ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যের ক্যান্সার বলা হয়। যদিও কথা গুলো বলে থাকে একটি বিশেষ সম্প্রদায়। কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম তাদের একটা সান্ধ্যকালীন পার্টিতে। গিয়ে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম।
তখন বুঝতে পারলাম, এরা কীভাবে এত অল্প সংখ্যক জনসংখ্যা নিয়ে অনেকগুলো মুসলিম রাষ্ট্রের ভিতরে টিকে আছে স্বগৌরবে, স্বমহিমায়, শৌর্য-বীর্যে-পরাক্রমশীলতায়।
এদের ভিতর চিন্তাভাবনার প্রখরতা সেদিন কিছুটা টের পেয়েছিলাম। প্রথমেই লক্ষ্য করলাম, জাতি হিসেবে এদের একতা, সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা এবং জ্ঞানের প্রখরতা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই তারা নিজেদেরকে জূস বা ইহুদি হিসেবে উপস্থাপন করে অসাধারণ এক সূচনার মাধ্যমে আলোচনা শুরু করলেন।
বলা বাহুল্য, সব কিছুর উর্দ্ধে তাদের প্রথম পরিচয় তারা ইহুদি এবং দ্বিতীয়ত ইসরাইলি। তাদের ভিতরে বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের ট্যালেন্টেড লোক রয়েছে। তাদের পিপলস নেটওয়ার্কিংও যে কতটা উচ্চ পর্যায়ের, সেটা সেদিন বেশ টের পেলাম।
অনুষ্ঠান শেষে অনুধাবন করলাম, একশকোটি গর্দভের দল অপেক্ষা এক হাজার জন ট্যালেন্টেড ব্যক্তির দলও অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়া সম্ভব।
এত কথা বলতে বাধ্য হলাম শুধুমাত্র বর্তমানে হিন্দুদের শোচনীয় অবস্থা দেখে। ইহুদিদের ভিতরে বহু বিজ্ঞানী, দার্শনিক, চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ রয়েছে যাদের ভিতর অনেকেই প্রচলিত কুসংস্কার, প্রথা-রীতিনীতি মানেন না কিন্তু সব কিছুর উর্দ্ধে রেখে জাতির প্রশ্নে নিজেদের ইহুদি পরিচয়টাকেই বড় করে দেখে এবং নিজের জাতির জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত থাকে।
কিন্তু আমাদের হিন্দু জাতিটা হল একটা গোলমেলে জাতি। এখানকার পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যায়, এরা মেতে আছে সেই প্রাচীন কাস্ট প্রথা নিয়ে।
আপন ভাই মার খেয়ে মরছে, নিজেদের ঘর জ্বলছে, অত্যাচার সইতে না পেরে অনেকেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে, তারপরও তাদের সিংহভাগ ব্যস্ত সেই তথাকথিত বর্ণ প্রথা নিয়ে।
পৃথিবী এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে, আজ যা নতুন, কাল তার উন্নততর সংস্করণ এসে পুরনোটির জায়গা দখল করে নিচ্ছে, অথচ এই জাতি সেই পুরনো শিকলটকে পায়ে পরে নিজেকে বন্দী রাখতে ব্যস্ত।
হিন্দু ধর্মের ইতিহাস অন্য সব ধর্মের তুলনায় অতি প্রাচীন, তা সত্ত্বেও, এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার পরও যে জাতির এই অবস্থা, সে জাতির অবক্ষয় যে চলমান ও বর্ধিষ্ণু, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এরা একটু শিক্ষিত হলে স্যেকুলারিজমের চাদর গায়ে তুলে, পরিণামে বুড়ো বাপ-মাকে দেখতে হয় অন্য ধর্মের প্রেমিক-প্রেমিকার হাত ধরে মেয়ে-ছেলের পলায়ন।
মাবাবা চোখের জল ফেলে সে স্যেকুলারিজমের খেসারত দেয়। হয়তবা এই শোকে কোন কোন পরিবারে নেমে আসে করুণ মৃত্যু পর্যন্তও।
আমরা যে বলদ জাতি, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল এইসব। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আজকাল তথাকথিত হিন্দু স্যেকুলারদের সবগুলোই হল প্রকারন্তরে সুবিধাবাদী, পক্ষপাতদুষ্ট এবং পরধর্মের দালাল।
এরা অন্য ধর্মের লোক যখন হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করে, তখন মুখে কুলুপ আটে, আর হিন্দুরা কিছু বললেই #মেঠেল ফিরিয়ে দেয়, কাগজে কলমে লেখালেখির ফুলকি ঝরায়।
সত্যিই বড় অবাক করার মত এই জাতি।
ভাবতে অবাক লাগে, যে উপমহাদেশ এক সময় হিন্দুদের আবাসস্থল ছিল, আজ তাদের নিজ আবাসস্থলে তারাই পরবাসী।
তাদেরই কোন একসময়কার ধর্মান্তরিত মেয়েছেলের মুখ থেকে শুনতে হয় মালাউনের বাচ্চা নামক ঘৃণ্য গালিগালাজ।
এই উপমহাদেশের ইতিহাস বিকৃত হয়, দেশ-কাল-স্থানের অধিকার চলে যায় অন্যদের দখলে, তবুও হিন্দুদের চিন্তাভাবনার জগতে পরিবর্তন আসে না।
এদের আদিবংশধরদের ক্ষয়িষ্ণু অবশিষ্টাংশটুকু অত্যাচারিত হয় পথে ঘাটে, তারপরও এদের মানসিকতার পরিবর্তন নেই।
মনে রাখা উচিৎ, বৃহত্তর সংখ্যা সব সময় সব কিছু নির্ধারণ করে দেয় না, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল ইহুদি জাতি।
তাই হিন্দুদের উচিৎ এই সব কুসংস্কার, বর্ণ প্রথাসহ সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা মহাকালের নর্দমায় লাত্থি মেরে সামনে এগিয়ে যাওয়া। সব শেষে সবারই একটি মাত্র পরিচয় হওয়া উচিৎ, “Above all, we all are Hindus.”
আরো পড়ুন……