শ্বেত স্বর্ণ ভগন্দর থেকে খানিকটা।
স্বর্ণপণ। বিদেশের সাহায্য যারা নিলেন, তারাই টিঁকে গেলেন অনন্তবাবু। আপনারা ফুরিয়ে গেলেন। আমাকেই দেখুন। আজ আমার কি প্রতিপত্তি কলকাতার সারস্বত মহলে।
অনন্ত। আপনার সামনে আয়না নেই, তাই এ কথা বলছেন। একটা প্রস্তর যুগের মানুষের থেকে আপনার প্রতিপত্তি বেশি নয়। এই স্পেস টাইম লুপে আমার হাতে বন্দুক আছে, এবং এই স্পেস টাইম লুপে বঙ্গজননীর সুসন্তান সূর্য সেন আছেন।
স্বর্ণপণ। কিন্তু দেখুন, আমি ইন্টেলেকচুয়াল, আমার কাছে আমার মগজাস্ত্র আছে। আমি চাইলে আমার বাক্যবাণেই আপনাদের ঝাঁজরা করে দিতে পারি। আপনারা একদিকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক ছিলেন, বঙ্কিমের আনন্দমঠ পড়তে বলেছিলেন আপনাকে মাস্টারদা আপনাদের প্রথম সাক্ষাৎকারের সময়। আপনারা বিপ্লবী আন্দোলনের আদর্শে দীক্ষিত হতেন মা কালীর মূর্তির সামনে। হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা, নিঃসন্দেহে। ফলে লিবেরাল আপনাদের পাশে এসে দাঁড়াবে না। আপনি, অনন্তবাবু, অন্যদিকে আবার কমিউনিস্টও হয়েছিলেন, স্বাধীন ভারতে ব্যাঙ্ক ডাকাতিও করিয়েছিলেন, ফলে কোনও হিন্দুত্ববাদী আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে না।
অনন্ত। আমি বাঙালি। আমি বিংশ শতকের বাঙালি। আমার পাশে ভবিষ্যতের বাঙালি জাতীয়তাবাদী এসে দাঁড়াবে।
স্বর্ণপণ। আপনার পাশে কেন দাঁড়াবে? আপনি বা সূর্য সেন ইসলামের আগ্রাসন নিয়ে কিছু বলেছিলেন, লিখেছিলেন?
সূর্য। সতীন সেন পটুয়াখালিতে লড়ছিলেন ইসলামের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, আমাদের পূর্ণ সমর্থন ছিল তাঁর প্রতি। আমাদের চট্টগ্রামে সমস্যাটা সেভাবে ছিল না, এখানে চট্টগ্রাম কংগ্রেসে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সবাই প্রথমে অনুরূপ সেন এবং পরে সূর্য সেনের নেতৃত্ব মানত। উপরন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশাল বৌদ্ধ জনসংখ্যা। এখানে মুসলিম লিগ ছিল না, মুসলমান মৌলবাদীদের রাজনৈতিক অস্তিত্বই ছিল না। আর আমি তাত্বিক নেতা ছিলাম না, সেটা ছিলেন অনুরূপদা। আমাদের চট্টগ্রাম দলের সংবিধান অনুরূপদাই লিখেছিলেন। আমি সারাজীবনে লিখেছি খুব কম। ইংরেজকে সরাতে পারলে ইসলামের আগ্রাসনের বিপদ রুখে দেওয়া যাবে, ইংরেজের উপস্থিতিতেই মুসলিম লিগ বাড়াবাড়ি করার সাহস পাচ্ছে, এই ছিল আমাদের মত। বাংলার হিন্দু শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, স্বাধীন ভারতের নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত দাবিদার। তাকে ধ্বংস করতেই ইংরেজ মুসলমান মৌলবাদীদের মদত দিচ্ছিল। আন্তর্জাতিক ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদত না থাকলে মুসলমান মৌলবাদ স্রেফ প্রস্তরযুগীয় একটা শক্তি, তাকে বন্দুকে আটকানো যায়, তাকে তত্বেও আটকানো যায়, এবং তাকে জনতা দ্বারা আটকানো যায়, নিমেষে গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। না, এগুলো কৈফিয়ত নয়, আমি বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের দুর্বলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঐক্যমত্য ছিল না। তবে ঢাকা অনুশীলন সমিতির পুলিনবিহারী দাস সরাসরি ইসলামের আগ্রাসন নিয়ে কাজ করেছেন। সতীন সেন পটুয়াখালি সত্যাগ্রহ করেছেন। আমরা সেরকম কিছু করিনি, তবে চট্টগ্রামে মুসলমান মৌলবাদীদের সেরকম আগ্রাসন হলে নিশ্চয়ই করতাম।