পুনর্জন্ম: পুনর্জন্মের বিধান কি হিন্দু বা ইসলামে নেই ? প্রশ্নের প্রতি উত্তর। অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মেলচ, যাদের প্রধান উদ্দেশ্য ইহকালে কোপাকুপি (সন্ত্রাস) এবং পরকালে পোকাপুকি (সেক্স), তারা কেনো যে বেদ পড়তে যায় এবং বেদ এর বাণীর অর্থ বুঝতে চায়, সেটাই তো বুঝি না। (লিখাটি নিম্নের স্ক্রিনশট এই জবাবে)
উচ্চতর জ্ঞানের বই, বেদ এর ভাষা খুব সাধারণ লোকজন বুঝবে না ব’লেই এবং এই বই যদি সাধারণ মানুষের হাতে পড়ে, তাহলে এর অর্থের বিকৃতি ঘটবে, এমনটা বুঝতে পেরেই সম্ভবত প্রাচীনকালের পণ্ডিরা, শুদ্র অর্থাৎ যারা সমাজের শ্রমজীবী বা সরাসরি শারীরিক পরিশ্রম করে, এদের জন্য বেদ পড়াকে নিষিদ্ধ করেছিলো। শুদ্র বা নারীরা যে বেদ পড়তে পারবে না এমন কথা বেদে না থাকলেও, অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের জন্য ব্রাহ্মণদের সেই নিষেধাজ্ঞা যে খুব একটা অমূলক ছিলো না, সেটা বুঝতে পারি কোনো মেলচ কর্তৃক বেদ এর বাণীর ব্যাখ্যা শুনলে।
বেদ মানে জ্ঞান। বেদ থেকেই এসেছে বিদ শব্দটি যার অর্থ জ্ঞানী; এজন্যই কোনো বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য ব্যবহৃত হয় ‘বিদ’ শব্দটি যেমন- রসায়নবিদ, পদার্থবিদ ইত্যাদি।
এর আগেও এই হুরলোভী বান্দার কয়েকটি কটূক্তির জবাব দিয়েছি, কিন্তু এর কোনো বোধ বুদ্ধি আছে বলে তো মনে হয় না, অবশ্য যারা নিজেদেরকে এই প্রাণী মনে করে, তাদের বোধ বুদ্ধি ছিলোই বা কখন ? বোধ বুদ্ধি থাকলে তারা কিভাবে অমানবিক কোরান হাদিসকে পায়ের নিচে না ফেলে মাথার উপর তুলে রাখে ?
যা হোক, মূল আলোচনা শুরু করি।
খতনার মাধ্যমে বিকৃত এই প্রাণী তার কমেন্টের শুরুতেই বলেছে, “হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, বেদে পূনজন্ম নেই।”
এই মুমিন জানে না যে বেদ হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ নয়, প্রথম বা আদি ধর্মগ্রন্থ; হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বলে একটি গ্রন্থ এমন কিছু নাই। সনাতন বিশ্বাস একক কোন গ্রন্থ দ্বার নির্ধারিত হয় না। এই মুমিন ‘পুনর্জন্ম’ শব্দের সঠিক বানানও জানে না, খেয়াল করে দেখুন লিখেছে ‘পূনজন্ম’। এই ধরণের মূর্খ, যারা একপাতা বাংলা শুদ্ধ করে লিখতে জানে না, তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই যে প্রাচীন ব্রাহ্মণরা বেদ পড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো, তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই এবং এই সিদ্ধান্ত ছিলো সঠিক;
কারণ, যারা সাধারণ বিদ্যা চর্চার মাধ্যমে নিজের জ্ঞানের স্তরকে উন্নীত করতে পারে নি, তাদেরকেই তো জীবন জীবিকার জন্য শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে হয়, আর যারা পরের অধীনে কোনো কাজ করে, তাদেরকে হিন্দু শাস্ত্র বলে শুদ্র। শুদ্রের ঘরে জন্ম নেওয়া কোনো ব্যক্তি যদি জ্ঞানে ও গুনে নিজেকে উন্নীত করতে পারে, তবে তাকে আর শুদ্র বলা যাবে না; যেমন- শুদ্র জাতীয় কায়স্থের ঘরে জন্ম নেওয়া নরেন্দ্রনাথ দত্ত, জ্ঞানে ও গুনে নিজেকে ব্রাহ্মণের স্তরে উন্নীত করেছিলেন বলে আজও তিনি স্বামী বিবেকানন্দ নামে ব্রাহ্মণ হিসেবেই পূজ্য এবং আগামিতেও তিনি ব্রাহ্মণ হিসেবেই গণ্য হবেন।
যা হোক, মুমিন তার প্রথম বাক্যের পরে স্টার চিহ্ন দিয়ে দ্বিতীয় বাক্যে লিখেছে, “*বেদে পূণজন্ম স্বিকার করে না।” এই বাক্যে পুনর্জন্ম শব্দটি ভুল, আবার স্বীকার শব্দও ভুল। এই মুমিন প্রথমবার পুর্নজন্ম লিখলো ‘ন’ দিয়ে, এবার লিখেছে ‘ণ’ দিয়ে। এর বাপ কয়জন সেটা নিয়েই তো এখন আমার মনে প্রশ্ন জাগছে।
না হলে পরপর দুই বাক্যে কেউ একই বানান দুইভাবে লিখে ? এই বাক্যে সে করেছে দুইটি ভুল। যে একবাক্যে দুটি ভুল বানান লিখে, সে আবার এসেছে বেদ এর বাণীর ব্যাখ্যা দিতে।
এরপর সে লিখেছে, “বরং আমি স্কিনশট সহ দেখাচ্ছি স্বর্গ, নরক স্বিকৃতি বেদে।” শব্দটা যে স্কিনশট নয়, স্ক্রিনশট, এটাও দেখছি এই মরু প্রেমী মুমিন জানে না, আর জানবেই বা কেনো, মরু প্রেমী সদার তো নিজে ছিলো মূর্খ, তার উম্মতরা আর কেমন হবে ? এই বাক্যের মাধ্যমে এই মূর্খ এটা প্রমান করেছে যে, তার বাংলা জ্ঞানের যেমন খুব আকাল, তেমনি ইংরেজি জ্ঞানেরও দুর্ভিক্ষ। খেয়াল করে দেখুন এই বাক্যে স্বীকৃতি বানানটাও ভুল। এত ভুল কোনো মানুষ নয়, এই মূর্খদের পক্ষেই করা সম্ভব।
এর পর সে লিখেছে,
“বেদে জন্মান্তর বাদ নয় স্বর্গ নরক দেখ- ঋগবেদ ১০ম মণ্ডল, ১৬ সূক্ত, ৪,৫ মন্ত্ র স্কিনশট”
যে ঋগ্বেদ বানানটাই ঠিকমতো জানে না, সে এসেছে বেদ এর সমালোচনা করতে ! খেয়াল করে দেখুন, ঋগ্বেদ লিখেছে ঋগবেদ।
যা হোক, ঋগ্বেদের ১০ম মণ্ডল ১৬ সূক্তের ৪,৫ নং শ্লোকে কী আছে সেটা এবার দেখা যাক :
“অজো ভাগস্তপসা তং তপস্ব তং তে শোচিস্তপতু তং তে অর্চিঃ।আস্তে শিবাস্তন্বো জাতবেদাস্তাভির্বহৈনং সুকৃতামু লোকম্ ।।অব সৃজ পুনরগ্নে পিতৃভ্যো যস্ত আহুতশ্চরতি স্বধাভিঃ।আয়ুর্বসান উপ বেতু শেষঃ সং গচ্ছতাং তন্বা জাতবেদঃ।।”
এর অর্থ হলো- হে মৃত, তোমার চক্ষু সূর্যে গমন করুক, তোমার শ্বাস বায়ুতে যাক। তুমি তোমার পুণ্যফলে আকাশ ও পৃথিবীতে যাও। অথবা যদি জলে গেলে তোমার হিত হয়, তবে জলে যাও। তোমার শরীরের অবয়বগুলি উদ্ভিজ্জবর্গের মধ্যে গিয়ে অবস্থিত করুক। এ মৃত ব্যক্তির যে অংশ অজ অর্থাৎ জন্মরহিত, চিরকালই আছে, হে অগ্নি, তুমি সে অংশকে তোমার তাপ দ্বারা উত্তপ্ত করো, তোমার তাপ, তোমার শিখা, সে অংশকে উত্তপ্ত করুক। হে জাতবেদা বহ্নি, তোমার যে সকল মঙ্গলময়ী মূর্তি আছে, তাদের দ্বারা এ মৃত ব্যক্তিকে পুণ্যবান লোকেদের ভুবনে বহন করে নিয়ে যাও।”
খেয়াল করে দেখুন তো, এই শ্লোকগুলিতে এই মুমিনের দাবী মতো, সরাসরি স্বর্গ বা নরকের কোনো কথা বলা আছে কি না ?না, নেই।
এরপর মুমিন লিখেছে,
“গিতা ও স্বর্গ স্বিকৃতি (২/৩৭) কৃষ্ঞ অরজুনকে যুদ্ধ করতে বলে, মারা গেলে স্বর্গে যাবে।”
এই বাক্যে হুরলোভী অবশ্য বলতে চেয়েছে যে, গীতাতেও স্বর্গের স্বীকৃতি আছে এবং সেজন্য কৃষ্ণ, অর্জুনকে বলেছে, যুদ্ধ করতে গিয়ে তুমি মারা গেলে স্বর্গে যাবে। বরাবরের মতো এই বাক্যেও- গীতা (গিতা), স্বীকৃতি (স্বিকৃতি), কৃষ্ণ (কৃষ্ঞ), অর্জুন (অরজুন) বানান ভুল এবং মনের ভাব ঠিক মতো প্রকাশ পায় নি বলে এটা কোনো বাক্যই নয়। অবশ্য মুর্খদের জ্ঞানের যা বহর, তাতে তাদের কাছ থেকে আপনি আর কত ভালো বাক্য আশা করতে পারেন।
যা হোক, বেদ ও গীতার এই দুটো রেফারেন্স দিয়ে এই মূর্খ বলতে চেয়েছে যে, ইসলামে যেমন মৃত্যুর পর শেষ বিচারের পর মৃতরা তাদের কর্মফল অনুযায়ী সরাসরি দোযখে বা বেহেশতে গিয়ে অনন্তকাল সুখ বা দুঃখ ভোগ করবে, তেমনি হিন্দুরাও মৃত্যুর পর সরাসরি স্বর্গ বা নরকে চলে যাবে, তাদের পুনর্জন্মের কোনো ব্যাপার নেই।
মৃত্যুর পর শুধু হিন্দুরাই নয়, পৃথিবীর সব লোক স্বর্গ বা নরকেই যাবে, কিন্তু কোন প্রসেসে যাবে এবং পুনর্জন্ম কিভাবে ঘটবে, সেটা জানতে ও বুঝতে হলে নিচের এই অংশটির প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দিতে হবে; কেননা, এই অংশটুকু খুব ভালোভাবে পড়লে বুঝতে পারবেন পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরবাদ ধ্রুব সত্য, যেটা এই মুমিন অস্বীকার করেছে; তাছাড়াও- ইসলামে বর্ণিত মানুষের মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাগুলো যে ডাহা মিথ্যা সেটাও খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবেন নিচের এই অংশ থেকে, তাই এই অংশটির প্রতি আপনাদের গভীর মনোযোগ আশা করছি:
কোনো মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মাকে যমরাজ নিয়ে যায় পিতৃলোকে, যেখানে সে তিনপুরুষ পর্যন্ত বাস করে। পৃথিবীতে মৃত ব্যক্তির চতুর্থ প্রজন্মের মৃত্যু হলে, সেই আত্মা যখন পিতৃলোকে যায়, তখন পিতৃলোকে অবস্থান করা সবচেয়ে সিনিয়র আত্মাটি মুক্ত হয়ে, পৃথিবীতে তার কর্মফল এবং তার পরবর্তী বংশধর, যাদেরকে সে পৃথিবীতে রেখে গেছে, তাদের কর্মফলের উপর ভিত্তি করে, সে নরকে বা স্বর্গে যায়।
তর্পন
এই সিস্টেমে পিতৃলোকে সব সময় তিনটি আত্মাই অবস্থান করে। এজন্য পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পন করতে হলে, যে তর্পন করছে, তাকে সব সময় তার পূর্ব তিন পুরুষদের আত্মার সদগতির জন্য প্রার্থনা করতে হয়, যেটা করতে হয় দুর্গাপূজার মহালয়ার আগের ১৫ দিন সেই তিথিতে, যে তিথিতে পিতা বা মাতা মারা গেছেন, এজন্য এই পক্ষটা পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত।
এছাড়াও পিতা বা মাতার মৃত্যুদিবসে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন ক’রে, আগত ভক্তবৃন্দকে অন্ন ও জল দান করার ব্যবস্থা করেও পিতৃপুরুষদের আত্মার সদগতির জন্য প্রার্থনা করলেও হয়, এবং এটা পিতা বা মাতার মৃত্যুর পর ১, ২ বা ৩ বছর পালন করলেই হবে না, করতে হবে প্রতি বছর, যতদিন কোনো ব্যক্তি পৃথিবীতে জীবিত থাকবে।
এজন্য যে কোনো ব্যক্তির তার পূর্ববর্তী তিন পুরুষের নাম জানা বাধ্যতামূলক। পিতৃপক্ষের নির্দিষ্ট তিথিতে পিতৃপুরুষদের আত্মার সদগতির জন্য তর্পন করার পাশাপাশি পিতা-মাতার মৃত্যুদিনে নিজ বাড়িতে গীতা পাঠ ও কীর্তনের আয়োজন করার পাশাপাশি আগত ভক্তবন্দকে অন্ন ও জল দান করা সবচেয়ে ভালো সিস্টেম, এতে সেই বাড়ির সর্বাঙ্গীন কল্যান সাধিত হয়।
এখানে তর্পন কী বা কিভাবে করতে হয়, সে ব্যাপারটা একটু বলে রাখি। পিতৃপক্ষের নির্দিষ্ট তিথি, যে তিথি পিতা বা মাতা মারা গেছে, সেই তিথিতে ভোরে, নদী বা পুকুরে স্নান করে, কোমড় পর্যন্ত জলে ডুবিয়ে রেখে, দুই হাতের অঞ্জলীতে জল নিয়ে পূর্ববর্তী তিন পুরুষের নাম স্মরণ করে, তার আত্মার মুক্তি বা সদগতির জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর, সেই জল নদী বা পুকুরেই অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করতে হয়, এটাই তর্পণ। এককথায় গঙ্গাজল দিয়েই গঙ্গাপূজা, শুধু মাঝখানে পূর্ব পুরুষের নাম স্মরণ করে তাদের আত্মার সদগতির জন্য প্রার্থনা, এটাই পিতৃতর্পণ বা তর্পণ।
যা হোক, ফিরে যাই মূল আলোচনায়, কোনো মৃত ব্যক্তির কর্মফল এবং এবং তার পরবর্তী তিন পুরুষের, তার উদ্দেশ্যে করা ক্রিয়া-কর্মের ফলাফলের ভিত্তিতে সেই ব্যক্তি হয় স্বর্গে যায় বা নরকে যায়। এরপর তার স্বর্গ বা নরক ভোগের কাল শেষ হলে, টোটাল কর্মফল অনুযায়ী পুনরায় সে পৃথিবীতে মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণী রূপে জন্মগ্রহন করে থাকে। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি বিবাহ করার পূর্বেই বা সন্তান জন্মদানের আগে মারা যাবে, সে সরাসরি স্বর্গে বা নরকে যাবে এবং স্বর্গ নরকের কাল ভোগ শেষ হলে আবার পৃথিবীতে জন্ম নেবে। কিন্তু কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি, যার বিবাহ করার সুযোগ আছে এবং সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা আছে, সে যদি কোনো কারণে স্বেচ্ছায় তা এড়িয়ে চলে সেই ব্যক্তির পক্ষে স্বর্গে প্রবেশ করা অসম্ভব।
সনাতন শাস্ত্র মতে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ স্বর্গে বা নরকে যায় এবং গীতায় যে শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে বলেছেন যুদ্ধ করতে গিয়ে তুমি মারা গেলে স্বর্গে যাবে, এটা তিনি বলেছেন দুটি অর্থে- প্রথমত. অর্জুনের যেহেতু পুত্র (অভিমন্যু) ছিলো এবং তার পৌত্রও (পরীক্ষিৎ) ছিলো, সেহেতু অর্জুন তার কর্মফল অনুযায়ী উপরে উল্লিখিত প্রসেসে সাধারণভাবেই স্বর্গে প্রবেশাধিকার পাওয়ার যোগ্য।
দ্বিতীয়ত. কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ যেখানে হয়েছিলো, তার প্রাচীন নাম স্যামন্তপঞ্চক, এইখানে মৃত্যু বরণের একটা মাহাত্ম্য আছে।
চন্দ্রবংশীয় রাজা সংবরণের পুত্রের নাম কুরু, যার থেকে উৎপত্তি কুরুবংশ নামের; এই কুরু, সন্ন্যাস গ্রহন করে স্যমন্তপঞ্চক নামের ঐ স্থানে তপস্যা ও যজ্ঞ ক’রে জায়গাটিকে পবিত্র স্থানে পরিণত করেন, যার ফলে এর নাম হয় কুরুক্ষেত্র। এছাড়াও নিজের সাধনার বলে কুরু এই বর লাভ করেন যে, এই স্থানে যে ব্যক্তি মারা যাবে, কুরুর মাহাত্মের প্রভাবে সেই ব্যক্তিই স্বর্গে যাবে।
কিন্তু স্বর্গ লাভের এই সহজ পন্থা রোধকল্পে ইন্দ্র এসে কুরুকে অনুনয় করে এই শর্তে রাজী করান যে, যে ব্যক্তি উপবাসে বা যুদ্ধ করে এই স্থানে মারা যাবে, শুধু তারাই স্বর্গে যাবে। এই কারণেই মহাভারতের যুদ্ধের স্থান হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ, কুরুক্ষেত্রকে নির্বাচন করেছিলেন, যেটা হস্তিনাপুর থেকে ২৩০ কি.মি দূরে এবং বর্তমানে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত। এই কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ করে যেকোন ব্যক্তি মারা গেলেই যেহেতু সে স্বর্গে যাবে, সেই সূত্রেও শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে ঐ কথা বলতে পারেন যে, যুদ্ধ করে মারা গেলে তুমি স্বর্গে যাবে।
অন্যদিকে ইসলামে বলা হয়েছে, মানুষ মারা গেলে কেয়ামত অর্থাত পৃথিবী ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত সে কবরে অবস্থান করবে এবং কেয়ামত শেষে আখিরাত বা শেষ বিচারের দিন সকলকে জাগানো হবে এবং তাদের বিচার শেষে তাদের কর্মফল অনুযায়ী তাদেরকে দোযখে বা বেহেশতে পাঠানো হবে, যেখানে তারা অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে। ভালো করে খেয়াল করে দেখুন, ইসলাম যে প্রসেসে কথা বলছে, সেখানে কিন্তু একটি প্রসেস সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাত পৃথিবী ধ্বংস হলো, মানুষ দোযখ বা বেহেশতে গেলো, তারপর আল্লার আর কোনো পরিকল্পনা নেই। অর্থাত সকল কিছুর সমাপ্তি।
কিন্তু বাস্তবতা বলে কোনো কিছুরই চুড়ান্ত শেষ নেই, সব কিছুই একটি সার্কেলের আকারে চলছে, সব কিছু চক্রাকারে চলে বলেই, কেউ কোনো জায়গায় চিরদিনের মতো থাকতে পারে না, তাকে নতুনের জন্য স্থান ছেড়ে দিতে হয়। এজন্য হিন্দু শাস্ত্রে স্পষ্ট করে বলা আছে এই জগতের ধ্বংস বা সমাপ্তি হলে আবার নতুন করে সবকিছু সৃষ্টি হবে, যাকে বলে কল্প।
ইসলাম বলে, মানুষের মৃত্যু হলে তাকে কেয়ামত পর্যন্ত কবরে অবস্থান করতে হবে শেষ বিচারের মাধ্যমে দোযখে বা বেহেশতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এবং কবরের অবস্থান করাকালীন শাস্তি প্রত্যেকের জন্য মাস্ট। এখন ধরুন, দুই জন ব্যক্তির পাপ পুন্য সব সমান, এদের মধ্যে একজন কেয়ামতের ১০০ বছর পূর্বে মারা গেলো, তাকে ১০০ বছর ধরে কবরে শাস্তি পেতে হবে; কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তি কেয়ামতের ৭ দিন পূর্বে মারা গেলো, তাকে ঐ ৭ দিনই শাস্তি পেতে হবে। এখন বিবেচনা করুন, এই দুই ব্যক্তির ক্ষেত্রে কবরের শাস্তি কি ন্যায় সঙ্গত ? প্রথম ব্যক্তি কোন পাপের ফলে ১০০ বছর ধরে কবরের শাস্তি ভোগ করবে, আর দ্বিতীয় ব্যক্তি কেনো সেই শাস্তি ভোগ করবে না ?
কেয়ামতের অনেক আগে জন্ম নেওয়াই কি প্রথম ব্যক্তির পাপ ? যদি তাই হয়, তাহলে সেই ব্যক্তিকে কেয়ামতের অনেক আগে জন্ম দিয়েছিলো কে, আর সেই জন্য দায়ী কে ? নিশ্চয় আল্লা ? এখন আপনি বলুন, আল্লা কি মানুষের সাথে ন্যায় বিচার করেছে ? অবশ্য আল্লার মানুষের সাথে ন্যায় বিচার করার কোনো দায় নেই; কারণ, সে কোরানে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, তিনি যাকে ইচ্ছা বেহেশতে দেবেন, যাকে ইচ্ছা দোযখে ফেলবেন; এই বিচারে আল্লা একটি চুড়ান্ত স্বৈরাচারী সত্ত্বা। কিন্তু হিন্দুর ঈশ্বর গীতায় বলেছেন,
“সমোহহং সর্বভূতেষু ন মে দ্বেষ্যোহন্তি ন প্রিয়ঃ।যে ভজন্তি তু মাং ভক্ত্যা ময়ি ত তেষুচাপ্যহম।।- ৯/২৯ (রাজগুহ্যযোগ)
এর অর্থ: আমি সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন। কেউই আমার বিদ্বেষ ভাবাপন্ন নয় এবং প্রিয়ও নয়। কিন্তু যারা ভক্তিপূর্বক আমাকে ভজনা করেন, তারা আমাতে অবস্থান করেন এবং আমিও তাদের মধ্যে বাস করি।
আবার, দোযখ বেহেশতের দুঃখ বা সুখভোগও ন্যায় সঙ্গত নয়। যেমন ধরুন, দুই জন ব্যক্তির মধ্যে একজন শিশুকালেই মারা গেলো, অন্যজন ৭০ বছর বয়সে মারা গেলো। ৭০ বছর ধরে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ফলে ধর্ম কর্ম করার সময় ঠিক ভাবে পাওয়ায় এই ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ বেহেশত, জান্নাতুল ফেরদৌস পেলো। অন্যজন শিশুকালে মারা যাওয়ায় একেবারে নিম্নস্তরের বেহেশত পেলো। এখন শিশুকালে মারা যাওয়া ব্যক্তি কি এই প্রশ্ন করতে পারে না যে, হে আল্লা, তুমি আমাকে পৃথিবীতে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখো নি, তাই আমি ধর্ম কর্ম ঠিক মতো করতে পারি নি, সেটা কি আমার দোষ ? তাহলে তুমি আমাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে না দিয়ে এই সস্তা বেহেশতে দিলে কেনো ?
আবার যদি আল্লা এই দুজনকেই একই মানের বেহেশতে দেয়, তাহলে পৃথিবীতে যে ব্যক্তি ৭০ বছর খাটলো, সে কি আল্লাকে এই প্রশ্ন করতে পারে না যে, আমি এত কষ্ট করে জান্নাতুল ফেরদৌস পেলাম, আর ও কিছু না করেই আমার সমান সুখ পেলো ? এটা কি কোনো ন্যায় বিচার হলো ?এই পরিস্থিতিতে আল্লা কী করবে বা কোথায় যাবে ?
অবশ্য আল্লার এসবে কোনো দায় নেই, সেটা আগেই বলেছি; কারণ, সে তো বলেই দিয়েছে, যাকে খুশি আমি বেহেশতে দেবো, যাকে খুশি দোযখে!
এমন স্বেচ্ছাচারী এবং স্বৈরাচারী কেউ কি মহান সৃষ্টিকর্তা হতে পারে কি? আর এমন স্বেচ্ছাচারী যে আল্লা, সে কিভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রক হতে পারে ?
যা হোক, এই কমেন্টে- আল্লার বেহেশতে গিয়ে মিনিমাম ৭২ হুরের যোনী প্রত্যাশী এই লম্পটের মূল টার্গেট হলো- হিন্দু ধর্মে নাকি পুনর্জন্ম নেই, তা প্রমান করা। এবার দ্যাখ, হিন্দু ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ গীতায় পুনর্জন্মের কথা বলা আছে কি না ?
গীতার চতুর্থ অধ্যায় জ্ঞানযোগের শুরুতে- শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে বলছেন, এই জ্ঞান আমি প্রথমে সূর্যদবে বিবস্বানকে বলেছিলাম, বিবস্বান তা মানবজাতির জনক মনুকে বলেছিলো, মনু ইক্ষাকুকে বলেছিলো; মাঝখানে পরম্পরা রক্ষা করতে না পারায় এই জ্ঞানের কিছু বিকৃতি ঘটেছে এবং এর বিশুদ্ধতা হারিয়েছে, সেজন্যই এই জ্ঞান আমি তোমাকে আবার দিচ্ছি।
এই কথা শুনে অর্জুন বলেন, সূর্যদেব বিবস্বানের জন্ম হয়েছিলো আপনার অনেক পূর্বে। আপনি যে পুরাকালে তাকে এই জ্ঞান উপদেশ করেছিলেন, সেটা আমি কিভাবে বুঝবো ?
এরপর শ্রী কৃষ্ণ বলেন,
“বহুনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন।তান্যহং বেদ সর্বানি ন ত্বং বেত্থ পরন্তপ।।” – (গীতা, ৪/৫)
এর অর্থ- হে পরন্তপ অর্জুন, আমার ও তোমার বহু জন্ম অতীত হয়েছে। আমি সেই সমস্ত জন্মের কথা স্মরণ করতে পারি, কিন্তু তুমি তা পারো না।এছাড়াও গীতার সাংখ্যযোগের শুরুর দিকের বর্ণনা মতে, অর্জুন যখন বিষাদে আক্রান্ত হয়ে তার প্রতিপক্ষ যোদ্ধাদের হত্যা করতে চাচ্ছিলো না, তখন শ্রীকৃষ্ণ
অর্জুনকে বলেন, “যারা যথার্থ পণ্ডিত, তারা জীবিত বা মৃত কারো জন্যই শোক করে না। কারণ, এমন কোনো সময় ছিলো না যখন- তুমি, আমি এবং এই রাজারা ছিলো না এবং ভবিষ্যতেও আমাদের অস্তিত্ব কখনো বিনষ্ট হবে না।” – (গীতা, ২/ ১১,১২)
গীতার এই তত্ত্বও পুনর্জন্মকে খুব ভালোভাবেই প্রমান করে।
এছাড়াও গীতার ২/১৩ নং শ্লোক, যাতে বলা হয়েছে-
“দেহ যেভাবে কৌমার, যৌবন ও জরার (বৃদ্ধ) মাধ্যমে রূপ পরিরবর্তন করে চলে, তেমনি মৃত্যুকালে আত্মা, এক দেহ থেকে অন্য দেহে স্থানান্তরিরত হয়।”
-এর মাধ্যমেও হিন্দু শাস্ত্রের পুনর্জন্ম থিয়োরি খুব ভালোভাবেই প্রমানিত হয়।
থিয়োরির কথা না হয় বাদই দিলাম, বাস্তবেও কি পুনর্জন্ম থিয়োরি ফল আমাদেরকে ভোগ করতে হচ্ছে না ? পুনর্জন্ম যদি না ই থাকে, তাহলে মানুষের মধ্যে জন্ম বৈষম্য কেনো ? কেনো কেউ জন্মেই অঢেল সুথ ঐশ্বর্য ভোগ করছে, কেনো কেউ দরিদ্র জীবন যাপন করছে ? শুধু তাই নয়, কুকুর হয়ে জন্ম নিলেও বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া কুত্তা আর জাপান আমেরিকায় জন্ম নেওয়া কুকুরের ভাগ্যের আকাশ পাতাল পার্থক্য, এটা কেনো ?
ইসলাম মতে সকল রূহ বা আত্মা নাকি আল্লা একই সাথে একই সময়ে সৃষ্টি করে রেখে দিয়েছে, তারপর তাদেরকে ক্রমান্বয়ে পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে। এই সূত্রে সকল আত্মা নির্দোষ, তাহলেও মুসলমানদের মধ্যে ধনী গরীবের বৈষম্য কেনো এবং কেনো কোনো শিশু, ধনী ও বিখ্যাত পরিবারে জন্ম নিয়ে অশেষ সুখ ভোগ করছে, আবার কেনো কেউ বস্তিতে জন্ম নিয়ে রাস্তার খাবার কুড়িয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছে ?
জবাব আছে কোনো মুসলমানের ?
এ প্রসঙ্গে মুসলমানদের যুক্তিহীন জবাব অবশ্যই আছে, আর সেটা হলো- দরিদ্র পরিবারে জন্ম দিয়ে আল্লা মানুষের পরীক্ষা নিচ্ছে। আরে বলদ, পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া ই যদি পরীক্ষা হয়, তাহলে সে পড়ার সুযোগ পেলো কখন ? আর যার পড়ার সুযোগ দেওয়া হয় নি অর্থাৎ কর্ম করার সুযোগই দেওয়া হয় নি, তার আবার পরীক্ষা কিসের ?
যে যুক্তি বোঝে না বা যুক্তি মানতে চায় না, একমাত্র তার পক্ষেই ইসলামকে মেনে চলা সম্ভব; কারণ, যুক্তিবাদীদের কাছে ইসলাম সম্পূর্ণ অবাস্তব এক থিয়োরি।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই গজমূর্খ মুমিন বান্দা, সনাতন ধর্মের পুনর্জন্মের থিয়োরিকে অস্বীকার করলেও, ইসলামেই যে পুনর্জন্মকে স্বীকার করা হয়েছে, সেটা জানে না। কারণ, বোখারি শরীফে বলা আছে,
“বানর আর শুকর মানেই যারা পূর্বে বাদ্য যন্ত্র বাজাতো।” (Sahih Bukhari 7:69:494)।
এখানে স্পষ্ট করে বলা আছে, এজন্মে যারা বানর ও শুকর তারা পূর্বের জন্মে গান বাজনার সাথে যুক্ত ছিলো। এই হাদিসের মধ্যে একটা মজা আছে। আপনারা অনেকেই জানেন যে, ইসলাম পুনর্জন্ম থিয়োরিতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু বিশ্বাসীরা যদি পুনর্জন্মে বিশ্বাস না ই করতো তাহলে সে কিভাবে বললো যে, বর্তমানে যারা বানর ও শুকর, তারা পূর্বে বাদ্যযন্ত্র বাজাতো অর্থাৎ মানুষ ছিলো ? ঘটনা তো আর এমন নয় যে মানুষ হয়ে জন্মানোর পর বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তারা বানর ও শুকর হয়ে গিয়েছে ? এমন হলে তো পৃথিবীতে একজনও বাদক থাকতো না, যেই বাদ্যযন্ত্র বাজাতো অমনি মুহম্মদের আল্লা তাকে সঙ্গে সঙ্গে বানর বা শুকর বানিয়ে দিতো।
এ প্রসঙ্গে কোনো মুসলমানের কিছু বলার আছে ? কোনো হিন্দু বা সনাতনী আদর্শে বিশ্বাসী কোনো মানুষ, কোনোদিন ‘আল্লাহু আকবার’ বলে কারো উপর চাপাতি নিয়ে হামলা করবে না বা লোকজনের উপর ট্রাক তুলে দিয়ে তাদেরকে গণহারে হত্যা করবে না বা দেশ-বিদেশে বসে মাতৃভূমিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করবে না বা প্রার্থনা স্থানে সশস্ত্র হামলা করে মানুষ খুন করবে না। এসব করে না বা করবে না বলেই, হিন্দুরা প্রকৃত শান্তির ধারক ও বাহক।