মিশরে মসজিদে ১৫৫ জন মুসল্লিকে বোমা গুলি করে হত্যা করার একটা প্রেক্ষাপট আছে।
মিশরে আহলে কিতাবী ছাড়া অন্য কোন ধর্মের অনুসারী নাগরিক হিসেবে গণ্য হয় না। যেমন বৌদ্ধ, হিন্দু, শিখ, জৈন ইত্যাদি এরা মিশরের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে না।। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ মিশরে আহলে কিতাবী হিসেবে ইহুদী খ্রিস্টানদের নাগরিত্ব রাখা হয়েছে। এ সবই ইসলামী বিধানের আলোকে করা হয়েছে।
মিশনে বসবাসরত দ্বিতীয় সর্বাচ্চ জনগোষ্ঠির ধর্মীয় পরিচয় কপটিক খ্রিস্টান। গেল মে মাসেই এরকম একটি খ্রিস্টানদের তীর্থ যাত্রায় ৩৫ জন তীর্থযাত্রী খ্রিস্টানকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো। মিশরের শাসন ব্যবস্থা ইসলামিক। তবে যে দেশে ৯০ ভাগই মুসলমান সে দেশের শাসন ব্যবস্থা ঘটা করে ইসলামিক করা লাগে না- ওটা চলে অঘোষিতভাবে ইসলামিক শাসনে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ধর্মীয়ভাবে আক্রমনের শিকার হওয়া লোকজন যেমন বিচার পান না, তেমনি মিশরের সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের হত্যা নির্যাতনের কোন বিচার হয় না। রমজান মাসে এই কপটিক খ্রিস্টানদের নাজেহাল করতে ধর্মীয় পুলিম খাবার হোটেলে হামলা চালিয়ে ‘প্রকাশ্যে দিনের বেলা খাবার খাওয়ার অভিযোগে’ খ্রিস্টানদের আটক করা হয়। মিশর, ইরান এই দেশগুলো যথাক্রমে জরথ্রুস্ত এবং হিন্দুদের (পৌত্তলিক অর্থে) ছিলো। ইসলামী খিলাফতে চলে আসার পর এই দেশগুলো তাদের পূর্ব পুরুষদের পরিচয় মুছে ফেলে। নিষিদ্ধ হয়ে যায় পৌত্তলিক ধর্ম বিশ্বাস। আবার স্মরণ করে দিতে চাই, ইসলাম মতে কেবলমাত্র আহলে কিতাবী (ইহুদী খ্রিস্টান) বাদে অন্য ধর্মের অনুসারীদের জিজিয়া কর দিয়ে বসবাসের অনুমতি নেই। তাদের হয় ইসলাম গ্রহণ করতে হবে নয়ত প্রাণ দিতে হবে…।
মিশরের বিপদটা আগাম বুঝতে পেরেছিলেন সাহিত্যিক নাগিব মাহফুজ। সাহিত্যে নোবেল প্রাপ্ত এই লেখক মিশরীয়দের উপন্যাস, নাটকের মাধ্যমে ইসলামের আগের মিশরীয় সভ্যতার উত্তরাধীকারকে মিশরীয়দের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে, ইসলাম ধর্মের ‘ই’ ধরেও কোন কথা না বলেও একজন ইসলামপ্রেমি মুমিনের ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে সারা জীবনের জন্য লেখালেখি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। নাগিব মাহফুজ জানতেন প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি মিশর প্রথমে নিজেদের আত্মপরিচয়কে গোপন করেছে, পূর্ব পুরুষদের ধর্মকে নিষিদ্ধ করেছে, ইহুদী-খ্রিস্টানদের প্রতি বৈষম্য করেছে, দেশান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছে পাশ্ববর্তী দেশে- এরপরই কোপটা এসে পড়বে মুসলমানদের উপর…। ১৫৫ জন মুসল্লিকে মসজিদের ভেতর গুলি ও বোমা মেরে হত্যা করা ইসলামের লাস্ট স্টেপ। ইসলাম প্রথমে অমুসলিমকে বল প্রয়োগ করে এবং কৌশলে দেশ ছাড়া করে শেষে নিজের অনুসারীর মধ্যে কে সাচ্চা অনুসারী এই বিতর্ক জারি করে রক্ত ঝরায়। কারণ ইসলামে এই ফিকরা হাদিস, ইজমা, কিয়াসে রয়ে গেছে। রাষ্ট্র থেকে ধর্ম তথা ইসলামকে দূরে রাখা কেন জরুরী সেটা মুসলমান কোনদিন বুঝবে না যতদিন না তাদের মসজিদে এসে অপর মুসলমানরাই হামলা না করবে। মিশরে যখন গির্জাতে আগুন লাগানো হতো, খ্রিস্টানরা আগুনে পুড়ে মরত, তারা মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হতো তখন এই সুফিবাদীরা চুপ করেই থাকত। কারণ তরিকায় তফাত থাকলেও ‘কাফের’ বিষয়ে ইসলামের সব তরিকাই একমত। ছোটবেলায় সিলেট মাজারে গিয়ে দেখেছিলাম মাজারের খাদেমরা ভক্তদের কি কি বিষয়ে যেন জ্ঞান দিচ্চিল, ‘এইসব হিন্দুয়ানী এখানে করবেন না, এগুলো শিরক…’। এই সিলেট মাজারেই পরে অপর মুসলমানরা ‘শিরক’ করার অভিযোগে বোমা হামলা চালিয়ে ছিলো।
মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের হত্যা করছে অপর ধার্মীক মুসলমানরাই- কেন? এই প্রশ্ন যেদিন থেকে আপনার মনে জাগবে সেদিন থেকেই আপনার ইসলাম মুক্তি মিলবে…।
Writer- pathok