”দাসপ্রথা” ধর্মীয় ,রাজনৈতিক অনুমোদন পেলো আরব থেকে। দাস প্রথা মানব সমাজে আজকের নয়। মানূষ যখন গুহা ছেড়ে বিস্তৃ দিগন্তে এসে পড়লো তখন তার চিন্তা বনা এবং জীবন যাত্রা আমুল ভাবে পাল্টাতে শুরু করলো। বন্য প্রানী শিকার করার চেয়েও চাষ বাস অনেক সুবিধার এবং সুস্থ সুরক্ষিত জীবন বলে ধারনা হতে শুরু করলো। প্রয়োজন হলো জমি জায়গা , অনেক অনেক জমি জমার। শুরু হলো জমি দখলের লড়াই। সেই লড়াই আজো শেষ হয়নি।
অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি মানুষের মনে জাগায় লোভ, লোভ থেকে অপরের প্রতি হিংসা,দ্বেষ। সেই থেকে হানহানি, রক্ত পাত। সেই রক্তপাত যুগে যুগে মানব সমাজে শুধূই বেড়ে চলেছে। এই রক্ত পাত, জমি দখলের লড়াই দিনে দিনে তীব্রতর হয়েছে, প্রানী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি র সঙ্গে আর সেই অনুপাতে জমির পরিমান কমঅতে শুরু করে। জমি দখলের এই অমানবিক লড়াই তৈরী করলো অনেক কৌশল।
কেউ সেই কৌশলকে নাম দিলেন রাজনৈতিক মতবাদ, কেউ কেউ ‘ধর্ম’ বলে। জমি দখলের সেই সমস্ত শলকে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মতবাদ নাম দিয়ে সৃষ্টি হলো অসংখ্য নেতা। রাজনৈতিক নেতা,ধর্মীয় নেতা ইত্যাদি তো কি। ঐ নেতারা বললেন “আমিই শ্রেষ্ট, আমাকে অনুসরন করো”।
মানুষের মনের সহজাত লোভ, আদিম প্রবৃত্তি অনুসন্ধান করলো কাকে অনুসরন করলে অর্থ নৈতিক ফায়দা হবে, অন্যের সম্পদ লুট করে নিজে অর্থবান হওয়া যাবে। যে সেমন বুঝলো সেই সেই নেতার অনুগামী হলো। ঐ নেতারা শিখালেন কি করে অন্যকে হিংসা করতে হবে, মেরে কেটে শেষ করে দিয়ে তার সব সম্পদ লুট করতে হবে।
এই অন্যের সম্পদ লুট করার নানা অভিনব পদ্ধতিকে পুথিবদ্ধ করে সেই পুথির প্রতিটা শব্দকে অনুসরন করতে বলা হলো। না করলে তুমি আমার বিরোধী, আর তোমার শাস্তি মৃত্যু। ভয়েও অনেকে সেই নেতার অনুগামী হলো,নইলে জীবন সংশয়।।এই লুটের বহর শুধু মাত্র আর্থিক সম্পদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো না। অন্যের ভালোবাসার জনকে ছিনিয়ে নিয়ে ভোগ করা, এমনকি শিশুদের নিয়ে নেওয়া শুরু হলো।
এই অন্যের ভালোবাসার জন এবং তাদের শিশু দের নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু হলো, “দাস প্রথা”। এরা আর কেউ নয়, বিনা পারিশ্রমিকে পরিশ্রম করার , খেতে খামারে এবং নিজের ঘর গৃহস্থালীর কাজ করা ,আর সুন্দর শরীরের মহিলাদের এমনকি ছোট বাচ্চাদের শরীরের ওপরে ঝাপিয়ে পড়ে নিজের শরীরের ক্ষিদে মেটানোর সামগ্রী, যার সাদা বাংলার নাম “যৌণ দাস দাসী”।
অর্থ, যৌন ক্ষুদা মেটানোর এই সহজ পদ্ধতি মেনে নেবার মানুষের অভাব কেনো হবে এই মানব প্রানী জগতে? গুহা মানব কোনোদিন ‘মানবিকতা’ শিখলো না। মানবিকতা শিখলে ‘অমানবিক’ কাজ কি করে করা যাবে। মানুষের মধ্য থেকেই কিছু কিছু জ্ঞানী জ্ঞুনী জন, মানুষকে এই আদিম প্রবৃত্তির হাত থেকে উদ্ধার করে, ‘অন্ধকারের জগত থেকে আলোর জগতে’, অসত্য থেকে সত্যের জগত’ , বিষময় জীবন থেকে অমৃতের জগত’ এর দিশা দেখানো প্রচেষ্টায় নানা ‘আপ্ত্য বাক্য ‘ লিখে রেখে গেলেন।
বিষ উদ্গারন কারীর দল সেই আপ্ত্যবাক্যের জ্ঞান ভান্ডার লুট পাট করে ,জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিলো, যারা সেই কথা বললো তাদের মুন্ডচ্ছেদ করে দিলো। প্রায় লুপ্ত হলো সেই ‘আপ্ত্য জ্ঞান’, রইলো না আর কেউ সেই কথা মানুষকে স্মরন করিয়ে দেবার।
সেই থেকে চলছে ‘লুট করার প্রচেষ্টার নেতাদের রম রমা, দিকে দিকে, সারা পৃথিবীতে’। এই মানব সমাজের সার্বিক ধ্বংসের মধ্য দিয়ে এক নতুন সৃষ্টি ছাড়া মানুষের বাচবার আর কোনো উপায় কি আছে?
মহাভারতে “দাস” কথাটা আছে। সেই দাসত্ব অন্য ধরনের। যুদ্ধ করে পরাজিত দের মধ্য থেকে বেছে বেছে দাস করা হতো এই কথা কোথাও লেখা নেই। দস্যু বলে এক ধরনের কথা প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে অনেক আছে।
যারা লুট পাট করে জীবিকা নির্বাহ করতো তাদের ‘দস্যু’ বলা হতো। অনেক রাজারা বিরক্ত হয়ে এদের সংগে যুদ্ধ বিগ্রহ ও করেছেন। এই দস্যু দের পরাজিত করে, বশীভুত করে তাদের ‘দাস’রুপে রেখে দেওয়া হতো বা মাজের বাইরে বাস করতে বাদ্য করা হতো।
এদের ই “অচ্ছ্যুত”, পতিত, ইত্যাদি শব্দে বোঝানো হতো। এই সদের,বিশেষ করে তাদের মহিলাদের নগ্ন করে খোলা বাজারে বিক্রি করারা মতো ব্যভিচার প্রাচীন হিন্দু সমাজে কোনোদিন ছিলো না। সমাজ বিরোধিদের সমাজ থেকে বাইরে রাখার প্রথা এখোনো আছে,তাকে বলা হয় ‘জেল’।
মধ্য যুগে ‘দাস প্রথা’ এক প্রচলিত ব্যাবস্থার রুপ নেয়। মিশরের ‘ফারাও’ ইজরায়েল দখল করে সেখানকার ৪ লক্ষ বাসিন্দা কে মিশরে এনে ‘দাস’ হিসাবে খাটাতো।
‘মোজেস’ সেই দাসদের উদ্ধার করে আবার ইজরায়েলে বসবাস করার ব্যবাস্থা করে দেন। সেই মোজেস কেই ইহুদীরা পয়গম্বর হিসাবে মানে। খ্রীষ্টান দের উত্থান শুরু হয়ে ‘দাস দের’ মধ্য থেকেই।
‘দাসপ্রথা’ ধর্মীয় ,রাজনৈতিক অনুমোদন পেলো আরব থেকে। দিকে দিকে জিহাদী সৈন্যরা ছড়িয়ে পড়লো, যুদ্ধ করলো, পদানত মানুষগুলোকে ‘দাস’ হিসাবে রেখে দিলো নিজেদের কাজ কর্ম করার জন্য এবং মহিলাদের ওপরে নিজেদের যৌন ক্ষুদা মেটানোর জন্য। ছোট ছোট শিশুরাও এই ‘গনিমতের মাল’হওয়া থেকে রেহাই পেলো না। ইতিহাসে এর আখ্যান ভুরি ভুরি।
ভারতে ‘জিহাদী তান্ডব’ শুরু হওয়া থেকেই শুরু হলো “হিন্দু দাস’ দের আবির্ভাব। মুহাম্মদ –বিন-কাসিম সিন্ধু জয় করে সংখ্যাতীত দাস দাসী পেয়ে যায়।
সেই সময়ের নানা ঐতিহাসিক, ‘চাচ নামা’ সব লেখাতেই এই কথা পাওয়া যায়। রাজা দাহিরের রাজপ্রাসাদ থেকে ৭২ জন অপুর্ব সুন্দরীকে (দাহিরের দুই কন্যা সহ) খলিফার কাছে উপোঢৌকন হিসাবে পাঠানো হয়। তাদের কি হলো?
সেই শুরু, তার পর ‘জিহাদী আগ্রাসন’ যতো তীব্রতর হলো হিন্দু দাস দাসীতে পুর্ন হয়ে গেলো খোরাসান, বাগদাদ, তুরষ্কের দাস বাজার। আমরা যেমন গরুর হাটে গিয়ে গরু কিনি, গরুর দাঁত,গড়ন ইত্যাদি পরখ করে দাম দেই,
ঠিক তেমনি হিন্দু নারীদের নগ্ন করে খোলা বাজারে দেখানো হলো। যে যেমন সুন্দরী, যার শরীর যেমন আকর্ষনীয়, তার তেমনি দাম।
তৈমুর এসেছিলো বর্তমান সমরখন্দের বুখারা থেকে। যাবার সময় যে অসংখ্য হিন্দু দাস- দাসীকে নিয়ে গেলো, তাদের প্রায় অর্দ্ধেক উচু পামীর পার হতে গিয়ে ঠান্ডায়, বরফে মারা গেলো। সেই থেকে নাম হলো “হিন্দু কুশ” (হিন্দুদের শেষ আশ্রয় স্থল)।
সেই জায়গায় আজো একটি স্মারক আছে (কেউ চাইলে দেখে আসতে পারেন।)। দ্বাদশ শতাব্দী তে গজনীর ‘দাস বাজার’ হিন্দু দাস-দাসীতে পুর্ন হয়ে গেলো।
সরবরাহ এতো বেশী যে কেনার লোক কম,তাই দাস-দাসীর দাম কমে গেলো। ‘জিহাদী আগ্রাসন’ যখন উরোপে গেলো,সংগে মাল পত্র বইবার জন্য, সৈন্য দের খেদমত গারী করার জন্য, রাতের সুখ মেটানোর জন্য হিন্দু দাস-দাসীরা গেলো।
‘খ্রীষ্টান ক্রুশেড” এর ঠেলায় যখন ‘জিহাদী’রা তড়ি ঘড়ী করে ইউরোপ থেকে পালিয়ে বাঁচলো, ফেলে রেখে এলো অগুনতি হিন্দু দাস-দাসী কে। তারা আজো ‘জিপসী’ নাম নিয়ে ঘুরে বেড়ায় পুর্ব ইউরোপের নানা শহরে।
কেউ তাদের চায় না, ঘৃনা করে, তাদের কোনো দেশের নাগরিকতা আজো নেই। সংখ্যায় তারা প্রায় ১২ মিলিয়ন (এক কোটি ২০ লক্ষ)।
তাদের অনেকেই আজ ইসলাম এবং খ্রীষ্টান ধর্ম নিয়ে বেচে আছে। কিন্তু তাদের ভাষা, সমাজ জীবন, ধর্ম অভ্যাসের মধ্যে পশ্চিম, উত্তর পশ্চিম ভারতের সংষ্কৃতির ছাপ স্পষ্ট।
আরো পড়ুন…..