প্রশ্ন— আর্য্যরা কেনো তাদের বিজীত দেশের নাম পরিবর্তন করলো না???
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
আরব দেশ থেকে ইসলামিরা এলো, মধ্য এশিয়া থেকে তুর্কি দাসেরা এলো। ভারত দখল করে দিকে দিকে পুরানো নাম সব পালটে নতুন ইসলামিক নাম দিলো। ইন্দ্রপ্রস্থ হলো শাহজাহানাবাদ, ফিরোজশা কোটলা কতো কি। পৃথ্বীরাজ চৌহানের ‘রায় পিথোরা’ হয়ে গেলো কুতুব মিনার। ব্রিটিশ আমলে কলকাতা ,পরে দিল্লীর রাস্তা ঘাট সব ইংরেজী নাম পেলো। কিন্তু আর্য্যরা একবারের জন্যে, একটি জায়গার নামও ককেশিয়ান বা রাশিয়ান (ভোলগা নদীর অববাহিকা অঞ্চল) নাম করলো না কেনো। ঐ জায়গা থেকে যদি আর্য্যরা এসে সিন্ধু সভ্যতা গুড়িয়ে দিয়ে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে থাকে তাহলে বৈদিক সাহিত্যে সেই পুরানো নামই রেখে দিলো ????
বিজয়ীরা বিজীত দের দেওয়া নাম পরিবর্তন করে না বা তাদের কোনো নিজস্ব নিদর্শন প্রতিষ্ঠা করে না এমন হয় নাকি??? এই আমাদের কলকাতার সব জায়গা সাদা নীল হয়ে যাচ্ছে সেটাও তো বিজয়ী দলের ছাপ চাপিয়ে দেওয়া, তাই নয় কি ???
তাহলে কি এটাই ধরে নিতে হয় যে আর্য্যরা নিজেদের আদি বাস ভুমির ওপরে, তাদের নিজস্ব ভাষা, সংষ্কৃতি সব কিছুর ওপরে এক বিজাতীয় ঘৃনা নিয়ে পামীর পেরিয়ে এসেছিলো এবং আসবার পর পরই সেই পামীরের নাম দিয়ে দিলো “সুমেরু পর্বত” ? যে সিন্ধু সভ্যতায় ‘শিব’ মুর্তি পেলেন পুরাতাত্বিকেরা সেই শিব কে নিয়ে আর্য্যরা এতো মাতামাতি করে চললো সেই পুরাযুগ থেকে আজ অবধি ?
পন্ডিতেরা বলেন, এই বহিরাগত অসভ্য আর্য্যরা বিধ্বংসী যুদ্ধ করে ৫০০০ হাজার বছরের বেশী পুরানো “সিন্ধু সভ্যতা”র সব কিছু ধংস করে দেয় এবং সব মানুষকে মেরে কেটে ফেলে। আবার এও বলা হয়, এরা নাকি (আর্য্যরা) যাযাবর ছিলো। যাযাবরেরা যুদ্ধ বিদ্যায় অপরিসীম পারদর্শী হয় মেনে নিতে কষ্ট হয়। এরা ছোট খাটো দস্যু বৃত্তি করতে পারদর্শী হয়। যেমন আরবী বেদুইন দস্যুরা। কিন্তু তারা যাযাবর ছিলো না। আরবের মুরুভুমিতে ব্যাবসায়ীদের ক্যারাভ্যানে এরা ডাকাতি করতো। নিজ নিজ গোষ্ঠি নিয়ে বসবাস করতো, রাতে ক্যারাভ্যনে দিনে মরুদ্যানে লুটপাট ডাকাতি করতো। তাদের এক ছাতার তলায় এনে এক পরাক্রমশালী সৈন্য বাহিনী তৈরী করতে ‘জেহাদ’ নামে একটি অতি শক্তিশালী পদ্ধতি তৈরী করতে হয়েছে। তাহলে আর্য্যরা কি ঠিক তেমনি এক দুধর্ষ পদ্ধতি তৈরী করেই পামীর/হিন্দুকুশ পার হয়েছিলো ??? কি সেই যুদ্ধ পদ্ধতি আর কে তার নায়ক ???? অসংঘঠিত এক যাযাবর জাতি এটা করতেই পারে না।