একটু লক্ষ্য করলেই কি মুসলমানদের সুবিধাবাদী দ্বিচারী চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে না….?
এরা নিজেরা যেখানে সংখ্যাগুরু, সেই রাষ্ট্র গুলিকে ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে রাখবে, বিধর্মীদের খুন, ধর্ষণ, জোর করে ধর্মান্তরিত বা বিতাড়িত করে করে লুপ্ত করে দেবে । আবার এই এরাই যেখানে সংখ্যায় একটু কম, যতক্ষণ পর্যন্ত কম, সেই অমুসলিম প্রধান ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলিতে ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সমান অধিকার যাতে বজায় থাকে সেই দাবি জানাবে, ধর্ম নিরপেক্ষতার জয়গান গাইবে, যেন এরা কতই না ধর্ম নিরপেক্ষতার পূজারী ! নিজেদের দেশগুলিতে বিধর্মীদের ন্যূনতম ধর্মীয় এবং নাগরিক অধিকার পর্যন্ত দেবে না, দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে থাকতে বাধ্য করবে, অথচ অমুসলিম প্রধান ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলিতে এই এরাই হাজারো অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করেও চাইবে আরও অনেক কিছুু । শরিয়ত চালুর দাবিতে জঙ্গী আন্দোলন পর্যন্ত করবে। এমন স্বার্থপর দ্বিচারিতা কেবল মুসলমানদের পক্ষেই সম্ভব। একেই বলে নিজের বেলায় আনি, পরের বেলায় কানি।
মুসলমানরা ভারত, ইউরোপ, আমেরিকা, মায়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলমানের অধিকার চায় । কিন্তু সৌদি, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে সংখ্যালঘুদের অধিকার দিতে রাজি নয়। সেখানে এরা সংখ্যালঘুদের উপর শরিয়ত চায়, জিজিয়া কর চায়। এরা চায় ভারত সহ সব অমুসলিম প্রধান রাষ্ট্রই ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকুক, কিন্তু নিজেদের রাষ্ট্র গুলি যাতে ইসলাম বজায় থাকে। হিন্দু প্রধান নেপাল তো হিন্দু রাষ্ট্র থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়ে গেছে, মুসলিম প্রধান পাকিস্তান হবে কোনদিন? বরং উল্টোটা হয়েছে, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের হয়ে গেছে ।
যারা ভারতের কয়েকটি রাজ্যে গোহত্যা নিষিদ্ধ বলে চিৎকার চেঁচামেচি করছে, এরাই নিজেরা যেখানে সংখ্যাগুরু সেই কাশ্মীরে শূয়োরের মাংস নিষিদ্ধ করে রেখেছে। অমুসলিমদের বুঝি শূয়োর খেতে ইচ্ছে করে না?
যে কারণেই হোক, অন্য ধর্মের কেউ ইসলাম কবুল করলে তাকে স্বাগত জানায়। কিন্তু ইসলামের স্বরূপ বুঝে কেউ ইসলাম ত্যাগ করলে তার নামে জারি হয় মৃত্যুদণ্ড। তাকে খুন হতে হয়, বা দেশান্তরী। সৌদীতে কোন মুসলমান ইসলাম ত্যাগ করলেই মৃত্যুদণ্ড, এদেশেও যদি আইন করে ধর্মান্তরকরণ রোধ করা হয়,… তখন? সৌদি কিন্তু মহান খাঁটি ইসলামিক পূণ্যভুমি!
মুসলমানদের খাঁটি ইসলামিক সেই পূণ্যভুমি সৌদীতে একটিও মন্দির বা চার্চ নেই । বিধর্মীদের ধর্মাচরণ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ । এমনকি অমুসলিমদের ভোটাধিকার দূর, নাগরিকত্ব পর্যন্ত নেই। মক্কায় বিধর্মীদের প্রবেশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ । এটা হল সহী ইসলাম ।
অথচ মুসলিম জাতির উপর নির্যাতনকারী জালিম বর্বর ইহুদী রাষ্ট্র ইজরায়েলে কিন্তু প্রচুর মসজিদ আছে, । সেই ইহুদী রাষ্ট্র যখন শুধু মসজিদের মাইকের শব্দে নিয়ন্ত্রণ আনার কথা বলে, এই এরাই প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সারা বিশ্বে। ইসলামী পূণ্যভুমি সৌদি সহ বেশিরভাগ মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র ধর্মীয় অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্র হলেও সেগুলি দোষের না। কিন্তু এই ‘বর্বর’ ইজরায়েলের ইহুদী রাষ্ট্র ঘোষণাটা কিন্তু বর্বরতার চুড়ান্ত, মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা আরো খর্ব করার অপপ্রয়াস । ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তান সহ সারা পৃথিবীর মুসলিমরা বড়োই ক্ষুব্ধ। যদিও বর্বর ইহুদীদের মতো মুসলিম বিদ্বেষীদের রাষ্ট্র ইজরায়েলেও ইহুদী রাষ্ট্র ঘোষণার বিলে একষট্টিটি ভোটের বিপক্ষে সংসদে ভোট পড়ে পঞ্চান্নটি। এরপরও ইজরায়েলীরা বর্বর অত্যাচারী। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী মুসলিম প্রধান ‘অসাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশ যখন ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের হয়ে যায় – সেদেশের ‘অসাম্প্রদায়িক’ মুসলমানদের একজনও কি বাধা দিয়েছিল নাকি দু হাত তুলে সমর্থন করেছিল?
সোনু নিগম মসজিদের মাইকের আওয়াজে বিরক্তি প্রকাশ করলে যারা ফতোয়া জারি করে, তারাই কি বাংলাদেশে কীর্তনের মাইকের নিষেধাজ্ঞায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে না?
যারা এই বাংলায় মমতাজ বেগমের নির্লজ্জ সংখ্যালঘু মুসলিম তোষণ দেখেও ধর্মনিরপেক্ষ সেজে মমতাকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিমূর্তি’ আখ্যা দিয়ে মমতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, এই তারাই কিন্তু ঐ বাংলায় মৌলবাদী হেফাজতের অঙুলি হেলনে চলা ভীষণ ভাবে সাম্প্রদায়িক হিন্দু বিদ্বেষী হাসিনার উপর ক্ষিপ্ত, কেন হাসিনা আরো হিন্দু বিদ্বেষী নয় ! হিন্দু প্রধান এদেশে যারা সরকারি স্কুল কলেজে সরস্বতী পুজোর বিরোধিতা করে, তারা কিন্তু ওদেশে সরকারি স্কুল কলেজ এমনকি অফিসে পর্যন্ত আলাদা নামাজ ঘরের ব্যবস্থাতে আপত্তির কিছু খুঁজে পায় না।
যারা এরাজ্যে চিরকালীন রামধনুকে রং ধনু বা আকাশী রং কে আসমানী করার পেছনে, তারাই কিন্তু বাংলাদেশে পাঠ্য বইয়ে গরুর মাংস দিয়ে অঙ্কে দোষ খুঁজে পায় না। জসীমউদ্দিনের ‘আল্লা মেঘ দে’ বা আল্লার প্রশস্তি মূলক কোন গান গাইতে কোন হিন্দু গায়ক বা গায়িকার বিন্দুমাত্র আপত্তি না থাকাটা যাদের হিন্দুদের উদারতা বলে মনে হয় না, তারাই কিন্তু বাংলাদেশে শুধুমাত্র ‘পূজা’ শব্দটা থাকার জন্য মালাউন কবি রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ বা হুমায়ূন আজাদের কবিতা বাতিলের দাবী জানায় এবং হাসিনাকে দিয়ে বাতিল করাতে সমর্থও হয়।
বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্সের ফুটবল দলে পাঁচ জন মুসলিম ফুটবলার নাকি ছিল – এ নিয়ে গর্বে গর্বিত মুসলমান আর এদের দোসর বামৈস্লামিকদের উদ্বাহু নৃত্য ! কিন্তু এরা কেউ কি এটা স্বীকার করবে, দেশটা ইসলামিক রাষ্ট্র নয় বলেই যে জাতীয় দলে এতজন বিধর্মীর ঠাঁই হয়েছে? তখন কিন্তু এরা এটা ভুলে যায় যে এটা সম্ভব হয়েছে অমুসলিম প্রধান রাষ্ট্র গুলি সেক্যুলার বলে। সম্ভব হয়েছে অমুসলিমরা উদার ধর্ম নিরপেক্ষ মানসিকতার বলে । যোগ্যতা থাকলে অমুসলিম প্রধান রাষ্ট্র গুলিতে একজন মুসলমান প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হতে পারেন, ভারতেই হয়েছে। কিন্তু মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে? প্রেসিডেন্ট দূর, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভগবান দাসকে কিন্তু প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত করা হয় নি ইসলামিক পাকিস্তানে । যারা বিশ্বকাপে ফ্রান্সের মুসলিম ফুটবলার নিয়ে, লন্ডনের মেয়র সাদিক খান নিয়ে গর্ব করে, তাদের চাপেই কি বাংলাদেশের মালাউন হিন্দু বিচারপতিকে সরে যেতে হয় না?
এরা নিজেদের সুবিধার বেলায় অন্য দেশের সেক্যুলারিজম বা অন্যদের অসাম্প্রদায়িক উদার নীতির সুযোগ সুবিধা ষোলআনা ভোগ করবে, কিন্তু নিজেদের দেশে সেই নীতি প্রয়োগ করবে না, অন্যদের সেই সুযোগ দেবে না। ঐ গুলি তো সেক্যুলার দেশের সেক্যুলারিজমের জয়, তাহলে এরা নিজেদের দেশগুলিকে সেক্যুলার রাষ্ট্র করে না কেন? নিজেদের স্বার্থের অন্য দেশের যেটা নিয়ে এরা গর্ব করে, নিজেদের দেশে সেই ব্যবস্থা করে না কেন? আর ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী দলের ফুটবলারদের ধর্ম থাকলে সেই ফ্রান্সেরই প্যারিস বা নীস শহরের হামলা কারীদের ধর্ম আসবে না কেন?
আচ্ছা, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ বা খ্রীষ্টান মিশনারিদের মত কোন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইসলামে আছে কি, যারা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আর্তের সেবায় নিয়োজিত? ধর্ম তো মানব কল্যাণের জন্য, বিশেষ করে ইসলাম তো নাকি শান্তি আর সৌভ্রাতৃত্বের ধর্ম। সেই হিসেবে আর্তমানবতার জন্য ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানবসেবা করার বিধান তো ইসলামে আরো বেশী থাকার কথা। আছে কি? আমি তো জানি না, কেউ জানেন কি?
মানবতা শব্দটা এরা পারত পক্ষে ব্যবহার করে না। রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দেওয়ার দাবীর মিছিলের ব্যানারে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটার সঙ্গে জ্বলজ্বল করা ‘মুসলিম’ শব্দটাই প্রমাণ করছিল, এরা যে মানবিক কারণে নয়, শুধু মুসলিম হওয়ার কারণেই দাবিটা জানাচ্ছে। আজ পর্যন্ত চৌদ্দশো বছরের ইতিহাসে এদের কোন মানবিক চেহারা কেউ দেখেছে বলে জানি না। এরা নিজেরা কারোর প্রতি মানবতা না দেখালেও এরা আশা করে অন্যরা যাতে এদের প্রতি ষোলো আনা মানবতা দেখায় ।
সিরিয়া, ইরাকের অসহায় নারী পুরুষ শিশুরা ছোট্ট নৌকায় ভাসতে ভাসতে উপকূলে এসে ভিড়েছিল। নিজেদের দুর্বল আর্থিক অবস্থা সত্বেও সমুদ্রে ভাসতে থাকা ইরাক সিরিয়ার শরণার্থীদের পরম আদরে আশ্রয় দিয়েছিল খ্রীস্টান অধ্যুষিত ধর্ম নিরপেক্ষ পশ্চিমা দেশগুলি ব্যবস্থা করেছে অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের। ‘স্বাগতম’ লেখা প্ল্যাকার্ড আর এক বুক ভালোবাসা নিয়ে উপকূলে দাঁড়িয়ে থাকতো সে দেশের মানুষগুলি। কিন্তু ওরা যে পাতে খায় সেই পাতেই হাগে। আশ্রয় পেয়ে যেখানে কৃতজ্ঞতায় নুয়ে থাকার কথা, সে জায়গায় সুসভ্য সেই দেশ গুলিকে নরকে পরিণত করে ফেলছে। আশ্রয় দাতাদের উপর বোমা হামলা করছে, পশুর দল নববর্ষের অনুষ্ঠানে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সেদেশের নারীদের উপর। নিজেদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মানবিক কারণে ফ্রান্স লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে থাকার বদলে এই মুসলিম শরণার্থীরা কখনো সেদেশে ইসলামি শরিয়ত চালুর দাবিতে, কখনো অন্য কোন কারণে হিংসাশ্রয়ী আন্দোলন করছে। বাংলায় কৃতঘ্ন বলে একটা শব্দ আছে না?
এবার উল্টো করে ভাবা যাক। কোনদিন যদি কোন কারণে অমুসলিমরা ভাসতে ভাসতে কোন মুসলিম প্রধান দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়? মিলবে আশ্রয়? নাকি চলত ব্যাপক গণহত্যা, গণধর্ষণ, গণ ধর্মান্তরকরণ ? এই পশুরাও দলে দলে উপকূলে দাঁড়িয়ে থাকতো , তবে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়, শিকার ধরার জন্য । পশুর দল জান্তব উল্লাসে ফেটে পড়ত, পুরুষদের মেরে নারী শিশুদের ভাগ বাটোয়ারা করে দখল নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। কাফেরদের সমস্ত সম্পত্তি, এমনকি নারী শিশুরাও ‘গণিমতের মাল’, নারীরাও গরু ছাগলের মতোই ব্যক্তিগত সম্পত্তি । গরু ছাগলের মতোই ভোগ করার পর বাজারে নিয়ে বিক্রি করতো, এ ওকে উপহার দিত। এই হল পার্থক্য মানবিক মূল্যবোধ যুক্ত মানুষ আর স্বার্থপর সুবিধাবাদী মানুষ রূপীদের ।