অনেকই বলে বিশ্বের বড় বড় যুদ্ধখুলোর প্রধান ব্যাক্তিরা কোন ধর্মের বলবে কি স্টালিন, লেলিন, মাও, হিটলার, বুশ এদের নাম করে দেখাবেন তারা কত মানুষ হত্যা করেছে। কিন্তু এরা ভাবে না, এরা কি ধর্মীয় শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল? তারা কি ধর্মীয় নির্দেশ পালন করতে এসব চালিয়েছিল? কোনটা ধর্মীয় হত্যা আর কোনটা রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এই তফাত কোন মুমিনের মাথাতেই ঢুকতে চায় না তা নয়- ইচ্ছা করেই নিজেদের অন্যায়কে জাস্টিফাই করতে চায়।
সালমান রামাদান আবেদি ম্যানচেস্টারের মেয়র নির্বাচিত হলে সারাবিশ্বে হেডলাইন হতো, ‘ইংলেন্ডের ম্যানচেস্টারে প্রথম মুসলিম মেয়র’। ঢাকার কাওরান বাজারের সবচেয়ে প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ সাংবাদিকটিও একজন ‘মুসলিম মেয়র’ প্রথমবারের মত নির্বাচিত হওয়াকে হাইলাইট করে কলাম লিখত। এই সালমান রামাদান আবেদিকে যদি জেমন বন্ড চরিত্রের জন্য ব্রিটিশ ওয়ার্নার ব্রাদার্স নির্বাচিত করত, কিংবা অপেরা শিল্পী হিসেবে, আর্টিস্ট, মিউজিশান হিসেবে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেতো তাহলে তার মুসলিম পরিচয়টিকে প্রধান করে আমাদের সবচেয়ে সেক্যুলার লোকটিও গর্বিত হতেন। হায়, সালমান রামাদান! এখন কেউ তাকে মুসলমান বলেই স্বীকার করতে চাইছে না! কেউ ধর্মীয় পরিচয়ে সিনেমায় অভিনয় করে না। গবেষণা করে না, নৃত্য, শিল্পকলা, মিউজিক কিছুই ধর্মীয় পরিচয়ে ঘটে না। অথচ যখন ধর্মীয় পরিচয়কে একমাত্র লক্ষ করে একটি হামলা চালানো হলো তখনই একজন সালমান রামাদানকে মুসলিম পরিচয় থেকেই খারিজ করে দিতে সবাই উঠেপড়ে লেগেছে!
এখন দাবী করা হবে এই সন্দেহভাজন জিহাদী মদ খেতো। নাইট ক্লাবে যেতো। মাদক নিতো। চুরি করে জেল খেটেছে। এসব কি কোন মুসলমানের কাজ? প্রকৃত মুসলমান যে ধর্মের জন্য কাজ করে সে কি এসব করতে পারে? মুসলমানের তো অভিনয় করার কথা নয়। গান, চিত্রকলা, ভাষ্কর্য নির্মাণ কি কোন মুসলমান করতে পারে?
তার মানে কি সালমান রামাদানের কর্মকে মুসলমানরা প্রত্যাখান করছে? মোটেই না! এমনটি কখনো ভাববেন না। সব শ্রেণীর বিশ্বাসী মুসলমানই পৃথিবীতে ইসলামী শাসন চায়। এই চাওয়ার ধরণে পার্থক্য আছে। কেউ হোমিওপ্যাথি, কেউ এলোপ্যাথি, কেউ পাশ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হারবাল ফর্মূলায় সেই শাসনটার বাস্তবায়ন চান। জিহাদীরা এলোপ্যাথিতে বিশ্বাসী। মডারেটরা হোমিওপ্যাথিতে। আর আমাদের ‘ইসলামী সেক্যুলারজিবিরা’ পাশ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হারবাল ফর্মুলাতে বিশ্বাসী। সাধারণ মুসলমানরা এরকম কনসার্ট মন থেকে মেনে নেয় না। একত্রে ছেলেমেয়েরা রাত করে নাচানাচি করে গান শোনা কোন মুসলমানের পক্ষেই হজম করা কঠিন। সারা বিশ্বের মুসলিমরা কোন নাইট ক্লাবে আগুন লেগে মানুষ মারা গেলে সম্বস্বরে বলে উঠে, আল্লাহতালার গজব পড়ছে! কোন সিনেমা হলের ছাদ ধসে গেলে তারা আল্লাহ অকাট্ট প্রমাণ পেয়ে যায়। এমন কি কোন হিন্দু তীর্থযাত্রায় পদদলিত হয়ে মারা গেলে, কোন বৌদ্ধ বিহার ধসে গেলে তারা শিরকের উপযুক্ত জবাব বলে মনে করে।
সব সন্ত্রাসী হামলার পরই দেখা যায় একজন আরবী নামের ক্রিমিনাল ধরা পড়ছে। এটিকে মুসলমানরা ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখে। তাদের দাবী জঙ্গিবাদ বিশ্বব্যাপী সমস্যা হলেও, মুসলিমদের টার্গেট করে বসে পশ্চিমা শক্তিগুলো। দাবীর মধ্যেই শয়তানীটা লুকানো দেখুন। আজতক এসব হামলায় কোন শিখ, বৌদ্ধ, ইহুদী, হিন্দু, খ্রিস্টানসহ পৃথিবীর সাড়ে চার হাজার ধর্মের আর কেউ ধর্মীয় আইডোলজিতে বিধর্মীদের উপর হামলা চালায় না। ইসলাম ধর্মে যদি জঙ্গিবাদ না-ই থাকবে তাহলে কেন সব জঙ্গিই মুসলমান হয়? অন্তত একবার কি নিজ মাতৃভাষাতে কুরআন আর হাদিসগুলো পড়ে দেখবেন?