ইয়ে মানে হল গিয়ে / দেবাশিস লাহা
ছি!ছি! ছি! ঘেন্না! ঘেন্না! ইচ্ছে হয় সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিই!
কেন, কী হল দাদা?
কী হয়নি বলো! মিডিয়ার বেলেল্লাপনা দেখছনা! দিনরাত শুধু ফিল্ম স্টার, ক্রিকেটার, পলিটিসিয়ানদের নিয়ে মাতামাতি!
কেন দাদা, আপনাদের “বুদ্ধিজীবীও ” তো মাঝেমধ্যেই লাইম লাইটে চলে আসছেন। এছাড়াও প্রতিবাদী যোদ্ধারাও আছেন!
সে আর কতজন! শিক্ষিত শ্রেণির একাংশই শিল্পী সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের একটু পাত্তা টাত্তা দেয়!
তা ঠিক। চাকচিক্যের প্রতিই মানুষের বেশি আকর্ষণ। গ্লেমারের ইয়েটা তো অস্বীকার করা যায়না। তবে শিক্ষিত মানুষের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও মেধার কদর করে!
মেধা! থামো তো! সবই তো পরজীবী মাল পত্তর! এক মুদ্রার দুই পিঠ। নেহাত মেহনতি মানুষের কথা বলে, তাই একটু কল্কে দিই।
তাই? তবে আপনি কী চাইছেন দাদা?
কী চাইছি মানে? বললাম না সব ভেঙেচুরে দিই। এই বুর্জোয়া ব্যবস্থাকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে দিয়ে সর্বহারাদের সম্মান দেওয়ার স্বপ্নটা একদিন পূর্ণ হবেই। বিপ্লব চাই, বিপ্লব।
তা বেশ! কিন্তু তারপর?
তারপর কৃষক শ্রমিককে উপযুক্ত সম্মান দেওয়া হবে। ভাব, চাষিরাই উৎপাদক! ওদের ছাড়া দৈনন্দিন জীবন চলেই না! অথচ ওরাই লাইম লাইটে আসেনা। যত্ত সব ফিল্ম স্টার, পরজীবী বুদ্ধিজীবী।
দুর্দান্ত ব্যাপার তো! জানেন দাদা আমিও অনেক ভেবেছি! এই যে দেখুন লোহা ছাড়া আমাদের জীবনের একদিনও চলেনা। বাড়িঘর, যানবাহন! প্রতি পদেই লাগে। অথচ তার কদর আছে? থাকলেই বা কতটুকু? যত আদিখ্যেতা সোনা নিয়ে!
বাহ, এই তো বুঝেছ। এই জন্যই মহান লেনিন নভেম্বর বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হল সর্বহারার সমাজতন্ত্র। আহা কী মধুর সেসব স্মৃতি!
ঠিক! ঠিক! লেনিন, স্তালিন, ট্রটস্কি, মলোটভ, প্লেখানভ, বুখারিন, গোর্কি, মায়াকোভস্কি, পাস্তারনাক —
কী হল তুমি আবার গড়গড় কাদের নাম বলে যাচ্ছ। সবাইকেই আমি চিনি। লেখাপড়া তো আমিও করি একটু আধটু!
হিটলার, হিমলার, আইখম্যান, গোয়েবলস, রোজেনবার্গ, হাইডেগার —
পাগল হলে নাকি! এবার দেখছি নাজিবাদীদের নাম আওড়াচ্ছ — কী ব্যাপার বল তো!
আওড়াচ্ছিনা দাদা। খুঁজে বেড়াচ্ছি। নাজিবাদে, ফ্যাসিবাদে পাব এটা নিশ্চিত। ওরা তো বুর্জোয়াদের নরক ভার্সন! কিন্তু সমাজতন্ত্রেও তো পাচ্ছিনা! অথচ আপনিই বললেন —
কী পাচ্ছনা?
এমন কিছু নাম যারা লাঙ্গল টেনে, হাতুড়ি চালিয়ে লাইম লাইটে এসেছে। ইয়ে মানে বিখ্যাত, কুখ্যাত যাই হোক একটা কিছু হয়েছে! আপনিই বলে দিন দাদা! অপেক্ষা করছি। সর্বহারার দেশ রাশিয়াতে নিশ্চয় এমন কেউ আছে, মানে ছিল। বলুন না দাদা!
কী বলব?
ওই যে বললাম লেনিন, স্তালিনের আমলে লাঙ্গল চালিয়ে লাইম লাইটে আসা কোনো চাষি! হাতুড়ি হলেও চলবে! মানে শ্রমিক!
আছে, আলবাত আছে — বলছি — লিখে নাও – আছে অনেক আছে — কিন্তু মাথায় আসছেনা! ইস কত কত নাম — ইয়ে মানে —
হা হা হা! থাকলে তো বলবেন আসুন। চা খাই।