এক বিশ্বাস ঘাতকের পুত্র টিপু? ?
নভেম্বর, ২০১৫ তে টিপু সুলতানকে নিয়ে ভারতে দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিলো; প্রথমটি হলো, টিপুর জন্মদিন পালন করার বিরোধিতা করায় এক ভিএইচপি কর্মী খুন, ভারতীয় মিডিয়ার চোখে এটি কোনো অসহিষ্ণুতার ঘটনা নয়; আর দ্বিতীয় ঘটনা হলো, কর্নাটকের নাট্যকার ও মঞ্চাভিনেতা গিরিশ কার্নাডের মন্তব্য, “বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম অষ্টাদশ শতকের শাসক টিপু সুলতানের নামে হওয়া উচিত”, মিডিয়ার চোখে এর বিরোধিতাকারীরা হলো অসহিষ্ণু।
২০ নভেম্বর, টিপু সুলতানের জন্ম দিন। টিপুর জন্ম জয়ন্তী পালনের প্রতিবাদ করতে গিয়েই নভেম্বর, ২০১৫ তে কর্নাটকে খুন হয় ঐ ভিএচপি কর্মী। কিন্তু কেনো তার এই প্রতিবাদ ? কী করেছিলো টিপু তার শাসনামলে ? বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন, নিচের এই লেখাটি :
টিপু সুলতান সম্পর্কে আমি প্রথম জানতে পারি, বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত মেগাধারাবাহিক, “দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান” এর মাধ্যমে, সম্ভবত ১৯৯২ সালে। ভগওয়ান এস গিদওয়ানি নামের এক সেক্যুলার “দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান” নামে একটি আধা-কাল্পনিক ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখে, এটি প্রকাশ হওয়ার পর বেশ ভালো মার্কেট পায়। কারণ, এই উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার আগে টিপু সুলতান সম্পর্কে ভারতবাসীর খুব বেশি কিছু জানা ছিলো না।
তসলিমা নাসরিন যে বলেছে, সব লেখকই ধান্ধাবাজ, তা হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্যি, বিশেষত যারা বাজারি লেখক, অর্থাৎ যারা প্রকৃত সত্য বাদ দিয়ে মার্কেটের কথা চিন্তা করে বই লেখে।”দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান” লেখার সময়ও এই সেক্যুলার গিদওয়ানি তার ধান্ধাবাজিকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ব্যবহার করেছে এবং তাতে সে বেশ ভালোরকম সফলও হয়েছে। কারণ, উপন্যাসটি প্রকাশের পর বেশ জনপ্রিয় হয় এবং ঋত্বিকের সাবেক শ্বশুর সঞ্জয় খান এটি পড়ার পর এতটাই মুগ্ধ হয় যে, সে এটিকে একটি টিভি সিরিজে রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং গিদওয়ানী ও খান গোষ্ঠীর সবাই মিলে বানিয়ে ফেলে সঞ্জয় খান’স প্রেজেন্ট “দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান”, যে সোর্ড ইংরেজদের চেয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার হয়েছে বেশি।
যা হোক, টিভি ধারাবাহিকে টিপুকে যেমন দেখেছিলাম, বাস্তবে টিপু সেরকম হলে আমার কোনো আপত্তি ছিলো না এবং তাহলে এই লেখাটি আমি লিখতাম না। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং তা হিন্দুদের জন্য তা বড়ই নির্মম।
ভগওয়ান এস গিদওয়ানিকে কেনো ধান্দাবাজ বললাম, আগে তার ব্যাখ্যা দিই। এই লোক যখন টিপুকে নিয়ে উপন্যাস লিখতে বসেছিলো, তার আগে সে নিশ্চয় টিপুর ব্যাপারে অনেক গবেষণা করেছিলো এবং এই ব্যাপারেও সে বেশ গবেষণা করেছে যে, উপন্যাসে কোন বিষয়গুলো রাখা যাবে আর কোন বিষয় রাখা যাবে না। কারণ, সে জানতো, তার উপন্যাসের মূল বাজার ভারত এবং যেহেতু ভারতের ৮০% লোক হিন্দু, সেহেতু উপন্যাসটি এমনভাবে লিখতে হবে যাতে হিন্দুরাও খায় আবার মুসলমানরাও খায়। এজন্য সে কৌশলে টিপুর হিন্দু বিরোধী মানসিকতা এবং হিন্দু নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে কাহিনী থেকে ডিলিট করে দিয়ে, টিপুকে একজন দেশপ্রেমিক, প্রজাদরদী ও ইংরেজ বিরোধী শাসক হিসেবে তুলে ধরেছে এবং যেহেতু টিপু ইংরেজদের হাতে মারা পড়েছে, তাই এই বিষয়টি বেশ মানিয়েও গেছে।
উপন্যাসে পূর্ণাইয়া পণ্ডিত নামে একজন হিন্দু চরিত্র আছে, যিনি প্রায় টিপুর প্রধান উপদেষ্টা মানের। পুরো কাহিনী জুড়ে দেখা যায়, এই পূর্ণাইয়া পণ্ডিতের সাথে টিপু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শলাপরামর্শ করছে। কিন্তু টিপুর প্রচণ্ড হিন্দু বিরোধী মানসিকতা দেখলে আপনি এমনিই বুঝতে পারবেন যে, টিপুর এরকম একজন হিন্দু উপদেষ্টা থাকা কখনোই সম্ভব নয়। টিপুর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যই ছিলো হিন্দু বিদ্বেষিতা, সেটাকে বাদ দিলে কাহিনীর আর থাকে কী ? তাই কাহিনীর প্রয়োজনে যতটা সম্ভব ইংরেজ বিরোধীতা ঢুকানো হয়েছে – মূল ধান্ধাবাজিটা এখানেই।
উইকিপিডিয়াসহ নেট দুনিয়ায় টিপু সুলতান সম্পর্কে যা তথ্য আছে এবং সাধারণ মানুষ যে সব তথ্য মোটামুটি জানে, তা হলো, “টিপু সুলতানের জন্ম ১৭৫০ সালের ২০ নভেম্বর| তিনি দক্ষিন ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসন কর্তা ছিলেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ করেন। তিনি “শের-এ-মহীশুর” বা “মহীশুরের বাঘ” নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতার নাম হায়দার আলী। তিনি মহীশূর রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন। শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রামে কাবেরী নদীর একটি ব-দ্বীপে নির্মিত একটি দুর্গ থেকে টিপু রাজ্য শাসন করতেন। বর্তমানে এটি ভারতের কর্নাটক রাজ্যের মান্ডিয়া জেলার অন্তর্গত। টিপুর এক সেনাপতি মীর সাদিক বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের সাথে হাত মেলায়, ফলে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে ১৭৯৯ সালের ৪ মে তিনি নিহত হয়। তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের লোকজনকে ইংরেজরা ভেলোরের একটি দূর্গে বন্দী করে রাখে। বাঘ ছিলো টিপুর প্রিয় পশু। তাই টিপুর প্রিয় উক্তি ছিলো, “শেয়ালের মতো একশো বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো একদিন বাঁচাও ভালো।” ব্যস এতটুকুই।
কিন্তু টিপুর বাপ হায়দার আলী, কিভাবে সেনাপতি থেকে সুলতান হলো, তার কোনো বর্ণনা সেক্যুলার ও মুসলমান প্রভাবিত ইতিহাসে নেই আর কখনো তা পাওয়াও যাবে না। এমনকি হায়দার আলী যার সেনাপতি ছিলো, সেই রাজার নাম ধাম পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু টিভি সিরিয়ালে যা দেখেছিলাম, এতদিন পর সেখান থেকে যা মনে পড়ছে, তা হলো, মহীশুর রাজ্যের রাজা ছিলো হিন্দু। হায়দার আলী ছিলো তার প্রধান সেনাপতি। কোরানে তো আল্লা মুসলমানদের বলেই দিয়েছে, “তোমরা কাফেরদের আনুগত্য করো না”, তাই হায়দার আলীও করে নি। সিরিয়ালে যা দেখেছি, এক রাতে হায়দার আলী তার রাজার সাথে বসে মদ খাচ্ছিলো আর গল্প করছিলো। রাজা ঠিকই মদ খাচ্ছিলো আর আস্তে আস্তে একটু একটু করে তাল হারাচ্ছিলো। অন্যদিকে হায়দার আলী প্রথমে দু এক পেগ খেলেও, পরবর্তী সব পেগ সে খাওয়ার ভান করে মুখের কাছে নিয়ে ঘাড়ের উপর দিয়ে পেছনে ফেলে দিচ্ছিলো। রাজা যখন সম্পূর্ণ তাল হারিয়ে ফেলেছে, তখন হায়দার তাকে হত্যা করে এবং দোতলা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। রাজ্যের রাজা ই যখন নেই এবং রাজ্যের সেনাপতির হাতেই যখন সব ক্ষমতা, তখন হায়দারের সেনাপতি থেকে সুলতান হওয়া ঠেকায় কে ? এভাবে হায়দার হয়ে গেলো মহীশূর রাজ্যের সুলতান এবং হায়দারের মৃত্যুর পরে তার বড় ছেলে টিপু হলো টিপু সুলতান। কিন্তু এই ইতিহাস কোনো মুসলমান মুখেও আনবে না; কারণ, তাহলে অনৈতিকভাবে হায়দারের রাজ্য দখলের বিষয়টা প্রকাশ হয়ে পড়ে। আর কোনো সেক্যুলার হিন্দুও এটা বলে না বা বলবে না, কারণ তাহলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাকি নষ্ট হবে !
টিপুর জন্ম সম্পর্কে একটি ঘটনা বেশ প্রচলিত, এটা জড়িত তার নামকরণের সাথেও। টিপুর জন্মের আগে, টিপুর মা ফকির-উন-নিসা, মাস্তান টিপু আউলিয়া নামের এক দরবেশের কাছে দোয়া নেওয়ার জন্য গিয়েছিলো। সেই দরবেশের সাথে টিপুর মায়ের যে কথাবার্তা হয়, তা এরকম :
-আমি আপনার দোয়া চাই।
লোকটি শান্ত কন্ঠে বললো, তোমার প্রথম ছেলেকে আল্লাহর রাহে কোরবানী করবে ?
জবাব দিতে গিয়ে থমকালেন ফকির-উন-নিসা। ধীর শান্ত কণ্ঠে বললেন, হ্যাঁ আমি তাকে আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করবো।
– তাহলে ফিরে যাও। তোমার প্রথম ছেলে হবে রাজপুত্র, সুলতান। সে হবে মজলুম জনগনের নয়নমনি। সে হবে আল্লাহর খিদমতগার। ঈমানী ঝাণ্ডা বহন করে সে এগিয়ে যাবে গন্তব্যে। শৈশব থেকেই তাকে এমনভাবে গড়ে তুলবে, যেন সে কেবল খোদারই হুকুম তামিল করে আর কারো হুকুম নয়, যাও।
এরপর প্রথমেই পুত্র সন্তানের জন্ম হলে আনন্দের আতিশয্যে হায়দার আলী সেই আউলিয়ার নামেই সন্তানের নাম রাখে টিপু এবং পরে পিতার দখল করা সিংহাসনে বসার পর তার নাম হয় টিপু সুলতান।
টিপু আউলিয়ার ভবিষ্যদ্বানী মতো টিপু ছিলো সত্যিই খোদার একান্ত খিদমতগার এবং খোদার হুকুম ছাড়া যে সে আর কারো হুকুম পালন করে নি, সেটা একটু পরই বুঝতে পারবেন।
মুসলমানরা যখন যে এলাকা দখল করেছে, তখন তাদের প্রথম কাজ ই ছিলো ঐ এলাকায় কোনো গ্রন্থাগার থাকলে তার পুড়িয়ে দেওয়া। একারণেই আলী, মিশর দখল করার পর আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দেয়। এই গ্রন্থাগার পোড়ানোর ফলে এবং মিশরের বেশির ভাগ লোকজন ইসলাম গ্রহন করার ফলে, জ্ঞানের দিক থেকে মিশর সেই যে ভিক্ষুক হলো, আজও তারা সেই জ্ঞানের দৈন্য দশা কাটিয়ে উঠতে পারে নি। তাছাড়া যে মিশর ৫ হাজার বছর আগেই পিরামিডের মতো বিস্ময়কর জিনিস বানিয়েছিলো, মমি করার মতো জ্ঞান যারা প্রথম আবিষ্কার করেছিলো, ইসলামের পতাকাতলে আসার পর সেই মিশর আজ কেনো জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনের ক্ষেত্রে একটি মোমবাতিও জ্বালাতে পারছে না, সেই বিষয়টা একবার চিন্তা করে আমার কথাটিকে মিলিয়ে দেখবেন।
মুসলমানদের এই লাইব্রেরী পেড়ানোর বাতিকের মূল কারণ, তারা যে জাতির উপর বিজয় অর্জন করেছে বা মুসলমানদের তরবারির কাছে যারা পরাজিত হয়েছে, সেই জাতির আগের সবকিছু ভুলিয়ে দেওয়া এবং একমাত্র কোরান হাদিস নামের দুটি বইকেই তাদের মাথার উপর চাপিয়ে দেওয়া। এই কারণেই বখতিয়ার খিলজি বিহার দখল করার পর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হত্যা করে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেছিলো এবং লাইব্রেরী পুড়িয়ে দিয়েছিলো। এসব কারণেই বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ূন আজাদ মুসলমানদের সম্পর্কে তার এক বইয়ে মন্তব্য করেছেন, “জ্ঞান ও হৃদয় বিরোধী মুসলমান।” এরা যেমন মনের মূল্য বোঝে না, তেমনি বোঝে না জ্ঞানের মূল্যও । মুসলমানদের কাছে একমাত্র জ্ঞান, কোরান-হাদিস। মুসলমানরা বিশ্বাস করে, এই কোরান হাদিসেই সকল জ্ঞান ভরে দেওয়া আছে। তাই মানুষের কর্তব্য হচ্ছে নতুন কোনো জ্ঞানের সন্ধান না করে সেই কোরান হাদিসের জ্ঞানকেই চর্চা করে যাওয়া। এজন্যই মুহম্মদ বলে গেছে, “মহাকাশ, সমুদ্র এবং নতুন কোনো বিষয় নিয়ে গবেষণা করো না; কারণ, প্রত্যেকটি নতুন বিষয় হচ্ছে বিদআত।” মুসলমানরা যে মহামূর্খ এবং সভ্যতা নির্মানে তারা যে কেনো কোনো অবদান রাখতে পারে নি, এবার নিশ্চয় তার কারণ বুঝতে পারছেন ?
মুসলমান ছাড়া পৃথিবীর এমন কোনো জাতি বা ধর্মের লোক পাওয়া যাবে না, যারা বই পুস্তক পুড়িয়ে সভ্যতার আগ্রগতিকে এমনভাবে পেছনে টেনে ধরেছে । হিন্দু এবং বৌদ্ধরা তো জ্ঞান অর্জনের জন্য জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর পূজা প্রার্থনা পর্যন্ত করে। খ্রিষ্টানরা জ্ঞানের জন্য এভাবে আধ্যাত্মিক সাধনা না করলেও তারা জ্ঞানের প্রতি বেশ শ্রদ্ধাশীল। এ কারণেই পৃথিবীর বহু দেশ তারা জয় করে শাসন করলেও কোথাও কোনোদিন কোনো লাইব্রেরী বা বই পুস্তক পোড়ায় নি। বরং কোনো এলাকা জয় করার পর সেই এলাকার অনেক মূল্যবান বই পুস্তক নিজেদের ব্যবহারের জন্য নিজ দেশে নিয়ে গেছে, এভাবেই তারা সমৃদ্ধ করেছে নিজের জ্ঞানকে, এর সাথে সাথে রক্ষা করেছে সেই দেশের অনেক ইতিহাসকে। টিপুকে হত্যা করার পর টিপুর অনেক চিঠি পত্র এবং জরুরী কাগজ পত্রও ইংরেজরা মহীশূর থেকে উদ্ধার করে ব্রিটেনে নিয়ে যায়। সেগুলো এখনও সংরক্ষণ করা আছে লণ্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে। সেই লাইব্রেরি থেকে ইতিহাসবিদ কে এম পানিকর, টিপুর লেখা কিছু চিঠিপত্র আবিষ্কার করে। আমার এবারের অস্ত্র সেই চিঠিপত্রগুলো। প্রথমেই বলে নিই, টিপু মহীশূর শাসন করে তার পিতার মৃত্যুর পর ১৭৮২ থেকে ১৭৯৯ পর্যন্ত। এই চিঠিগুলো ঠিক এই সময়ের মধ্যেই লেখা।
১৭৮৮ সালের ২২ মার্চ টিপু তার সেনাপতি আব্দুল কাদেরকে চিঠিতে লিখে, “১২ হাজার এর বেশি হিন্দুকে মুসলমান করা হয়েছে। তার মধ্যে অনেক নাম্বুদ্রী ব্রাহ্মণ আছে। এই সাফল্যের খবর হিন্দুদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার করা দরকার। স্থানীয় হিন্দুদের মুসলমান করার জন্য তোমার কাছে ধরে নিয়ে এসো। একজন নাম্বুদ্রীও যেন বাদ না যায়।”
এই হিন্দুরা নিশ্চয় টিপুকে ও ইসলামকে ভালোবেসে মুসলমান হয় নি। তাহলে তো আর হিন্দুদের ধরে আনার দরকার পড়তো না।
১৭৮৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর তার এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে টিপু লিখে, “আমি দুজন বিশ্বস্ত লোককে হুসেন আলীর সাথে পাঠাচ্ছি। এদের সাহায্যে সমস্ত হিন্দুদের ধরবে আর হত্যা করবে। যাদের বয়স ২০ বছরের কম তাদের জেলে ঢোকাবে এবং এই সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি হলে বাকিদের গাছের সাথে ঝুলিয়ে দেবে। এটা আমার আদেশ।”
আপনার কি মনে হয়, পূর্নাইয়া পণ্ডিত নামে টিপুর কোনো হিন্দু উপদেষ্টা থাকলে টিপু এরকম আদেশ দিতে পারতো ? বা টিপুর এই মানসিকতার বিপরীতে তার কোনো হিন্দু কর্মচারী থাকা সম্ভব ?
১৭৯০ সালের ১৯ জানুয়ারি, কর্মকর্তা বদ্রুস সামান খাঁকে টিপু লিখে, “তুমি কি জানো না যে, সম্প্রতি মালাবারে আমি বিশাল সাফল্য অর্জন করেছি এবং ৪ লক্ষেরও বেশি হিন্দুকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছি। আমি খুব শিঘ্রই অভিশপ্ত রমন নায়ারের বিরুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছি। এই সব প্রজাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করাটা জরুরী। তাই আমি বর্তমানে শ্রীরঙ্গপত্তনমে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা আনন্দের সাথে স্থগিত রেখেছি।”
হিন্দুদেরকে মুসলমান বানানোতে টিপুর এতই উৎসাহ যে, এই আনন্দের চোটে তার বাসস্থান শ্রীরঙ্গপত্তনমে ফিরতেও তার মন চাইছে না।
আর এক চিঠিতে, এই চিঠির তারিখ পাওয়া যায় নি, টিপু তার সেনাপতিদের আদেশ দিয়ে লিখেছে, “প্রত্যেক জেলার প্রত্যেক হিন্দুকে মুসলমান করতে হবে। গোপন জায়গা থেকে তাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং সত্য, মিথ্যা, তরবারি ও ছলনার আশ্রয় নিয়ে তাদের সদলে ধর্মান্তরিত করে মুসলমান বানাতে হবে।”
ইংরেজরা ভারত দখল তথা মুসলমানদের হাত থেকে হিন্দুদের মুক্তিদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলো ১৭৫৭ সালে, লম্পট সিরাজদ্দৌলাকে হত্যার পর; আর এই প্রক্রিয়া তারা শেষ করে ১৭৯৯ সালে টিপুকে খতমের মাধ্যমে। ভারত দখলে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ প্রতিযোগী ছিলো ফ্রান্স। মহাভারতের বাণী, শত্রুর শত্রু হলো মিত্র, এই সূত্রে টিপু ফ্রান্সের সাথে জোরালে সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করে ইংরেজদেরকে শায়েস্তা করার জন্য। কিন্তু ভারতে ইংরেজ শক্তি অপ্রতিরোধ্য হওয়ায় এবং ফ্রান্স, পর্তুগিজ কেউ তাদের সাথে পেরে না উঠায়, টিপুর এই প্ল্যান ভেস্তে যায়। অন্যদিকে হাজার বছরের মুসলিম দুঃশাসনের হাত থেকে রক্ষা করায় হিন্দুরা স্বাভাবিক ভাবেই ইংরেজদের ভক্ত এবং তাদের সমর্থক হয়ে পড়ছিলো, কেননা ভাঙা মন্দিরগুলো হিন্দুরা ইংরেজদের আগমনের পরই সংস্কার করতে পারছিলো এবং হিন্দুর ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ইংরেজরা আঘাত করছিলো না, আর পরে করেও নি। ইংরেজদের দিক থেকে হিন্দুরা সুরক্ষিত হওয়ায়, এবং তাদেরকে যখন তখন যেমন খুশি তেমন ভাবে মুসলমান বানাতে ও তাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করতে না পারায়, ভারতের হিন্দুদের উপর টিপুর রাগ ক্রমশই বাড়ছিলো। তাই হিন্দুদেরকে আরও এবং আবারও শায়েস্তা করার জন্য টিপু, ১৭৯৭ সালের ৫ ফেব্র্রুয়ারি, আফগানিস্তানের শাসক, আহমেদ শাহ আবদালীর সেনাপতি জামান শাহকে এক চিঠিতে লিখে, “আল্লার ইচ্ছা ও রসূলের আদেশ অনুসারে আমাদের উচিত মিলিতভাবে ভারতের এই কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করা।… প্রত্যেক শুক্রবার আমার রাজ্যের মুসলমানরা জুমার নামাজের পর খুতবা দিচ্ছে, ‘হে আল্লা, আপনি ঐ ঘৃণ্য কাফেরদের মস্তক ছিন্ন করে দিন। তাদের পাপের বোঝা তাদের মাথায় পতিত হোক।’ আমি বিশ্বাস করি সর্বশক্তিমান আল্লা আমাদের প্রার্থনাকে কার্যকর করবেন এবং এই পবিত্র কাজে হাত মিলিয়ে অগ্রসর হলে আমরা নিশ্চয় সফলকাম হবো।”
খেয়াল করুন, এই চিঠিতে টিপু, আফগানিস্তানের শাসককে অনুরোধ করছে ভারত আক্রমন করার জন্য, যাতে একই সাথে কাফের অর্থাৎ হিন্দুদের এবং ইংরেজদের শায়েস্তা করতে পারে। টিপু যদি কোনো দেশ প্রেমিক শাসক হতো, তাহলে কি আফগানিস্তানকে বলতে পারতো ভারত আক্রমন করার জন্য ? যদিও টিপু সমগ্র ভারতের শাসনকর্তা ছিলো না।
টিপুর মধ্যে একটাই প্রেম ছিলো, আর তা হলো ইসলাম প্রেম।
লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে উপরের এই চিঠিগুলোর সাথে টিপুর নিজের হাতে লেখা দুটি আত্মজীবনী, “সুলতান-ই-তাওয়ারিখ” ও “তারিখ-ই-খুদাদাদি” রক্ষিত আছে। এই বইগুলোতে টিপু নিজেই উল্লেখ করেছে কিভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে হিন্দুদের সে মুসলমান বানিয়েছে। আর যারা মুসলমান হতে চাইতো না, টিপু তাদের কাউকে কাউকে ধরে এনে, অবসর সময়ের বিনোদন হিসেবে, তাদের চার হাত পায়ের সঙ্গে দড়ি বেঁধে, সেই দড়িগুলো চারটি হাতির পায়ের সাথে বেঁধে দিয়ে হাতিগুলোকে চারদিকে ছুটিয়ে দিয়ে তাদের দেহকে ছিন্ন ভিন্ন করে, তাদেরকে হত্যা করতো, এভাবে কোনো কোনো অবাধ্য হিন্দু কাফেরকে টিপু শাস্তি দিতো। এটি ছিলো নাকি টিপুর প্রিয় খেলা ও অবসর বিনোদনের একটি উপায়।
টিপুর মুসলিম জীবনীকার, মহিকুল হাসানও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, “ওই দুটি গ্রন্থে (সুলতান-ই-তাওয়ারিখ ও তারিখ-ই-খুদাদাদি) প্রাপ্ত তথ্য থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, ধর্মের ব্যাপারে টিপু ছিলো একটি বদ্ধ উন্মাদ। তার একটাই কাজ ছিলো, তা হলো হিন্দুদের প্রতি অকথ্য অত্যাচার করা এবং অত্যাচার করে তাদের মুসলমান করা।”
টিপু দক্ষিণ ভারতে কমপক্ষে ৮০০ হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছিলো। এই মন্দির ভাঙতে টিপুর যে কি উৎসাহ, তা বোঝা যায় একটি ঘটনায় – দক্ষিণ ভারতের এক রাজা, নাম চিরাক্কাল, টিপুকে মন্দির না ভাঙার জন্য অনুরোধ করে বলেছিলো, তার অনুরোধ রাখলে তিনি টিপুকে ৪ লক্ষ টাকা দেবেন। জবাবে টিপু লিখেছিলো, পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ যদি কেউ আমার পায়ের কাছে এনে দেয়, তবুও আমাকে কেউ মন্দির ভাঙা থেকে নিরস্ত করতে পারবে না।”
টিপু সম্পর্কে কয়েকজন ইতিহাসবিদ কী বলেছেন, এবার সেটা দেখা যাক : স্যার হায়াবাদানা রাও তাঁর “হিস্ট্রি অব মহীশূর”- এ লিখেছেন, “১৭৯০ সালের দীপাবলী অর্থাৎ কালীপূজোর সময় এক রাতে টিপু ৭০০ জন হিন্দুকে হত্যা করে।”
টিপু সুলতানের জীবনী লেখক, এম.এফ.কে.এফ.জি এর মতে, “ত্রিবাঙ্কুরের যুদ্ধে টিপু ১০ হাজার হিন্দু ও খ্রিষ্টানকে হত্যা করে। যুদ্ধের পর ৭ হাজার হিন্দুকে বন্দী করে এবং সেরিনাগাপত্তমে নিয়ে গিয়ে পুরুষদের খতনা করিয়ে এবং নারীদের ধর্ষণ ও পরে সবাইকে গরুর মাংস খাইয়ে মুসলমান বানায়।”
টিপুর সমসাময়িক মুসলিম ইতিহাস লেখক, কিরমানি তার “নিশান-ই-হায়দারী” গ্রন্থে লিখেছেন, “টিপু সুলতান তাঁর জীবদ্দশায় কমপক্ষে ৭০ হাজার বিধর্মীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহনে বাধ্য করায়।”
টিপু যে গণহারে ধর্মান্তর করছে, তার প্র্যাকটিক্যাল প্রমান হলো, টিপু ও তার বাপ হায়দারের আগে মহীশূর তথা আজকের কর্নাটকে কোনো মুসলমান শাসক ছিলো না। তাই সেই সময় দক্ষিণ ভারতে কোনো মুসলমানও ছিলো না। বর্তমানে কেরালা ও কর্নাটকের যারা মুসলমান বলে নিজেদের পরিচয় দেয়, তারা সবাই টিপুর দ্বারা জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত। গরুর মাংস খেয়ে, চার বউয়ের সাধ এক সাথে নিতে পেরে আর বেহেশতে গিয়ে ৭২ হুরের আশায় এরা এখনও ইসলামে আছে এবং ভুলে গেছে যে, তাদের পূর্বপুরুষদেরকে জোর করে একসময় মুসলমান বানানো হয়েছিলো।
সুতরাং যারা টিপুকে সেক্যুলার শাসক প্রমাণ করার জন্য মন্তব্য করবেন, তারা আগে, উপরে যেসব বইয়ের রেফারেন্স দিলাম, সেগুলো পড়ার পর মন্তব্য করবেন। না হলে হিন্দুজাতিকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার জন্য আপনাদের কপালে যে শাস্তি আছে, সেটা নিশ্চিত; দুদিন আগে বা পরে সেই শাস্তি পান, সেটা অন্য ব্যাপার।
টিপুর হিন্দু বিরোধী মানসিকতা ও হিন্দুদের প্রতি টিপুর নৃশংসতা প্রমানের জন্য উপরে যেসব চিঠি, টিপুর আত্মজীবনীর এবং বিভিন্ন ইতিহাসবিদের, টিপু সম্পর্কিত মন্তব্যের কথা উল্লেখ করলাম – কারো কারো কাছে এর সবগুলোই বোগাস মনে হতে পারে। কারণ, সাধারণ মানুষের পক্ষে লন্ডনে গিয়ে যেমন ঐসব চিঠি বা বই পুস্তক দেখে সত্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, তেমনি অবিশ্বাসী মনের পক্ষে ইতিহাসবিদদের মতের প্রতিও আস্থা রাখা সম্ভব নয়, যেহেতু তাদের একমাত্র আস্থা কোরান-হাদিসের উপর, আর যাদের কোরান-হাদিসের প্রতি আস্থা, তাদের পৃথিবীর আর কোনো গ্রন্থের প্রতি আস্থা বা বিশ্বাস যে থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক| এই সব ব্যক্তির জন্য এবার আমার ব্রহ্মাস্ত্র।
“সোর্ড অব টিপু সুলতান” নামে ফার্সি ভাষায় লিখিত টিপুর একটি শিলালিপি পাওয়া গেছে। এই শিলালিপির নাম অনুসারেই সেক্যুলার গিদওয়ানি তার উপন্যাস নয়, অপন্যাসের নাম রাখে , “দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান”। এরকম শিলালিপি শুধু একটা ই নয়, বেশ কয়েকটি পাওয়া গেছে। এগুলো কোথায় রাখা আছে, তা জানার জন্য সি.এইচ রাও লিখিত “হিস্টোরি অব মাইসোর” গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডটি পড়তে হবে। আমার কথায় যাদের বিশ্বাস না হবে, তাদেরকে তো এই কষ্টটি স্বীকার করতেই হবে, আর হ্যাঁ, শুধু কষ্ট করে বই পড়ে, নির্দিষ্ট জায়গায় গেলেই হবে না, ফার্সি ভাষাটাও শিখে যেতে হবে। না হলে ঐ শিলালিপিতে কী লেখা আছে, তা বুঝবেন কীভাবে ? দেখা যাক, কী লেখা আছে ঐ শিলালিপিতে,
“আমার জয় গৌরবের তরোয়াল এই দেশের কাফেরদের (হিন্দুদের) ধ্বংস করার জন্য বিদ্যুতের মতো ঝলকাচ্ছে। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের প্রভু, কাফেরদের নির্মূল করতে আপনি আমাদের সাহায্য করুন। হে আল্লাহ, আমরা যারা মুহম্মদের সত্য ধর্মকে প্রসারিত করতে চাই, তাদের আপনি জয়যুক্ত করুন। আর যারা মুহম্মদের সত্য ধর্মের বিরোধিতা করে তাদেরকে পরাজিত ও বিহ্বল করুন। তাদের বিরুদ্ধে বিশাল বিজয় হাসিল করতে, হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সাহায্য করুন।”
খেয়াল করুন, শিলালিপির প্রথম বাক্যেই লেখা, “আমার জয় গৌরবের তরোয়াল এই দেশের কাফেরদের (হিন্দুদের) ধ্বংস করার জন্য বিদ্যুতের মতো ঝলকাচ্ছে।” টিপু যদি ভারতকে বা মহীশূরকে নিজের দেশ মনে করতো, তাহলে “এই দেশের” না লিখা থেকে লিখা থাকতো “আমার দেশের” আর কাফের অর্থাৎ হিন্দুদেরকে ধ্বংস করার জন্যই যে তার তরোয়াল, তা কিন্তু এখানে স্বীকার করাই হচ্ছে। এই একটি শিলালিপি থেকেই, মুসলমানরা যে ভারতে বহিরাগত এবং তারা যে এসেছিলোই ভারতের হিন্দুদেরকে খতম করতে বা মুসলমান বানাতে, তা স্পষ্ট।
টিপু যে হিন্দুদের ঠিক মতোই মুসলমান বানাতে পেরেছিলো এবং তাদেরকে শায়েস্তা করতে পেরেছিলো, তা বোঝা যায় টিপু সম্পর্কে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলমানদের মানসিকতা দেখে। যেসব মুসলমান, উদার এবং যারা যথেষ্ট হিন্দু বিরোধী নয়, ইসলামের ইতিহাসে এবং মুসলমানদের কাছে তাদের কোনো কদর নেই, যে কারণে তারা খুব একটা পছন্দ করে না- প্রেসিডেন্ট কালামকে বা সম্রাট আকবরকে। কারণ, মুসলমানদের মতে, এরা ইসলামের জন্য তেমন কিছু করে নি; সম্রাট আকবর তো ইসলাম বাতিল করে ভারতে “দ্বীন-ই-এলাহী” নামে একটি নতুন ধর্ম মত ই চালু করারই চেষ্টা করেছিলো। হিন্দু বিরোধী মানসিকতা এবং ইসলামের প্রসারে ভুমিকা রাখার জন্যই বাংলাদেশে এবং পাকিস্তানে তথা মুসলমানদের মধ্যে টিপুর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বংশ পদবী যা ই হোক, বাংলাদেশে অন্তত কয়েক লক্ষ মুসলমানের নাম পাওয় যাবে টিপু সুলতান; বেসরকারিভাবে বেশ কয়েকটি জাহাজও আছে টিপুর স্মৃতিকে স্মরণ করে। কিন্তু পাকিস্তানে সরকারীভাবে যুদ্ধ জাহাজের নাম রাখা হয়েছে পি.এন.এস টিপু সুলতান, এছাড়াও তার নামে অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রও আছে। টিপু যে হিন্দুদের মেরে কেটে মুসলমান বানিয়েছে, মুসলমানদের মধ্যে টিপুর এই স্বীকৃতিই তার প্রচ্ছন্ন প্রমান। আমার মনে হয়, টিপুর হিন্দু বিদ্বেষিতা প্রমান করার জন্য আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই, কারণ, কথায় বলে, বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারায় ই যথেষ্ট।
টিপু চার বিয়ে করে মুহম্মদের আদেশকেও সমুন্নত রেখেছে। এর বাইরে তার হেরেমে যে কত হিন্দু মেয়ে ছিলো, তার তো কোনো পরিসংখ্যান নেই। এই চার স্ত্রীর গর্ভে টিপুর ছেলে ছিলো ১৫টি এবং মেয়ে ছিলো ৮টি। এদের মধ্যে টিপুর ১৪ নং ছেলে গোলাম মুহম্মদ, ১৮৪২ সালে কোলকাতায় তার পিতার নামে একটি মসজিদ নির্মান করে, যা বর্তমানে বিখ্যাত “টিপু সুলতান শাহী মসজিদ” নামে পরিচিত।
পরাজিতদের সাথে মুসলমানরা পৃথিবীর জঘন্যতম ও বর্ববরতম আচরণ করে তাদেরকে হত্যা, ধর্ষণ এবং দাস হিসেবে বাজারে বিক্রি করলেও, নিহত ও পরাজিত টিপুর পরিবারের প্রতি ইংরেজরা সেরকম কোনো আচরণ করে নি, তাদেরকে সসম্মানে ভেলোরের একটি দুর্গে বন্দী করে রেখেছিলো। আর এভাবেই এক জল্লাদ ও ঘাতকের হাত থেকে মুক্তি পায় দক্ষিণ ভারতের নির্যাতিত হিন্দুরা।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, হিন্দুঘাতক যে টিপুকে হত্যা করে, ইংরেজরা, হিন্দুদেরকে মুসলমান অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে গেলো; সেক্যুলারদের কাছে সেই টিপুই আজ হিরো, আর ইংরেজরা হলো ভিলেন ! এই সেক্যুলাররা এখন সম্ভবত এটাই চায় যে, তাদের পূর্বপুরুষরা, মুসলমানদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেই ভালো হতো; তাহলে অন্তত আজ তারা ইচ্ছেমতো গরু খেতো পারতো আর এক বিছানায় চার বউ নিয়ে মজা লুটতে পারতো, সেটা তারা আজ পারছে না বলেই সম্ভবত তাদের গায়ে যত জ্বালা। তাই ইতিহাস বিকৃত করে ভিলেনকে হিরো আর হিরোদের ভিলেন বানাতে চাইছে।
জয় হিন্দ।
( লেখকঃ শ্রী Uttam Kumar Das …. )