ভারতীয় CEO : বিশ্ব শাসনে কি ভারতীয়দের স্বর্ণযুগ চলছে? ভারতীয় মস্তিষ্কের বিশ্বজয়!
ভারতের মাটিতে এমন কী জাদু আছে, যেখান থেকে উঠে আসা ছেলেমেয়েরা আজ সিলিকন ভ্যালি থেকে ওয়াল স্ট্রিট পর্যন্ত শাসন করছে? আমাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাডোবি, আইবিএম—যেখানেই তাকান, ক্ষমতার শীর্ষে এক-একটি ভারতীয় মুখ। প্রশ্ন হলো—এটা কি শুধুই এক অবিশ্বাস্য কাকতালীয় ঘটনা? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে ভারতের শিক্ষা, সংস্কৃতি আর হাজার বছরের সংগ্রামের এক অদম্য ইতিহাস?
এই ইতিহাসটা বোঝার আগে, আসুন একবার দেখি এই ‘ভারতীয় শাসন’ ঠিক কতটা গভীরে পৌঁছেছে। একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন—আপনি প্রতিদিন যে কম্পিউটার ব্যবহার করেন, যে কফি পান করেন, বা যে সার্চ ইঞ্জিনে নিজের সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন—তার সবকিছুই আজ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ভারতীয় মস্তিষ্ক দিয়ে। এটা কোনো সামরিক অভিযান নয়, এটা মেধার অভিযান। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বোর্ডরুমগুলোতে ঘটে যাওয়া এক নীরব বিপ্লব।
ভারতীয় CEO : আসল চিত্র: একটি অকল্পনীয় বাস্তবতা
একদিকে মাইক্রোসফটের ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্যকে নতুন পথে হাঁটাচ্ছেন সত্য নাদেলা। অন্যদিকে, আপনার-আমার ডিজিটাল জীবনের প্রতিটা কোণায় থাকা গুগলকে পরিচালনা করছেন সুন্দর পিচাই। শুধু তাই নয়, IBM, Adobe, Starbucks, World Bank—যেন এক অকল্পনীয় দাবা খেলায় একের পর এক ঘর নিঃশব্দে দখল করে নেওয়া হচ্ছে।
তাহলে আসল প্রশ্নটা আরও গভীরে চলে যায়—কীভাবে? আমেরিকার মতো দেশ, যারা একসময় বিশ্বের সেরা প্রতিভা আমদানি করত, আজ কেন তাদেরই সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর চাবিকাঠি ভারতীয়দের হাতে তুলে দিচ্ছে? এর পেছনের আসল কারণটা জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য। আজকের দিনে শুধু এক বা দুজন নন, মনে হচ্ছে যেন গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকেই অদৃশ্য সুতোয় বাঁধছেন ভারতীয়রা।
-
সত্য নাদেলা – যিনি বদলে দিয়েছেন মাইক্রোসফটের ভাগ্য।
-
সুন্দর পিচাই – আমাদের প্রতিদিনের গুগল যার মস্তিষ্কের ফসল।
-
অরবিন্দ কৃষ্ণ – টেক জায়ান্ট IBM-এর চালকের আসনে।
-
শান্তনু নারায়েন – অ্যাডোবির মতো সৃজনশীল সাম্রাজ্যের অধিপতি।
-
অজয় বাঙা – বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, যার সিদ্ধান্তে নড়চড় হয় শত শত দেশের অর্থনীতি।
এই তালিকা আরও দীর্ঘ। তাহলে কি এই প্রশ্নটা করাই যায়—আগামীর পৃথিবী কি ভারতীয়দের হাতেই লেখা হচ্ছে?
ভারতীয় CEO : সাফল্যের রহস্য উন্মোচন: কেন এই অসামান্য উত্থান?
গবেষণা করলে এর পেছনে মূলত তিনটি প্রধান কারণ খুঁজে পাওয়া যায়, যা ভারতীয়দের এই বিশ্বজয়ের পথ প্রশস্ত করেছে।
ভারতীয় CEO : প্রথমত, জিনে মিশে থাকা সংগ্রাম
ভারতের মতো তীব্র প্রতিযোগিতার দেশে যে ছেলে বা মেয়েটি বেড়ে ওঠে, সে টিকে থাকার লড়াইটা শিখে যায় একেবারে শৈশব থেকেই। কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ তাদের মানসিকভাবে ইস্পাতের মতো কঠিন করে তোলে। সীমিত সুযোগকে অসীম সম্ভাবনায় পরিণত করার এই আশ্চর্য ক্ষমতা তাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
ভারতীয় CEO : দ্বিতীয়ত, মেধার কারখানা: IIT ও IIM
ভারতের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (IIT) এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (IIM)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যেন এক-একটি হীরের খনি। অত্যন্ত কঠিন ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছেঁকে তোলা এই প্রতিভাগুলো বিশ্বমানের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যায়। এখান থেকে উঠে আসা স্নাতকরা যখন পশ্চিমা বিশ্বে পা রাখেন, তখন তাদের মেধা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বারবার সবাইকে চমকে দিচ্ছে।

ভারতীয় CEO : তৃতীয়ত, ভাষার শক্তি ও সাংস্কৃতিক সহনশীলতা
ভারতীয়রা সহজাতভাবেই বহুভাষিক। ইংরেজি ভাষার উপর তাদের স্বাভাবিক দখল এবং ভারতের মতো এক বৈচিত্র্যময় দেশে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা তাদের এক বিরাট সুবিধা দেয়। তারা সহজেই বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং মানসিকতার মানুষের সাথে মিশে যেতে পারে, যা একটি গ্লোবাল কোম্পানিতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অপরিহার্য। এই গুণটিই তাদের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি যুগিয়েছে।
ভারতীয় CEO : দুটি কিংবদন্তীর গল্প: মাটি থেকে আকাশে
এই উত্থানকে বুঝতে হলে দুটি গল্প শোনা আবশ্যক। একদিকে সুন্দর পিচাই। জন্মেছেন চেন্নাইয়ের এক সাধারণ পরিবারে। জীবনের প্রথম কম্পিউটার দেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। আর আজ? তিনি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানি গুগল ও অ্যালফাবেটের প্রধান। আপনার হাতে থাকা অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে শুরু করে ক্রোম ব্রাউজার—সবই তার নেতৃত্বের ফসল।
অন্যদিকে সত্য নাদেলা। হায়দ্রাবাদের এক সাধারণ ছেলে, যিনি মাইক্রোসফটে প্রায় ৩০ বছর কাজ করার পর এমন এক সময়ে CEO হলেন, যখন সবাই ভেবেছিল মাইক্রোসফটের দিন শেষ। সেখান থেকে তিনি কোম্পানিকে টেনে তুললেন ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অবিশ্বাস্য উচ্চতায়! এই একই গল্প প্রায় প্রতিটি ভারতীয় CEO-র। শেকড় মাটিতে, কিন্তু দৃষ্টি আকাশে।
ভারতীয় CEO : বাংলাদেশের চোখে এই উত্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনা
এখানে দাঁড়িয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে—বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য কী? সত্যি বলতে, ভারতীয়দের এই সাফল্য আসলে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই এক বিরাট অনুপ্রেরণা। এটি প্রমাণ করে, মেধা আর পরিশ্রম থাকলে ভৌগোলিক সীমানা কোনো বাধাই নয়। বাংলাদেশ থেকেও তো আজ হাজারো তরুণ বিশ্বসেরা টেক কোম্পানিগুলোতে নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ রাখছে। তাহলে কি বাংলাদেশও স্বপ্ন দেখতে পারে? খুব শীঘ্রই কি এই CEO-দের তালিকায় কোনো উজ্জ্বল বাংলাদেশী মুখের আবির্ভাব ঘটবে? উত্তরটা ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাক।
উপসংহার: একটি নীরব ঘোষণা?
শেষ কথা একটাই—আজকের বিশ্বে ভারতীয়রা শুধু কর্মী নয়, তারা চালকের আসনে। তাদের এই অবিশ্বাস্য যাত্রার গল্প আমাদের একটাই শিক্ষা দেয়—আপনার শুরুটা কোথা থেকে, সেটা বড় কথা নয়; আপনার স্বপ্নটা আকাশ ছোঁয়ার কি না, সেটাই আসল।
এখন প্রশ্নটা আপনার কাছে—ভারতীয় CEO-দের এই বিশ্বজয় কি নিছকই কিছু ব্যক্তির অসাধারণ সাফল্য, নাকি এটি উদীয়মান ভারতের বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠার এক নীরব ঘোষণা?
মার্কিন শুল্ক: বাণিজ্য যুদ্ধের আড়ালে নতুন পরাশক্তির উত্থান? ভারত-মার্কিন সংঘাতের নেপথ্যের খেলা!
এই বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ দেখতে, D-Box 360 ইউটিউব চ্যানেলে আমাদের ভিডিওটি দেখুন। এই ধরনের আরও গভীর বিশ্লেষণের জন্য আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে যাত্রার সঙ্গী হোন।