. 🚩🚩🚩🚩 বাপ্পাদিত্য রাওয়াল 🚩🚩🚩🚩
🏴🏴 দখলদার মহম্মদ বিন কাশিমের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় মহাযোদ্ধা।🗡🗡
. . ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে ভারতের ইতিহাসকে এমনভাবে বিকৃত করা হয়েছে যা আমাদের কল্পনার অতীত। ভারতীয়দেরকে নিজের ইতিহাস সম্পূর্ণভাবে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয়দের ইতিহাস বইতে শুধু বাবর, আকবরের কাহিনী পড়ানো হয়। ইতিহাস বইতে পড়ানো হয় মুঘলরা এসেছিল, এরপর ইংরেজরা এসেছিল। তারপর ভারত স্বাধীন হলো। ব্যাস্। ইতিহাস শেষ।
অবাক করার বিষয়,বিশ্বের সবথেকে প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং তথ্য আজকের যুগে খুব কম ভারতীয়রই আছে। এমনকি মুঘলদের কিভাবে ভারতীয়রা তাড়িয়েছিল, তাও ইতিহাস বইতে সঠিকভাবে বলা হয় না।
ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে একজন ভারতীয় যতটুকু জানে, তার চাইতে ভিনদেশের লোকজন জানে অনেক বেশি। কারণ ভারতে যে ইতিহাস পড়ানো হয়, তা একেবারেই বিকৃত। গান্ধী-নেহেরু পরিবারের সুগভীর চক্রান্তে ভারতীয়দের পূর্বপুরুষদের বীরগাথা লুকিয়ে রাখা হয়েছে,যাতে ভারতীয়রা আসল ইতিহাস সম্পর্কে অন্ধকারে থেকে আত্মবিশ্বাসহীন, আত্মবিস্মৃত এক দুর্বল জাতিতে পরিণত হয়।
এই পরিস্থিতিতে আজ ভারতের এক মহান বীর রাজা সম্পর্কে আমরা জানবো যা পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস বইতে পাওয়া যাবে না।
ঘটনা অষ্টম শতকের প্রথমার্ধের, যখন মহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধের মুলতান, ব্রাহ্মনাবাদ এলাকায় কব্জা করে নেয়। রাজা দাহীরকে হারানোর পর হিন্দুদের ছোট ছোট সেনা কাশিমকে আটকাতে ব্যর্থ হয়। মহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধ কব্জা করার পর সেখানের মহিলাদের যৌন দাসী হিসেবে আরবে বিক্রি করতে শুরু করে,আজকের দিনের উগ্রপন্থী ‘আই এস’-এর মতো। একইসাথে সিন্ধের মন্দিরগুলোও ভাঙতে শুরু করে। হিন্দু পুরুষদের ক্রীতদাসে পরিনত করে।
ফলে আতঙ্কিত হিন্দুরা সিন্ধ ছেড়ে পালাতে শুরু করে। এর মধ্যে কিছু মানুষ পৌঁছে যায় মেবাড়, যেখানে এক মহান হিন্দু রাজার রাজত্ব ছিল। সেই রাজার নাম ছিল বাপ্পাদিত্য রাওয়াল। প্রথমত জানিয়ে দিতে চাই, বাপ্পাদিত্য রাওয়াল একজন মহান পরাক্রমী রাজা ছিলেন,যার সাথে লড়াই করার অর্থ ছিল নিজের বিনাশ ডেকে আনা।
ইতিহাসে আছে, পিতৃমাতৃহীন বাপ্পাদিত্য শৈশবে এক সহৃদয় ব্রাহ্মণ নারীর স্নেহের ছায়ায় প্রতিপালিত হয়েছেন এবং হরিৎ ঋষির আশীর্বাদে বাপ্পাদিত্য রাওয়াল মাত্র ২০ বছর বয়সে প্রজাপীড়ক শাসকদের হটিয়ে মেবাড়ের রাজকার্য পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
এদিকে মহম্মদ বিন কাশিমের অত্যাচারে সিন্ধ থেকে পালিয়ে আসা কিছু মানুষের মুখ থেকে বাপ্পাদিত্য রাওয়াল সেখানকার মানুষের দুঃখকষ্ট জানতে পারেন। বাপ্পা রাওয়াল জনসাধারনের উপর বীভৎস সাম্প্রদায়িক অত্যাচার ও মহিলাদের সন্মানহরণের কথা শুনে প্রচণ্ড ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন। শিবালয় ও মন্দির ভাঙার কথা শুনে উনি নিজের সেনাপতি ও মন্ত্রীদের সাথে সলাপরামর্শ করে আরব দখলদারদের রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।।
বাপ্পাদিত্য রাওয়াল বললেন, “আমাদের কেল্লা কেউ যদি জয় করে তাতে শুধু আমাদের মাথা ঝুঁকে যায়, কিন্তু আমাদের আস্থার স্থান মন্দিরগুলো কেউ ভাঙলে সেটা অধর্মের জয় হয়। আর আমি থাকতে সেটা হতে দিতে পারি না।”
এরপর বাপ্পাদিত্য রাওয়াল সিন্ধকে অধর্ম থেকে মুক্তি দিতে বিশাল সেনা নিয়ে পৌঁছে যান সিন্ধপ্রদেশ। মুখে হরহর মহাদেব শ্লোগান, হাতে গেরুয়া পতাকা নিয়ে সিন্ধপ্রদেশে হাজির হয় বাপ্পা রাওয়ালের বিশাল সেনা।
এদিকে বাপ্পা রাওয়ালের সেনা যেন নিজের শক্তিপ্রদর্শনের কোনো সুযোগ খুঁজছিল। এক একজন সেনা ১০ জন আরবীকে বধ করতে শুরু করে। মহম্মদ বিন কাশিম বিশাল সেনার শক্তি দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং জলপথে আরবি হাজাজ-এর কাছে পালিয়ে যায়। হাজাজকে কাশিম সব কথা খুলে বলে।
বাপ্পাদিত্য রাওয়াল দেখেন,আরবি সেনা পালাচ্ছে আরবের দিকে। তখন বাপ্পা রাওয়াল আরবিদের তাড়িয়ে বেলুচিস্তান পার করে দেন। এভাবে আবার পুরো সিন্ধুপ্রদেশে শান্তি ফিরে আসে এবং সনাতন ধর্মের প্রকাশ ঘটতে থাকে। তারপর বাপ্পা মেবাড়ে ফিরে আসেন এবং রাজত্ব করতে থাকেন।
এরমধ্যে আরবি হাজাজ হারের বদলা নেওয়ার জন্য বিশাল আরবি সেনা নির্মাণ করে এবং দু’তরফা হামলা করে। একদিকে মেবাড়ে , অন্যদিকে জয়সলমেরে হামলা চালায় লুঠেরা আরবি সেনা। বাপ্পাদিত্য রাওয়াল দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে প্রত্যাঘাত করেন। বাপ্পা রাওয়াল তাঁর সেনা নিয়ে হাজাজের সীমায় ঢুকে পড়েন। অপরদিকে নাগভট্ট-প্রথম পশ্চিম প্রান্ত থেকে দখলদার আরবীদের রক্তস্নান করিয়ে দিতে শুরু করে।
এরপর বাপ্পাদিত্য রাওয়াল মহাসেনা নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং আশেপাশের রাজাদের সেনাকে সম্মিলিত করেন, যাতে করে বহিরাগত বর্বর আরবিদের উচিত শিক্ষা দেওয়া যায়। নাগভট্ট, বিক্রমাদিত্য দ্বিতীয় এবং অন্যান্য রাজাদের সেনা নিয়ে মহাগঠবন্ধন নির্মাণ করেন তিনি। সেই মহাসেনা নিয়ে বাপ্পাদিত্য রাওয়াল আরবের দিকে রওনা দেন। আরবে মহাসেনার প্রথম আক্রমন সংঘটিত হয় আল-হাকাম বিন আলাবার উপরে। সেখানে গেরুয়া পতাকা স্থাপনের পর তামিম-বিন-জেয়েদ,জুনেদ বিন আব্দুল আল নুরির উপর আক্রমণ করা হয়। আরবের যে রাজ্যগুলি থেকে ভারতে আক্রমন করা হতো, সেখানে গেরুয়া পতাকা স্থাপিত করে দেওয়া হয়।
তবে জেনে অবাক হবেন, শত্রুদের ধুলিস্যাৎ করার পরও বাপ্পা রাওয়াল সেখানে রাজত্ব করেননি। কারণ অদূরদর্শী প্রথা অনুযায়ী হিন্দু রাজারা কখনোই বিদেশের মাটিতে উপনিবেশ স্থাপন করতো না। এরপর এই মহাসেনা গজনীর দিকে অগ্রসর হয়।
গজনীর শাসক সেলিম-আল-হাবিবকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করে মহাসেনা। এরপর প্রায় ৪০০ বছর আরব দস্যুরা ভারতে আক্রমন করার সাহস পায়নি। হ্যাঁ। ৪০০ বছর আর সাহস হয় নি।
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি শহরের নাম বাপ্পাদিত্য রাওয়ালের নামানুসারে করা হয়েছিল।
সত্যি বলতে কী,বাপ্পা রাওয়ালের মত একজন মহান বীর রাজার ভারতবর্ষে পুজো হওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে, ইতর-অসভ্য গান্ধী-নেহেরু পরিবার ধর্মনিরপেক্ষতা নামক চরম বৈষম্যমূলক ষড়যন্ত্রে হিন্দু জাতিকে পুর্বপুরুষ বীরত্বগাথা সম্পর্কে অবগত হতে দেয় নি। তাই হিন্দুজাতি বাবর আর আকবরের কাহিনী শুনে, নিজেদের গোলাম মনে করে, আত্মবিস্মৃত হয়ে আছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না।
🖋🖊 সম্পাদনা
কৃত্তিবাস ওঝা