিতর্ক চলছিল। এবং অবশেষে এল মহান মুঘল-যার পিতা তীমুর ও মাতা ছিলেন চেঙ্গিস খানদের বংশধর। তার ধারাবাহিকতায় এসেছিল মহান বাবর- একজন মহান লুটেরা, ধর্ষক, খুনী, সমকামী শিশু যৌনচারী । এই সেই মহান বাবর যার রয়েছে স্কুলের ইতিহাস বইয়ের প্রথম পাতায় তার প্রতিচ্ছিবির থাকার মত বিরল সম্মান। এই সমকামী যৌনাচারীর পপৌত্র যার ইতিহাস বর্বরতা ও নারকীয়তার সমস্ত কল্পনাশক্তিকেও হার মানিয়েছে সেই তিনি মহান উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন! তার এই নারকীয় ও বর্বরতা হত্যাযজ্ঞ এমনকি এ যুগের ওসামা বিন লাদেনও করে দেখাতে পারেনি।
যেসকল প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদগণ তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতার অজুহাতে সম্পূর্ন নির্ভরযোগ্যহীন সূত্র দিয়ে একজন কসাইকে মহান রূপে চিত্রিত করতে চাইছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন করার মত এক মহান কর্মের অংশীদার হতে পেরে অগ্নবীর গর্বিত অনুভব করেছে। এই রকম বিশ্বাস ঘাতক থাকলে কারো শত্রুর প্রয়োজন নেই। ভারত বর্ষে যেমন মহান দেশ প্রেমিক জন্মেছে তেমনি অনেক বিশ্বাস ঘাতকও। আজকাল মনে হচ্ছে বিশ্বাস ঘাতকেরাই প্রভাব শালী। এবং ইতিহাস মনে হচ্ছে প্রায় সম্পূর্ন রূপে বিশ্বাস ঘাতকেরাই দখল করে আছে।
অগ্নীবীরের প্রচেষ্টা হবে এই সকল হত্যাকারী, কসাইয়ের ললাটের সম্মানে চিহ্নটি মুছে দিয়ে তার জায়গায় মহারানা প্রতাপ ও শিবাজী মত মহান দেশ প্রেমিকদের বসিয়ে দেবে। এই আর্টিক্যালে আমরা আকবের জীবনের সমস্ত তথ্য প্রদান করব এবং বোঝার চেষ্টা করব কেনইবা ভারতীয় সুদর্শন নায়ক ঋত্বিক রোশন আকবরের ভূমিকায় অভিনয় করে গর্ববোধ করে। অনেক মেরুদণ্ডহীন মানুষ যোধা-আকবরের মিথ্যা কল্পনা প্রসূত গল্পকে খুবই প্রংশসা করে থাকে। আমাদের বক্তব্যের ভিত্তি কোন দক্ষিণ পন্থি”ইতিহাসবিদ নয়,(ধর্ম নিরপেক্ষতার ইতিহাসে দক্ষিণ পন্থি হওয়াকে সব সময় ভুল হিসেবে গণ্য করা হয়!) কিন্তু ভিনসেন্ট স্মিথের মত আকবেরর উচ্চ প্রংশসা কারী যিনি “ Akbar- the great Mughal” রচনা করেছেন যা আকবরের উপর লেখা সবচেয়ে প্রামানিক বলে বিবেচনা করা হয় এবং পাশাপাশি অবশ্যই আবুল ফজলের মত পরগাছাকেও বিবেচনা করব যিনি “আইন- ই-আকবর“ এবং আকবর নামা” রচনা করেছেন। আমরা তাদের সমস্ত কিছুই পর্যালোচনা করব যা এমনকি ঐ পরগাছাও লুকাতে পারেনি। পাঠকেদের অনুরোধ করব আপনারা নিজে থেকে সেসকল গ্রন্থগুলো পড়ে নেন। আমরা এখানে শুধু কিছু খন্ড চিত্র তুলে ধরবো।
মহান আকবরের ভিত্তি
ভিন্সেন্ট স্মিথ তার বইয়ের শুরুতেই বলেছেন “Akbar was a foreigner in India. He had not a drop of Indian blood in his veins…Akbar was more of a Turk than Mogul.” অর্থাৎ আকবর ছিলেন একজন বিদেশী যার শিরায় এক ফোঁটাও ভারতীয় রক্ত নেই………আকবর ছিলেন মুঘল কম তুর্কি বেশী। তার বাপ, দাদা থেকে শুরু করে বংশের সবাই তাদের শাসনামলে ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল লূটতরাজ করা। কিন্তু আমরা তাকে ভারত বর্ষের গর্ব বলে মনে করি !
মহান আকবরের সৌন্দর্য ও উন্নত চরিত্রের চর্চা
বাবর ছিলেন একজন মদ্যপ। হুমায়ুন অতিরিক্ত আফিম গ্রহণের ফলে শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ছিলেন। আকবর মদ ও আফিম দুটোতেই সিদ্ধহস্ত ছিলেন। অত্যাধিক মাদক গ্রহণের দরুন আকবরে দুই পুত্র মারা গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের মুসলিম বন্ধুরা আকবরের জন্য গর্ব বোধ করে!
কেন ঋত্বিক রোশন আকবরের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলেন কারণ ইতিহাসবিদরা বলেছেন আকবর ছিলেন এই ধরণীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ। কিন্তু ভিনসেন্ট স্মিথের মতে “ আকবর উচ্চতায় ছিলেন গড়পড়তা এবং বাম পায়ের কারনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। তার মাথা ডান কাঁধের উপর ঝুঁকে থাকত। তার নাক ছিল ছোট ও সামনের হাড় ছিল মোটা। তার নাসিকা গহ্বর দেখলে মনে হত তিনি রেগে আছেন। অর্ধেক মটর দানার সাইজের সমান একটি আঁচিল ছিল যা ঠোঁট ও নাসিকা গহ্বরের সাথে যুক্ত। সে দেখতে কালো ছিল।”
জাহাঙ্গীর লিখেছেন আকবর নেশাগ্রস্ত অথবা সর্তকাবস্থায় তাকে শেখ বলে ডাকতেন। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে আঁকবর একজন নেশাগ্রস্থ ছিলেন।
আকবরের সহচর ইয়াকুবা লিখেছেন, আকবর এতই মদ পান করতেন যে মাঝে মাঝে অভ্যাগত আসা অতিথিদের সাথে কথা বলতে বলতে তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন। তিনি মাঝে মাঝে তাড়ি (তালের রস দিয়ে তৈরী নেশা জাতীয় পানিয়) পান করতেন। যখন তিনি অতিরিক্ত পান করতেন তখন তিনি উম্মাদের মত আচরণ করতেন।
মহান আকবরের শিক্ষাগত যোগ্যতা
জাহাঙ্গীর লিখেছেন আকবর মাঝে মাঝে বিদ্বানদের মত আচরণ করতেন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তিনি ছিলেন অক্ষর জ্ঞানহীন।
মাতৃ জাতীর প্রতি মহান আকবরের শ্রদ্ধাবোধ
আবুল ফজল লিখেছেন, আকবর রাজা হিসেবে প্রথম দিকের বছর  গুলিতে পর্দার পেছনে থাকতেন। এর মানে কি দাঁড়ায় আমরা সহজেরই বুঝতে পারি। আবুল ফজল আকবরেরহেরেম সম্পর্কে বর্ননা করেছে , “সেখানে ৫০০০ নারী ছিল এবং প্রতিটি নারীর আলাদা থাকার ঘর ছিল” এছাড়াও আকবরের ৩৬ জনেরও বেশী স্ত্রী ছিল।
আকবরের রাজপুত্র সুলভ কমনীয়তার বর্ননা করতে গিয়ে আবুল ফজল আইন-ই- আকবরে লিখেছেনঃ ” শাহেন শাহ্ আকবরের ঘরের সামনেই একটা শুঁড়িখান  স্থাপন করা হয়। সেখানে অসংখ্য বণিতা জড়ো হত যা গণনা করা কঠিন হয়ে পড়ত। সভাসদ গন মাঝে মাঝে নর্তকীদের বাড়ীতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু যদি কেউ কোন কুমারীকে তার বাড়ীতে নিয়ে যেতে চাইতেন তাহলে তাকে অবশ্যই আকবরে কাছ থেকে অনুমতি নিতে হত। কখনো কখনো যুবকদের মাঝে হাতাহাতি শুরু হয়ে যেত । একবার আকবর তিনি নিজেই কয়েকজন বনিতাকে ডাকলেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের মধ্যে কে কুমারিত্ব ছেদন করতে চাও। ”
এখন কথা হচ্ছে কীভাবে এত গুলো বণিতা একই সময়ে জড়ো হবে? অবশ্যই সেসকল ভাগ্যহীন নারীরা ছিল হিন্দু পরিবারের যারা যুদ্ধাবন্দী অথবা তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হত্যা করে সহায় সম্পত্তি লুট করে এবং একে একে তারা আশ্র্য়হীন নিঃস্ব হয়ে পড়ে। কারন ধারণা করা হয় মুসলিম রমণীদের পর্দার আড়ালে রাখা হয় তাই তারা মুসলিম নয় এবং আকবর তার গৌরবজ্বল শাসনামলে সারাজীবন অসংখ্য হত্যা ও নারী অপহরণ করে ছিলেন।
 
আকবরনামাতে আবুল ফজল আরও বলেছেন “যখন কেউ কোন বেগমকে অথবা সভাসদগণের/দালালদের স্ত্রীদের অথবা কোন কুমারী নারীকে উপভোগ করার ইচ্ছা বাসনা করবে তাদেরকে হারেমটি যার অধীনে/ ত্তত্বাবদানে আছে তার কাছে আর্জি পেশ করতে হবে তার পরে সেই আর্জি প্রাসাদের কর্তপক্ষের কাছে পৌঁছুবে। তাদের আর্জি মঞ্জুর হলেই হারেমের অন্দর মহলের প্রবেশের অনুমতি পেত এবং সেখানে তারা এমনকি এক মাস পর্যন্ত অতিবাহিত করত।
তাহলে এখানে এটাই স্পষ্ট যে যোধার ভালবাসার আকবর এমনকি সভাসদ গনের স্ত্রীদের জোর করে উপভোগ করত মাস গুলো সবই দেয়া হচ্ছে আকবরের সেই পরগাছা ইতিহাসবিদের লেখা থেকে কোন নিন্দুকের মিথ্যা অপবাদের নয়।
রানাথাম্ভার চুক্তির প্রথম শর্ত ছিল যে আকবর সেনা বন্দী শত্রু সৈনিকদের মুক্ত করে দেবে বিনিময়ে রাজপুতরা নারীদের বঁধু বেশে রাজ হেরেমে প্রেরণ করবে। তাই অবাক হবার কিছু নেই যে যাদের আত্ম মর্যাদা বোধ ছিল তাদের কাছে মৃত্যুই শ্রেয়তর মনে হবে।
আকবরকে দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ যিনি প্রদান করতেন সেই বৈরাম খানকে হত্যা করা হয়। তার হত্যার পর আকবর বৈরাম খানের বিবিকে বিয়ে করেন যিনি হয়েছিলেন তার প্রিয় রানী। ইতিহাসবিদরা দাবী করেন আকবরের সাথে বৈরাম খানের মতানৈক্য হওয়ার কারনে তাকে বাধ্য করা হয় মক্কার উদ্দেশ্যে গমন করার জন্য এবং পথমধ্যেই পুরনো কিছু শত্রু দল তাকে আক্রমণ করে। এইভাবে তার পুত্র আব্দুরকেও হত্যা করা হয়।
আকবর তার সভাসদ/দালালদের প্রতি দালালী (Griman) হিসেবে তাদের মধ্যে যৌন দাসী বিতরণ করত. এভাবে আকবর ও তার সেনার কাছে নারী নিছকই উপভোগের সামগ্রী ছিল।
আকবরের শাসনামলে মিনা বাজারের খুবই জনপ্রিয় ছিল যেখানে প্রতি নব বর্ষ রাতে বিভিন্ন পরিবারের নারীদের হয় ফুসলিয়ে, প্রতারনা করে অথবা জোর পূর্বক জাঁহাপনার সম্মুখে হাজির করা হতো বেছে বেছে নেওয়ার জন্য।
চতুরঙ্গ:
লিখেছেনঃ আগ্নিবীর