ইচ্ছা ধর্ম: হাজার বছরের পরধীনতার পরেও ভারতবর্ষ কেন বৈদিক হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠ থেকে গেল? বৈদিক হিন্দুর বা সনাতন ধর্মীর ‘ধর্মান্তর’ হয়না – একটি ঐতিহাসিক প্রমাণ ভিত্তি করে আলোচনা হিন্দুরা কেন ভারতবর্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ থেকে গেলো। খ্রিষ্টাব্দের সময়কালে দেখলে, মোটামুটি খ্রিষ্টাব্দ ১০ম শতাব্দী থেকে ভারতবর্ষে নতুন ধাঁচের বিদেশী আক্রমণ শুরু হয়েছে ।
এর মূল চালিকাশক্তি প্রবৃত্তি – অর্থ ও কাম । অর্থ সম্পত্তি বিত্ত লুঠ অবশ্যই অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, শোষণ করে শ্রম লুঠ, নর নারীকে ক্রীতদাস ও যৌন ক্রীতদাসী করা আর এক উদ্দেশ্য, কিন্তু তার সাথে (এবং বলা যায়, তাকে ন্যায্যতা দেবার জন্য বা জাস্টিফাই করার জন্য) আব্রাহামিয় পলিটিকাল রেলিজিওনের (প্রথমে ইসলাম তারপর খ্রিস্টান রেলিজিওন) নিজস্ব ইডিওলজি প্রসারের উদ্দেশ্য ছিল (আব্রাহামিয় ঘরাণার ‘একেশ্বরবাদ’ দিয়ে বহুত্ব গায়েব করে দেয়া এবং ‘ক্লোন’ তৈরি করা ।
এই ‘ক্লোন’ তৈরির একটি পৌরাণিক রূপক হল ‘রক্তবীজ’। সনাতন ধর্মে ‘রক্তবীজ’ তাই অসুর ও রাক্ষস রূপে কল্পিত, প্রাচীন বৈদিক অর্থে নয়, ভিলেন অর্থে)। রেলিজিওনের ইডিওলজির সাথে গত শতাব্দীতে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক ইডিওলজি (মূলত, ইউরোপীয় ঘরাণার গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ এবং মার্ক্সবাদ, এবং তাদের দ্বন্দ্বজাত নানা মতবাদ), যা মূলত ইউরোপের শিল্পবিপ্লব জাত এবং ইউরোপীয় অভিজ্ঞতার দৃষ্টিভঙ্গি ।
সেই রাজনৈতিক ইডিওলজিও আদতে আব্রাহামিয় ক্লোন বানানোর ঘরাণা । অর্থাৎ বহুত্ববাদ থাকবে না, ‘যত মত তত পথ’ থাকবে না । থাকবে একজন প্রফেট, এবং তার মতাদর্শ, এবং সেই প্রফেট ও মতাদর্শ নিয়ে সেই রাজনৈতিক ‘মোল্লাতন্ত্র’ যা বলবে ‘তাহাই চূড়ান্ত’।
আব্রাহামিয় পলিটিকাল রেলিজিওনগুলি যেখানে অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে ফেলতে পারল [যেমন, গ্রিস, রোম, মেসোপটেমিয়া, ব্যাবিলন, আরব, পারস্য, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া (ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে) ইত্যাদি],
সেখানে, অনেকের মনেই এই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, ভারতবর্ষে কেন তা হল না? গোদা বাংলায়, প্রশ্নটি হচ্ছে – প্রায় এক হাজার বছর আগ্রাসী আব্রাহামিয় রেলিজিওনের সংস্পর্শে আসার পরেও, ভারতবর্ষ কেন বৈদিক হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠ থেকে গেল?
হিস্টোরিয়ানরা, বিশেষ করে ‘এপোলোজেটিক’ হিস্টোরিয়ানরা এর নানা ব্যাখ্যা দিয়েছে । এই সব ব্যাখ্যার একেবারে মেরিট নেই, এমন বলা যায় না । সব ব্যাখ্যারই কিছু না কিছু বা সামান্য হলেও মেরিট অবশ্যই আছে ।
ইতিহাস তো আর ‘চ্যাপ্টা পৃথিবীর’ মত ‘চ্যাপ্টা ন্যারেটিভে’ চলে না; কিন্তু যেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক ও গ্রন্থ প্রমাণের প্রবল আধিক্য যে ইসলামিয় আক্রমণকারীরা কোন উপায়ই বাকী রাখেনি – খুন, নারী ধর্ষণ, তলোয়ারের মুখে কনভার্সন, জোর করে নিষিদ্ধ খাদ্য খাইয়ে কনভার্সন, বৈদিক হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে ‘বিষ’ মিশিয়ে সেগুলিকে বৈদিক হিন্দুদের ‘প্রিমিটিভ’ বলে চালানোর চেষ্টা,
হিন্দু স্থাপত্য মন্দির ও দেবদেবীর প্রতিমা ধ্বংস (- এবং এই কুকর্মগুলি বেশ ডেকে হেঁকে স্বীকার করা আছে স্ব-মহিমা ঘোষণার জন্য), সেখানে, এতো সত্ত্বেও কেন ভারতবর্ষ থেকে বৈদিক হিন্দু সংস্কৃতিকে গ্রাস করা গেল না এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা লোপ করা গেল না, এ ব্যাপারে ‘বিস্মিত’ হবার কারণ আছে বৈকি ।
আমার বর্তমান আলোচনার অভিমুখ – ‘বিস্মিত কেন হব? এটাই তো স্বাভাবিক!’ Henry Miers Elliot প্রমুখের ‘The History of India, as Told by Its Own Historians’ গ্রন্থটি নেটে পাওয়া যায় । তার ৮টি খণ্ড ডাউনলোড করে, একটি একটি করে খণ্ড ধরে শুধু ‘temple’ শব্দটি সার্চ করতে থাকুন । ভারতবর্ষের গত হাজার বছরের ইতিহাস চোখের সামনে ভেসে উঠবে ।
[আমার মতে, টেম্পল ব্যাপারটি শুধু ধর্মীয় বা রেলিজিয়াস নয়, টেম্পল হল প্রতীক । ‘প্রতীক প্রতিস্থাপন’ (icon/ symbol replacement) হল সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসনবাদের অন্যতম স্ট্রাটেজি । তা যে শুধু রেলিজিওনের নাম করে হয়, তা নয় । রাশিয়া ও চিন তা রাজনৈতিক ইডিওলজির নাম করে করেছে ।
চিন যেমন তিব্বতে ও উইঘুর মুসলিমদের ওপর তা প্রয়োগ করছে । অর্থাৎ বলতে চাইছি, ‘টেম্পল’ শব্দ শুধু রেলিজিয়াস শব্দ নয় । তাকে একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসাবেও নেয়া যায় ।] না, ‘এপোলোজেটিক’ হবার কিছু নেই ।
একজন ব্যক্তির বিবর্তন ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য যেমন তার নিজের জীবনের ইতিহাস তার সৎ ভাবে দেখা প্রয়োজন কারণ নিজেকে ঠকানো চলে না, তেমনি রাষ্ট্রের ইতিহাসও সেই রাষ্ট্রের সকলের জানা প্রয়োজন। অতীতে কি ঘটে গেছে তার জন্য বর্তমানে কারোকে অযৌক্তিক দায়ী করা যেমন সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের জন্ম দেয়, তেমনি অতীতে কি ঘটে গেছে সে বিষয়ে অসচেতনতা ও তথ্য গোপন করার চেষ্টা ও তথ্য লোপ করার চেষ্টা বা বেছেবুছে তুলে ধরার চেষ্টাও একই রকম সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের জন্ম দেয় ।
৭০ বছরের ওপর ভারত স্বাধীন হয়েছে । ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ভারত- ইণ্ডিয়া জন্মানোর ইতিহাসেও রেলিজিয়াস সাম্প্রদায়িকতা তার স্বাক্ষর রেখেছে । এ আমাদের ‘সাম্প্রতিক’ ঐতিহাসিক সত্য । কিন্তু এত বছর পরেও যদি রেলিজিয়াস সাম্প্রদায়িকতা ভারতের সমাজকে মাঝেমাঝে পীড়া দেয়, আমার মতে তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী ইতিহাস নিয়ে সততার অভাব, অর্থাৎ ওপরে বলা দ্বিতীয় কারণটি । এজেণ্ডা হিস্ট্রিই আসল কাল্প্রিট ।
বর্তমান আলোচ্য প্রসঙ্গে ফিরি …
আমার মতে, ইস্লামিক শাসকরা এবং পরে ক্রিশ্চান মিশনারিরা এতো কিছু করেও কেন বৃহৎ সংখ্যায় হিন্দুদের কনভার্ট করতে পারল না, তার আসল কারণ ‘কনভার্সন’ বলে কোন কিছু ভারতীয় সংস্কৃতিতে এবং বৈদিক হিন্দু ধর্মে ছিল না । যা সংস্কৃতিতেই নেই, তাকে জোর করে চাপালে কিছুটা হয়তো ‘সফল’ হওয়া যায়, কিন্তু সে ‘সাফল্য’ সার্বিক হয়না ।
ইসলাম আসার পূর্বে, ভারতবর্ষের ইতিমধ্যে পলিটিকাল রেলিজিওনের সাথে পরিচিতি ঘটে গেছে । সে পলিটিকাল রেলিজিওন হল বৌদ্ধ ব্রাহ্মণ্যবাদ। (অন্য একটি পোস্টে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি)।
পরবর্তীকালে যখন ইসলাম এসে হিন্দু মন্দির ভেঙ্গেছে, জোর করে কনভার্ট করেছে, খুন ধর্ষণ করেছে, ততদিনে বৌদ্ধ ‘অহিংস’ সাম্প্রদায়িকতা দেখে দেখে এবং বৌদ্ধ বিহারগুলিতে দুর্নীতি ও যৌনাচার দেখে দেখে, মৌলবাদ ব্যাপারটা ভারতের জনসাধারণের অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গেছে ।
অর্থাৎ, সাম্প্রদায়িকতা বিষয়টি আর সংস্কৃতিতে ‘ফরেন’ বা ‘এলিয়েন’ থাকেনি । এবং সে মৌলবাদী আগ্রাসনের শক্তিকে পরাভূত করা, উল্টে দেয়া এবং গুপ্ত অন্তর্ঘাত করার উপায়ও (subversion) তারা জেনে গেছে । তাই শেষ পর্যন্ত হিন্দুদের কেউ জয় করতে পারেনি । এই ‘উপায়’ এবং সহনশক্তিই তাদের উত্তীর্ণ করেছে। কোন কোন অঞ্চলে, হিন্দুর রাজনৈতিক উত্থান এবং লাগাতার প্রতিরোধ এই সহনশক্তির সহায়তাতেই হয়েছে ।
কি সেই ‘উপায়’? মৌলবাদী আগ্রাসনকারী শক্তিকে পরাভূত করা, উল্টে দেয়া এবং গুপ্ত অন্তর্ঘাত করার কি সেই ‘উপায়’? আমার মতে, সে ‘উপায়’ হল ‘ইচ্ছা’। হ্যাঁ, শুধুই ‘ইচ্ছা’। বৈদিক হিন্দু ধর্ম হল ‘ইচ্ছা ধর্ম’।
গীতায় কৃষ্ণ যে অর্জুনকে শেষে বললেন ‘যদেচ্ছসি তথা কুরু’ – এই ‘ইচ্ছাই’ বৈদিক হিন্দুর বিশ্বাসের সংস্কৃতি।
গীতা এই সংস্কৃতি ব্যক্ত করেছে বলেই, বৈদিক হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র গ্রন্থ গীতা । বৈদিক হিন্দু সংস্কৃতিতে যেহেতু ‘কনভার্সন’ বলে কিছু নেই, তাই হিন্দুকে কক্ষনো ‘ধর্মান্তরিত’ করা যায় না । কাওকে জোর করে কনভার্ট করলে কেউ যদি অজ্ঞতায় বা স্বেচ্ছায় বা ভয়ে বা অন্য কোন যেকোনো উদ্দেশ্যে মেনে নেয় ‘আমি কনভার্টেড’ হয়ে গেছি তাহলে আলাদা কথা, কিন্তু কেউ যদি ‘সনাতন ধর্ম’ তাৎপর্য জানে, তাহলে সে জানে সে হিন্দুই আছে, কারণ ‘কনভার্টেড’ বোলে কোন কিছু তার সাংস্কৃতিক সিস্টেমেই নেই ।
অর্থাৎ, আমাদের যে শেখান হয়েছে, হিন্দু ধর্ম থেকে ছেড়ে যাওয়া যায় কিন্তু প্রবেশ করা যায়না; আমার মতে, তার উল্টোটাই সত্য । অর্থাৎ, প্রকৃতপক্ষে, হিন্দু ধর্ম ছেড়ে যাওয়া যায়না, সুতরাং ‘প্রস্থান’ ও ‘প্রবেশের’ কোন প্রশ্ন নেই । এই ‘প্রস্থান’ ও ‘প্রবেশ’ (যেমন, ‘শুদ্ধিকরণ’) হিন্দু ধর্মের নতুন গল্প, এবং তা আব্রাহামিয় রেলিজিওনের মডেলে । এটা আমার কল্পনা নয় । প্রমাণ দিচ্ছি ।
৯ম শতাব্দীর মুসলিম ঐতিহাসিক আল বলাধুরির (ʾAḥmad ibn Yaḥyā ibn Jabir al-Balādhurī) ‘কিতাব ফুতুহ আল বুলদান’ (Kitab Futuh al-Buldan) – যার অর্থ ‘অন্য দেশ জয়ের বই’ (মোটামুটি অর্থ করলাম) – থেকে জানা যায়, ভারতের যে হিন্দুদের জোর করে কনভার্ট করা হয়েছিল, তারা আবার নিজেরাই হিন্দু হয়ে গিয়েছিল ।
খেয়াল করে দেখুন, এখানে কোন ‘শুদ্ধিকরণ’, রিচ্যুয়ালস, কোন পুরোহিতের ভূমিকা – কিছুই নেই । যাদের জোর করে মুসলিম করা হয়েছিল, তারা স্রেফ ‘ইচ্ছা’ করলো ও মনে করলো যে ‘আমরা মুসলিম নই, আমরা যেমন সনাতনী ছিলাম তেমনি আছি’, আর সেটাই যথেষ্ট ।
যারা ‘বৌদ্ধ বিতাড়ণ’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে, তাদের মাথায় ‘ফ্যান্টাসি আর্য্য জাতি কর্তৃক ফ্যান্টাসি অনার্য্য জাতি বিতাড়ণ’ হয়েছিল – এই ফ্যান্টাসির গল্পর সাথে বর্তমানে আফগানিস্থান পাকিস্থান ও বাংলাদেশ থেকে হিন্দু, শিখ, অন্যান্য মাইনরিটি বিতাড়ণের বাস্তব মিলেমিশে একটা চিত্র তৈরি হয়েছে ।
বৌদ্ধ বিতাড়ণ নয়, যেটা ঘটেছিল তা হল ‘ইচ্ছা’ পরিবর্তন। তাই একসময়ে যে বৈদিক হিন্দুরা বৌদ্ধ ব্রাহ্মণ্যবাদের রিচ্যুয়ালস ও আইকন গ্রহণ করেছিল, বৌদ্ধদের অবক্ষয়ের সাথে সাথে তারা শুধু ‘ইচ্ছায়’ আপনা থেকেই সনাতন ধর্মে থেকে গেছে । কেউই কোথাও বিতাড়িত হয়নি । যে যেখানে ছিল সেখানেই থেকে গেছে ।
যারা বৌদ্ধ মত গ্রহণ করেছিল, তারা বৌদ্ধদের দুর্নীতির বহর দেখে আবার সনাতন ধর্মের মূল্যবোধে আত্মস্থ হয়েছে । বুদ্ধ ও গৌতম বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা একই থেকেছে, শুধু বৌদ্ধদের প্রতি শ্রদ্ধা উবে গেছে, তাই স্বপরিচয় আর ‘বৌদ্ধ’ বলেনি । [অবশ্যই কোন সাধারণীকরণ করছি না । ব্যতিক্রম সব সময়েই ছিল আছে থাকবে । এই ‘ব্যতিক্রম’-ও ‘ইচ্ছা ধর্মের’ প্রকাশ । হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রেও ‘ব্যতিক্রম’ ধর্ম হিসাবে স্বীকৃত । তার সাথে আছে ‘আপদধর্ম’ – যার মূল কথা, মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয় ।]
স্ব-ইচ্ছায় স্বধর্মে থাকা – এটাই ভারতীয় বৈদিক হিন্দু সংস্কৃতি । বলাই বাহুল্য, ‘স্বধর্ম’ মানে রেলিজিওন নয় । করার ‘কনভার্ট’ করার ক্ষমতা কোথায়? ‘কনভার্ট’ ব্যাপারটাই তো বেদ সম্মত বা ধর্ম শাস্ত্র সম্মত নয় । ডাঃ আম্বেদকরের হিন্দুদের বৌদ্ধ ধর্মে কনভার্ট করার উদ্যোগ একই কারণে হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্ম সম্মত নয়, কারণ ‘কনভার্ট’ করার ধারণা আব্রাহামিয় ধারণা, ভারতীয় ধারণা নয় । বৈদিক হিন্দুরা এমনিতেই বুদ্ধকে ভগবান বা অবতার রূপে শ্রদ্ধা করে । এখানে কনভার্ট হবার কোন গল্প নেই ।
উপনিষদ এবং বৌদ্ধ ত্রিপিটকের প্রমাণে দেখা যাচ্ছে, করার ‘ইচ্ছা’ হলে সে যে কোন ধর্ম মত গ্রহণ করতে পারত । উপনিষদে তাকে শুধু ‘ইচ্ছা’ ব্যক্ত করলেই হত, আর বৌদ্ধ সূত্রে দেখা যাচ্ছে, তাকে বলতে হত ‘আমি বুদ্ধ সঙ্ঘ ও ধর্মের স্মরণ নিচ্ছি ।‘ এই রিচ্যুয়ালটি গৌতম বুদ্ধের অবদান । কারণ তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর ধর্ম শিক্ষাকে পলিটিকাল রেলিজিওনের আঙ্গিক দিয়েছেন ।
একই ভাবে, ইসলামীয় শাসকরা ও তাদের এজেন্টরা যখন কাওকে বা কোন জনগোষ্ঠীকে জোর করে বা ভয় দেখিয়ে বা শারীরিক নিগ্রহ করে ‘কনভার্ট’ করেছে, সেই জনগোষ্ঠীর একাংশ তা মেনে নিয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ বৈদিক হিন্দু তা মানেনি । সেই শাসক ও এজেন্টরা চলে যাওয়া মাত্রই, ‘ইচ্ছা’ নীতি ব্যবহার করে তারা সনাতনী থেকে গেছে ।
অধিকাংশ মানেনি বলেই, বৈদিক হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থেকে গেছে । তবে যে স্থান থেকে অ-বৈদিক শাসক দীর্ঘদিন ধরে থেকে গেছে সেখানে বহু মানুষ তার নিজ সংস্কৃতিতে আর ফিরেতে পারিনি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পরাধীনতা এই না ফিরার কারণ। আমারা যদি আফগানিস্তানের ইতিহাস দেখি তাহলে আমরা দেখতে পাব ৭০০ শতকে প্রথম দিকে ইসলাম যখন আফগানিস্তান দখল করে তখন বেশির ভাগ বৈদিক সনাতনী ইসলামা গ্রহন করতে বাধ্য হয়।
কিন্তু ৯০০ শতকের দিকে যখন ইসলামী শাসন ব্যবস্থা আফগানিস্তানে থেকে কমতে থাকে সেখানে আবার পুনরাই বৈদিক ধর্ম প্রাণ পাই অর্থৎ ইসলাম ত্যাগ করতে থাকে মানুষ। এই প্রাণ বেশি দিন থাকেনি মাত্র ২০০ বছর অর্থৎ ১১০০ সালে দিকে পুনরাই ইসলাম আফগানিস্তানে আক্রমন করলে সেখানে আবার ইসলামের কনর্ভাট চলতে থাকে।
কিন্তু এখানে চরম সত্য আফগানিস্তান আর কখনোই বৈদিক ধর্মে ফিরতে পারেনি, কারণ সেখান থেকে আর কখনোই ইসলামী শাসন শেষে হয়নি। যার কারনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম মূল শিখড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম তাদের আপন সংস্কৃতি ভূলে গিয়েছে।
ভারতবর্ষ এতটাই বৃহৎ দেশ যে, যেকোনো শাসক শুধু নামেই শাসক থেকেছে, কিন্তু তার অধীনে থাকা সমস্ত মানুষ তার ইচ্ছায় চলেছে বা তার দ্বারা চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, এমন সার্বিকভাবে ঘটেনি । ক্ষেত্র বিশেষে ঘটেছে । কিন্তু সেই ‘বিশেষ’ মোটেই ‘সার্বিক’ নয় ।
মানে, যখন কোন শাসক কোন অঞ্চলে শাসন করেছে, সে সময়মত ট্যাক্স পেয়ে ভেবেছে অঞ্চলটি আমার দখলে এবং সব মানুষ আমার নিয়ন্ত্রণে । আধুনিক শাসকরাও এই একই ভ্রান্তিতে ভোগে । সংখ্যাগরিষ্ঠ বৈদিক হিন্দুরা সময়মত ট্যাক্স দিয়ে তাদের ইসলামি শাসকদের অহংকারের পালে হাওয়া দিয়েছে ‘আপনি আমাদের প্রভু’, কিন্তু সেই হাওয়া দেয়ার স্ট্র্যাটেজিতেই নিজস্ব ধর্ম সংস্কৃতি ঠিকই ধরে রেখেছে ।
তাই শাসকের এজেন্ট চোখের আড়ালে যাওয়া মাত্রই, সংখ্যাগরিষ্ঠ বৈদিক হিন্দুরা ‘ইচ্ছা ধর্ম’ সহায় করে যা ছিল তাই থেকেছে । একে ‘রি –কনভার্ট’-ও (reconvert) বলা যায় না । ‘কনভার্ট’ হবার ‘ইচ্ছা’ ছিল না, তাই ‘কনভার্ট’-ই হয়নি, আবার ‘রি–কনভার্ট’ (reconvert) কোথা থেকে আসবে?
‘কনভার্ট (convert)’ ‘রি–কনভার্ট (reconvert)’ কোনটাই কোন বৈদিক হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে নেই । সুতরাং ‘কনভার্ট (convert)’ ‘রি–কনভার্ট (reconvert)’ শুধুই মানসিক ব্যাপার । শুধু ‘ইচ্ছা’ দিয়েই এই দুই ধারণা বাতিল করে দেয়া যায় । আসলে, ‘কনভার্ট (convert)’ ‘রি–কনভার্ট (reconvert)’ ধারণাগুলো তৈরি হয় ঘরের কোণে বসে তাত্ত্বিক জগতে। এর কোন বাস্তবতা কোনদিন ছিল না ।
হ্যাঁ, খুব ক্ষুদ্র অংশের কাছে বাস্তবতা ছিল, অস্বীকার করা যায় না, এখনো আছে । কিন্তু এই ক্ষুদ্র অংশের ভারতবর্ষ ও বৈদিক হিন্দু ধর্ম নিয়ে কোন ধারণাই নেই । ভারতবর্ষ নিঃসন্দেহে কোন সভা কক্ষ বা পার্টি অফিসের থেকে বড় সাইজের! যারা ভ্রমণ করে না, তাদের পক্ষে ভারতবর্ষের বৈচিত্র কল্পনা করাও অসম্ভব । সেই বৈচিত্র কিভাবে ‘ইচ্ছা ধর্মে’ প্রকাশ পাচ্ছে, মূলত লোক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে, তা কল্পনা করাও তাদের পক্ষে অসম্ভব ।
সাধারণ মানুষের স্তরে ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়, বহু ক্ষেত্রেই তাই রেলিজিয়াস পরিচয়কে কোন বিশেষ ধাঁচে ঢালাই করা যায় না । রেলিজিয়াস রীতি, পূজা – সব মিলেমিশে আছে । তাই দক্ষিণ ভারতের অনেক অঞ্চলে, মুসলিমরাও দ্রৌপদী আম্মার পূজা করে, বাংলায় বনবিবির মত দেবী আছে, মাজারে সিন্নি আছে, সিঁদুর পড়ার প্রথা আছে । এই তো সেদিন কাগজে পড়লাম, একজন মুসলিম কালী প্রতিমা কিনে দিয়েছে এবং পূজা করেছে; এক মুসলিম ভাইকে হিন্দু বোন ভাইফোঁটা দিয়েছে । এটাই ‘ইচ্ছা ধর্ম’। এই ‘ইচ্ছা ধর্মই’ সনাতন ধর্মের মূল সুর ও ঐতিহ্য বহন করছে ।
‘বেদ’ বলতে ‘সমষ্টি প্রজ্ঞা’ (collective wisdom) বোঝায় । ঋগ্বেদে যে নানা ঋষি ও ঋষিকা (গোত্র পরিচয় সম্পন্ন, আবার গোত্রহীন ও অ- গোত্র) এবং তাঁদের নানা মত ও বিশ্বাস প্রকাশক সূক্তগুলি আছে, নানা ছন্দ আছে, তা এই ‘সমষ্টি প্রজ্ঞা’ (collective wisdom) ও জীবনের বৈচিত্রের জীবন্ত প্রতীক । এটাই ‘ইচ্ছা ধর্ম’। এই কারণেই ‘বেদ’ বৈদিক হিন্দুদের সর্বোচ্চ পবিত্র গ্রন্থ । কারণ, খোদ বেদই এই স্বাধীনতা দিচ্ছে আপনি ‘ইচ্ছা’ করলে আস্তিক, নাস্তিক, সংশয়বাদী – যা ইচ্ছা হতে পারেন; এসব কিছু না হয়ে অন্য কিছুও হতে পারেন । বেদ আপনাকে স্বাধীনতা দিচ্ছে ‘চরৈবেতি’ – এগিয়ে চলুন, এগতে এগতে শিখুন, শিখতে শিখতে এগন ।
‘আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ’।
কবি এভাবেই ‘ইচ্ছা ধর্ম’ প্রকাশ করেছেন ।
বৈদিক হিন্দু হল ‘ধর্ম’, আব্রাহামিয় এবং আম্বেদকরিয় অর্থে ‘রেলিজিওন’ নয় । ‘রেলিজিওনে’ ‘কনভার্ট (convert)’ ‘রি–কনভার্ট (reconvert)’ হয় । ‘ধর্মে’ কখন ‘কনভার্ট (convert)’ ‘রি–কনভার্ট (reconvert)’ হয়না । এই কারণেই ‘সনাতন ধর্ম’ । এখানে, ‘ইচ্ছা’ প্রকাশ করা যায় ও সেই অনুযায়ী চলা যায়, তাই ‘সনাতন ধর্ম’ – কারণ এই ‘ইচ্ছাই’ চিরন্তন বা সনাতন ।
ঐতিহাসিক প্রমাণে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ বৈদিক হিন্দু কোনদিন নিজের ধর্মের কোন নাম দেয়নি (‘ধর্ম’ তো ‘রেলিজিওনই’ নয়, আবার ‘রেলিজিয়াস আইডেন্টিটি’ কোথা থেকে আসবে?)। সংখ্যাগরিষ্ঠ বৈদিক হিন্দু কোনদিন মাথাই ঘামায়নি ‘আমি বৈদিক হিন্দু’, তার কারণ ‘রেলিজিওন’ বলে কোন কিছু তার সংস্কৃতিতে ছিল না । লোক সংস্কৃতিতে যে মানুষের সুখ দুঃখ প্রকাশ পায়, তা সার্বজনীন – তাই ‘সনাতন’।
কোন গ্রন্থে কোন ঐতিহাসিক টেক্সটে একটা মাত্রও প্রমাণ নেই (ইংরেজরা আসার আগে), কেউ নিজের পরিচয় দিয়েছে ‘আমি বৈদিক হিন্দু’। এই নামকরণ সব সময়ে ‘অন্যেরা’ করেছে । ‘সনাতন ধর্মে’ কোন আব্রাহামিয় মডেলের আত্মপরিচয় হয়না । সনাতন ধর্মের ভাবটা এই, ‘আমি হলাম আমি’, ‘আমার ইচ্ছা আমি আমি, তাই আমি’ – তার আবার ‘লেবেল’ কি দরকার?
‘আমি হলাম আমি’, ‘আমার ইচ্ছা’ – এটাই সনাতন ধর্মের মূল ভাব । বৈদিক হিন্দু থেকে অন্য ‘রেলিজিওনে’ ‘কনভার্ট (convert)’ আবার হিন্দুতে ‘রি–কনভার্ট (reconvert)’ যে ইংরেজরা আসার আগে হয়নি তা নয় ।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বুক্ক ও হরিহরকে জোর করে মুসলিম করা হয়েছিল, কিন্তু তাঁরা আবার শুদ্ধি করে বৈদিক হিন্দু ধর্মে ফিরেছেন । এটিও ঐতিহাসিক সত্য ।
কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, এঁরা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ বৈদিক হিন্দু নন । এঁরা শাসক শ্রেণী । শাসক শ্রেণীকে অনেক প্রতীকী আচরণ করতে হয় । পরবর্তীকালে, শিবাজিকেও শূদ্র থেকে ক্ষত্রিয় হবার জন্য প্রতীকী ব্যবস্থা করতে হয়েছিল ।
কিন্তু শাসকের প্রতীকী আচরণ হলেও, এটাও ভাবার আছে, বুক্ক ও হরিহর যে ‘রি- কনভার্ট’ হয়ে অত বড় সাম্রাজ্য ও সংস্কৃতির কেন্দ্র গড়লেন ‘বিজয়নগর’, তার স্বাভাবিক পরিবেশ ছিল ‘ইচ্ছা ধর্ম’, তবেই না তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে । অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু তাঁদের এই ‘রিকনভার্ট’ হওয়ার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা পায়নি । আমার মতে, এই স্বাভাবিকতাই, ‘ইচ্ছা ধর্মের’ সনাতন সংস্কৃতির একটি ঐতিহাসিক প্রমাণ ।
প্রতীক উৎপাদন করা, প্রতীক রক্ষা করা, এসব শাসক বা গণ্যমান্যদের দায় । কিন্তু এসব প্রতীকের দায় বা দরকার, সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ বৈদিক হিন্দুর কোনদিন ছিল না । কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই । সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ বৈদিক হিন্দু, উপাসনার জন্য মন্দির গড়েছে, কিন্তু মন্দিরের জন্য উপাসনা গড়েনি, কারণ উপাসনা বা তা থেকে সরে থাকা সব সময়েই ‘ইচ্ছা ধর্ম’।
তাদের একমাত্র ছিল ‘ইচ্ছা’। ‘ইচ্ছার’ কোন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থাকে না । এই কারণেই এই মহাসত্যটি আমাদের চোখে পড়ে না । এই ‘চোখে না পড়লে’ তাকে ইতিহাস বলব না, এটিও তো আব্রাহামিয় শিক্ষা ব্যবস্থার ফিল্টার ।সুতরাং আব্রাহামিয় ‘হিস্ট্রির ফিল্টার’ সরিয়ে ভারতের ইতিহাস না দেখতে শিখলে, ভারতের প্রকৃত ইতিহাস জানা যাবে না ।
যে হিন্দুরা ‘ইচ্ছার’ বিরুদ্ধে অন্য রেলিজিওনে জোর করে কনভার্ট হয়েছে, তারা যে মুহূর্তে মনে করবে ‘আমি সনাতন ধর্মর মানুষ’, সেই মুহূর্ত থেকেই সে সনাতন ধর্মের । কোন রিচ্যুয়ালসের প্রয়োজন নেই, কোন পুরুততন্ত্রের বা মোল্লাতন্ত্রের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই । পৃথিবীর যে কোন রেলিজিওনের যে কোন মানুষ যখনই মনে করে ‘যত মত তত পথ’, সে তখনই বৈদিক হিন্দু হিসাবে নিজের পরিচয় দিতে পারে ।
আমার মনে হচ্ছে, আমার এই পোস্ট পড়ে, কেউ যদি প্রশ্ন করেন, ‘আমি সনাতন ধর্মের’ – এরকম ‘ইচ্ছা’ প্রকাশ করা মানুষের বর্ণ কি হবে? জাত কি হবে? হিন্দু নাম হলে তার পদবী কি হবে? সামাজিক পরিচয় কি হবে? এরকম সম্ভাব্য প্রশ্নকারীকে জানাই, এ আলোচনা আমার এই পোস্টে প্রাসঙ্গিক নয় ।
আমি সাধারণ মানুষ, রেলিজিওনের ব্যাপার স্যাপারে ‘এক্সপার্ট’ নই । বেদে ও ধর্মশাস্ত্রে যা নেই, সেই ‘রেলিজিওনে’ ‘কনভার্ট (convert)’ ‘রি–কনভার্ট (reconvert)’ নিয়ে কোন ‘নির্দেশ’ বা ‘বিধান’ বানানো আমার এলেমের বাইরে । আমি শুধু আমার সাধারণ জ্ঞান (মানে, যেটুকু এখনো পর্যন্ত অর্জন হয়েছে আর কি! এবং তা অবশ্যই ‘ট্রায়াল এন্ড এররের’ মধ্য দিয়ে যাত্রা করছে!) আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারি ।
তাই এ বিষয়ে আমার মত দিচ্ছি । যার ‘ইচ্ছা’ আমার মত নেবেন, যার ‘ইচ্ছা’ নেবেন না । যার মনে হবে এই অংশটি পোস্টের সাথে প্রাসঙ্গিক নয়, তিনি দয়া করে এই অবধি পড়েই স্কিপ করে যান । অর্থাৎ ‘ইচ্ছা ধর্ম’ পালন করুন ।
আমার উত্তর –১। কিছুই পাল্টাতে হবে না । নিজেকে কোন রেলিজিওনের না বলে ‘যত মত তত পথ’ বিশ্বাস করলেই হবে ২। ইচ্ছা হলে, সব পদবী ছেঁটে শুধু নিজের নামের পরিচয় থাক (এটা না হলে আবার আইনি সমস্যা; যেকোনো রাষ্ট্রে থাকলে তার কিছু বাধ্যবাধকতা তো থাকবেই) ৩। নামের বাইরে, সামাজিক পরিচয় দরকার হলে, নিজেকে ‘মানুষ’ বললেই চলবে, কারণ ‘মানুষ’ শব্দ এসেছে ‘আদি মনু’র নাম থেকে ।
সুতরাং নিজের নামের পদবী হিসাবে ‘মানব’ করতে পারেন (যদি পদবীর দরকার হয়)। ৪। এসব মনোমত না হলে, নিজেকে ‘নাস্তিক’ বলতে পারেন [নাস্তিকতা একমাত্র সনাতন ধর্মে স্বীকৃত]৫। সামাজিক গোত্র পরিচয় দরকার হলে নিজের নামের সাথে ‘কশ্যপ’ জুড়তে পারেন । ‘কশ্যপ’ সকল মানুষের ডিফল্ট (default) গোত্র । গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর – এনারাও কশ্যপ ছিলেন । [সূর্য বংশ আসলে কশ্যপ বংশ]৬। নতুন ভাবে সামাজিক পরিচয় কি দেয়া যেতে পারে, নিজে উদ্ভাবন করতে পারেন আমার মতে, ওপরে যা বললাম, তা-ই ‘সনাতন ধর্ম’, তা-ই ‘ইচ্ছা ধর্ম’ – কৃষ্ণর বানী – ‘যদেচ্ছসি তথা কুরু’।
লেখক- ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
আর পড়ুন….