ঋতব্রত, বামপন্থা এবং Avik Sarkar –
বহুদিন আগে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে কিছু লিখবো না। আমার ফ্রেণ্ডলিস্টে বিভিন্ন ধর্মের এবং বিভিন্ন মতের লোকজনদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। আমি দেখেছি যে সাম্প্রতিক কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লিখলেই আমারই কাছের বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়িতে মত্ত হয়ে ওঠেন। প্রতিনিয়ত এইরকম ধর্মসঙ্কটে কালযাপন করা খুবই কষ্টকর , তাই ও বালাই আর রাখিনি।
কিন্তু ঋতব্রতবাবু সংক্রান্ত সাম্প্রতিক কাণ্ডকারখানা দেখে কিঞ্চিৎ কৌতুক অনুভব করছি। যে ভাবে তুলসী লিভস ফ্রেশলি ওয়াশড ইন গ্যাঞ্জেস ওয়াটার টাইপের চরিত্রওয়ালা লোকজন ঋতব্রতকে নিয়ে ছিছিক্কার নামিয়েছেন, দেখে মনে হয় আহা, এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ শুধু ঋষ্যশৃঙ্গে ভরা! সব্বাই কি সুমধুর একগামী চরিত্রবান চাড্ডিহৃদয়হরণ শ্রীরামচন্দ্র! জিন্দেগীতে বিবাহিত স্ত্রীটি ছাড়া কারও রাঙা চরণকমলদুটির ওপরে তাকাননি, 36B শুনে ভেবেছেন যাদবপুর এইটবি থেকে প্রেসিডেন্সিতক দৌড়নো বাসের নাম্বার আর কি!
ঋতবতকে আমি চিরকালই ঘৃতব্রত ডেকে এসেছি। লোকটা আগেও ফালতু বকতো (তখন আপনারা আমাকে ‘তিনু’ ডাকতেন,) এখনও ফালতু বকে ( এখন আপনারা আমাকে চাড্ডি ডাকেন। এনিওয়ে, ইন এনি কেস আই কেয়ার আ ফাক!)। কিন্তু যবে থেকে লোকটার চরিত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে, তবে থেকে সেই প্রাচীন হিংস্র সিপিএমের মাফিয়ামাফিক চরিত্রহননের পুরোনো ছায়া দেখতে পেরে অত্যন্ত আমোদ বোধ করছি। শালারা খেতে পায় না, কিন্তু কুলোপানা চক্কর দেওয়া ভোলেনি, হিংস্র মাফিয়াদের পার্টি রেনেগেডেদের পেছনে দালাল লেলিয়ে দেওয়ার অভ্যেস ছাড়েনি!
কারণ গুলো এক এক করে বিশ্লেষণ করি। ঋত’র নাকি নৈতিক অধঃপতন হয়েছে। কি কারণ?
১. তিনি দামী পেন, অ্যাপেলের ওয়াচ আর স্যুট ব্যবহার করেন।
উলি বাবালে, উনুমুনুপুষুটা। তোদের কোন যুবনেতানেত্রী খাটো লুঙ্গি পরে আর বিড়ি হাতে রেললাইনের পাশে হাগতে যায় বে? তাকিয়ে দেখ, তোদের প্রত্যেকটা সদস্য, নেতা ও নেত্রী উচ্চবর্ণের, বর্ণহিন্দু এবং সচ্ছল মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়ির বাচ্চা। এরা দুদিন ক্যাম্পাসে বিপ্লব রমণ করবে, শহুরে মিডিয়ার সামনে সুরক্ষিত নাগরিক ঘেরাটোপে চাট্টি শ্লোগান দিয়ে বগলে বিপ্লবের ডিও মেরে বলবে উফফ, কি দিলাম মাইরি! তারপর, প্রতিনিয়ত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পিণ্ডি চটকানো এই শৌখিন মজদুরের দল পরিযায়ী পাখির মতো উড়ে যাবে সেই “ঘৃণ্য” পশ্চিমের দিকে, সুখী নীড় আর শান্ত নদীটি পটে আঁকা ছবিটির খোঁজে। সত্তর থেকে খোঁজ নিয়ে দেখ, এই বন্ধ্যা, আত্মঘাতী বিপ্লবের জনকদের সন্তানসন্ততিরা কোথায় আছে, কত আরামে আছে! দেখ, কাদের কোন আলেয়া বিপ্লবের খোঁজে নিজের সন্তানসন্ততিদের ভবিষ্যৎ হত্যা করেছিস তুই! তাকিয়ে দেখ, ওদের পরণে দামী জিনস, হাতে দামী ঘড়ি, পায়ে দামী স্নিকার্স….আহা.. হবেই তো..এখানকার রোদ বড় গা জ্বালায় যে!
আজ এই ভাড়াটে বেশ্যাবুদ্ধির দল এসেছে ঋতব্রত কেন মঁ ব্লাঁ আর অ্যাপেল ওয়াচ ব্যবহার করে? ওরে মার্ক্সের দোরধরা বাচ্চারা, তোরা একদম ‘দেসি’, ‘আনব্র্যান্ডেড’ জিনিস ইউজ করিস তো বে? তোদের শার্ট আর ট্রাউজার্স একদম দেশি মেশিনে বোনা জিনিস তো? জীবনে দামী জিনিস পরিস নি? দামী রেস্তরাঁতে মদ আর খাবার খাসনি? পায়ে চিরকাল হাওয়াই চপ্পল পরে এসেছিস? ন্যাকামিটা অন্য কোথাও রাখনা ভাই। দক্ষিণ কলকাতার মহার্ঘ ফ্ল্যাটে দামী হুইস্কি প্যাঁদাতে প্যাঁদাতে আর গরীবের দুঃখে দুটো মায়াকান্না নাই বা কাঁদলি! তোরাও যা করছিস, ঋতও তাইই করেছে এতকাল। আজ দল ছেড়েছে বলে সব ব্যাটাকে ছেড়ে বেঁড়ে ব্যাটাকে ধর?
২. ঋতব্রত’র ভিডিও এবং পিক এবং অন্যান্যঃ
অহো, কি দুঃসহ স্পর্ধা
চুমু খেয়েছে বেপর্দা!
মাইরি…লোকটা ডিভোর্সি। তার পরেও কারও সঙ্গে চুমু খেয়েছে, ভিডিও চ্যাট করেছে,..এই করেছে….ওই করেছে…
বেশ করেছে। এসব আপনিও এন্তার করেছেন, ঋতও করেছে। আপনি ঋত’র মতো বিখ্যাত এবং ক্যালানে নন বলে এসব প্রকাশ্যে আসেনি, তাই বলে ন্যাকাষষ্ঠী সাজবেন না প্লিজ!
এবং সেইগুলো এখন প্রকাশ্যে আসছে কেন? যাঁর সঙ্গে ‘এসব’ হয় তিনি কি এদ্দিন ঘুমোচ্ছিলেন? ঋতর পার্টি ছাড়ার সময়টাই, ঋতকে malign করার সময়টাই এইসব প্রকাশ করার জন্যে ‘সঠিক’ সময় মনে হলো তাঁর?
ঋত তার ম্যাস্টারবেট করার, কি চুমু খাওয়ার ছবি পাঠিয়েছে বুঝলাম। বুঝলাম যে ঋত একটি ঢিলে জাঙ্গিয়া মার্কা কামপিপাসু প্রাণী। আমরা অনেকেই তাই, এসব আমরাও অনেকেই নিজেদের প্রেমাস্পদদের পাঠিয়েছি, এখন আপনারা পূত পবিত্র ন্যাকা সাজবেন না প্লিজ। যেটা আপনি করলে ঠিক হ্যায়, সেক্সুয়াল চয়েসের মুক্তি, সেটা ঋত করলেই খারাপ? কারণ সে এম পি? সে মদন মিত্র’র মতো পিয়ালী কেস ম্যানেজ করতে পারেনি বলে? তা আপনি ম্যাডাম এসব জমিয়ে রেখেছিলেন কেন? ঠিক সময়মত ফায়দা তুলবেন বলে, তাই না ?
ফায়দার রেট অবশ্য জানা হয়েই গেছে, আপনারই মেসেজের দৌলতে। শুধু জানা হয়নি, আপনাকে যদি কেউ নিয়োগ করে থাকে এই হানিট্র্যাপের জন্যে, তার জন্যে কত কি পেলেন?
পুরোন ঘাঘু সিপিএমের ছাপমারা মাফিয়া অ্যাকশনের চিহ্ন এই কেসের সর্বত্র। আমার পিছনে লেগেছে? ওর পেছনের প্রতিটি লোম ক্যামেরার সামনে উলঙ্গ করে দাও। এই ভাবেই প্রফুল্লবাবু স্টিফেন হাউস কিনেছিলেন, এভাবেই এইভাবেই এদেশে বিপ্লব এসেছে, এইভাবেই ধোয়া তুলসীপাতার বাচ্চারা দিল্লি, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, ইউকে, ইউএসএ তে প্রবাসী হয়ে চৌত্রিশ বছরের মাফিয়াগিরির পক্ষে গলাবাজি করে যায়। অবশ্য দু কানকাটা বাজারের মাঝখান দিয়েই যায়, এতে আর আশ্চর্যের কি আছে?
আরও দেখুন জনাব, যে বেজন্মার বাচ্চারা সারদার সঙ্গে বিবেকানন্দের যৌনকর্মের কাহিনী ছড়িয়ে সাপোর্ট করছিলো এই বলে যে এসব নাকি ভারতীয় সভ্যতাতে আছেই, আহা আপনি কি ইন্দ্র অহল্যার কাহিনী পড়েননি? বা খাজুরাহোর ভাস্কর্য ও বাৎস্যায়ন? সেই সেক্সুয়াল লিবারাল মার্কা ভ্রাতারমণকারীরাই চট করে কেমন এখন ঋত’র কেসে রক্ষণশীল বাড়ির ঠাকুর্দা সেজে বসেছে? অহো, দুর্গা বেশ্যা হইতে পারে, সারদা বিবেকানন্দের সঙ্গে সেক্স করিতে পারেন, কিন্তু ঋতব্রত পরকীয়া করিতে পারেন নাআআআআআ। কারণ দুর্গা কি মা সারদা আমাদের সেক্সুয়াল স্বাধীনতা প্রকাশের অ্যাকমাত্র সৌদিলবি অ্যাপ্রুভড পন্থা। কিন্তু ঋত? ছিঃ, সে প্রেম করিবে? চুমো খাইবে? উনিশবার ম্যাট্রিক দিবে? এসব কি পার্টির গঠনতন্ত্রের সাত নম্বর ধারার একাশি (গ) নম্বর উপধারায় লিখিত আছে? নাই? তবে সে ছোকরা ইন্টুপিন্টু করে কি সাহসে? একলব্য করে করুক, সমগ্র এইটবি করে করুক, কিন্তু এই রেনেগেডের দাঁড়ায় কোন সাহসে, অ্যাঁ? দে সালার পেছনে হানিপ্রীত লেলিয়ে…
অতএব আর কি। বেচারি ঘৃতব্রত’র ম্যালাইনকাল আসিয়াছে। আইস, তোমরা সমবেতভাবে চরিত্রবান হইয়া, নিষ্কলঙ্ক হইয়া, পূত পবিত্র হইয়া সমবেতকণ্ঠ উচ্চারণ করো,
“তুই ঘৃতব্রত, তুই সেক্স করিস না!”