বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে, এক ছাপোষা বালকের চিঠি ( (পঞ্চম খন্ড )
—————————————
শ্রীমতী মমতা ব্যানার্জী
মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ
–
শ্রীচরণেষু দিদি,
–
প্রণাম নেবেন।
–
আপনি- মাঝে মাঝেই অভিযোগ করেন- কেন্দ্রের বঞ্চনার জন্য, রাজ্যের কোন উন্নতি করা যাচ্ছে না। নইলে আপনি ফাটিয়ে দিতেন।
আপনি কলকাতাকে লন্ডন বানিয়ে দিয়েছেন। শিলিগুড়িকে সুইজারল্যান্ড বানিয়ে দিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গকে, দেবরাজ ইন্দ্রের নন্দন কানন বানিয়ে দিয়েছেন।
–
ঘাটাল মাস্টার প্লানের জন্য, কেন্দ্র টাকা দেয় নি ; নইলে ঘাটালকে আপনি ভেনিস বা রোম বানিয়ে দিতেন।
“সাধারণ মানুষের এতো যন্ত্রণা কেন ?” সে প্রশ্ন করলেই আপনার সোজা উত্তর- “কেন্দ্র টাকা দেয় নি। নইলে আপনি নাকি ফাটিয়ে দিতাম।
” এই তথ্য- সত্য অথবা রাজনীতি ?
–
ভারতীয় গণতন্ত্র বা সংবিধান অনুযায়ী, কেন্দ্রের কাছ থেকে- কোন রাজ্য কত টাকা, কিভাবে, কি খাতে পাবে ; তা সবই গণতন্ত্রের প্রাথমিক কাঠামো অনুযায়ী স্থির করা হয়। কেন্দ্র যদি- সেই কাঠামোকে অসম্মান করে,
বা কোন রাজ্যকে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত করে, তবে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার (হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট ) কাছ থেকে আপনি তার প্রতিকার চাইতে পারেন।
আপনি বা আপনার দল যদি মনে করেন- কেন্দ্র সেই অন্যায় করেছে, তাহলে আপনি, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন নি কেন ?
–
সারদ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদেরকে বাঁচানোর জন্য- আপনি দেশের সব চেয়ে দামী, এবং তাবড় তাবড় উকিল দিয়ে, রাতারাতি, হাইকোর্ট আর সুপ্রিম কোর্টে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।
অথচ ৯ কোটি বাঙালীকে, কেন্দ্র যদি দশক দশক ধরে ঠকাচ্ছে (আপনার দাবী অনুযায়ী), তাহলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আপনি মামলা করছেন না কেন ?
চোরেদের জন্য আপনি লড়তে পারেন।
অথচ- ৯ কোটি সাধারণ বাঙালীর জন্য আপনি লড়তে পারেন না ?
আপনি তাহলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কেন ?
আপনি তাহলে বাংলার অগ্নিকন্যা কেন ?
–
না দিদি না। আপনি তা পারেন না। কেন ?
কারন আপনি নিজে জানেন- আপনার এই অভিযোগ দেশের আইনের দাঁড়িপাল্লায় টিকবে না।
কারন- এই অভিযোগ মিথ্যা।
এই অভিযোগ যদি সত্য হয়- আপনি আজই সুপ্রিম কোর্টে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা করুন।
৯ কোটি বাঙালী আপনার পাশে দাঁড়াবে।
আপনার এই ছোট্ট ভাই, আপনার মামলার জন্য পথে পথে ভিক্ষা করবে।
আজই, এখনই- কেন্দ্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটা বড়সড় মামলা ঠুকে দিন।
–
আপনার সেই সৎ সাহস নেই। তা যদি থাকতো, আপনি তাহলে- কবেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা লড়তে পারতেন।
আপনি- ৯ কোটি বাঙালিকে, বছর বছর ধরে, ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে বলে ঠকাচ্ছেন।
মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে, অজ্ঞ জনগণের কাছে- আপনি “মহিয়সী মাতা” সাজছেন।
হাজার হাজার মিথ্যে বলে, জনগণকে আপনি উল্লুক বানাচ্ছেন। নিরীহ জনগণের অজ্ঞতা আর ক্ষমার সুযোগ নিয়ে, আপনি মানবতার অপমান করছেন। তাদের বিশ্বাসকে আপনি অসম্মান করছেন।
–
বাংলার ৯ কোটি নিরীহ মানুষকে, আপনি যে এতো নৃশংস ভাবে বারবার ঠকাচ্ছেন ; তাতে ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করবেন কি ?
ঈশ্বর বলে যদি কেউ থাকেন- উনি আপনাকে এজন্য শাস্তি দেবেনই দেবেন।
–
ঘাটালের মানুষ একশো বছর ধরে হাহাকার করছে। শিশুরা অনাহারে মরছে।
বন্যার দূষিত জলে, রোগে আক্রান্ত হয়ে, তারা রগড়ে রগড়ে মরছে। আর আপনি সেই নারী-শিশুদের জীবন আর রক্ত নিয়ে কেবল রাজনীতি করছেন।
আপনি যদি এতো মহিয়সী নারী- তাহলে আপনি রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে, কেন্দ্রের কাছে ভিক্ষে না করে- আজই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পাঁচ বছরের একটা পরিকল্পনা করছেন না কেন ?
পশ্চিমবঙ্গ- কেন্দ্রের মতো ধনী নয় ঠিকই, কিন্তু আপনার সৎ ইচ্ছে থাকলে- ঘাটালের মানুষের, যন্ত্রণার একটা প্রতিকার, এখনই সম্ভব।
আপনি ক্লাবগুলোকে উলঙ্গ নাচার জন্য, বছর বছর কোটি কোটি টাকা দিতে পারেন, কিন্তু মেদিনীপুরের বন্যা কবলিত কুড়ি লক্ষ মানুষের কিছু করতে পারেন না ?
কি ভয়ানক নিষ্ঠুর আপনি !
–
ক্লাবে ক্লাবে, দুষ্কৃতী পুষে, আপনি- আপনার রাজদন্ডকে বাঁচিয়ে রাখতে চান।
কিন্তু অনাহারে মরতে থাকা, কুড়ি লক্ষ মানুষের জন্য আপনি কিছু করতে পারেন না।
ছিঃ ছিঃ কি নিষ্ঠুর ঘাতক আপনি।
–
লোকে বলে- আপনি নাকি মমতাময়ী মা !
তাহলে আপনার এই ব্যবহার ঘাতক রাক্ষসের মতো কেন ? আপনার উপর আমার অনেক শ্রদ্ধা।
কিন্তু আপনি আমাকে, আর আমার মতো ৯ কোটি বাঙালিকে প্রতিদিন ঠকাচ্ছেন।
আপনি যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন- আমি রাতদিন নেচেছিলাম এই আনন্দে, যে আপনি- বাংলাকে এবার এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
তার বদলে আপনি কি করলেন ?
আপনি বাংলাকে, আরও বেশি নরকের দিকে ঠেলে দিলেন। আপনার নাম মমতাময়ী মাতা”-র বদলে “ধ্বংস-ময়ী নারী” কেন ?
–
আপনার পায়ে পড়ি দিদি, আপনি- গরীব মানুষ, আর মুমূর্ষু শিশুদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি আর করবেন না।
–
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন।
–
প্রণাম।