পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন প্রবাসী বাঙালিরা  0

সোমেন মুখার্জি, মুম্বই

দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশী সময় পর বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পর পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছিল। প্রবাসী বাঙালিরা এক বুক আশা আর আকাঙ্খা নিয়ে তাকিয়ে ছিল নতুন নেতৃত্বের দিকে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বছর খানেক ঠিক ঠাক প্রশাসন চালালেও, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নিজের দলতন্ত্রের হাতের কাঠপুতুলে পরিণত হয়ে যান
তৃণমূলের দলীয় অরাজকতার শিকার হতে শুরু করে রাজ্যের সব বিরোধী দলের কর্মী, সমর্থকরা এবং অচিরেই রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন পরিণত হয় তৃণমূলের নব্য নেতাদের হাতের কাঠপুতুলে।  না এটা কেবল আমার মতো প্রবাসীদের চিন্তাভাবনা নয়, বিভিন্ন সংবাদপত্র ঘাটলেই এই ধরনের তথ্য মিলবে।
যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাঙালিরা চিনত যাঁকে আমরা সকলে নিজের ঘরের মানুষ বলে মনে করতাম, তাঁর মধ্যেই ক্ষমতার দম্ভ ভীষনভাবে প্রকট হয়ে উঠলফল স্বরূপ আস্তে আস্তে আমাদের পশ্চিমবাংলা অরাজকতার দিকে এগোতে থাকে, অচিরেই তৃণমূলের গুন্ডামি মোড় নেয় সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দিকে, প্রবাসী বাঙালীর আশা আকাঙ্খার জলাঞ্জলি হতে থাকে।
প্রবাসী বাঙালিদের আশা ছিল , বাংলায় আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের সুদিন আসবে, আবার বাঙালি শিক্ষা, দীক্ষায় প্রথম সারিতে উঠবে আসবে, সম্প্রদায় সম্প্রীতি বজায় থাকবে, গোটা ভারতবর্ষের সঙ্গে বাংলার যোগসূত্র পুনঃস্থাপিত হবে, পরবাস থেকে বাঙালী ঘরে ফিরে যাবে। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনের ধারা বইতে থাকে অন্য খাতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গুন্ডামি, রাজ্য জুড়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধকে মুখ্যমন্ত্রীর সামান্য ঘটনা আখ্যা দেওয়া থেকে শুরু করে, মুসলিম তোষণ, হিন্দু-সহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈমাত্রেয় মনোভাব, সামাজিক, রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতি আক্রমণ, তাদের ঘর ছাড়া করা, সিন্ডিকেট এর নামে দলীয় কর্মীদের তোলাবাজিতে প্রশাসনিক সমর্থন, সারদা, নারদা, বসিরহাট, ধুলাগর, কালিয়াচকের  মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা থেকে শুরু করে, হিন্দুদের উপর মুসলিম মৌলবাদী শক্তির নিরন্তর আঘাতের পরও চোখ বুজে থাকা ও পুলিশকে সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করে রাখা আমাদের মতো প্রবাসীদের নিঃসন্দেহে ব্যথিত করছে। সারদা, নারদার মতো বিষয় ভিন রাজ্যের মানুষের কাছে আমাদের মাথা নত করে দিচ্ছে। এখন বসিরহাটের ঘটনার পর অনেকেই আমাদেরকে বিদ্রুপ করে জিজ্ঞাসা করছে, পশ্চিমবঙ্গ কি বাংলাদেশে পরিণত হচ্ছে?

ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে। তাই এবার প্রবাসীরা পথে নামতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা মুম্বইয়ের প্রবাসীরা ‘‘সেভ বেঙ্গল’’ স্লোগান দিয়ে চার্চগেট রেলস্টেশনের কাছে জড়ো হয়েছিলাম।

আমরা চাই আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সুনাম অক্ষুন্ন থাকুক, হৃত গৌরব ফিরে আসুক। যাতে প্রবাসীরা নির্ভয়ে, নির্দ্বিধায়, নিশ্চিন্তায় নিজের রাজ্যে ফেরার কথা ভাবতে পারে।