সিমো হাইহা (Simo Häyhä) এক ফিনিস সাধারনের অসাধারন হয়ে ওঠার কাহিনী
(দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আগ্রাসী সেভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি মানুষ আর তার স্বদেশীয় মানুষের অতিমানবীয় লড়াই এর বিবরন )
শুরু করছি আমার প্রিয় স্লোগান দিয়ে – যত কিছু লেখা আছে স্বদেশে বা বিদেশে জড় করে আনি সব থাকো সেই আশাতে (সুকুমার রায় ,পরিবর্তিত)
উপরের ওই স্লোগানের সূত্র ধরেই প্রতিবারের মতই একটা সবিনয়ে নিবেদন,আমার যা কিছু লেখা সব বিবিধ ইন্টারনেট এর খবর বা ম্যাগাজিন এর থেকে নেওয়া,মৌলিক লেখা খুবই কম।আপনারা ভালবাসেন তাই হয়ত ওটা খেয়াল করেন না কিন্তু এক গন্যমান্য মানুষ এই অভিযোগ আবার করেছেন তাই ভাবলাম আগেই সাফাই গেয়ে রাখি।ঐতিহাসিক লেখায় তিনি কোনো নিজ্স্ব অভিজ্ঞতা দাবি করেছিলেন কিত্নু আমি অপারগ তাই আবার একই পদ্ধতিতে লিখছি, এক সাধারন থেকে অসাধারন হয়ে ওঠা মানুষের শৌর্য কাহিনী যিনি মাতৃভূমির উপর আগ্রাসী সাম্যবাদী সেভিয়েত বাহিনীকে কিঞ্চিত নাক খত দিতে বাধ্য করেছিলেন।
লেখাতে কোনো ভুল থাকলে তথ্যসূত্র দিয়ে দেখিয়ে দিন আর না থাকলে স্রেফ মার্কসীয় বা স্ত্যালিনীয় কোনো অনুভুতি নিয়ে ক্যাচাল করতে চাইলে পাত্তা পাবেন না তা তিনি নিজেকে দেবতাদের প্রধান ভাবুন বা অন্য কিছু ,কোনো ভাট বকলে সরাসরি প্রলিতারেত ধাঁচে অভ্যর্থনা করবো ।
এই কাহিনী এক অখ্যাত ফিনিস সিমো হাইহা যিনি ইতিহাস রচনা করেছিলেন স্রেফ নিজের মাতৃভূমি রক্ষার একক সংগ্রাম এর জন্য। আমরা এই অসম সাহসী বীরের কোনো কথা জানি না। ইনি একাই তৎকালীন এক পরাশক্তি সেভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক বিরামহীন লড়াই চালিয়েছিলেন। একা যা করেছিলেন তা তাবড় তাবড় সমর পন্ডিতের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আসুন আজ জানি এই ফিনিস কিংবদন্তির সমন্ধে।
এই ঘটনার শুরু ১৯৩৮ এ , একদল সেভিয়েত কূটনৈতিক প্রতিনিধি ফিনল্যান্ড এর সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয় দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সেভিয়েত সেনা মোতায়েনের।মূলত এর আগে স্ট্যালিন আর হিটলারের একটি ইউরোপ কে বন্টন করে নেওয়ার মানে ওই বানরের পিঠা ভাগের মত ভাগ করে নেওয়ার একটা মতৈক্য হয়েছিল যাতে ফিনল্যান্ড সেভিয়েতের অঙ্গীভূত হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। স্ট্যালিনের সেভিয়েত আশঙ্কা করেছিল যে হিটলার তার জার্মান বাহিনী নিয়ে ফিনল্যান্ড এর পথেই তাদের স্ট্যালিনগ্রাড আক্রমন করবে। ফিনল্যান্ড তাদের উত্তরে জানায় তারা এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ তাই জার্মান বাহিনী তাদের দেশের উপর দিয়ে যেতে চাইলে ওটা আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করে তারাই ওটার প্রতিরোধ করবে সুতরাং সেভিয়েত উপস্থিতি কাম্য না। এই ছোট্ট দেশের কথা কেন নব্য পরাশক্তি শুনবে ? আলোচনা তাই ব্যর্থ হলো এবং অতঃপর লাল ফৌজ এই নিরীহ দেশটির সীমান্ত দিয়ে গায়ের জোরে ঢোকার কাজ শুরু করলো। মনে রাখবেন ,সেই সময় ফিনল্যান্ডের দেশের পুরো জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৩০ লক্ষ আর সেভিয়েত ইউনিয়নের জনসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি।
ফিনল্যান্ডের আর তৎকালীন সেভিয়েত সীমান্তের রাচিওভ্যারি (Rautjärvi ) বলে এক অখ্যাত ছোট অঞ্চলের অতি সাধারণ এক কৃষক এবং মাঝে মাঝে শিকার করে বেড়ানো ৩৪ বছরের সিমো হাইহা এর প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিলেন। সিমো ফিনিস সামরিক বাহিনীতে এক পর্যায়ে কর্মরত ছিলেন এবং কর্পোরাল হিসেবে বাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর সেই দেশের সিভিল গার্ড বলে একটি আধা সামরিক গোছের বাহিনীর নিয়মিত সদস্য ছিলেন। সিমো অসাধারন লক্ষভেদ করতে পারতেন,কোনো একটি বস্তুর উপর ১৫০ মিটার দূর থেকে এক মিনিটে ১৬বার সঠিক জায়গায় গুলি করার ক্ষমতা তার ছিল। যাই হোক , এই সেভিয়েত আগ্রাসন কে ঠেকাতে তিনি একাই এগিয়ে আসেন।প্রয়োজনীয় খাবার ,বরফে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য সাদা রঙের শীতবস্ত্র আর নিজের স্নাইপার রাইফেল (লক্ষ্যভেদের জন্য এই বন্দুক ব্যবহার হয় ) নিয়ে নিজের লড়াই চালাতে এগিয়ে এলেন। চার মাসের এই অসম লড়াই এর শেষে এই সাধারণ মানুষটি আগ্রাসনকারী সেভিয়েত বাহিনীর ত্রাস হয়ে উঠেছিল। তার ভয়ে কম্পমান লালফৌজ তাকে নাম দিয়েছিল ‘শ্বেত মৃত্যু ‘ মানে “White Death”
এখানে বলে রাখা ভালো দেশ রক্ষার জন্য তাকে নিয়মিত বাহিনীতে ডেকে নেওয়া হয় কিন্তু সেই সময়ে এক মুষ্টিমেয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ বা আগ্রাসন প্রতিরোধে কোনো বিধিবদ্ধ কমান্ড বা অন্য সুবিধা পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না তার। ফিনিস বাহিনী বুঝতে পারে এই অসম লড়াই এ তাদের এক এর বিরুদ্ধে ১০০ সেনাকে প্রতিরোধ করতে হবে। ঐতিহাসিক ভাবে শান্তিপ্রিয় এই দেশটির যুদ্ধাস্ত্র প্রায় কিছুই সেই রকম ছিল না তাই তারা গেরিলা আক্রমন আর ছোট ছোট ক্ষেত্র ধরে প্রতিরোধের পরিকল্পনা করে।
হাইহার দায়িত্ব পরে জিয়েগো রেজিমেন্টের (Jaeger Regiment) হয়ে রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধ করার। কোলা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে তারা এই প্রতিরোধ করার কাজ শুরু করেন। তীব্র সেই শীতের দিনে যখন গোটা দিনে তাপমাত্রা হয়তো শূন্য ডিগ্রির উপরেই যেতো না,সেই প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করে হাইহা তার দিন শুরু করতেন নিজের গরম কাপড়ের উপর সাদা রঙের ছদ্মবেশ চাপিয়ে। সঙ্গে নিতেন কয়েক দিনের খাবার আর ৭০ থেকে ৮০ টি বুলেট। এরপর কোনো সুবিধামতো ঝোপ বা গাছের আড়ালে অপেক্ষা করতেন সুযোগের,প্রত্যাঘাত করার। এই কাজে তিনি একাধিক দিন কাটিয়ে দিতেন ওই সাংঘাতিক ঠান্ডার পরিবেশে খোলা হাওয়ায়। রুশ সৈন্য মূলত সড়কপথে এগিয়ে আসছিল তাই রাস্তার ধরে পাহাড়ি অঞ্চলের কোনো একটি উঁচু জায়গায় অপেক্ষা করতো হাইহা। বুদ্ধিমান এই অসমসাহসী মানুষটি লক্ষ্যবস্তু বাছার সময় ওই বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ লোক বা সামরিক রসদের উপর মূলত তার বন্দুক তাক করতেন।
ক্রমশ তার শিকার রুশ বাহিনী এই আক্রমণ নিয়ে সতর্ক হতে থাকলো। তারা স্নাইপার বাহিনীর খোঁজে সার্বিক সামরিক আক্রমন করতে থাকলো সঙ্গে পাল্টা স্নাইপার বাহিনী লেলিয়ে দিলো। এই রুশ স্নাইপার বাহিনী একদিন একাধিক ফিনিস সেনা আর এক অফিসার কে খুন করে কিন্তু হাইহা অধরা থেকে যায়। যদিও তার আক্রমনের মূল অস্ত্র Mosin-Nagant M91 নামের মূলত রুশ স্নাইপারটি চিহ্নিত হয়ে যায় কারন তার হাতে খুন হওয়া প্রত্যেকটি রুশ সৈন্যের মৃত্যুর কারন ছিল ওই বন্দুকটির গুলি।তার জন্য সমস্যা আরো বেড়েছিল কারন সকালেই এক রুশ সেনাকে খতম করেছিলেন ফলে রুশ সেনার দলটি তার অবস্থানের সমন্ধে ওয়াকিবহাল হয়ে গিয়েছিল। স্থিরবুদ্ধির হাইহা হামাগুড়ি দিয়ে বরফের মধ্যে তার সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যেতে সক্ষম হন কারন তার ওই সাদা পোশাক বরফে তাকে প্রায় অদৃশ্য করে তুলেছিল। এক পর্যায়ে দিনের আলো কমতে থাকে আর রুশ সৈন্য তাদের অভিযান প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। রুশ স্নাইপার বাহিনী এরপর তাদের নিজেদের অবস্থান থেকে উঠে দাঁড়ায় কারন ওই অল্প আলোয় আর কেউ তাদের পাল্টা মারতে পারবে এই ধারণা খুব স্বাভাবিক ভাবেই তৈরী হয়।তাদের ধারণা ভুল ছিল না অন্তত কোনো সাধারণ সৈন্যের ক্ষেত্রে ঠিক হলেও প্রতিপক্ষ যে অসামান্য এক লক্ষ্যভেদী ওটা রুশ সৈন্য ভুলে গিয়েছিল। হাইহা ৪৫০ মিটার দূর থেকে আক্রমন করে ওই স্নাইপার বাহিনীর নেতৃত্বদানকারী লোকটির উপর। এক গুলিতে ওই সেনানায়কের মাথায় ছ্যাদা করে দেয় তার স্নাইপার এর গুলি।
কোলা নদীর তীরবর্তী পাহাড়ের অসম লড়াই
হাইহার সাফল্য সত্বেও রুশ সৈন্য ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছিল। এই অবস্থায় নদীর পার ধরে রাস্তা দখল করলেই ফিনিস প্রতিরক্ষার উপর এক বড় আঘাত আনতে পারবে এই কথা রুশ এবং ফিনিস দুই পক্ষই বুঝতে পারছিল। জিয়েগো রেজিমেন্টের (Jaeger Regiment) দায়িত্ব এলো ওই বিশাল রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করা। একদিকে সেই সময়ের অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কামান এবং বিমান বহর আর ট্যাংক নিয়ে রুশ বাহিনী আর অন্য দিকে সেকেলে সীমিত অস্ত্রে সজ্জিত স্বল্প সংখ্যক জিয়েগো রেজিমেন্টের (Jaeger Regiment) ,যাদের ক্রমাগত রসদ আর অস্ত্রে টান পড়ছিল। আরো সমস্যা হলো রুশ প্রতিপক্ষ জেনে গিয়েছিল যে এই রেজিমেন্টের জন্য সাহায্য আসার রাস্তা প্রায় ছিল না। এই অবস্থায় ওই কোলা পাহাড়ের দখল নিতে একটি সেভিয়েত ডিভিশন অগ্রসর হয়। ডিভিশনটি বোঝে নি জিয়েগো রেজিমেন্ট তখন লড়ছিল দেশের সম্মান রক্ষার জন্য। তারা ওই ডিভিশন এর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করে তাদের বিফল করে। আগ্রাসী সেভিয়েত ভাবলো দুটো ডিভিশন দিয়ে এই কাজ করিয়ে নেবে। পাঠক,অনেকেই নিশ্চই গ্রিক স্পার্টান আর সেই সময়ের পারস্য বাহিনীর থার্মোপিল এর যুদ্ধর কথা শুনেছেন ,অদম্য স্পার্টানদের মতোই এই ফিনিস বাহিনী এক অসামান্য বীরত্বের পরিচয় দিলো। তারা শপথ নিয়েছিল রুশ বাহিনী কে যেতে দেবে না ,আর হলোও তাই ! দিনের আলোয় রুশ বাহিনী ক্রমাগত আক্রমন করলে তারা বাঙ্কারে আর নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতো এবং রাতে নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি সামলানোর ব্যবস্থা করতো। একদিকে তাদের রসদ আর অস্ত্রে টান পড়ছিল অন্যদিকে রুশ বাহিনী নিয়মিত নতুন রসদ আর অস্ত্র পেয়ে যাচ্ছিল। এরপরও সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলে যাচ্ছিল কিন্তু কোনো সুবিধা করতে পারছিল না। ফিনিস এই রেজিমেন্টের প্রাণ হানি হলেও তাদের রাতের আক্রমন অবিরত চলতে লাগলো। রুশ বাহিনী তার বিশাল সংখ্যা আর অস্ত্রের উপর নির্ভর করে এক সার্বিক আক্রমন এর রাস্তায় হাটে অন্যদিকে ফিনিস বাহিনী নেয় এক নিজস্ব সমরকৌশল এর যার স্থানীয় নাম ‘মোটি পদ্ধতি ‘, ফিনিস ভাষাতে এর মানে হলো বৃত্তাকারে ঘিরে ফেলা। এর কায়দা ছিল এগিয়ে আসা রুশ সৈন্যদল কে ঢুকতে দিয়ে পিছনের রসদ এর সরবরাহ কে কেটে দেওয়া আর দুই ধার এবং পিছন থেকে আক্রমন করা। এতে অগ্রবর্তী বাহিনী দ্বিধায় পরে নিজেদের রক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছিল এবং তাদের এগিয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেত।
এমনি এক প্রবল সংঘর্ষের দিনগুলোতে ২১শে ডিসেম্বর,১৯৩৯ এ হাইহা একাই খতম করেন ২৫ জন সেভিয়েত সৈন্যকে।তার এই অসম লড়াইয়ে সেই সময় পর্যন্ত একাই নিকেশ করেছিলেন ৫০০র বেশি আগ্রাসী সেভিয়েত সৈন্যকে ! এই পর্যায়ে প্রতিপক্ষ সেভিয়েত বাহিনী বুঝতে পারে তাদের এই নিধনের মুলে একটিই মাত্র লোক দায়ী। ত্রাসে আর সম্ভ্রমে তার নাম হয় ‘শ্বেত মৃত্যু ‘ বা white death
সামান্য শক্তির ফিনিসরা লড়াই চালিয়ে যায় অবিরাম। জানুয়ারির মধ্যভাগে মানে ১৯৪০ এ এই রসদ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া আটকাতে রুশ বাহিনী প্রচন্ড শক্তি প্রয়োগ করে। চারহাজার নিয়মিত সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াই এ থাকে মাত্র ৩২ জন ফিনিস যোদ্ধা। অকুতভয় ফিনিস যোদ্ধারা খতম করে ৪০০ র বেশি রুশ সৈন্যকে। পাঠক , যুদ্ধে পরাজিত হয় এই মহান কমিউনিস্ট রুশ বাহিনীর ! মাত্র চার জন অবশিষ্ট মহাবীর ফিনিস বেঁচে ছিলেন ওই যুদ্ধজয়ের আস্বাদ পেতে। ভাবুন কি অভাবনীয় বীরত্ব তারা দেখিয়েছিলেন !!সেভিয়েত বাহিনীর দেড়লাখের মতো লোক সার্বিক ভাবে মারা গিয়েছিল ওই শীতকালীন যুদ্ধে।এক রুশ জেনারেল তো বলেই ফেলেছিলেন যে জমি তারা দখল করেছিল ওটা নিজেদের মৃত সৈন্যদের কবরের জন্য দরকার জমির সমান ….
এই পর্যায়ে ব্রিটিশ বা ফরাসি শক্তি ফিনিসদের সাহায্য করতে এগিয়েছিল কিন্তু তা ছিল অতীব সামান্য। এর মধ্যে রুশ বাহিনী এই মোটী কৌশল বুঝতে পেরেছিল। আগে তারা তাড়া করে যাচ্ছিল আক্রমণকারী ফিনিস শত্রুকে আর জঙ্গলে ক্রমশ খতম হচ্ছিল তাদের হাতে। এইবার রসদ আর নতুন অস্ত্রে বলীয়ান এই আগ্রাসী বাহিনী ছোট ছোট দলে বিভিন্ন অঞ্চল ধরে এগিয়ে আসছিল যাদের প্রতিহত করার মতো লোক সংখ্যা ফিনিশদের ছিল না। এমনি এক প্রতক্ষ্য লড়াইয়ের দিনে,৬ই মার্চ ১৯৪০ এ হাইহা বিপদে পড়লেন। এই সময়ে তিনি একটি ছোট ফিনিস বাহিনীর লেফটেনেন্ট পদন্নোতি পেয়ে লড়াই এ নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সেই দিন একাই ৪০ জন সৈন্যকে নিকেশ করেছিলেন তবু দিনটি তার জন্য ছিল না। এক বিস্ফোরণে তার মুখের অর্ধেক উড়ে গেল। তার সহযোদ্ধারা আহত হাইহাকে ট্রেনে করে চিকিৎসার জন্য পাঠান নিরাপদ আশ্রয়ে। হাইহা অজ্ঞান ছিলেন বেশ কয়েকদিন এবং এক পর্যায়ে কোমাতে চলে যান। এতো শক্ত প্রাণের লোক কি আর হাসপাতালে মারা যাওয়ার ? জ্ঞান ফিরে পান চার দিন পরে। ততদিনে এক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে ফিনল্যান্ড আর সেভিয়েত পক্ষের মধ্যে।
না , সিনেমায় যেমন হয় ঐরকম কিছু না , চুক্তিতে ফিনল্যান্ড বাধ্য হয়েছিল এক বড় অংশের অঞ্চল কে রুশ দখলে দিতে যার মধ্যে হাইহার নিজের অঞ্চল ও ছিল। প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ফিনিস উদ্বাস্তু হয়েছিল এই কারনে।
মজার কথা হলো হিটলার এই অসম যুদ্ধের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষন করছিল। মূলত লেলিনগ্রাদ (পরে পিটার্সবার্গ ) আক্রমন বা সেভিয়েত বাহিনীকে তাচ্ছিল্য করার চিন্তা করেছিল এই যুদ্ধের গতি প্রকৃতি দেখে। ভুলে গিয়েছিল যে ফিনিসরা এই লড়াই লড়েছিল নিজেদের অতিমানুষের পর্যায়ে নিয়ে। দেশমাতৃকার সম্মান রক্ষার জন্য,যে কারণে তারা এক একজন হাজার রুশ সেনার পাল্লা দিতে সক্ষম হয়েছিল। যুদ্ধের পরে হাইহা কে সম্মানিত করা হয়েছিল পাঁচটি সম্মানিক মেডেলে। তিনি একটি বই ও লিখেছিলেন এই প্রসঙ্গে। মিতভাষী এই মানুষটিকে বিভিন্ন সম্বর্ধনাতে বা অন্যত্র জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল একাই কি করে ৫০০র উপর সেভিয়েত সেনাকে খতম করলেন। উত্তরে তিনি অল্প হেসে বলতেন,অনুশীলন এবং অনুশীলন।
এই সাধারণ মানুষ থেকে অসাধারন হয়ে ওঠা আগ্রাসী সেভিয়েত বাহিনীর কাছে শ্বেত মৃত্যুর প্রতীক মানুষটি পরিণত বয়েসে মারা যান ২০০২ সালে ,৯৬ বছর বয়েসে।
একটা ছোট্ট বিষয়ের বাইরের তথ্য দিয়ে রাখি, ফিনল্যান্ড এর আদি একটি চিহ্ন ছিল স্বস্তিক চিহ্ন যা সেভিয়েত চাপে সরাতে হয় সুতরাং বুঝতেই পারছেন ওই চিহ্ন হিটলারের বা জার্মানির কোনো নিজ্স্ব কিছু না।আর হ্যা হাইহার নিজের ভূমি এখনো রাশিয়ার দখলে আছে। যা ফেরত দেয় নি সেই সময়ের সাম্যবাদী রাষ্ট্র না পরের পুতিনের দেশ।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও দেশটির উপর খবরদারি চালিয়েছে সেভিয়েত ইউনিয়ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের পর্যায়ে এস্তোনিয়া,ল্যাতভিয়া আর লিথুয়ানিয়া কে দখল করে সেভিয়েত ইউনিয়ন সঙ্গে দখল করে ফিনল্যান্ড এর ক্যারেলিয়া বলে একটি অঞ্চল। বাকি তিনটি দেশ দখলদারির বাইরে এলেও ক্যারেলিয়া এখনো ছাড়ে নি রাশিয়া।সাম্রাজ্যবাদ যেন কাদের চক্ষুশুল শব্দ ?
বরাবরের মতই এই প্রতিবেদন লেখার জন্য সাহায্য নিয়েছি যে সূত্র থেকে তার উল্লেখ নিচে করলাম।ছবি ও নিয়েছি বিভিন্ন ইন্টারনেট এর সূত্র থেকে। যমন শুরুতে বলেছি,আবার বলছি,আমি মূলত পাঠক,যা পড়ি তাই লিখে ফেলি। আমার নিজস্ব জানার দরজা জানলা ইন্টারনেট বা প্রচলিত পুঁথি পুস্তক তাই মৌলিকতা না পেলে নিজগুনে ক্ষমা করবেন। লেখায় কোথাও ত্রুটি পেলে জানাবেন,কৃতজ্ঞতার সাথে লেখা আর নিজেকে সংশোধন করবো অক্লেশে। আপনাদের মূল্যবান মতামত তাই একান্ত কাম্য।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ !
তথ্যসূত্র :
১. https://en.wikipedia.org/wiki/Simo_H%C3%A4yh%C3%A4
২. http://www.historyextra.com/article/bbc-history-magazine/world-deadliest-sniper-simo-h%C3%A4yh%C3%A4
৩. উনার সমন্ধে জানার একদম নির্দিস্ট একটি সাইট https://www.simohayha.com/
৪. সহজ করে তার সমন্ধে বলা একটি ভিডিও তথ্যচিত্র https://www.youtube.com/watch?v=pkKVhqsYva4
৫. https://en.wikipedia.org/wiki/Russo-Finnish_wars
৬. http://www.virtualpilots.fi/feature/articles/honorable_swastika/
৭. সাম্যবাদের আগ্রাসনের একটি ছোট ছবি পাবেন এই সুত্রে http://uralica.com/finnliv.htm