মুসলিম বিজ্ঞানী আসলেই কি তারা মুসলিম ছিল, মিথ না বাস্তব? মুসলিমদের মধ্যে কোন বড় রকমের বিজ্ঞানী জন্মায় না- এ কথা বলতেই মুসলিমরা চেঁচিয়ে ইবনে সিনা, আল বেরুণী, ওমর খৈয়াম, আল-রাজি কিংবা আল-খোয়ারিজমির নাম বলে দাবী করে ।
আসলেই কি তারা মুসলিম ছিলেন?- ইবনে সিনাকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হলেও মূলত চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস । জামায়াতে ইসলাম তাদের হাসপাতালের নাম রেখেছে ‘ইবনে সিনা’ । অথচ ইবনে সিনাকে তার বৈজ্ঞানিক থিউরীর জন্য ইমাম গাজ্জালী মুরতাদ বলেছেন ।
ইবনে সিনা মহাবিশ্বের কোন শুরু ও সমাপ্তি মানতেন না । জগতের প্রত্যহ ঘটনাক্রমে আল্লাহর হস্তক্ষেপকে অস্বীকার করেছেন । ‘আল কানুন দী আল তিব’ বা চিকিৎসার কামান বইটাতে তিনি সরাসরি লিখে গেছেন ‘পরকাল’ বলে কিছু নেই । ইবনে তাইমিয়াহ, ইবনে আল কাইয়িম এবং ইমাম আল দাহাবিরের মতো ইসলামিক হর্তা কর্তারা তাকে কাফের বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
এখানে শুধু তার উক্তিগুলি বিচার করব। ১] The knowledge of anything, since all things have causes, is not acquired or complete unless it is known by its causes.
কোনো জ্ঞান অর্জন ততক্ষণ সম্পন্ন হয় না যতক্ষণ না তার কারণ জানা যায়। বন্ধুরা কোনো সাচ্চা মুসলমান কি এই কথা বলে? তারা কি বলে না যে সব জ্ঞান কোরানে আছে? আর সেই জ্ঞানের কারণ জানতে চাওয়া উচিত নয়। এটাও কি তারা বলে না?
২] Now it is established in the sciences that no knowledge is acquired save through the study of its causes and beginnings, if it has had causes and beginnings; nor completed except by knowledge of its accidents and accompanying essentials.
কোনো জ্ঞান ততক্ষণ অর্জন করা যায় না যতক্ষণ পর্যন্ত তার কারণ না জানা যায়। আর সেই জ্ঞান অর্জন পূর্ণতা পায় না যতক্ষণ পর্যন্ত তার পরিনাম না জানা যায়। প্রথমত মুমিনরা কোরানের জ্ঞানের কারণ তো জানতেই চায় না। পরিনামও তারা জানতে চায় না, কারণ যদি চাইত তাহলে জিহাদের পরিনাম যে নিজের এবং বহু নিরীহ মানুষের মৃত্যু এবং পুরো মুসলমান জাতি তথা ইসলামের অপমান তা তারা বুঝতে পারত। সেই দিক থেকে বলা যায় যে মুমিনদের জ্ঞান অসম্পূর্ণ।
৩] The world is divided into men who have wit and no religion and men who have religion and no wit.
এই জগতে দুরকম মানুষ আছে : প্রথমজনের ধর্ম নেই কিন্তু বুদ্ধি আছে এবং দ্বিতীয়জনের বুদ্ধি নেই কিন্তু ধর্ম আছে। এখানে ইবন সিনা ধার্মিকদের বুদ্ধিহীন বলেছেন। কোনো মুমিন কোনদিন এই কথা বলবে না।
৪] So the forms of all things contained in the active intelligence are imprinted on his soul either all at once or nearly so, not that he accepts them merely on authority but on account of their logical order which encompasses all the middle terms.
সমস্ত বস্তুর জ্ঞান মানুষের আত্মায় অঙ্কিত আছে। মানুষ শুধু সেই জ্ঞান পায় যখন সে যুক্তিসঙ্গত ভাবে ধাপে ধাপে তাদের খোজ করে। এই কথাও কোনো মুমিন বলবে না। তাদের মতে সমস্ত বস্তুর জ্ঞান আল্লাহের কাছে আছে। তিনি সেই সব জ্ঞান তাদের দেন যারা আল্লাহের নাম মানুষের কল্লা কাটে: যার ভালো নাম জিহাদ।
সুতরাং ইবন সিনা মুসলমান ছিলেন না। থাকলে তিনি এই কথা বলতেন না।
– এনালিটিক্যাল জ্যামিতির জনক ওমর খৈয়াম, যদিও জ্যামিতির জনক ইউক্লিড । নালিটিক্যাল জ্যামিতির নাম কোন পাঠ্যপুস্তকে আদৌ আছে কিনা জানা নেই ।
ওমর খৈয়াম তার লেখা রুবাইয়াতে লিখেছেন, যদি সেসব অন্ধদের মাদ্রাসাগুলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হতো যেখানে এপিকিউরেস,প্লেটো এবং এরিস্টটলের দর্শন শেখানো হতো, যদি পীর ও দরবেশদের মাজারগুলোকে গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করা হতো,
যদি মানুষ ধর্মের অন্ধ বিশ্বাসকে অনুসরণ করার বদলে নৈতিকতা চর্চা করতো, যদি সকল ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোকে অধ্যয়ন কেন্দ্রে পরিণত করা হতো, যদি ধর্মচর্চার বদলে মানুষ নিজেকে অঙ্ক চর্চায় নিমজ্জিত করতো, যদি বিজ্ঞানের যুক্তি ধর্মীয় বিশ্বাস ও কুসংস্কারকে প্রতিস্হাপন করতো, ধর্ম যা মানুষকে দিয়ে আলাদা করে সেটাকা মানবতা দিয়ে প্রতিস্হাপন করা হতো, তাহলে পৃথিবীটা স্বর্গে পরিণত হতো ।
মুসলিমদের দাবি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদ আল বেরুনী, যদিও ভূগোলের জনক ও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদ ইরাতেস্হিসি । আল বেরুণীকে আবার পৃথিবীর প্রথম নৃ-বিজ্ঞানী বলা হয়ে থাকে, তার ভাষ্য মতে, কোরআনের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক নেই আবার বিজ্ঞানের সাথেও কোরআনের সম্পর্ক নেই ।
তৎকালীন পর্যটক আল বেরুণীর মতে, মুসলিমরা আটশত বছর সুদীর্ঘ কাল রাজত্ব করেও মুসলিমদের পক্ষে এগারো শতাংশের বেশি হিন্দুদের ধর্মান্তর করতে পারেনি । তিনি লিখেছেন, হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে তাদের মত দেশ নেই, তাদের রাজার মত রাজা নেই, তাদের ধর্মের মত ধর্ম নেই এবং তাদের বিজ্ঞানের মত বিজ্ঞান নেই ।
তিনি আরো লিখেছেন, হিন্দুরা মুসলিমদের ঘৃনা করতো এবং যবন বলে ডাকতো, যার ফলে হিন্দুদের ধর্মান্তর করা খুব একটা সহজ হয়নি । – বীজগণিতের জনক আল খোয়ারিজমিকে বলা হলেও গণিত শাস্ত্রের জনক আর্কিমিডিস । বীজগণিত আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে আর্যভট্ট বীজগণিত, জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতির ধারণা দেন ।
আল খোয়ারিজমির জন্ম তৎকালীন বৃহত্তর ইরানে, বর্তমানে উজবেকিস্তান । প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইমাম আল তিবারির মতে, আল খোয়ারিজমি প্রাচীন পার্সিয়ান ধর্ম জরথিস্ত্রীয়বাদে বিশ্বাসী, কাজেই তিনি মুসলিম ছিলেন না ।
– মুসলিমদের দাবি মতে, গুটি বসন্তের আবিষ্কারক আল রাজি । যদিও এত বড় আবিষ্কারকের নাম উইকিতে নেই । আল রাজি হাউইতে লিখেছেন, এই তথাকথিত ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষরা দাঁড়িওয়ালা পাঁঠা বৈ কিছু নয় । এরা মানুষকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যত্ত্বিক উপদেশ দেওয়ার অধিকার নেই ।
এই দাঁড়িওয়ালা পাঁঠার দল মানুষকে মিথ্যাচার ছড়িয়ে বলে তারা নাকি ঈশ্বরের নির্দেশে পৃথিবীতে এসেছে । আর মানুষের অজ্ঞনতার সুযোগ নিয়ে এবং ঈশ্বরের ভয় দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে অন্ধবিশ্বাস আদায় করছে ।
– মুসলিমদের দাবি এরিস্টটলের দর্শন উদ্ধারকারী ইবনে রুশদ, যদিও এরিস্টটলের জন্ম মোহাম্মদেরও অনেক আগে । তাই এটা হওয়া স্বাভাবিক । কোরআন নাযিল হওয়ার আগেই এরিস্টটল, আর্যভট্ট ও টলেমিরা দর্শনে, বিজ্ঞানে জ্যোতিষে, চিকিৎসা অবদান রেখেছেন ।
ইবনে রুশদ ‘ভাগ্য ও গন্ত্যব্য’ তে লিখেছেন, এটা ধর্মের খুব অন্তনির্হিত সমস্যা । তুমি যদি এই কোরআনের সমাধান হাদিসের দিকে তাকাও তাহলে তুমি বিরোধ খুঁজে পাবে । এছাড়া কোরআন হলো হাদিসের যুক্তিহীন স্ববিরোধী । এখন মুসলিমরা কি কখনো এই কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে কোরআন আর হাদিস স্ববিরোধী?
আল রুশদকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে একজন বিজ্ঞানী বা দার্শনিক কি ধর্মকে মেনে চলতে পারে? তিনি জবাব দিয়েছেন, কিভাবে কোন বিজ্ঞানী ঠাকুরমার ঝুলির গপ্পকথা লিখে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চিন্তা করতে পারে । বিশেষ করে যে কথা গোঁড়ামী এবং অজ্ঞনতা ছড়ায়? এই কথা কি ইসলাম সম্মত?
তিনি তো সরাসরি ইসলামকা ঠাকুরমার ঝুলির গপ্পকথা বলে দিলেন । তাহলে দেখা গেল যে, এই সব বিজ্ঞানী নামেই মুসলিম । কিন্তু তাদের কাজকর্ম, জীবনদর্শন কোন কিছুই মুসলিমদের মত নয় । তাহলে এদের নিয়ে ইসলামি দুনিয়া এত গর্ব করে কোন যুক্তিতে, তারাই ভালো জানে ।