ইসলামের একটি বাহ্যিক চেহারা আছে যেটি নিঃসন্দেহে যে কোন অমুসলিমকে মোহিত করবে। যেমন: ইসলাম শান্তি ও সাম্যের কথা বলে। নারীকে শালীনতা ও পুরুষের দৃষ্টি নত করতে নির্দেশ দেয়। ঘুষ, দুনীর্তি, সুদকে হারাম বলে।
… মনে করুন ইরানে গিয়ে ইসলামের ঠিক এইরকম একটা চেহারা দেখে যদি কোন ইউরোপীয়ান বা এশিয়ান অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে তো তার হালটা কি হবে? তিনি সৌদি ওহাবী ও অন্যান্য সুন্নীদের কাছে একজন ‘শিয়া মুসলিম’। সম্প্রতি শিয়াদের অমুসলিম বলে সৌদি মুফতি ফতোয়া দিয়েছে। সুন্নীরা মনে করেন শিয়ারা ইসলামকে বিকৃত করে যে পাপ করেছে তার জন্য তাদের পরকাল বরবাদ হয়ে গেছে। একই কথা শিয়ারাও মনে করে সুন্নীদের সম্পর্কে। সারা বিশ্বে শিয়া সুন্নী পরস্পরকে বোমা মেরে হত্যা করতে রোজই বোম ফুটাচ্ছে। যে ৭০-৭২-৭৩ ফিকরার কথা আমরা জানি তারা প্রত্যেকেই নিজেদের বাদে অন্যদের জাহান্নামী মুসলিম ভাবে। তার মানে একজন অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেও কথিত জান্নাতের বদলে দোযগে যেতে পারে! কারণ মুসলিমরাই দাবী করে তারা নিজেরা যে ফিকরায় বিশ্বাসী সেটি বাদে বাকীরা জাহান্নামে পতিত হবে!
এবার আসি এই লেখাটার মূল্য বক্তব্যে। আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন, ইসলামের বিতর্কিত আইন ও বিধিগুলোর কথা জেনেও লোকে ইসলাম গ্রহণ করে কেন? কিংবা ইসলামের সন্ত্রাস দেখেও কেন ইসলাম গ্রহণ করে খোদ পশ্চিমাদের কেউ কেউ? যিনি একদিন আধুনিক পশ্চিমী গণতন্ত্র ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি কি করে বহু বিবাহ, দাসী সহবাসের মত বিধান, জিজিয়া কর ও গণিমাতের মালের মত মানবতা বিরোধী নিয়মকে সাফাই গান? একদিন যিনি জেনেভা কনভেশন আইনের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন তিনি কি করে যু্দ্ধবন্দিনী নারীকে ধর্ষণের মত আইনকে সঠিক বলে বিশ্বাস করেন? আমরা প্রায়ই খবরের কাগজে ফলাও করে প্রচার হতে দেখি কোন ইউরোপীয়ান ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কোন সেলিব্রেটি, কিংবা আফগান সীমান্তে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তালেবানের হাতে কোন পশ্চিমা সাংবাদিক ইসলাম গ্রহণ করেছেন স্বেচ্ছায়। কিংবা পাশের দেশে কোন হিন্দু জাকির নায়েকের ওয়াজ শুনে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে তারা ইসলামের বিতর্কিত নিয়ম ও আইনগুলোর একনিষ্ঠ সমর্থক হলে পরে মানুষ চিন্তা করে- এইরকম মানবতা বিরোধী আইনের প্রতি তারা কি করে আস্থাশীল হয়? এসব জেনেও কেন তারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে? ভেবে যেন কেমন একটু দিশেহারা অবস্থা-তাই না?
আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখি ঘটনাগুলো আসলে কি ঘটে। তার আগে বলে নেই রোজ ইসলাম ত্যাগের প্রচুর ঘটনা ঘটে যা আমাদের মিডিয়া তো বটেই পাশ্ববর্তী দেশের ‘অমুসলিম মিডিয়াতেও’ সেসব প্রচার করাটাকে অনুচিত মনে করে। তাছাড়া ছাগুদের মিথ্যা ইসলাম প্রচারের খবর প্রচার, জাকিরের সাজানো ইসলাম গ্রহণের ঘটনাগুলো মাথায় রেখেই বলছি, ইসলাম গ্রহণ যে ঘটছে না তা নয়। রোজই মানুষ খ্রিস্টান-ইসলাম-ইসকন-বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করছে বা ত্যাগ করছে। এগুলো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা মানব সমাজের জন্য। আমাদের আলোচনার বিষয় মানুষের ধর্মান্তরিত হওয়া এবং পরবর্তীতে সেই ধর্মের নিমর্ম ও বর্বরতাকে গ্রহণ করা। লোকে প্রশ্ন করে এইসব বর্বরতা জেনেও কি করে সে ঐ ধর্মকে গ্রহণ করল? উত্তর হচ্ছে, না জনাব, ঐ ব্যক্তি কিছুতেই সেই ধর্মের বর্বর, অসভ্য, মানবতা বিরোধী কোন আইন বা বিধিকে জেনে কখনই গ্রহণ করেনি। শুরুতেই যে বাহ্যিক চেহারার কথা বলেছি সেটি সব ধর্মেরই একটা আলগা মুখোশ। এই মুখোশ দেখেই যখন কেউ আগ্রহী হয়ে ধর্ম গ্রহণ করে, তারপর তার কি রূপান্তর ঘটে সেটাই বলব। তার আগে বলে নেই, পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষ সবচেয়ে বেশি যেসব কারণে ধর্মান্তরিত হয় তার মধ্যে পার্থিবভাবে লাভবান হওয়ার চিন্তাই মূখ্য। সংখ্যালঘু হয়ে বৈষম্য ও নিপীড়ণ থেকে রেহাই। প্রেম-ভালবাসা ইত্যাদি কারণে। ব্যক্তিগতভাবে একজন হিন্দু ও খ্রিস্টানকে চিনি যারা সামাজিকভাবে সুবিধা নিতে মুসলিম নারীকে বিয়ে করে শশুড়বাড়ির টাকায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। যাক এসব বিষয়। আমরা না হয় ‘আকৃষ্ট’ হয়ে ধর্মকারীদের বিষয়েই আমাদের আলাপ সীমাবদ্ধ রাখি।
প্রথম কথা হচ্ছে ধর্ম ও ঈশ্বরে বিশ্বাসী মানুষই ধর্মান্তরিত হয়। আগে হয় পৈত্বিক ধর্মের বিষয়ে উদাসিন ছিলেন, তেমন পালনটালন করতেন না, তবে এই বিশ্বচরাচরে কেউ একজন যে আছেন এমনটা মানতেন- এরকম লোকজনই ধর্মান্তরিত হয়ে তাদের ‘প্রকৃত’ ঈশ্বর ও ধর্মকে পেয়ে একদম মৌলবাদী ধার্মীক হয়ে যান। যেমন ভারতের গায়ক কবীর সুমন। এরা কোন সর্বশ্রেষ্ঠ ও শান্তিময় ধর্মের বাহ্যিক রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে গ্রহণ করে ফেলেন। যখন গ্রহণ করেন তখন তারা কেউ সুরা আনফাল কিংবা সুরা তাওবার তাফসির পড়ে মুসলিম হোন না। কিংবা বুখারী শরীফের দাসদাসী ছহবত, যুদ্ধবন্দিনী নারী ভোগকে জেনে গ্রহণ করেন না। যে বাহ্যিক রূপের কথা বলেছি- তাকে জেনেই গ্রহণ করেন। বিশ্বাস হচ্ছে একটা অন্ধত্ব। এটি আপনার বিচার ও বিশ্লেষণের উপর একটা পর্দা ফেলে দেয়। তখন আপনি নির্মোহভাবে বিচার করতে পারেন না। আপনি যাকে অবতার কিংবা নবী হিসেবে বিশ্বাস করেছেন, আপনি যখন বিশ্বাস করেন এইসব আইন-বিধি সব সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে তখন আপনার ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক নৈতিকতার পরাজয় ঘটবে আপনার বিশ্বাসের কাছে। নৈতিক বলতে আমাদের মানব সভ্যতার যে ঐতিহাসিক ধাপে ধাপে উত্তরণ তাকে অস্বীকার করে কথিত হাজার বছর আগের একজন আদিম ঈশ্বরের যুগ অনুপযুগি নৈতিকতাকেই নিজেদের নৈতিকতা হিসেবে গ্রহণ করতে দ্বিধা করে না। আপনি যখন কিছুতে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছেন তখন সেই বিশ্বাসের সব কিছুকেই বিশ্বাস করেছেন। যদি শুরুতেই সেই বিশ্বাসের তলের চেহারা দেখানো যেতে তাহলে হয়ত আপনার মানুষ্যত্ব, আপনার শিক্ষা ও আধুনিক রুচি আপনাকে তা গ্রহণ করতে বাধা দিতো। কিন্তু আপনি প্রথমেই না বুঝে না জেনে, না পড়েই একটা বিশ্বাসকে গ্রহণ করেছেন।
একজন ধর্মান্তরিত মানুষ ঐ ধর্মের যারা জন্মগতভাবে ধর্মটাকে পেয়েছে তার থেকে বেশি প্যাক্টিক্যাল ধার্মীক হোন কারণ এটিই মানুষের আজন্ম স্বভাব। একজন চেইন স্মোকারকে দিয়ে বিচার করুন। সাধারণত আমরা কি দেখি, একজন অনবরত সিগারেটখোর যখন দুম করে সিগারেট ছেড়ে দেন তখন তিনি হয়ে উঠেন উগ্র সিগারেট বিরোধী। লোকজনকে গায়ে পড়ে সিগারেট না খেতে উপদেশ বিলান। বাসে-ট্রেনে গায়ে পড়ে ঝগড়া করেন। সেই লোক এতটাই সিগারেটের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়েন যে, তিনি মনে মনে ভাবেন, পৃথিবীতে সমস্ত তামাক চাষ যদি জোর করে বন্ধ করে দেয়া যেতো! যদি প্রতি শলা সিগারেটর দাম হাজার টাকা করে ধূমপায়ীদের নাভিশ্বাস উঠানো যেতো… যদি তাদের সিগারেট খাওয়ার অপরাধে প্রকাশ্যে রাস্তায় কান ধরে উঠবোস করে সাজা দিয়ে এই নেশা ছাড়ানো যেতো…। চিন্তা করে দেখুন, চিন্তা কতখানি নিচে নেমে গেছে! অথচ সেই লোকই যখন সিগারেট খেতো তখন বাজেটে সিগারেটের দাম বাড়লেই গালাগালি করতেন সরকারকে। স্মোকিং জোন করার জন্য পাবলিক প্লেসে দাবী করতেন। ঠিক একইভাবে একজন নওধার্মীক তার নতুন ধর্ম নিয়ে এরকমই চিন্তা করেন। তার ফেলে আসা ধর্ম ও বিশ্বাসকে দমন করতে এই রকমই প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা করেন। এবং এসব ভাবনা অন্যের অধিকার যে হরণ করছে সে অনুভব করার ক্ষমতাও তখন লোপ পায়।
একজন উচ্চ শিক্ষিত প্রা্শ্চত্যের অমুসলিম ধর্মের বাহ্যিক চেহারার দেখে, যেহেতু তাদের সমাজে ধর্মের ধার ও ভার আর আগের মত নেই, পরিবারেও কোন ধর্ম চর্চা নেই, তাই হঠাৎ ইসলামের আকৃষ্ঠ হয়ে সে তার নিচের ধর্মের সঙ্গে তুলনা করতে পারে না। বস্তুত সে তার জন্মগতভাবে পাওয়া ধর্মটি সম্পর্কেও কোন ধারণাই রাখে না। সত্যি কথা বলতে গেলে আফ্রিকার জুলু সম্প্রদায়ের যে ধর্ম আছে, মানুষ যদি মনে করে তার একটি ঈশ্বর ও ধর্মের খুব প্রয়োজন তাহলে সেই জুলুদের ধর্মই যথেষ্ঠ। আধুনকি মানুষ কেন, সেই গুহা মানবদেরও তাদের সমাজে এক ছটাক ধান কিংবা এটা হরিণ শিকার করতেও ধর্ম কোন সহায়তা করেনি। আজকের আধুনিক জীবন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তর উৎকর্ষতায় যখন প্রাচীন যুগের মানুষদের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ ও প্রাকৃতিক অনিশ্চতায় থেকে মুক্ত, তখনো যদি কেউ ঈশ্বর ও ধর্মের জন্য হাহাকার করেন, পৃথিবী শ’পাঁচেক অনুসারীর একটা মৃত প্রায় ধর্মটিকেও তিনি গ্রহণ করে দেখতে পারেন- দিব্যি আপনার কাজ চলে যাবে! ধর্ম কখনই জীবন বিধান হতে পারে না। কারণ প্রতি শতাব্দি পরেই দেখা যায় মানুষের জীবন বদলে যাচ্ছে। হাজার বছর আগের মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে আমাদের আছে বিস্তার ফারাক। কাজেই সেই পুরাতন তথাকথিত “জীবন বিধান” অনুসরণ করতে গেলে আজকের সময়ের সঙ্গে প্রতি পদে পদে ঠোক্কর বাধবে। এই বৈজ্ঞানিক সত্যটি একজন ধার্মীক মানতে পারেন না কারণ তিনি বিশ্বাসের কাছে আগেই নিজের বুদ্ধিকে বন্ধক দিয়ে বসে আছেন।
বহুশ্বরবাদ আর একেশ্বরবাদ দুটিরই জন্ম প্রাচীন গ্রীসে। বহুশ্ববাদে যে সমস্ত ফাঁকফোকর ছিল সেখান থেকেই একেশ্বরবাদ দর্শনের জন্ম। কাজেই আইডিয়া হিসেবে একেশ্বরবাদ বহুশ্ববাদ থেকে তুলনামূলকভাবে বেটার। যে কারণে দুইজন ধার্মীক তাদের বিশ্বাস থেকে যখন তর্ক করবে তখন একেশ্বরবাদীর জিতে যাবার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। সারা পৃথিবীতে একমাত্র মুসলিমরাই তাদের ধর্মকে নিয়ে মধ্যযুগের মত উন্মত্ততায় ভুগে যা অন্য ধর্মের অনুসারীদের একদমই কম। যদিও ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মের রমরমা ব্যবসা এখনো লক্ষণীয়। কিন্তু এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল, ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশে ধর্মের সেই ধাঁরালো দাঁত ও নখ হারিয়ে এখন প্রায় অর্থব হয়ে পড়েছে। এই সুযোগটায় ইসলাম সেই সব মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারছে যাদের এই আধুনিক উন্নত বিশ্বে জন্মেও একটি ঈশ্বর ও ধর্মের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তারপর জিহাদ, জিজিয়া, গণিমত, শরীয়া ইত্যাদিতে সমর্থন কেমন করে জন্মে তা তো উপরেই আলোচনা করলাম।
কোন একটি বিষয়ের উপর স্বার্থহীন অনুপ্রেরণাও সেই বিষয়ে অন্য একজনকে আকৃষ্ট করতে পারে। হতে পারে সেটা হিটলারের ন্যাৎসি মতবাদ। সেই মতবাদের অনুসারীরা যদি তাদের বিশ্বাসের জন্য অকুতভয়ে লড়তে থাকে, বিশ্বাসের জন্য নিশ্চিত মৃত্যুতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, নিঃস্বার্থভাবে সব ত্যাগ করতে পারে- তাহলে সেটা দেখে কেউ কেউ ভেবে আকুল হতে পারে যে, কি এমন আছে ন্যাৎসিবাদে যার জন্য এরা এমন পাগল! মরতেও পিছু পা হয় না? ন্যাৎসিবাদ কোন ধর্ম না, কিন্তু যদি বিষয়টা ধর্ম ও ঈশ্বর সংক্রান্ত হয় তো দু-চারজন সেই ধর্মের অনুসারীদের এমন লড়াকু হতে দেখে তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনটার কথা আমরা আফগান সীমান্তে শুনেছি। কিংবা তালেবনাদের জেরা করা এফবিআই কোন অফিসারের ইসলাম গ্রহণের কথাও তুলনা করা যায়। তারা নিজেরা বক্তব্য দিয়েছিল যে, এমন বিশ্বাসের জন্য যারা এতটাই নির্ভিক ও স্বার্থহীন তাদের বিশ্বাসটাই প্রথম আমাকে আকৃষ্ট করেছে…। তাফসির ইবনে কাথিরের একটা ঘটনার উল্লেখ আছে। একজন নবদীক্ষিত মুসলিম ধর্মীয় বিদ্বেষজনিত কারণে একজন ইহুদীকে হত্যা করেছিল। এটা শুনে খুনির বড় ভাই তাকে বলেছিল, তুই যাকে হত্যা করলি তারা আমাদের কত উপকার করেছে, আমাদের বিপদেআপদে রক্ষা করেছে, আমরা ভাই ভাই হয়ে কয়েক পুরুষ বসবাস করছি তুই তাকে হত্যা করলি! তখন ছোট ভাই জবাবে বলেছিল, আমি যে সত্ত্বাকে বিশ্বাস করি, যাকে নবী বলে মানি তাকে যদি কেউ অস্বীকার করে, যদি তুমি সে হও তাহলে তোমাকে হত্যা করতেও আমার দ্বিধা হবে না।… এই একনিষ্ঠ ও দীপ্ত বিশ্বাস যার প্রতি, যার কথায় ছোট ভাই আগুনেও ঝাপিয়ে পড়তে পারে, কি এমন জিনিস আছে তার কথাতে, বড়ভাই সম্মত হলেন তাকে বিশ্বাস করতে…। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানী সেনা প্রধান নিয়াজীকে ভারতের মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের প্রদান অররা জিজ্ঞেস করেছিলেন, মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের চৌকস সেনাবাহিনী হারল কেন? নিয়াজী একটা কথাই বলেছিল, মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা হাজার টর্চার করার পর মুখ খুলত না। মরতে ওরা ভয় পেতো না। এটি ছিল আমাদের কাছে একটা বিস্ময়!… এটা তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল। খেয়াল করুন, চে গুয়েভারা কিংবা জীবন্ত কিংবদন্তি ফিদেল কাস্ত্রে, মাও, লেলিনদের অগ্নি সংগ্রামী ও নির্ভিকতায় অনুপ্রাণীত হয়ে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েরা ঘর ছেড়ে অনিশ্চিত জীবনে নেমে পড়েছিল। পুলিশের গুলি খেয়ে, জেলখানায় টর্চারসেলে জীবন দিয়েছে। কিন্তু তাদের আদর্শ থেকে ফেরানো যায়নি। নকশালবাড়ি আন্দোলনে পাখি মত জীবন দিয়েছে ভারতবর্ষের ছেলেরা। হাজার টর্চারে তাদের মুখ থেকে কোন কথা বের করা যায়নি। কমিউনিজম কোন ধর্ম নয়, কার্ল মাক্সও কোন নবী নয়, তাহলে ভাবুন, কোন নবী ও তার ধর্ম যদি তাদের অনুসারীদের মধ্যে এইরকম লড়াকু প্রেরণা দিতে পারে তাহলে কি ঘটতে পারে? পশ্চিমের কত সাদা চামড়ার তরুণ-তরুণী যে আজকে আইএসের নৃশংসতায় আকৃষ্ট হচ্ছে তার রহস্য নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝা গেছে?
তরুণরা সন্ত্রাসে আকৃষ্ট হয়। একবার আকৃষ্ট হতে পারলে তারপর যৌনদাসী, গণিমতের দ্বিমত করার মত নৈতিকতাকে হারিয়ে ফেলে। সেটাই আমরা এখন প্রত্যক্ষ করছি।