নতুন এক ভান্ডারের খোঁজ -আফগানিস্তানের চলচ্চিত্র আর অন্যান্য প্রতিবেদনের পুনরুদ্ধার।ধন্যবাদ জানাই হাবীবুল্লাহ আলী কে তার জীবন পণ করে এই অমূল্য রত্নভাণ্ডার কে আগলে রাখার জন্য। আজ তার কারণে ওই বিবিধ রত্নভাণ্ডার আজ আবার আলোর মুখ দেখবে ডিজিটালাইজড ভাবে।
নব্বই এর দশকের মাঝামাঝি পাকিস্তানের আশ্রিত , সৌদির পোষ্য তালিবান এর দল দখল নেয় এই দেশটির। প্রথমেই এই প্রাণীগুলো আফগান সরকারের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ফিল্ম সংস্থায় হানা দেয়। উদ্দেশ্য যত প্রামাণ্য কিছু আছে তা ধ্বংস করে ফেলা।
তালিবান এর প্রাণীরা এসে প্রায় দুই ট্রাক ভর্তি মুভি আর ভিডিও পুড়িয়েছিল কিন্তু হাবিবুল্লাহর বুদ্ধির কাছে হার মেনেছে। স্বাভাবিক , ছাগল আর মানুষ কি এক আইকিউ লেভেলের হয় ? হাবীবুল্লাহ আলী নিজের জীবন বাজি রেখে ওই রিলগুলো সরিয়ে ফেলেন। আজ তিনি আনন্দের সাথে গর্বের সাথে বলতে পারছেন , এই গুলো না রাখতে পারলে তার বর্তমান আর আগামী প্রজন্ম প্রকৃত আফগানিস্তানের ছবি সমন্ধে জানতে পারতো না।
হাবীবুল্লাহ কে তালিবান তথ্য আর সম্প্রচার দফতরের মন্ত্রী বলেছিল , একটা ফিল্ম যদি এই বাড়িতে পাই তা হলে তোমায় খুন করবো। নিষ্কম্প চোখে তিনি বলেন , ” আপনি চাইলেই করতে পারেন কিন্তু বিশ্বাস করুন ,আমার কাছে একটাও ফিল্ম নেই “
তালিবান প্রাণীগুলো তাদের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এর সময়ের রাজত্ব করার মধ্যে বেশ কিছু ভিডিও রিল জ্বালাতে পারলেও হাবিবুল্লাহর লুকানো ৭ হাজার রিল এর খবর পায় নি। উনি এইগুলো কাবুলের নানান জায়গায় বিভিন্ন বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
আজ দুই দশক পরে এই রিলগুলো ডিজিটালাইজড হচ্ছে ,ওয়েবে আর সাধারণ মানুষের দেখার জন্য। তার ভাষ্য অনুযায়ী আফগান সিনেমার বেশিরভাগ ভালোবাসার যা আমরা জানি না। না , যুদ্ধের না। তার মতে এই ভিডিও গুলো এলে মানুষ বুঝবে ,আফগানরা শান্তি চাইছিল বা চায়।
ষাটোর্ধ আলী জানান তিনি কি ভাবে এইগুলো বাঁচাতে পেরেছেন। তার কথা অনুযায়ী , তিনি ঐগুলোকে ক্যানে ভরে ,পিপের মধ্যে রেখেছিলেন আর উপরে ইচ্ছা করে লিখে রেখেছিলেন ভারতীয় আর হলিউড মুভির নাম। এরপরেও তিনি নিশ্চিন্ত ছিলেন না তাই রাখার জায়গার বাইরে থেকে ইটের দেওয়াল তুলে রেখেছিলেন আবার অনেকগুলো ফলস সিলিং বানিয়ে ওটার উপরে রেখেছিলেন।
কি ধরণের বিশাল সংগ্রহ ?
এক কথায় ,অসাধারন অন্তত যা জানতে পারছি , ১৬ মিলি মিটার এর ভিডিও ধারণ আছে প্রায় ৩২ হাজার ঘন্টার ! ৮ হাজার ঘন্টার ৩৫ মিলি মিটার এর ভিডিও আছে। এখন এর সূচি মানে ইনডেক্সিং হচ্ছে। তা ছাড়া ও সাধারণ জনগণের থেকে ও তারা পাচ্ছেন আরো অনেক এই ধরণের জিনিস যা মানুষ লুকিয়ে রেখেছিল এই প্রাণী গুলোর থেকে বাঁচানোর জন্য। তার মতে , এর জন্য অর্থাৎ এই রিল গুলোকে পরিষ্কার করে ডিজিটালাইজড করার কাজ শেষ করতে তাদের কত দিন লাগবে তবে কাজ চলেছে।
কাজটি সত্যিই অতীব সময় সাপেক্ষ। প্রথমে প্রজেক্টরে ওই ছবিগুলো চালাতে হয় , এর থেকে ফ্রেম ধরে এর সময় আর বিষয় নির্ধারণ আর সংরক্ষণ। এই বিভাগের বর্তমান এক কর্মচারী ফয়েজ লুৎফি বলেন , সিনেমা হলে তাদের অন্ততঃ চার দিন লাগছে আর খবরের ক্লিপিং হলে এক দিন। এই প্রজেক্ট শুরু হয়েছে এই বছর , ডিরেক্টর ইব্রাহিম আরেফি বলেন , তার আশা এই প্রজেক্ট শেষ হবে আগামী দু বছরের মধ্যে।
ফিরে দেখা আফগান সিনেমার আর প্রতিবেদন গুলোর কিছু বিবরণ :
আমরা অনেকেই জানি না , আফগানিস্থানে সিনেমা তৈরী হতো ওই দেশের মানুষের জন্য। ১৯৭০ এর সময় এর যাত্রা শুরু। মূলত ফার্সি আর পুস্ত ভাষায় এই সিনেমা গুলো হতো। এ ছাড়া প্রতিবেদন মানে ডকুমেন্টরি পাওয়া গেছে যার সময় ১৯২০ থেকে ৭০ এর দশক মানে ওই সেভিয়েত আক্রমন এর আগে পর্যন্ত।
হাবীবুল্লাহ এই কাজ করেন আর মাত্র একজন সহকর্মীর সাহায্যে তবে সংরক্ষণ করেন দুজনে মিলে। তিনি ঠিক করেন কোন গুলো তিনি বাঁচাতে পারবেন। আর তিনি ওই কাজে দেশপ্রেমিকের পরিচয় দিয়েছেন। সংরক্ষণের কাজে আফগান সংস্কৃতির আর দেশের কাজের গুলোকে আলাদা করেছিলেন ওই স্বল্প সময়ে। তিনি এই সংরক্ষণের মধ্যে ১৯৬৯ এর একটি করুণ হাস্যরসের সিনেমা ও সংরক্ষণ করেছেন কারণ ওই সময়ের খালেক আলীল এর পরিচালনায় সিনেমাটি তুলে ধরেছিল নায়িকার স্কার্ট পরার ছবি।
কিছু নমুনা যা এই প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে দেখিয়েছে
মার্কিন দূতাবাসে এই নমুনা দেখানো হয় বেশ কিছু যাতে হাসি তামাশায় মগ্ন আফগানদের সুখী ছবি উঠে এসেছে কিছু প্রতিবেদনে। সাধারণ মানুষের বনভোজন এর ছবি। মহিলাদের খোলামেলা চলাচল , হাসি মস্করা , স্কার্ট পরা তরুণীর সহজে চলা ও আছে। এইগুলো দেখার পর একজন সাধারণ আফগান আরিফ নিজেকে দুর্ভাগা বলেন কারণ তিনি ওই সোনার দিনগুলো দেখতে পান নি তাই। তিনি বলেন , অন্য দেশগুলো যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন তারা কেবল পিছিয়ে পড়েছেন।
আফগান সরকারি সম্প্রচার দফতর এর প্রচার এর কাজ হাতে নিচ্ছে অন্য দিকে একটি বেসরকারি সংস্থা এইগুলো ইন্টারনেটে তুলে ধরার কাজে এগিয়ে আসছেন। তালিবানদের নখ দাঁত এখনো বেশ সক্রিয় , প্রায় ৪০ ভাগ জায়গাতে ওই প্রাণীগুলো আজো তাদের শক্তির পরিচয় দিচ্ছে। এতদ সত্বেও আফগান সরকার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই ভিডিওগুলো গ্রামে গ্রামে প্রত্যন্ত জায়গায় দেখানোর ব্যবস্থা করার।
ইব্রাহিম আরিফী বলেছেন , তিনি তার প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামগুলো ঘুরবেন এই ছবি গুলো দেখানোর জন্য। তার ভাষায় ,এর ছড়িয়ে দেওয়ার দরকার আছে না হলে কি করে নতুন প্রজন্ম জানবে তারা কি হারিয়েছে।
আমি কুর্নিশ করি এই অসম সাহসী মানুষটিকে। অতিমানুষের কাজ করছেন তিনি। তার সাফল্য আসুক আর তিনি যেন কোনো রকম আক্রমনের শিকার না হন ওটাই কামনা করি। লেখার সাথে ওই ফিল্ম ডিজিটালাইজড করার কাজের ছবি আর ওই অদম্য সাহসী যোদ্ধা ইব্রাহিম এর ছবি ও দিলাম। আসুন , আমরা অন্তত ইতিহাস থেকে ‘দেখে ‘ শিক্ষা নিই। না হলে , ঠেকে শেখার সময় পাওয়া হয়তো যাবে না।
ভালো কথা , সাত নম্বর ছবিটা একটু খেয়াল করে। ওই আলজাজিরার প্রতিবেদন থেকে স্ক্রিন শট নিয়েছি। যার লিংক ও দেওয়া আছে। বাস কোন দেশের তৈরি আর কোন কোম্পানির ওটা খেয়াল করবেন। অনেক সহি মোমিন ভারতের ষড়যন্ত্র দেখে থাকে তাই ভাবলাম এই কাজ তখন হলো কি করে ওটা একটু জিজ্ঞাসা করি। কেউ বলবেন ?
- খাবার স্যালাইনের ফর্মুলা আবিষ্কারক হেমেন্দ্র নাথ চ্যাটার্জী, কেন বর্ণ-বৈষম্যমূলক ভাবধারা শিখার ?
- ইসরাইলের মতন অসামরিক ব্যক্তিদের ৩ বছরের জন্য বাহিনীতে যোগদানের প্রস্তাব ভারতীয় সেনার।
- কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কারক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী-দূরর্ম
- প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞান ও আয়ুর্বেদ।-দূরর্ম
- পশ্চিমবঙ্গ এবং বাঙালির অধঃপতনের মূল কারণ।-দূরর্ম
- সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক আদি শংকরাচার্য-দূরর্ম…….।।।
- ৪৭ এর ধর্ষিত মায়েদের সন্তানরা কি সেকুলাঙ্গার ?-দূরর্ম
- বাঙালির গৌরব মহারাজা প্রতাপাদিত্য-দূরর্ম
- রাজা রামমোহন রায় : ভারতীয় রেনেসাঁর জনক-দূরর্ম
- রাশিয়ার পক্ষে কেন সম্ভব নয়, চীনের সঙ্গে সামরিক জোট গঠন করা – কৃত্তিবাস ওঝা