দলিত বলে ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ কে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, এটা ভয়ংকর মিথ্যাচার।

দলিত বলে ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ কে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, এটা ভয়ংকর মিথ্যাচার। যদি তাই হতো তবে ব্রাহ্মণ হয়েও কেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মন্দির প্রবেশে বাধা পেলেন? পুরী জেলা প্রশাসন থেকে যা গেছে -খুব ভোরে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর স্ত্রী যাতে নির্ঘিন্নে পূজা সারতে পারেন তাঁর জন্য জনসাধারণের প্রবেশ সাময়িক বন্ধ ছিল। প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ অসুস্হতার কারণে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেননি, এটাকেই মূলত সুবিধাবাদী মিডিয়াগুলি নিজেদের মত করে সাজিয়েছে। পুরী জগন্নাথ মন্দিরে প্রেসিডেন্টকে প্রবেশ করতে না দিলেও সেটাতে অবাক করার কিছুই থাকতো না। উক্ত মন্দিরে প্রথমত অহিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ, যা মন্দিরের সিংহদ্বারেই উল্লেখ আছে।
দ্বিতীয়ত হিন্দু হয়েও যারা হিন্দুত্বের পরিচয় বহন করে না, তাদেরও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে।
২০০৫ সালে থাইল্যান্ডের রানি মহচক্রি সিরিধরণকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তিনি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বলে।
২০০৬ সালে সুইজারল্যান্ডের বাসিন্দা এলিজাবেথ জিগলার পুরীর মন্দিরের উন্নতির জন্য ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা দান করার পরেও খ্রিস্টান হওয়ায় তাকে প্রবেশ দ্বার টপকাতে দেওয়া হয়নি।
২০১২ সালে রথযাত্রার সময়ে এক মার্কিন নাগরিক মন্দিরে ঢুকে গেলে পুরোহিতরা মারধর বের করে দেয়।
এবার আসুন
হিন্দু ধর্মে জন্মগ্রহণ করেও যারা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে
পারেনি-
পুরোহিতরা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে মন্দিরে প্রবেশ করতে দেয়নি। কারণ তাঁদের যুক্তি ছিল ইন্দিরা গান্ধি আর পারসিক অনুসারী ফিরোজ গান্ধী’ র বিয়ে হয়েছিল, ফলে তিনিও আর হিন্দু নন। এজন্য শেষে ইন্দিরা গান্ধীকে মন্দিরের নিকটে অবস্থিত রঘুনন্দন লাইব্রেরি বিল্ডিং থেকে মন্দির দর্শন করে ফিরে যেতে হয়।
১৯৩৪ সালে মহাত্মা গান্ধী জাতপাতের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানিয়ে পুরীর মন্দিরে প্রবেশ করেননি৷ সেদিন তিনি ওই মন্দিরের সিংহদ্বারে হরিজন পদযাত্রার প্রচারে ধর্নায় বসেছিলেন৷ তবে তাঁর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধী মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে এসেছিলেন।
এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী গুলজারি লাল নন্দ।
১৯৭৯ সালে বিএলডি থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া চৌধুরী চরণ সিং তিনিও মন্দির প্রবেশে বাধা পেয়েছেন।
বাধা পেয়েছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সোনিয়া গান্ধী ও রাজীব গান্ধী।
বর্তমান কংগ্রেসে সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী গরুর মাংস খাওয়ায়, তাকেও মন্দির প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়।
উড়িষ্যার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বনাথ দাস জাতপাতের বিরোধিতা করে প্রতিবাদস্বরূপ মন্দিরে প্রবেশ করেননি৷
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও পুরোহিতরা মন্দিরে প্রবেশ করতে দেননি, কারণ তিনি ব্রাহ্ম সমাজের অংশ ছিলেন বলে।
পুরীর জগন্নাথ একেবারে হিন্দু দেবদেবীর মন্দির ফলে কোন অহিন্দুর প্রবেশ নিষিদ্ধ তাই এক সময় ইসকন ভক্তদের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জানকী বল্লভ পট্টনায়ক সেখানে প্রবেশের কথা বললেও মন্দির কতৃপক্ষ রাজি হয়নি৷
১৩৮৯ সালে ভক্ত কবীর মন্দির দর্শনে এলে প্রথমে তাকে মন্দিরের পুরোহিতরা আটকে দেন তাকে মুসলমান মনে করে৷
১৫০৫ সালে নানককেও আটকে দেওয়া হয়েছিল কারণ তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুসলমান ভক্ত৷ তবে পরবর্তীকালে কবীর এবং নানক উভয়কেই মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় কারণ তখন পুরীর রাজা গজপতী ঘোষণা করেন তিনি স্বপ্নে দেখেছেন জগন্নাথদেব ওনাদের ভক্ত বলেছেন৷
১৯৭৭ সালে ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ তাঁর ভক্তদের নিয়ে পুরীর মন্দিরে আসেন। তখন প্রভুপাদের ভক্তদের মন্দিরে ঢোকা নিয়েও বিতর্ক হয়।
২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় গো-মাংস খাওয়াকে সমর্থন করায় তাকেও মন্দির প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়।
১৯৮৫ সালে ভারতের ১৭ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা পুরী জগন্নাথ মন্দির দর্শনে গেলে, পুরোহিতরা কাউকেই মন্দিরে প্রবেশ করতে দেননি। পুরোহিতদের যুক্তি, এরা কেউই হিন্দুত্ব ধারণ করে চলেন না।
এই মন্দির ঘিরে বিতর্কের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল এখানে বিধর্মীদের প্রবেশ নিষেধ৷ এই বিষয়ে মন্দির পুরোহিতরা এতটাই গোঁড়া -যে কোন রকম বিধর্মী আচরণ বরদাস্ত করেন না। ফলে এই মন্দিরে তেমন কোন ভিআইপির জন্যেও এই বিষয়ে কোন রকম শিথিলতা দেখাতে রাজি নয়৷ তাঁর জন্য যেমন একদিকে অনেকের মন্দিরে প্রবেশ আটকে গিয়েছে তেমনই আবার প্রতিবাদে কেউ কেউ সেখানে ঢোকেননি৷
সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, পুরী জগন্নাথ মন্দির সকল ধর্মের মানুষের জন্য প্রবেশের দ্বার খোলা থাকবে। কিন্তু মন্দিরের পুরোহিতরা সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছে -কোন অহিন্দুকে এই মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, হিন্দুদের মধ্য থেকেও যাচাই বাছাই করে প্রবেশে অনুমতি মিলবে।
ঠিকই তো মক্কা-মদিনায় যদি অমুসলিমরা প্রবেশ করতে না পারে, তবে পুরী জগন্নাথ মন্দিরে কেন প্রবেশ করতে চাইবে? আমি মনে করি, পুরী-মথুরা ও বৃন্দাবন এই ৩ জেলায় সকল প্রকারের অহিন্দুদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা।