“গর্বের সঙ্গে বলো আমি হিন্দু’’ – স্বামী বিবেকানন্দ” কথাটির সঙ্গে আমার দ্বিমত রয়েছে। কারণ আমাদের সমাজে দু’ধরনের হিন্দু রয়েছে, কুপ্রথার হিন্দু এবং সুপ্রথার হিন্দু। কুপ্রথার হিন্দু হওয়াটা গর্বের নয়, লজ্জার বিষয়, অপমানের! “গর্বিত হিন্দু” আমরা তখনই হব যখন আমরা হিন্দু সমাজের কুপ্রথাকে নির্মূল করে সুপ্রথার অনুসারী হিন্দু হতে পারবো।
আমি যেভাবে মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়েও ইসলামের মত ভয়ানক মতবাদকে বুক ফুলিয়ে ছাড়তে পারি, সেভাবে আমরা একত্রিত হয়ে হিন্দু সমাজের কুপ্রথা গুলোকে নির্মূল করতে পারবো না? আমার বিশ্বাস আমরা অবশ্যই পারবো!
ভৌগোলিক পরিচয় অনুযায়ী আমিও একজন হিন্দু, ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে আমি সনাতনী। সনাতনী হিসেবে আমি ৪টি বেদ অর্থাৎ ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, সঙ্গে মনুস্মৃতি এবং বেদব্যাস দ্বারা রচিত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার অনুসারী। সনাতনী হিসেবে আমিও ৪টি যুগে বিশ্বাসী অর্থাৎ সত্যযুগ, দুয়ার্পারযুগ, ত্রেতাযুগ, কলিযুগ। আমি ৪টি বর্ণব্যবস্থা অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের এবং শুদ্র বর্ণে বিশ্বাসী।
কিন্তু আমি কোনভাবেই হিন্দু সমাজের কিছু স্বর্থান্বেষী কুলাঙ্গারদের মনগড়া কুপ্রথার অনুসারীদের মত নিম্ন জাত বলে কাউকো হেয় করিনা, কিংবা উচ্চ জাত মেনে নিয়ে তার পা ধুয়ে জল খাই না। কারনটা আগেই বলেছি আমি বাল্মীকির দ্বারা রচিত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার অনুসারী।
আর শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার লেখা আছে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা: অধ্যায় ৪, শ্লোক ১৩: চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ গুন ও কর্মের দ্বারা যারা বর্ণ নির্ধারণ না করে নামের শেষের পদবি দেখে বর্ণ নির্ধারণ করে তারা আমার দৃষ্টিতে কুপ্রথার হিন্দু মাত্র। যেসব স্বর্থান্বেষী ব্রামণেরা নিজেদেরকে উচ্চস্তরের সম্মানের পাত্র বানিয়ে রাখতে প্রচার করে বেড়ান যে “বর্ণ অপরিবর্তনশীল” তাদের এই বক্তব্যকে আমি খুব জোর দিয়ে বিরোধিতা করি, কেননা
মনুস্মৃতি ১০। ৬৫ – ব্রাহ্মণ ও শুদ্র হতে পারে এবং শুদ্রও ব্রাহ্মণ হতে পারে। এই প্রকার ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যও নিজ নিজ বর্ণ পরিবর্তন করতে পারে।
আমি জানি কিছু ব্রাহ্মন এখন দুশ্চিন্তায় ভাবতে বসেছে যে, তবে কি আমিও কর্ম এবং গুনের ভিত্তিতে শুদ্র হয়ে যেতে পারি? অবশ্যই, কেননা
মনুস্মৃতি ২। ১৬৮ – যে ব্রাহ্মণ বেদের অধ্যয়ন বা পালন ছেড়ে অন্য বিষয়ে প্রযত্ন করেন সে শুদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়।
ঠিক একই ভাবে যে শুদ্র বেদের অধ্যয়ন বা পালন করবে তার ব্রাহ্মণত্ব প্রাপ্ত হবে।
কুপ্রথার হিন্দুরা যারা নামের শেষের পদবি দেখে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের এবং শুদ্র ভাবেন, তাদের জন্য মনুস্মৃতিতে উল্লেখ রয়েছে
মনুস্মৃতি ২। ১৫৭ – যেমন কাষ্ঠনির্মিত হস্তি ও চর্ম্মনির্মিত মৃগ কোন কার্যকারক নহে। তদ্রুপ যে ব্রাহ্মণ বেদাধ্যয়ন না করে তিনিও কোন কার্যক্ষম নহে। কেবল ব্রাহ্মণের নাম মাত্র ধারন করেন।
হিন্দু সমাজ কখনই কোন বর্ণকে অপমান কিংবা হেয় করতে শেখায় না, গুন এবং কর্মের দৃষ্টিতে বর্ণ নির্ধারিত হয়। প্রতিটি বর্ণের মানুষ তার নিজ নিজ গুন ও কর্ম দক্ষতার দ্বারা শ্রেষ্ঠ, এবং সমাজের জন্য প্রয়োজনীয়।
আসুন আমরা হিন্দু সমাজ থেকে স্বর্থান্বেষী হিন্দু কুলাঙ্গারদের মনগড়া অভিশপ্ত কুপ্রথার বহিস্কারকরি, এবং তার পর আমরা স্বামী বিবেকানন্দের সেই বক্তব্য অর্থাৎ “গর্বের সঙ্গে বল আমি হিন্দু” এর সঙ্গে একমত হয়ে চিত্কার করে একত্রে বলি “আমরা গর্বিত হিন্দু”!
লেখক-সানিয়োর রহমান
আরো পড়ুন…