পৃথিবীর সৃষ্টির তত্ত্ব সম্পর্কে হিন্দু ধর্ম কি বলছে ? একটু সৃষ্টিতত্ত্বকে খুঁচিয়ে ঘা করবো । সৃষ্টির তত্ত্ব নিয়ে ধর্মগুলো মানুষকে দিনের পর দিন ঠকিয়ে আসছে, বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্বের প্রতি অবিশ্বাস তৈরী হয়েছে, জন্ম নিয়েছে নাস্তিকতা । আজ একটু সৃষ্টিতত্ত্বকে খুঁচিয়ে ঘা করবো ।
হিন্দু ধর্মের মূল তাত্ত্বিক ভিত্তি হল এই দৃশ্যমান পরিবর্তনশীল বিশ্ব জগতের মূলে রয়েছে একটি অপরিবর্তনশীল ও সর্বব্যাপী চৈতন্যময় সত্ত্বা, যার নাম ব্রহ্ম । এই জগতে, নাকি যা কিছুই আছে তা সবই ব্রহ্ম থেকে উৎপন্ন ! তা এহেন ‘ব্রহ্ম’ কি ? ব্রহ্ম হল সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও ইন্দ্রিয় গ্রাহ্যতার অতীত । ব্রহ্ম হলেন চক্ষুষা গৃহ্যতে নাপি বাচা নানৈর্দেবৈঃ- অর্থাৎ, ব্রহ্মকে চোখ দিয়ে দেখা যায় না, কান দিয়ে শােনা যায় না এবং অন্য কোন ইন্দ্রিয়ের দ্বারাও জানা যায় না । হিন্দু শাস্ত্র বলছে, ৪৩,২০,০০০ বছরে এক মহাযুগ এবং ১০০০ মহাযুগ বা ৪৩২ কোটি বছরে ১ কল্প । ১ কল্প সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার দিন আর পরের ১ কল্প ব্রহ্মার রাত্রি ।
ব্রহ্মার দিনকে বলে সর্গ আর ব্রহ্মার রাত্রিকে বলে প্রতিসর্গ । ব্রহ্মার দিনে ‘ব্রহ্ম’ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এই দুনিয়াতে রূপান্তরিত হয় আর ব্রহ্মার রাত্রিতে ‘ব্রহ্ম’ আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় ।
এই লজিকে হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে ৪৩২ কোটি বছর পর পর সৃষ্টি আর প্রলয় হয়েই চলেছে । আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগছে না, কিসের ভিত্তিতেই এই গণনা ? চলুন তলিয়ে দেখি, কি এর ভিত্তি । অধিকাংশ হিন্দু জ্যোতিষ গ্রন্থ অনুযায়ী, প্রতি ১মহাযুগ বা ৪৩,২০,০০০ বছর পর পর আকাশের সমস্ত গ্রহ এক সরলরেখায় মেষ রাশির অন্তর্গত অশ্বিনী নক্ষত্রে মিলিত হয় । গাঁজাখুরি মনে হচ্ছে ? আসুন দেখি নিউ ইয়র্কের অ্যাস্ট্রলজিক্যাল রিসার্চ সােসাইটির ‘Encyclopaedia of Astrology’ কি বলছে :
‘”This Mahayga of the Hindus is a period of approximately 43,20,000 years, in which they say that all the planets recur at nearly the same position. The astronomer Stuart showed that this is correct and the period is 4,319,936.8663 years; at the end of which Mercury, Venus, Earth, Mars, Jupiter and Saturn return to a position in the fixed Zodiac about 20 degrees behind where they started. He found this also applies to new planets Uranus and Neptune and that an increase in the period of Pluto of only one part in 100,000, or 0.001 per cent, will also bring it to recurrence.” ।
তাহলে একটা ব্যাপার খোলসা হলো যে, হিন্দুদের সৃষ্টিতত্ত্বে ১০০% ভেজাল নেই, অন্তত তারা এটা বলছেনা যে, কোন এক সকালে ভগবানের ইচ্ছা হল সে জগৎসৃষ্টি করবে আর কোন কাঁচামাল ছাড়াই মহাশূন্য থেকে এই আকাশ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করে ফেললো ! তবে এই অপরিবর্তনশীল ও সর্বব্যাপী চৈতন্যময় সত্ত্বা ‘ব্রহ্ম’ ব্যাপারটা ঠিক হজম হলোনা পাঠক । আচ্ছা, এই সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যাপারে সেমেটিক খ্রিস্টান ও ইসলাম কি বলছে ? চলুন পাঠক, একটু দেখে নেওয়া যাক :
➤খ্রিস্টানরা বলছে যে, ৪০০৪ খ্রীষ্টপূর্বকের ২৩শে অক্টোবর সকাল ৯টায় গড তার সৃষ্টি কার্য শুরু করে আর ছয় দিনের পৃথিবী ও স্বর্গ সৃষ্টি করে সপ্তম দিন রবিবার সে বিশ্রাম নেয় ।
➤ইসলাম বলছে কোন এক শনিবার আল্লা তার সৃষ্টি কর্ম শুরু করলো, আর ছয় দিনের মধ্যে পৃথিবী, আকাশ আর আকাশের উপরে সাতটা স্বর্গ সৃষ্টি করে ফেলল ! সপ্তম দিন শুক্রবার, আদম আর হাওয়াকে সৃষ্টি করলো । ইসলামের নবী মোহাম্মদ আদমের ৯০ তম বংশধর !
উপরোক্ত সেমেটিক ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্বের যুক্তির রেশ ধরেই তাহলে এগোনো যাক । দুই পুরুষের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ৩০ বছর নিলাম, তাহলে আল্লাহর সৃষ্টিকর্মের ২৭০০ বছর পর নবী মোহাম্মদের জন্ম অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ । তাহলে আল্লাহ এই হিসেবে অনুযায়ী আনুমানিক ৪১৩৭-৪১৫০ বছর আগে তার সৃষ্টিকর্ম সেরেছে এবং খ্রিস্টানদের সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী গড সৃষ্টিকর্ম সেরেছে আনুমানিক ৬০২০ বছর আগে । আসলে সেমেটিক ধর্মমত ইসলাম বা খ্রিস্ট এর প্রবক্তাদের Universe অর্থাৎ বিশ্বের বিশালতা সমন্ধে কোনো জ্ঞানই ছিলোনা আর তাই তাদের আল্লাহ বা গড ঘুরপাক খেয়েছে পৃথিবী আর আকাশের মধ্যে ।
হিন্দু শাস্ত্রে আবার বলা হয়েছে যে, ৪৩২ কোটি বছরে ১ কল্প হয়, ৩০ কোটি ৮৪ লক্ষ ৪৮ হাজার বছরে হয় ১ মন্বন্তর । হিন্দু শাস্ত্রমতে ইদানিং নাকি স্বেতবরাহ কল্প চলছে । এই স্বেতবরাহ কল্প শুরু হওয়ার পর থেকে ৬টা মন্বন্তর পার হয়ে গিয়ে এখন নাকি বৈবস্বত চলছে । কি পাঠক, মাথা ঘুরছে হিন্দু শাস্ত্রের এইসব শুনে ? আদতেই জটিল, তবে এই কল্প, মন্বন্তরের গোদা হিসেবে করলে দাঁড়ায় : আজ থেকে আনুমানিক ১৯৭ কোটি ১২ লক্ষ ২১ হাজার ১১৫ বছর বর্তমান কল্প বা সৃষ্টি শুরু হয়েছিল । এত গেলো ধর্মমত অনুযায়ী সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যাখা বিশেষ, কিন্তু বিজ্ঞান কি বলছে ?
বিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় ২০০ কোটি বছর আগে মহাবিস্ফোরণ(BIG BANG) হয়েছিল । সৃষ্টির শুরু ।তাহলে পাঠক, একটা জিনিস স্পষ্ট বিজ্ঞানের সৃষ্টির থিওরীর একটু কাছে হলেও সেটা হলো হিন্দু শাস্ত্রমতে সৃষ্টির তত্ত্ব, যদিও অপরিবর্তনশীল ও সর্বব্যাপী চৈতন্যময় সত্ত্বা ‘ব্রহ্ম’ একটা ভাওঁতা ছাড়া অন্য কিছুই নয় । আমরা সকলেই আর্যভট্টের কথা জানি, অতএব হিন্দু নামক মানুষদের গণিতচর্চার বুৎপত্তি এই সেমেটিকদের তুলনায় অনেকটাই বেশি তাই তাদের সৃষ্টিতত্ত্ব বিজ্ঞানের কাছাকাছি যেতে পেরেছে । অপরদিকে, সেমেটিকদের আল্লাহ বা গড ৫০০০/৬০০০ বছর আগেই আকাশ, পৃথিবী সৃষ্টি করে ফেলেছিলো । সেই শেষ বিচার বা কেয়ামতের দিনে তারা এই সৃষ্টিকে নিজে হাতেই ধ্বংস করে ফেলবে ।
পাঠক, এর মানে দাঁড়ালো, শেষ বিচার বা কেয়ামতের পরে আল্লাহ, গড জবলেস, বেকার !
তরোয়াল দিয়ে ভয় না দেখালে পৃথিবীর আমজনতা তখন এই জবলেস সৃষ্টির মালিককে মানবে ?