সরস্বতী থেকে গঙ্গার দিকে সরে আসার একটা প্রবণতা রয়েছে, প্রাচীনতম ভারত থেকে প্রাচীন ভারতে উদ্বর্তনের ইতিহাস দেখুন। হিরণ্যকশিপুর রাজধানী বলা হয় ছিল রাজস্থানে, যে অঞ্চলটার কথা বলা হয়, সেটা শুকিয়ে যাওয়ার আগেকার সরস্বতীর বেসিনই বটে। এরপরে প্রহ্লাদ, কোথায় রাজধানী জানা নেই, কিন্তু এই প্রহ্লাদেরই ছেলে কপিল (যদিও কর্দম এবং দেবহুতির সন্তান তিনি, এই মতটাও প্রবল), সিংহাসনে যদিও অপর পুত্র বিরোচন। যাই হোক, কপিল কিন্তু গঙ্গার মোহনায় আশ্রম তৈরি করে বাস করেছেন। বিরোচনের পুত্র বলি, দক্ষিণ ভারতের কেরালা এবং তামিলনাড়ুর সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের সঙ্গে যদিও তাঁর নাম যুক্ত, কিন্তু সেই বলির পাঁচ পুত্রকে দেখুন, পূর্ব ভারতের গাঙ্গেয় অববাহিকায় পাঁচটি রাজ্য (আসলে এই অঞ্চলের পাঁচটি শক্তিশালী ট্রাইবের দ্বারা স্থাপিত পাঁচটি জনপদ), অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গ পুণ্ড্র সুহ্ম। এর মধ্যে তিনটিই বর্তমানের বাঙালি জাতির পূর্বসূরী।
ওই যে নৃসিংহ অবতারের গল্প, ওটা খুব সম্ভবত লোহার অস্ত্র আবিষ্কারের কাহিনী। তাম্রাশ্ম যুগের সভ্যতা ছিল সরস্বতী সভ্যতা। পাণ্ডু রাজার ঢিবিও সেই তাম্রাশ্মযুগ। হরপ্রসাদ বলছেন, বাঙালি তাম্রাশ্মযুগে যেভাবে সারা পৃথিবীর সঙ্গে বাণিজ্য করেছে, সে অভাবনীয় (লোহার ব্যবহার ছাড়াই আমাদের কয়েকটি প্রাচীন নৌকো তৈরি হত, সে দিকে ইঙ্গিত করেছেন)।
সরস্বতী সভ্যতার উত্তরসূরী হিসেবে যে পূর্ব ভারতীয় মাগধী সভ্যতা মাথা তুলল, বাঙালির সেখানে বিশিষ্ট স্থান ছিল। এমন একখানা ইতিহাসমণ্ডিত জাতি তার সভ্যতাসহ নষ্ট হতে বসেছে শুধুমাত্র একপাল কমপ্রাদরের পাল্লায় পড়ে, এ দেখে বেশ কষ্ট হয়।
বাঙালি অসুর সভ্যতা, অবৈদিক আর্য সভ্যতার লিগেসি বহন করে, এবং এই পূর্বভারতে বাঙালির দ্বারাই অবৈদিক আর্য সভ্যতার পিনাকল, সাংখ্য ও তন্ত্র রচিত হয়েছে। এই জাতির ইতিহাস অনুসন্ধানের সর্বপ্রথম, সর্বপ্রধান সূত্রটি এই, একে বিস্মৃত হলে বাঙালির মূল কাঠামোটিই বোঝা যায় না।