ইয়াজিদি জনজাতির বীরাঙ্গনা গাঁথা- (২য় পর্ব )

ইয়াজিদি জনজাতির বীরাঙ্গনা গাঁথা। (সঙ্গে আইসিস বীরপুঙ্গবদের মহিলা ছদ্মবেশের কিঞ্চিৎ বিবরণ ) মুখবন্ধ : জিয়া উল হক এর ফিলিস্তিনি গণ হত্যা এবং ইজরায়েল এর অস্ত্র ইত্যাদির উপর একটি লেখার কারণে প্রচুর নালিশ হয়েছে।

প্রথম পর্ব এখান থেকে আগে পড়ে আসুন

এই কারণে অথবা ছাগানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার কারণে এই সামান্য লোকটিকে জুকেরবার্গ এর পোষ্যকুল তিনদিনের জেল দিয়েছে।

মুশকিল হলো, এই ভাবে কি কাউকে ঠেকিয়ে রাখা যায় ? ছাগকুল কে আগেই জানিয়ে রাখি,ওই লেখা আরো সরাসরি লিখবো। পারলে ঠেকাও আমায়।যাই হোক বিষয়ে আসি,আপনারা যারা আমার আগের ইয়াজিদি নিয়ে আগের লেখা দেখেছেন তাদের নতুন করে কিছু বলার নেই।

যারা দেখেন নি তাদের জন্য একটি সূত্র দিলাম পারলে ওটা একটু পড়ে নিয়ে এই লেখাটি পড়লে হয়তো পুরো বিষয়টা আরো পরিষ্কার হবে।

আমরা জানি,নতুন উৎপাত আইসিস বা দায়েশ মধ্যপ্রাচ্যে এবং আফ্রিকা বা ইউরোপ এবং এশিয়ার অনেক জায়গায় (পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে বেশি ) অজস্র মানুষের মৃত্যু বা পঙ্গু করে দেওয়ার কাজ করে চলেছে। তাদের নৃশংসতার কাহিনী অনেক সময় মধ্যযুগের কাজ কর্মকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

 

এদের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি বড় অংশ হলো এই ইয়াজিদি এবং কুর্দি মানুষরা। আজ একটু এই ইয়াজিদি মেয়েদের সাহসিকতা এবং ধরে দাঁড়ানোর উপর বলবো। এদের যৌন দাসী করে রাখা থেকে যাবতীয় নারকীয় অত্যাচার করে পৃথিবী থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল এই প্রাণীগুলো।

এর বিরুদ্ধে এই গোষ্ঠীর মেয়েরা অসম সাহসের সাথে অস্ত্র ধরেছে। আসুন জানি তাদের বীরত্বের কিছ কাহিনী।

২০১৪ সালে আইসিস যখন প্রবল প্রতাপে সিরিয়া এবং ইরাকের একের পর এক এলাকা দখল করে চলেছে সেই সময় সিঞ্জর পাহাড়ের আদি বাসিন্দা এক ক্ষয়িষ্ণু জনগোষ্ঠী ইয়াজেদিদের বিপদ ঘনিয়ে এলো প্রবল ভাবে।

ইয়াজিদি জনজাতি
ইয়াজিদি জনজাতি

আইসিস এই এলাকা দখল করে শুধু ক্ষান্তি দিলো না ,তাড়িয়ে মারতে শুরু করলো এই অসহায় গোষ্ঠীর মানুষদের। যৌনদাসী করতে লাগলো এদের মেয়েদের। এইসময় রণমূর্তি ধারণ করে ইয়াজেদি মেয়েরা এক অসামান্য লড়াই শুরু করে।

একদম সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত একদল অসমসাহসী মেয়েরা তাদের আটকে পরা সহনাগরিক কে উদ্ধার থেকে সমানে সমানে আইসিস এর উপর পাল্টা মার্ দেওয়া শুরু করে।
৮ থেকে ১০ হাজার মেয়েরা যোগ দেয় YPG গ্রূপ বলে একটি সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনীতে (Yekîneyên Parastina Gel Kurdish: People’s Defense Unit) এই গোষ্ঠীতে মূল কুর্দি সেনা ছাড়া বাকি অনেক নির্যাতিত মানুষের সমাহারে এই পাল্টা লড়াই শুরু করে।

এই মেয়েদের একটি অংশ আমাদের আলোচ্য ইয়েজেদী গোষ্ঠির মেয়েরা।তাদের প্রথম সারির এক মহিয়সীর কথা বলব আজ সঙ্গে দেবো তাদের কিছু ছবি।

দয়া করে জিজ্ঞাসা করবেন না ,এদের সবাই ইয়েজেদী কি না কারন তারা সবাই কুর্দি আর সবাই অত্যাচারিতা এর বেশি তাদের পরিচয় দরকার হয় না ।

খাতুন খিদার এবং তার সূর্য সন্তানের কাহিনী :
এই ভদ্রমহিলা ছিলেন একজন ইয়েজেদী গায়িকা।রক্ষনশীল আরব সমাজে সাদ্দাম হোসেন এর অত্যাচার আর অর্থনৈতিক পীড়নে গান গাইবার গান গাইবার পেশা বেছে নিয়েছিলেন।

খাতুন তার জ্ঞান হওয়ার আগেই বাবাকে পান নি ,সেই সময় তার বাবা বাধ্যতামূলক লড়াই এর কারণে ইরান ইরাক ফ্রন্ট এ গিয়েছিলেন এবং যুদ্ধবন্দী হন।

ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়ে অভাবের কারণে স্কুল ছাড়তে হয় তাকে। তার ভাষায়,নিত্য অভাব,মৃত্যু আর দুঃখ তার গানের শক্তি।

দুঃখ ভুলতে তার এক নিকট আত্বিয়কে আঞ্চলিক একটা গিটারের মতো বাজনা কিনে দিতে বলেছিলেন উনি। সেই বাজনা বাজিয়ে পরিবারের মধ্যেই গান করে দিন কাটছিল তার। এর মধ্যেই যুদ্ধের শেষ হলে আশির দশকের শেষে তার বাবা মুক্তি পায়।

এক পারিবারিক আসরে তার গান গাইবার সময়ে তার এক খুড়তুতো ভাই গোপনে এই গানের ভিডিও তোলে। এই ভিডিও স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় চার হাজারের উপরে।

এরপর তাকে অবাক করে তার বাবা একটি ইয়াজেদি সামাজিক মিলনায়তনে তার মেয়েকে গাইতে দেন। ২০০৪ এ এই অনুষ্ঠানের পর তার গায়িকা হিসেবে আত্বপ্রকাশ হয়। সেই সুখ ১০ বছর ও পান নি। ২০১৪এ আইসিস দানব তাদের সিঞ্জরের ঐটুকু আশ্রয় কেড়ে নিলো।

সহায় সম্বলহীন,বন্ধু বা আত্বীয় হারিয়ে যখন তার আর কিছুই হারানোর নেই সেই অবস্থায় কয়েক মাসের মধ্যে প্রথম ইয়েজেদী গায়িকার থেকে উত্তরণ হয় এক নির্ভিক সেনা হিসেবে।পরবর্তিতে বাহিনীর এক নেত্রী হিসেবে অনেক কঠোর,অনেক একাগ্র এক কমান্ডার হিসেবে পরিচিতি হয় তার।তার ভাষায়,তার আরব প্রতিবেশী পথ দেখিয়ে এনেছিল আইসিস কে তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে,তাদের শেষ করে দিতে কারন তার অপরাধ ছিল তিনি গান করতেন।

সব হারিয়ে ইয়েজেদী মানুষরা হাজারে হাজারে পাহাড়ের পথে আশ্রয় নিতে পালিয়েছে।তার নিজের বাড়ি থেকে গানের যন্ত্র বা ছবি সব জ্বালিয়েছে এই আইসিস।অজস্র মানুষ আইসিস এর হাতে মারা গেছে পালাতে গিয়ে আরো অনেকে মারা গিয়েছে খোলা পাহাড়ের নিচে গরমে আর প্রাকৃতিক প্রতিকুলতার কারণে।

খাতুনের অস্ত্র ধরার জন্য তার বাবা তাকে সমর্থন করেন।এক বছরের নিরলস চেষ্টায় তৈরী করেন সূর্যসন্তানের এক বাহিনী।২০০ জনের উপরে মেয়েদের এই বাহিনী গড়ে ওঠে তার নেতৃত্বে।সমর্থন পান কুর্দিশ প্রবাসী সরকার আর স্থানীয় বিদ্রোহী নেতৃত্বের।

এই বাহিনীর অধিকাংশ এসেছে অত্যাচারিত অথবা অত্যাচারের ভয়ে পালিয়ে আসা মেয়েদের থেকে।প্রতিদিন একদম সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে এরা।সকাল ৬টা থেকে তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং পরবর্তী সামরিক ড্রিল চলতে থাকে।এক পর্যায়ে নিজেদের অস্ত্র পরিস্কার করে যুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় আর তারপর অপেক্ষা করে সেই দিনের সংগ্রামের।

ইয়াজিদি জনজাতি
ইয়াজিদি জনজাতি

তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্যের হলো একটি ও মেয়েকে হতাহত হতে হয় নি এই যুদ্ধে বরং সিন্জরের দখলের উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন তারা।নিজের হাতে মেশিন গান নিয়ে তার বাহিনীকে নেত্রিত্ব দিয়েছেন।আত্বঘাতি আইসিস বাহিনী আর অন্য যুদ্ধরত এই অপজাতক এর দল কে সমূলে বিনাশ করেছেন।তার মতে এই কাজ তার আর তার মেয়েদের বড় আনন্দের ছিল।

তাদের আনন্দের আরো কারন হলো এই আইসিস এর প্রানীগুলো মনে করে মেয়েদের হাতে মৃত্যু হলে বেহেস্ত নসিব হয় না।তাই এক একটি সাফল্য তারা সোচ্চারে ঘোষনা করেন যাতে এই প্রানীগুলোর বাকি সঙ্গীরা শুনতে পায়।

খাতুনের ভাষায়,এই মেয়েদের এবং নতুন নিয়োগ পাওয়া মেয়েদের উজ্জীবিত করতে তাকে শোনাতে হয় নিজেদের উপর চলে যাওয়া ক্রমাগত অত্যাচারের কাহিনী।এই যুদ্ধের এবং তাদের উপর ক্রমাগত অত্যাচারের বিষয় যথেস্ট উজ্জীবিত আর মানসিক শক্তির কাজ দেয় বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।এই উপমহাদেশের মেয়েরা শুনছেন ???

বীরপুঙ্গবদের স্ত্রীরূপ ধরণের গল্প :
মানুষ রূপের এই পশুদের একটি হাস্যকর রূপ প্রকাশ পেয়েছে সম্প্রতি।অনেকেই হয়ত জানেন তবু যারা জানেন না তাদের জন্য আরো এক বার বলি।

যুদ্ধের শেষ ভাগে,যখন মার পরছে সব দিক থেকে,সেই সময় এই মহাবীর এবং নারীকে পণ্য অথবা নিচু প্রাণী ইত্যাদি ভাবা এই ক্লীবগুলো চেষ্টা করে মেয়ে সেজে পালানোর।

শহীদ হয়ে জন্নত পাওয়া যাবে এই বিষয়ে বোধহয় কিঞ্চিত অবিশ্বাস হয়েছিল তাই লেজ তুলে পালানোর জন্য এই রূপ ধারন করে।বৃটেনের সান পত্রিকা এবং ইরাকের সরকারী বাহিনীর থেকে পাওয়া তথ্য আর ছবিতে আমরা দেখতে পাই,রীতিমত রূপ চর্চা করে মানে ধরুন আই লাইনার থেকে বক্ষ বন্ধনী,পরচুল,লিপস্টিক বা বোরখা সব কিছু ব্যবহার করে মেয়ে সেজে পরিত্রান পেতে চেয়েছিল এই ইসলামের স্বঘোষিত মহান সৈনিকরা।

প্রশ্ন হলো কেন এদের বিষয় আনলাম ?
কারণ আছে, এই মানসিকতার লোক গুলো স্রেফ সিরিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যে না আমার আপনার আসেপাশেই আছে।

ধর্মের যন্তর মন্তর ঘরে মাথা সাফ করে কেবল একটাই এজেন্ডা নিয়ে ঘুরছে তা হলো বিরুদ্ধমত পেলেই তাকে শেষ করো অথবা ওটার প্রচার বন্ধ করো ।এই প্রাণীগুলোর সামনে বলার ক্ষমতা থাকে না তাই পিছনে ক্ষতি করার জন্য সর্বত চেষ্টা চালিয়ে যায় ।এদের সাহায্য করতে আমার আপনার আসে পাশেই আছে অনেক ‘আলোকপ্রাপ্ত ‘ মানুষ যারা আপনাকে প্রতিবাদ করতে দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে।

সতর্ক থাকুন,নিজেকে প্রস্তুত করুন। অস্ত্র ধরতে বলছি না তবে এই ভার্চুয়াল জগতে যদি এই প্রাণীগুলোর উৎপাত কম করতে চান তা হলে এক জোট হোন।

এই নারীশক্তির থেকে শিক্ষা নিয়ে আসুন নিজেরা প্রস্তুত হই না হলে মনে রাখবেন যেদিন আপনি উৎখাত হবেন বা নিঃশেষ হবেন সেই দিন আর কেউ থাকবে না আপনার জন্য আপনার পাশে দাঁড়াতে।

এই তিনদিনে ফেসবুকের নির্বাসনের মধ্যেও নিজের কলম চালিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু পেটের দায় বড় দায় তাই কলম থুক্কু কি বোর্ড চালানোর সময় পাই নি। নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছে বলেছিলাম,যে লেখার জন্য এই নির্বাসন ওটা আরো নির্দিষ্ট করে লিখবো। হ্যা , আবার বলছি , ভুলি নি। একটু সময় দিন ,ওই লেখা ও লিখবো। এই অপজাতক এর কারনে বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখাকে কিছুদিন দূরে সরিয়ে রাখছি কারণ এখন একটু ‘অন্য লেখার ‘ বেশি প্রয়োজন।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য !
লেখার তথ্যসূত্র :
১. https://www.thesun.co.uk/…/fleeing-jihadis-disguise-of-eye…/
২. http://www.independent.co.uk/…/raqqa-latest-yazidi-women-fi…
এই লিঙ্কের ভিডিওটি অবশ্যই দেখবেন
৪. https://www.theguardian.com/…/slaves-of-isis-the-long-walk-…
৫. http://www.alfredyaghobzadehphoto.com/…/yazidi-women-fighte…
এর অন্তর্গত ছবিগুলো ও দেখুন
৬. http://metro.co.uk/…/isis-soldiers-dress-in-drag-to-escape…/
বীরের আসল রূপ দেখুন মানে ওই মেয়ে সেজে পালানোর ছবি দেখুন উপরের লিঙ্কে

আরো পড়ুন….