হিন্দু দাস

“হিন্দু দাস” মানব জাতির পক্ষে এক নিদারুন কলংক।

“হিন্দু দাস” মানব জাতির পক্ষে এক নিদারুন কলংক। মধ্য যুগে ভারত থেকে হিন্দুদের দাস দাসী বানানো শুরু হয় মুহাম্মদ –বিন-কাসিম এর সিন্ধু দেশ দখল করার সময় থেকে এই কথা আমরা বেশ কয়েকবার বিস্তারিত ভাবে জেনেছি।

এর পরবর্তী সময় যখন এই হিন্দুদাস দের ভারতে থেকে নিয়ে যাওয়া শুরু হয় অনেকটা সুনামীর জলের মতো, সেই সময় টা প্রায় ৩০০ বছর পরে, গজনীর বর্বর সুলতান মাহমুদের সময় থেকে। মাহমুদ ছিলো এক অসভ্য তুর্কী দাস উপজাতির থেকে উদ্ভুত । তার রাজ্য এবং রাজধানী গজনী ছিলো পুতিগন্ধ ময় অনুন্নত অঞ্চল।

হিন্দুদের থেকে লুট করা অতুল ঐশ্বর্য্য যখন তার হাতে আসতে থাকলো ৩০ বছর ধরে সে তখন বিলাস ব্যসন , তার প্রাসাদ এবং রাজ্য সুন্দর করে গড়ে তোলার চেষ্টায় মনো নিবেশ করলো।

৬৩২ সাল থেকে’জিহাদী সৈন্য বাহিনী’ শধু মাত্র অন্যের সম্মপত্তি এবং তাদের মাতৃভুমি জোর করে দখল করে আরবী/ তুর্কি উপনিবেশ তৈরী করা ছাড়া কোনো ধর্মীয় কাজ করেনি।

কোনো ধর্ম বলেতে পারেনা অন্যের জায়গা জমি নিয়ে নাও। এক কথায় সেটা নিছক দস্যুবৃত্তি ছাড়া আর কিছু বলে ব্যাখ্যা করা যায় না। এর আগে রোম সম্রাট খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করে খ্রীষ্ট ধর্ম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে ঐ অন্যের দেশ দখল করেই।  

ধর্মীয় মোড়কে প্যাকেজ করে এই দুই ‘সিমেটীক ধর্ম’ সারা পৃথিবীতে উপনিবেশ সৃষ্টি করতে গিয়ে যতো মানুষের জীবন নিয়েছে, যতো রক্ত দিয়ে পৃথিবীর মাটি ভিজিয়ে দিয়েছে,যতো মানুষকে ঘর ছাড়া করেছে, যতো মহিলাদের মান সম্ভ্রম লুট করেছে,

নিজেদের দেশের শহর নগরী কে পৃথিবীর শ্রেষ্ট এবং সুন্দর নগরীতে পরিনত করার প্রয়াস নিয়েছে সেটা মানব জাতির পক্ষে এক নিদারুন কলংক, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ‘মহাপাপ’ ছাড়া আর কিছুই নয়।

সেই পাপের ফসল,রোম,ভেনিস, লন্ডন, প্যারিস, বার্সিলোনা, মাদ্রিদ, হল্যান্ডের ‘ দেন-হাগ’, আমস্টার্ডাম, গজনী (ঘুর রাজ্যের উপজাতি ঘোরীর রা পুড়িয়ে দিয়েছে), বাগদাদ, ব্যাবিলন, ইরানের পার্সিপোলিস (আলেকজান্ডার পুড়িয়ে দেয়), বুখারা, তাসখন্দ, মঙ্গোলিয়ার উলান বাটোর, তুরষ্কের ইস্তানবুল, কায়রো,ত্রিপোলী, কাবুল (সেই জাক জমক আজ আর নেই) ইত্যাদি অগুনতি নগরী এবং সেই দেশ গুলি অর্থে, সম্পদে বিত্তশালী হয়ে উঠলো। 

হিন্দু দাস
সারা ‘ইসলামিক ঊম্মা’ থেকে নিয়ে আসা দাস দাসীতে পুর্ন হয়ে গেলো ইস্তানবুলের হারেম, রাস্তা ঘাট, আমীর উমরাহ দের ঘর গৃহস্থালী। তুরস্কের খলিফা ইউরোপ দখল শুরু করলো। জিহাদী আগ্রসনের সামনা করতে গিয়ে খ্রীষ্টান বাইজান্টাইন পরাজিত। সম্রাট কনষ্টানটাইনের নামে ‘কনষ্টান্টিনপোল” হয়ে গেলো ‘ইস্তানবুল’।

ইস্তানবুলের সব চার্চ হয়ে গেলো সব বিখ্যাত মসজিদ। নতুন করে আর বানাতে হলো না। শুধু কিছু ভিতরের পরিবর্তন আর কয়েকটি আয়াতের ‘ক্যালিগ্রাফি’, আর কি চাই?? (সেই সব বিখ্যাত মসজিদ আমি দেখে এলাম ২০১২ সালে কষ্টার্জিত অর্থ খরচ করে) বন্যার জলের মতো খলিফার ‘জিহাদী বাহিনী’ ছড়িয়ে পড়লো পুর্ব ইউরোপের মধ্যে।

খুব সামান্য সময়ের মধ্যে দখল হয়ে গেলো বর্তমান বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, কসোভো, আর্মেনিয়া, হারজিগোবিনা। অষ্ট্রো-হাঙ্গেরী সাম্রাজ্যের দোর গোড়ায় পৌছে ভিয়েনা্র দরজায় থেমে যেতে হলো সেই ‘মানবতা বিরোধী কালো বিজয় রথ’কে।

শক্তিশালী অষ্ট্রো-হাঙ্গেরী রাজাদের নেতৃত্তে ইউরোপের অন্যান্য ‘রাজ শক্তি’, জার্মানী, ফ্রান্স, বেলজিয়াম,ডেনমার্ক ব্রিটেন ইত্যদি খ্রীষ্টান শক্তি শুরু করলো ‘ক্রুশেড’, যার অন্য নাম ‘ধর্ম বাচানোর যুদ্ধ’। এরা ভারতের হিন্দুদের মতো ছন্নছাড়া  আর শতধা বিভক্ত হয়ে রইলো না। সব ভেদা ভেদ ভুলে এক মহাজোট তৈরী করে, সামনে অকুতোভয় “নাইট” দের নিয়ে বাধা দিলো ‘জিহাদী’ দের।

সেই মহাসঙ্কটে ইউরোপে, ভারতীয় হিন্দুদের মতো কোনো বিভীষন, সুগ্রীব, শকুনি, বৌদ্ধ অহিংসার পুজারী, সুখপাল, জঁয়চাদ সাহায্য করলো না ‘জিহাদীদের’।

হিন্দু দের মতো কোনো বিশেষ ধর্মীয় মহানতা এবং নিতীবাগীশ রাজা মহারাজা ওই খ্রীষ্টান যোদ্ধাদের মধ্যে ছিলো না। বিদেশীদের ঝেটিয়ে বিদায় করো, আর তার জন্য যা দরকার করো,এটাই ছিলো নিয়ম এবং নীতি। যুদ্ধ ক্ষেত্রে মৃত সৈনিকদের স্থান পুরন করতে স্থানীয় ভাড়াটে সৈন্যও (ভারতের হিন্দুদের মতো) মিললো না।

এটাই খলিফার পরাজয়ের মুল কারন।  কোনক্রমে সব কিছু গুটিয়ে, তড়িঘড়ি করে তল্পি তল্পা গুটিয়ে লেজ গুটিয়ে সংগে নিয়ে যাওয়া দাস দাসীদের ফেলে রেখে,পালিয়ে বাচলো খলিফার “ধর্ম যুদ্ধের” নায়কেরা। 

 জেহাদী সৈন্যদের মধ্যে দাস সৈণ্যও অনেক ছিলো। খলিফা নিজেই “অটোমান তুর্কি” আর এদের মুল বাসস্থান বর্তমান মধ্যে এশিয়ার ‘তুর্কমেনিস্তান’। মুলত পাহাড়ি উপজাতি এই ‘মধ্য এশিয়া’ র মানুষ জন। এরাই শক হুন দের বংশ ধর। যুদ্ধ,মারা মারি, বর্বরতা, লুটপাট ছাড়া এরা আর কিছুতেই পারদর্শী ছিলো না। সেই চেংগিজ খান থেকে শের শাহ সুরী সবাই এই উপজাতি থেকেই উদ্ভুত।

এরা কালে কালে ইসলাম গ্রহন করে। আর আরবীরা তাদের দাস হিসাবে নিয়ে নেয়। অনেককেই ‘খোজা’বানিয়ে প্রাসাদ, হারেম, অন্তঃপুর পাহারাদার বানায়। আর ষন্ডা গুন্ডা র মতো শরীরের অধিকারী এই দাস দের সৈন্য বাহিনীতে নিয়েও নেয় অনেক।

সেই আরব থেকে এতো দূরে কোথায় আরবী সৈন্য পাওয়া যাবে?? এছাড়া সমকামী প্রভুর যৌন ক্ষুধাও এদের মিটাতে হতো (ঘোরী আর কুতুবুদ্দিন আইবেকের যৌন সম্পর্ক অনুসন্ধান করুন)।  

এই তুর্কি দাসেরা খলিফার সঙ্গে ইউরোপ থেকে ফিরে এলেও রয়ে গেলো অন্য এক শ্রেনীর দাস দাসী। তারা মুলত খলিফার সৈন্যদের খেদমতগার ছিলো। রান্না বান্না, কাপড় চোপড় কাচা , তাবু টানানো, খোলা ইত্যাদি কাজ তাদের ছিলো। এই দাস দাসীদের মধ্যে ছিলো সারা বিজিত দেশ গুলোর থেকে নিয়ে আসা হতভাগ্য রা।

এরা সব এক এক দলে থাকতো। এক দলের সংগে অন্য দলের কোনো বিশেষ ভাব সাব ছিলো না। এদের মধ্যে একটি দল ছিলো যারা ভারতীয় হিন্দু।

মুলত, উত্তর পশ্চিম ভারত(বর্তমান পাঞ্জাব, কাশ্মীর, কান্দাহার, বালুচিস্তান আফগামিস্তানের পুর্বতন হিন্দুরা), দক্ষিন পশ্চিম ভারতের ( রাজস্থান, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ )। বাসিন্দা।

শত শত বছরের ইসলামিক শাসনের কালে  এদের নিয়ে গেছে ‘জেহাদীরা’। যেহেতু এরা মনে প্রানে কোনোদিন ইসলাম গ্রহন করেনি তাই এদের প্রানে না মেরে নানা সাধারন কাজে খাটাতো । এই হিন্দু দাস দাসীরা আজ কোথায়? আসুন আমরা সেই খোজ করি।

“হিন্দু দাস”  লেখক- ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

হিন্দু দাস হিন্দু দাস হিন্দু দাস