দ্রৌপদীর কেন ৫ স্বামী এবং পাঁচ স্বামীর কারণে দ্রৌপদী কি বহুগামিনী? দ্রৌপদীর কেনো ৫ স্বামী ? অনেক মুসলমানের এই প্রশ্নে, অনেক হিন্দুই বিব্রত বোধ করে; কারণ, তারা এর সঠিক জবাব জানে না বা দিতে পারে না; আর এর ফলে তারা ধর্মীয়ভাবে মুসলমানদের কাছে হেয় হয়।
আবার, “মুসলমানরা কেনো একাধিক বিয়ে করে বা মুহম্মদের কেনো এতগুলো বউ ? ” হিন্দুদের এই ধরণের প্রশ্নের কাউন্টার প্রশ্ন হিসেবেও মুসলমানরা দ্রৌপদীর প্রসঙ্গ টেনে এনে হিন্দুদেরকে নাস্তানাবুদ করে। ফলে এখানেও হিন্দুদেরকে চুপ করে যেতে হয়। এই সমস্যার সমাধান বা উপরের ঐ প্রশ্নের জবাব পাবেন আমার এই পোস্টে-
একজন যৌনকর্মীর সন্তান, ছোটবেলা থেকে তার মাকে বিভিন্ন লোকের সাথে যৌনকর্ম করতে দেখতে দেখতে এতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে, পরে একটা সময় তার কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠে এবং তার মায়ের এই আচরণে তার আর তেমন কিছু মনে হয় না; তার মায়ের ঘরে প্রতিদিন নিত্য নতুন লোক আসে এবং তার মা তাদের সাথে এক বিছানায় শোয়,
এটা তার কাছে একসময় সাধারণ ঘটনা ই হয়ে যায়। তেমনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রীর ব্যাপারটা দেখতে দেখতে বিষয়টি এতটাই গা সওয়া হয়ে গেছে যে, মুহম্মদ কেনো বুড়ো বয়সে ২১টি বিয়ে করলো বা এখনও কেনো, কোনো কোনো মুসলমান একাধিক বিয়ে করে,
এটা নিয়ে কোনো মুসলমানদের কোনো প্রশ্নও নেই আর মাথা ব্যথাও নেই, যেন বিষয়টি স্বাভাবিক; হিন্দুদের কাছে মুসলমানদের প্রশ্ন হচ্ছে আর তাদের মাথা ব্যথার কারণও হচ্ছে, দ্রৌপদীর কেনো ৫ স্বামী ?
রাজা দশরথ যে কৈকেয়ীর সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে কোনো বর দিতে চেয়েছিলো, সেটা রাম জানতোও না। পরে সুযোগ বুঝে, কৈকেয়ী নিজের গর্ভের সন্তান, ভরতকে রাজা বানানোর জন্য ঐ বরগুলোর সাহায্যে রামকে বনে পাঠাতে দশরথকে বাধ্য করে। রাম বরদানের বিষয়টি শুনে পিতৃসত্যকে রক্ষা করার জন্য ১৪ বছরের বনবাসের জীবনকে মেনে নিয়ে বনে চলে যায়।
একজন রাজপুত্র, যে জন্মের পর থেকেই অঢেল সুখ-সম্পদের মধ্যে বড় হয়েছে, তার পক্ষে বনের কঠিন জীবন, যাপন করা যে কত কষ্টের তা খুব সহজেই অনুমেয়। আগে কেউ কোনো অপরাধ করলে, রাজারা তাদেরকে শাস্তি হিসেবে বনবাসে নির্বাসন দিতো। কিন্তু রামের এই বনবাস, তার কোনো কৃতকর্মের ফল ছিলো না। তাহলে রাম কেনো স্বেচ্ছায় তার কঠিন জীবনকে মেনে নিয়েছিলো ?
হিন্দু শাস্ত্রের একটা বাণী হলো,
“পিতা ধর্ম, পিতা কর্ম, পিতা হি পরম তপঃ”
অর্থাৎ পিতাই ধর্ম, পিতাই কর্ম, পিতাই পরম তপস্যার বিষয়।
তো পিতা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটা পুত্রকে জানিয়ে হোক বা না জানিয়ে হোক, পুত্রের সেটা রক্ষা করাই ধর্ম। আর রাম এটা জানতো বলে, বিনা বাক্য ব্যয়ে সে বনের জীবনকে মেনে নিয়ে বনে চলে যায়। কিন্তু অন্য কেউ হলে কী করতো ?
সে মায়ের সাথে ঝগড়া করতো, বাপকে বলতো, তুমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছো, সেটা তোমার ব্যাপার। আমার অধিকার আমি ছাড়বো না। রাজ্য ছেড়ে আমি বনে যাবো না। কিন্তু রাম তা বলে নি বা করে নি।
শুধু তাই নয়, দশরথ, রামকে বলেছিলো,“তোর বনে যাওয়ার দরকার নেই। কৈকেয়ীকে যে বর দিয়েছি, সে ব্যাপারে আমি বুঝবো। ওই প্রতিজ্ঞা রক্ষা না করলে যদি আমার পাপ হয় হবে, সে পাপের ফল আমি ভোগ করবো।”
কিন্তু তারপরও রাম পিতৃসত্যকে রক্ষা করার জন্য বনে যাওয়াই স্থির করে। রামের বনে যাওয়ার ফলে পুত্রশোকে দশরথ সেই যে অসুস্থ হয়ে পড়ে, সেই অসুখেই দশরথের মৃত্যু হয়। রামের এই যে ত্যাগ, এটা যে কত বড় একটা আদর্শ এবং কত বড় দৃষ্টান্ত, সেটা আমরা কমই উপলব্ধি করে থাকি বা কমই উপলব্ধি করতে পারি; রামের এই আদর্শ- হিন্দু সমাজের, হিন্দু ধর্মের।
রামেরা ছিলো চার ভাই, কিন্তু তাদের মধ্যে রাজ্য ভোগ নিয়ে কোনো কামড়া-কামড়ি নেই, মারামারি কাটাকাটি নেই, খুন-হত্যা নেই। এর বিপরীতে এই ভারতেরই মুসলিম সমাজের আদর্শ, সম্রাট শাজাহানের চার পুত্রের দিল্লির সিংহাসন দখলের ঘটনাকে বিবেচনা করে দেখুন।
ঔরঙ্গজেব, ক্ষমতা দখলের জন্য নিজের অন্য তিন ভাইকে হত্যা করে এবং বাপ ও বোনকে বন্দী করে রাখে; আর এটাই হলো মুসলিম সমাজের আদর্শ। এজন্য মুসলিম সমাজের আদর্শ আর হিন্দু সমাজের আদর্শকে এক পাল্লায় মাপলে চলবে না।
দ্রৌপদীর ৫ স্বামীর পরিবর্তে, ঐ ৫ ভাইয়ের প্রত্যেকের যদি ৫টা করে বউ থাকতো, তাহলে মনে হয় এ নিয়ে কোনো মুসলমানের কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি থাকতো না। কিন্তু ৫ ভাই মিলে একজনকে বিয়ে করে এবং ৫ জনেই তার দেখা শোনা করে বা খেয়াল রেখে এবং সব সময় তার কথামতো চ’লে একটা নারীকে যে তারা কত সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে, সেটা বোঝার ক্ষমতা কোনো মুসলমানের নেই।
কারণ, ইসলামে নারীর মর্যাদার মাপকাঠি তো হলো, এক পুরুষের চার বউ বা চার সতীনের সংসার; কিন্তু দ্রোপদী, সেটা বনে বাস করাকালীন হোক বা রাজপ্রাসাদে থাকাকালীন, সব সময়ই ছিলো সেই ৫ ভাইয়ের সম্রাজ্ঞী, দ্রৌপদীর ইচ্ছাই ছিলো তাদের জন্য আদেশ।
কোনো মুসলমান পরিবারের বধূর মতো, দ্রৌপদী কখনো তাদের দাসী ছিলো না, আর কোরানের বিধানের মতো, সে পঞ্চপাণ্ডবের শস্যক্ষেত্রও ছিলো না যে, তারা যখন তখন তার উপর হাল চালাবে। দ্রৌপদী, এক বছরের জন্য একজনকে তার ভবনে প্রবেশ করার অধিকার দিতো, এই নিয়ম কেউ ব্রেক করলে, তাকে কয়েক বছরের জন্য বনবাসে যেতে হতো। এই ঘটনাও ঘটেছিলো একবার, ঘটনাটি একরম:
নগর পূজার জন্য হস্তিনাপুর থেকে আনা এক লক্ষ গরুকে নাগরাজ তক্ষক চুরি করে নিয়ে যেতে লাগলে, অর্জুন তার গাণ্ডীব ধনুক, যেটা সেই সময় রাখা ছিলো দ্রৌপদীর ভবনে, আর সেই সময় দ্রৌপদীর ভবনে প্রবেশ অধিকার ছিলো শুধু যুধিষ্ঠিরের, তো অর্জুন, এমার্জেন্সি হিসেবে গান্ডীব নিতে দ্রৌপদীর ভবনে প্রবেশ করে এবং নাগরাজের কবল থেকে গরুগুলোকে উদ্ধার করে।
এরপর অর্জুনকে কয়েক বছরের জন্য বনবাসে থাকতে হয়। এমনই ছিলো দ্রৌপদীর ভবনে পঞ্চপাণ্ডবের প্রবেশাধিকার; মুসলমানদের পরিবারে, পুরুষ চাহিবা মাত্র তার দাসী মার্কা স্ত্রীকে তার জন্য কাপড় খুলে দিয়ে শুয়ে থাকতে হবে, না হলে ফেরেশতারা সেই স্ত্রীকে সারারাত ধরে অভিশাপ দিতে থাকবে (মুসলিম, ৮/২০/৩৩৬৬), এমন যৌন জীবন, ৫ জন স্বামী থাকা সত্ত্বেও দ্রৌপদীর ছিলো না।
দ্রৌপদীর যৌন জীবন সম্পর্কে আরো আলোচনা পাবেন, এই পোস্টেই আরেকটু পরে।
যা হোক, এবার দেখা যাক, কোন পরিস্থিতিতে দ্রৌপদী ৫ জনকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলো ? হিন্দুধর্মে পুনর্জন্ম বিশ্বাস করা হয় এবং এটা চিরন্তন সত্য এই কারণে যে, তা না হলে ইসলাম মতে নিষ্পাপ রুহ বা আত্মাদের কেউ কেনো পৃথিবীতে ধনীর ঘরে জন্ম নিয়ে অশেষ সুখ ভোগ করে আর কেউ কেনো বস্তিতে জন্ম নিয়ে কষ্ট পায় ?
পূর্বজন্মের কর্মের ফলেই এমন হয়। দ্রৌপদীর ৫ স্বামীও ছিলো তার পূর্বজন্মেরই প্রার্থনার ফল। কেননা, পূর্বজন্মে দ্রৌপদী ১৪টি গুণসম্পন্ন স্বামীর জন্য তপস্যা করে। মহাদেব শিব তাঁকে সেই মতো বরদানও করেন।
কিন্তু একটি মানুষের মধ্যে এতগুলি গুণ থাকা সম্ভব নয়। তখন শিব তাঁকে জানান, পাঁচজন মানুযের মধ্যে এমন গুণের সমাহার ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে তাঁকে পঞ্চস্বামী বরণ করতে হতে পারে। পরের জন্মে দ্রৌপদীর জীবনে ঠিক সেই ঘটনাটিই ঘটে।
দ্রৌপদীর ৫ স্বামী হওয়ার আরেকটা কারণ হলো, ফুলের ৫টা পাপড়িকে একই বৃন্তে বেঁধে রাখার চেষ্টা; অর্থাৎ পাণ্ডবদের ৫ ভাইকে সব সময় একত্রিত করে রাখা, যাতে তারা কোনো পরিস্থিতিতেই একে অপরের থেকে আলাদা না হয়ে যায় বা তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ তৈরি হয়ে তাদের শক্তি ভাগ না হয়; কারণ, পঞ্চপাণ্ডবকে একত্রে রেখে, তাদের মাধ্যমে অধর্মকে বিনাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠাই ছিলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্য এবং শ্রীকৃষ্ণের পরিকল্পনা মতোই পঞ্চপাণ্ডবের সাথে দ্রৌপদীর বিয়ে হয়।
একারণেই দ্রৌপদীকে স্বয়ংবর সভায় জিতে নেওয়ার খবর যখন হস্তিনাপুরে যায়, তখন ভীস্ম বুঝতে পারে, অর্জুনই এটা করেছে, আর তখন হস্তিনাপুরের মহামন্ত্রী বিদুরকে, ভীষ্ম, পাঞ্চালে পাঠায় তাদেরকে হস্তিনাপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
কিন্তু পাঞ্চালে গিয়ে বিদুর জানতে পারে দ্রৌপদীর বিয়ে হয়েছে পঞ্চপাণ্ডবের সাথে। এতে সে কিছুটা অবাকই হয় এবং শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করে, একই কন্যার ৫ পুরুষের সাথে বিবাহ, এটা কেমন ব্যাপার? জবাবে শ্রীকৃষ্ণ বলে, পাণ্ডবরা ৫ জন কোথায় মহামন্ত্রী ? ওরা তো একই শক্তির ৫টি রূপ।
বাস্তবেও পঞ্চমুখী হুনুমান যেমন একই হুনুমানের ৫ টি রূপ, তেমনি পাণ্ডবরাও ছিলো একই শক্তির ৫টি রূপ এবং একারণেই কোনো বিষয় নিয়ে পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে কোনো দিন কোনো রকম বিরোধ হয় নি, বড় হিসেবে যুধিষ্ঠির যা বলেছে, সেটা ভালো হোক বা খারাপ হোক, লাভ হোক বা লোকসান হোক, সেটা সবাই মেনে নিয়েছে এবং সেভাবে কাজ করেছে। একই শক্তির ৫টি রূপ না হলে এটা কিভাবে সম্ভব ?
এছাড়াও দ্রৌপদীর এমন ধরণের বিয়ের আরেকটা কারণ হলো, দ্রৌপদী জন্মই হয়েছিলো সম্রাজ্ঞী হওয়ার জন্য, আর বড় হিসেবে যুধিষ্ঠিরের অধিকার ছিলো শুধু সিংহাসনে বসার এবং যুধিষ্ঠিরের সাথে বিয়ে হলেই কেবল দ্রৌপদীর পক্ষে সম্রাজ্ঞী হওয়া সম্ভব ছিলো; কিন্তু যুধিষ্ঠিরের ছিলো না স্বয়ংবর সভা থেকে দ্রৌপদীকে জয় করার ক্ষমতা, এই ক্ষমতা ছিলো আবার অর্জুনের;
কিন্তু শুধু যদি অর্জুনের সাথে দ্রৌপদীর বিয়ে হতো, তাহলে দ্রৌপদী কখনো সম্রাজ্ঞী হতে পারতো না; তাই দ্রৌপদীর এমন ধরণের বিয়ে হয়, যাতে পাণ্ডবরা তাকে জয় করতে পারে আবার সে সম্রাজ্ঞীও হতে পারে।
যা হোক, এই ঘটনাটা কিভাবে ঘটলো, তা জেনে নিন নিচের এই বর্ণনা থেকে-
মহাভারতে, পাণ্ডবদের স্বেচ্ছায় প্রথম বনবাসের সময়, বনের মধ্যে কুঠুরি বানিয়ে মা এবং ৫ ভাই থাকতো। সেই দিন তাদের মা কুন্তি, কিসের যেন ব্রত করার জন্য সারাদিন চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিলো; আর ৫ ভাই, কৌরবদের কেউ যেন তাদেরকে চিনতে না পারে, সেজন্য ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে বনের আশে পাশে ঘুরে ঘুরে কাজ বা খাবারের সন্ধান করছিলো;
সেই দিনই আবার ছিলো দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভা এবং তারা ঘটনাচক্রে অনিচ্ছা সত্ত্বেও দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় গিয়ে উপস্থিত হয় এবং অর্জুন, দ্রৌপদীকে জিতে নেয়। এরপর ৫ ভাই মিলে দ্রৌপদীকে সাথে নিয়ে বনের মধ্যে তার তাদের ঘরে এসে যখন উপস্থিত হয়, তখনও সেখানে কুন্তি চোখ বন্ধ করে ধ্যান অবস্থায় ছিলো।
৫ ভাইয়ের কেউ একজন বলে, মাতা, দেখুন, আজ আমরা কী লাভ করেছি ? চোখ না খুলেই কুন্তি বলে, যা পেয়েছো, তা ৫ জন মিলে ভাগ করে খাও। পরে, দ্রৌপদীর ব্যাপারটা জানতে পেরে, কুন্তি তার ভুল বুঝতে পারে এবং সে তার কথাকে ফিরিয়ে নিতে চায়।
কিন্তু যুধিষ্ঠির, যার কাছে ধর্মই হচ্ছে শেষ কথা, সে বলে, ধনুক থেকে ছুটে যাওয়া তীর যেমন আর ধনুকের কাছে ফিরে আসে না, তেমনি মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কথাকেও আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।
কুন্তী নিজের অজান্তেই দ্রৌপদীকে তাদের ৫ ভাইয়ের সাথে বাগদান করে দিয়েছিলো, এখন এই অবস্থায় পুত্ররা যদি মায়ের কথাকে বাস্তবায়ন না করে, তাহলে তাদের অধর্ম হয় এবং এই পরিস্থিতিতে দ্রৌপদী যদি শুধু একজনকে বিয়ে করে, তাহলে অন্য চার ভাইকে সন্ন্যাস গ্রহন করে সংসার ত্যাগ করতে হবে;
কিন্তু দ্রৌপদী, নিজেও এটা চাচ্ছিলো না যে, সে একজনকে বিয়ে করে সুখে থাক, আর তার কারণে অন্য চার ভাই সন্ন্যাসীর জীবন কাটাক এবং সেজন্য সমাজ তাকে দায়ী করুক, তাই সে ৫ জনকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত এটা ছিলো দ্রৌপদীরই সিদ্ধান্ত, পঞ্চপাণ্ডবের কারোরই নয়।
এখানে স্মরণ করুন, রামায়ণের দশরথ আর রামের কথা, পিতৃসত্যকে রক্ষার জন্য, যেখানে রাম ১৪ বছরের বনবাস জীবন মেনে নিয়েছিলো। ঠিক একইভাবে মহাভারতে, মাতৃসত্যকে রক্ষার জন্যই পঞ্চপাণ্ডব মেনে নিতে হয় দ্রৌপদীর সিদ্ধান্তকে।
আরও খেয়াল করুন, দশরথ রামকে বলেছিলো, তার কথাকে মূল্য দিয়ে রামের বনে যাবার কোনো দরকার নেই; ঠিক একইভাবে কুন্তিও সেকথা তার পুত্রদের বলেছিলো, কিন্ত মাতৃসত্যকে রক্ষার জন্য যুধিষ্ঠির তা মেনে নেয় নি। শুধু মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কথাকে মূল্য দেওয়ার জন্য ৫ ভাই মিলে বিয়ে করতে বাধ্য হয় এক মেয়েকে।
এই হলো হিন্দু সমাজের আদর্শ, প্রতিশ্রুতি বা কথার মূল্য যেখানে সবচেয়ে বেশি। ১০ বছরের জন্য হুদায়বিয়ার যুদ্ধ বিরোধী চুক্তি করে, ক্ষমতাশালী হওয়ার পর মাত্র ২ বছরের মধ্যে তা ভঙ্গ করে মক্কা দখলের মতো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার ইসলামিক আদর্শ হিন্দু ধর্মে নেই। এখানে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়ে মহাভারতের ভীষ্ম যেমন সারা জীবন বিয়ে করে না, তেমনি শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতির জন্যই গুরু দ্রোণ বা কর্ণ, অধর্মের পক্ষ জেনেও দুর্যোধনকে ত্যাগ করতে পারে না।
হিন্দু আদর্শ এরকমই, যেখানে কথার মূল্য জীবনের চেয়েও বেশি। এই কথার মূল্য দিতে গিয়েই দ্রৌপদীকে বরণ করতে হয় তার ৫ স্বামীকে । সেই সময়ে এটা নিয়েও সবার মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলো এবং ধর্ম সংকট থেকে উত্তরণের আরো কোনো উপায় না দেখে মহামুনি ব্যাসও দ্রৌপদীর এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে বলেছিলেন,
ধর্ম সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এটা হলো একটা আপদকালীন সিদ্ধান্ত, যেটা কখনো ঐতিহ্যে পরিণত হবে না এবং সাধারণ অবস্থায় কেউ যদি সেটা ফলো করে, সেটা হবে তার জন্য অধর্ম। এজন্যই কোনো হিন্দু মেয়ে, দ্রৌপদীর এই ঘটনাকে স্মরণ করে এক সাথে একাধিক পুরুষকে কখনো বিয়ে করে নি আর ভবিষ্যতেও কখনো করবে না;
তারপরও এটা নিয়েই মুসলমানদের যত চুলকানি, ওরা মনে করে কোরানের যেমন চিরকালীন বিধান, একসাথে যেকোনো মুসলমান পুরুষ, চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারবে; দ্রৌপদীর ঘটনাও বুঝি হিন্দু সমাজের বিধান, একসাথে একাধিক ভাইকে বিয়ে করার ! মূর্খ আর কাকে বলে ?
যা হোক, ৫ জন স্বামী থাকা সত্ত্বেও কি দ্রৌপদী পতিতাদের মতো বহুগামিনী ছিলো বা কেমন ছিলো তার যৌন জীবন ?
এই ব্যাপারটি ই মুসলমানদের যত আগ্রহ এবং টিটকারীর বিষয়। কারণ, তাদের আদর্শ তো মুহম্মদ। আর এই মুহম্মদ, সারা জীবনে ২০টি বিয়ে করলেও, তালাক টালাক দিয়ে শেষ পর্যন্ত ৯ জন স্ত্রী এবং ২ জন যৌনদাসীকে তার হেরেমে রেখেছিলো, যারা মুহম্মদের মৃত্যু পর্যন্ত তার বাড়িতে ছিলো।
সবচেয়ে মজার এবং একই সাথে অদ্ভুত ও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই ১১ জনের সাথে, মুহম্মদ প্রতিদিন ১ বার করে সেক্স করতো। শেষ জীবনে মুহম্মদ কী প্রকারের যৌন উন্মাদ ছিলো, সেটা একবার কল্পনা করুন। আমার কথায় বিশ্বাস করতে কষ্ট হলে দেখে নিন নিচের হাদিসটি-
আনাস ইবনে মালিক ও কাতাদা থেকে বর্ণিত,
“তারা বলেন, দিনে ও রাতে নবী পর্যায়ক্রমে ১১ জন বিবির সাথে যৌন সঙ্গম করতেন। কাতাদা বলেন, আমি আনাসকে জিজ্ঞেস করলাম, হযরতের কি এতই শক্তি ছিলো ? তিনি বললেন, আমাদের মধ্যে এই কথা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নবীজী ৩০ জন পুরুষের যৌন শক্তি আল্লার তরফ থেকে প্রাপ্ত ছিলেন।”- (সহীহ বুখারি, ১/৫/২৬৮)
মুহম্মদের এই আদর্শে মুসলমানদের মাথায় ঢুকে গেছে যে, নবীর যেমন ১১ বউ ছিলো, আর নবী যেমন প্রতিদিন তার ১১ জন বউয়ের সাথে সেক্স করতো; তেমনি দ্রৌপদীরও যেহেতু ৫ স্বামী ছিলো, সেহেতু দ্রৌপদীও প্রতিদিন ৫ জনের সাথেই সেক্স করতো। পুকুরের অপর পাশে বসে থাকা ব্যক্তিকে চোর যেমন চোরইভাবে, তেমনি মুহম্মদের বহুগামী আদর্শের অনুসারী মুসলমানরাও যে দ্রৌপদীকে বহুগামিনী নারী মনে করবে, তাতে আর আশ্চর্য কি ?
তাহলে ৫ স্বামীর সাথে দ্রৌপদীর যৌনতার ব্যাপারটি ছিলো কী রকম ?
দ্রৌপদী যখন বুঝতে পারে যে, ৫ জনকে বিয়ে করাই তার নিয়তি। তখন সে তার শারীরিক পবিত্রতা কিভাবে রক্ষা করবে, এই ব্যাপারে বিয়ের আগে উপস্থিত পণ্ডিত-পুরোহিতদের বলে, এক স্বামীর সাথে একটানা ১ বছর অবস্থানের পর, সে পরবর্তী এক বছর কারো সাথে অবস্থান না করে তপস্যা করবে এবং এভাবে দেহকে শুদ্ধ করার পর, পরের বছর অন্য স্বামীর সঙ্গে থাকবে,
এই বিয়ের আসরে মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাসও উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি দ্রৌপদীর কথার সাথে আরো যোগ করে বলেন যে, সেই একবছর দ্রৌপদী যাকে তার ভবনে প্রবেশের অধিকার দেবে, সে ই শুধু প্রবেশ করতে পারবে, অন্য কেউ যদি প্রবেশ করে তাকে কয়েক বছরের জন্য সন্ন্যাস নিয়ে তার ভুলের প্রায়শ্চিত্য করতে হবে।
এই সব বিধি নিষেধে উপস্থিত পণ্ডিতগণ সবাই সন্তুষ্ট হয়ে তদের এই বিয়ের অনুমতি দেয় এবং ৫ জনের সাথে দ্রৌপদীর বিয়ে হয় এবং তখন মহামুনি ব্যাস আরও বলেছিলেন যে, এটা একটা আপদকালীন সিদ্ধান্ত, চিরকালীন আদর্শ নয়; তাই অন্য কেউ এই কাজ করতে পারবে না; যে ঘটনাগুলো উপরেও কিছু আগে উল্লেখ করেছি। এজন্যই দ্রৌপদী, হস্তিনাপুরের রাজসভায়, তাকে যখন অপমান করা হচ্ছিলো, তখন তার ৫ স্বামীর উদ্দেশ্যে বলেছিলো,
“একজনকে বিয়ে করলে অন্য চারজনকে সন্ন্যাস নিতে হতো। আপনাদের কাউকে যাতে সন্ন্যাস নিতে না হয়, এজন্য আমি আপনাদের ৫ ভাইকে বিয়ে করে নিজের সারাজীবনকে তপস্যায় পরিণত করেছি, আর আপনারা পাশা খেলায় আমাকে বাজি ধরে দাসী বানিয়ে দিলেন ?”
এই ই ছিলো দ্রৌপদীর যৌন জীবন। কিন্তু বহুগামী মুসলমানরা মনে করে, এক পুরুষের ৩/৪ জন স্ত্রী থাকলে, ঐ পুরুষ যেমন যখন যার সাথে খুশি সেক্স করে বা মুহম্মদ যেমন ২৪ ঘন্টায় ১১ জনের সাথে সেক্স করতো, তেমনি দ্রৌপদীও তার ৫ স্বামীর সাথে তেমনভাবেই সেক্স করতো। চোর তো সাধুকে আর সাধু মনে করবে না, সাধুকে সে চোর ই মনে করবে। দ্রৌপদীর ব্যাপারেও মুসলমানদের ভাবনা ঠিক এরকমই।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, যেটা উপরে একবার বলেছি, সেটা আবারও বিস্তারিত বলছি, দ্রৌপদীর এই ৫ স্বামীর ঘটনা, হিন্দু সমাজের কোনো শাস্ত্রীয় বিধান বা চিরন্তন রীতি নয় যে প্রতিটি হিন্দু পরিবারে বা হিন্দু মেয়েদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে বা অনন্তকাল ধরে ঘটবে, এটা একটা এ্যাকসিডেন্ট এবং এই ঘটনা পৃথিবীতে একবারই ঘটেছিলো। কিন্তু ইসলামের চার বিয়ের বিধান, মুসলমানদের একটা সামাজিক রীতি এবং মুহম্মদও মুসলমানদের জন্য চিরকালীন আদর্শ। সুতরাং মুসলমান পুরুষদের বহুগামিতাকে, দ্রৌপদীর ৫ স্বামীর উদাহরণ দিয়ে ঢাকা দেওয়ার বা পার পাওয়ার কেনো সুযোগ নেই।
দেখে নিন উপরে উল্লেখ করা একটি হাদিসের রেফারেন্স-
মুসলিম, ৮/২০/৩৩৬৬ = ”যে নারী তার স্বামীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ঘুমায় এবং তার স্বামী অসন্তষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে, সেই নারীকে ফেরেশতারা সারা রাত্রি ধরে অভিশাপ দেয়।”
উপরে মুহম্মদের স্ত্রীর সংখ্যা উল্লেখ করেছি ২১ জন, কারো কাছে মনে হতে পারে, এটা আমি মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ প্রসূত বানিয়ে বলেছি; যদি তাই ভেবে থাকেন, তাহলে তালিকাটা্ দেখে নিন নিচে, শুধু তাই ই নয়, এখানে পাবেন মুহম্মদের তিন জন যৌনদাসীরও নাম এবং এই নামগুলো কোন রেফারেন্স থেকে পাওয়া গেছে, তার বিবরণও দেওয়া আছে নামগুলোর পাশে-
1. Khadijah – Sahih Bukhari 4:55:642, 5:58:164 Sahih Muslim 31:5974
2. Sawda – Sahih Muslim 8:3451 Sahih Bukhari 1:4:148, 3:47:766
3. Aisha – Sahih Muslim 8:3310 Sahih Bukhari 4:55:623
4. Umm Salama – Sahih Muslim 8:3443, 2:3539-3544
5. Hafsa – Sahih Bukhari 5:59:342, 7:62:119 Sahih Muslim 9:3511 Muwatta Malik 42.19.14
6. Zainab bint Jash – al-Tabari vol.39 p.180-182 Sahih Bukhari 9:93:517, 3:47:755 Sahih Muslim 8:3332, 8:3240 Abu Dawud 3:4880
7. Juwairiyah – Sahih Muslim 19:4292 Abu Dawud 29:3920
8. Umm Habiba – al-Tabari vol.9 p.133 Sahih Bukhari 7:62:38
9. Safiyah – Sirat e Rasulullah, Ibn Hisham, page 766 al-Tabari vol.39 p.185 Sahih Bukhari 1:8:367, 3:34:437
10. Maimuna bint Harith – Sahih Muslim 8:3284, 5:59:559
11. Fatimah – al-Tabari vol.9 p.39 vol.39 p.187 vol.9 p.139
12. Qutaylah bint Qays – al-Tabari vol.9 p.138-139
13. Sana bint Sufyan – al-Tabari vol.39 p.188
14. Zaynab bint Khozayma – al-Tabari vol.7 p.150 footnotes 215-216, vol.39 p.163-164
15. Sharaf bint Khalifah – al-Tabari vol.9 p.138
16. Ghaziyyah bint Jabir – al-Tabari vol.9 p.139
( বিয়ের পর মুহম্মদ যাদেরকে তালাক দিয়েছিলো।)
17. Asma’ bint Noman – al-Tabari vol.9 p.137 vol.10 p.185 and footnote 1131 p.185
18. Mulaykah bint Dawud – al-Tabari vol.8 p.189
19. al-Shanba’ bint ‘Amr – al-Tabari vol.9 p.136
20. al-‘Aliyyah – al-Tabari vol.9 p.138
21. Amrah bint Yazid – al-Tabari vol.39 p.188, Women in Islam – Anne Sofie Roald p.22
(মুহম্মদের উপপত্নী বা যৌনদাসী)
1. Mariyah – al-Tabari vol.9 p.141 Sahih Muslim vol.4 footnote 2835. p.1351 al-Tabari vol.9 p.39 vol.39 p.194 vol.39 p.22
2. Raihana – al-Tabari vol.8 p.39 vol.9 p.137,141 vol.39 p.164-165 Ibn Ishaq p.461-70
3. Khawlah bint al-Hudayl – al-Tabari vol.9 p.139 vol.39 p.166
লিখাটির মধ্যে বিভিন্ন সুত্র দেওয়া হয়েছে, যাদে এই বক্তব্য নিয়ে সন্দহে থাকবে তারা দয়া করে সুত্র থেকে দেখে নিন।
ধন্যবাদ।