ইজরাইল

ইজরাইল স্বঘোষিত ‘ইহুদী রাষ্ট্র’, কিন্তু এটি মোটেও কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়।

ইজরাইল স্বঘোষিত ‘ইহুদী রাষ্ট্র’, কিন্তু এটি মোটেও কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়। ইয়াসির আরাফাত বেঁচে থাকতে যীশুর জন্মদিনে বেথেলহামে মোমবাতি জ্বালাতে যেতেন। এ বছর ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ক্রিসমাসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আপত ধর্মীয় সহিষ্ণুতার এই নিদর্শনগুলো কি আমাদের সামনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কোন রূপরেখা তুলে ধরে?

পৃথিবীর কোন মুসলিম দেশেই অমুসলিম নাগরিকদের সংখ্যা বৃদ্ধির নজির নেই। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাই এর মূল কারণ। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের একজন খ্রিস্টান ফাদার ফিলিস্তিনি মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ইজরাইলের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানরা মুসলমানদের হয়ে ধর্মযুদ্ধ করবে…। এই ফাদারের নাম ম্যানুয়েল মিউজিলাম।

আধুনিক পৃথিবীতে একজন মানুষ রাষ্ট্র ছাড়া বসবাস করতে পারে না। আর রাষ্টীয় কাঠামোই তাকে নিশ্চয়তা দিবে তার অস্তিত্বের। বর্তমান সিরিয়ার যে রাষ্ট্রীয় অবস্থা তাতে লক্ষ লক্ষ সিরিয়ান দেশ ছেড়ে শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছে।

১৯৪৭ সালের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন পূর্ববঙ্গে কোটি কোটি মানুষকে শরণার্থীতে পরিণত করেছিলো। কাজেই ফিলিস্তিন ও তার আসেপাশে বসবাসকৃত মানুষজনের জীবন কেবলমাত্র ভূপ্রকৃতি বা আবহওয়ার উপর নির্ভর করছে না- বরং তারচেয়ে বড় ধরণের কারণ হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোই তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করবে। ‘ইজরাইল’ নামের একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উদাহরণ হিসেবে খাড়া হয়ে আছে গোটা আরব বিশ্বের কাছে। যদিও ইজরাইল স্বঘোষিত ‘ইহুদী রাষ্ট্র’। কিন্তু এটি মোটেও কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়।

আধুনিক গণতন্ত্র এবং আইন দ্বারা এর রাষ্ট্রীয় কাজ চালানো হয়। পক্ষান্তরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কোন রাষ্ট্রীয় কাঠামোই দাঁড়া করাতে পারেনি। হামাস-হিযবুল্লাহর মত জিহাদী দলের অংশিদার ছাড়া মাহমুদ আব্বাস কখনই ফিলিস্তিনির একক নেতা হতে পারবেন না।

ফাদার ম্যানুয়েল মিউজিলাম মুসলিম বিশ্বকে অস্ত্র দিয়ে ইজরাইলদের প্রতিহত করতে বলেছেন। ম্যানুয়েল মিউজিলামের নিশ্চয় কোন সৎ আন্তরিক উদ্দেশ্য থেকে এই কথা বলেছেন। কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে কি তার বা তাদের স্থান হবে? এরকম কোন গ্যারান্টি তিনি পেয়েছেন?

মাহমুদ আব্বাস চলনে বলনে সুট্যেড বুটেড ক্লিনসেভড অধার্মীক মুসলমান। আর যাই হোক তিনি ফিলিস্তিনিকে হামাসের চাওয়া খিলাফত হিসেবে দেখতে চাইবেন না। মোহাম্মদ আলী জিন্নাও পাকিস্তানকে আজকের তালেবানী চেহারায় দেখতে চাননি। কিন্তু ধর্মীয় পরিচয়ের রাজনীতি ফান্ডামেন্টালিজমকে ডেকে আনে।

ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রাম জাতীয়তাবাদী রূপকে হামাসরা মুসলমানদের সঙ্গে কাফেরদের যুদ্ধ’ হিসেবে রূপ দিতে পেরেছে আরাফাতের মুসলিম হিসেবে সহানুভূতি লাভের রাজনীতি থেকে। মাহমুদ আব্বাস কি কখনই ইজরাইলের গঠনতন্ত্রের মত আরব ভূখন্ডে ফিলিস্তিনকে গঠন করতে পারবেন? ফিলিস্তিন যদি আরো একটি ইরান কিংবা সৌদি আরব হয় তাহলে মানব সভ্যতায় তার স্বাধীনতা কি মূল্য আছে? ফিলিস্তিনি নারীদের জন্য যদি ধর্মীয় পুলিশ রেখে পাহাড়া দেয়া হয় তাদের মাথার চুল দেখা যাচ্ছে কিনা- কি মূল্য থাকবে এই স্বাধীনতার?

স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী যদি জেরুজালেমকে করা হয় তাহলে সেখানে ইহুদীরা তীর্থ করতে পারবে কিনা সেই গ্যারান্টি কি মাহমুদ আব্বাসসহ বিশ্ববাসী দিতে পারবেন? জেরুজালেম তো ইহুদীদের প্রধান তীর্থ। হামাস হিযবুল্লাহ নবী ও সাহাবীদের নজির অনুসরণকারী ফান্ডামেন্টালিস্ট দল।

হযরত উমারের খিলাফতকালে সিরিয়া বসবাসকৃত খ্রিস্টানদের উমার একটি চুক্তি করতে শক্তি প্রয়োগ করেন। এই চুক্তি প্রায় সব প্রসিদ্ধ সিরাত ও হাদিসে আছে। উমার খ্রিস্টানদের চুক্তি করতে বাধ্য করেন-  আমরা এ শহর গুলোতে ও আশে পাশের শহরগুলোতে কোন নতুন মন্দির গির্জা বা খানকা নির্মান করব না।

এসব ঘরে যদি কোন মুসলিম মুসাফির অবস্থানের ইচ্ছা করেন তবে আমরা তাদেরকে বাধা দেব না। তারা রাত্রে অবস্থান করুক বা দিনে অবস্থান করুক। আমরা পথিক ও মুসাফিরদের জন্য ওগুলোর দরজা সব সময় খোলা রাখব। যে সব মুসলিম আগমন করবেন তাদেরকে আমরা তিন দিন পর্যন্ত মেহমানদারি করব। আমরা ঐ সব ঘরে বা বাসভূমি প্রভৃতিতে কোন গুপ্তচর লুকিয়ে রাখব না।

মুসলিমদের সাথে কোন প্রতারণা করব না। নিজেদের সন্তানদের কুরান শিক্ষা দেব না। নিজেরা শিরক করব না বা অন্য কাউকে শিরক করতে দেব না। আমাদের মধ্যে কেউ যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে চায় আমরা তাকে বাধা দেব না। মুসলিমদেরকে আমরা সম্মান করব। যদি তারা আমাদের কাছে বসার ইচ্ছা করেন তবে আমরা তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দেব।

কোন কিছুতেই আমরা নিজেদেরকে মুসলমানদের সমান মনে করব না। পোশাক পরিচ্ছদেও না, তাদের ওপর কোন কথা বলব না। আমরা তাদের পিতৃপদবী যুক্ত নামে ডাকব না। জিন বিশিষ্ট ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হবো না। আমরা তরবারি লটকাবো না ও আমাদের সাথে তরবারি রাখব না। অঙ্গুরির ওপর আরবী নকশা অংকন করব না ও মাথার অগ্রভাগের চুল কাটব না।

আমরা যেখানেই থাকি না কেন পৈতা অবশ্যই ফেলে রাখব।আমাদের গির্জার ওপর হতে ক্রুশ রাখব না, আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলো মুসলিমদের যাতায়াত স্থানে ও বাজারে প্রকাশিত হতে দেব না, গির্জায় উচ্চৈস্বরে শাখ বাজাবো না , মুসলিমদের উপস্থিতিতে আমরা আমাদের ধর্মীয় পুস্তকগুলো উচ্চৈস্বরে পাঠ করব না, নিজেদের রীতি নীতি ও চাল চলন প্রকাশ করব না।

নিজেদের মৃতদের জন্য হায় হায় করব না , মুসলিমদের চলার পথে মৃতের সাথে আগুন নিয়ে যাব না। যেসব গোলাম মুসলিমদের ভাগে পড়বে তা আমরা গ্রহন করব না। আমরা অবশ্যই মুসলিমদের শুভাকাংখী হয়ে থাকব ও মুসলমানদের ঘরে উকি মারব না…( ইবনে কাথিরের তাফসির, খন্ড ৮ম,৯ম,১০ম,১১শ পৃষ্ঠা নং-৬৭৫-৬৭৬)।

 
ফাদার ম্যানুয়েল মিউজিলাম খ্রিস্টান-ইসলামিক কমিটির একজন সদস্য। হামাস-হিযবুল্লার মত দল কি কখনই অমুসলমানদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে স্বীকৃতি দিবে? কুরআনে বলা আছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের মুমিনদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদেরকে ধ্বংস করতে চেষ্টার ত্রুটি করবে না। তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া ও বিপদে ফেলাই তাদের একান্ত কামনা।

তাদের মুখেই বিদ্বেষ ও শত্রুতা প্রকাশ পাচ্ছে, আর তাদের হৃদয়ে যা গোপন আছে তা আরো ভয়ংকর। তোমাদের জন্য নিদর্শন তথা শত্রুদের চক্রান্ত বিশদভাবে বণর্না করেছি, যদি তোমরা বুঝতে পার’ (৩:১১৮)। ফিলিস্তিনিদের এই ধরণের মৈত্রী চুক্তি বা সন্ধিকে হামাস-হিযবুল্লাহ বা আরো নতুনতর কোন জিহাদী সংগঠন ফু দিয়ে উড়িয়ে দিবে সময় ফুরালেই, কারণ হাদিসে স্বয়ং নবী বলেছেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায়, যদি আমি কোন ব্যপারে শপথ করি আর পরে দেখি এর চেয়ে ভাল কিছু আছে তখন আমি যেটা ভাল মনে করি সেটাই করি আর তখন পূর্বেকার শপথ রক্ষার কোন দরকার মনে করি না’ (সহি বুখারী, বই- ৬৭, হাদিস-৪২৭)।

ফিলিস্তিনিকে ঘোষণা দিতে হবে আমরা ইজরাইল অনুরূপ রাষ্ট্র গঠন করব। যেখানে একজন ফাদার ম্যানুয়েল মিউজিলামের অস্তিত্বের নিশ্চয়তা থাকবে। মুসলমানদের দেশ পাকিস্তানকে সমর্থন করে পাকিস্তানে যোগ দিয়ে যোগেন মন্ডলের মত ফাদার ম্যানুয়েল মিউজিলাম যে জান বাঁচাতে স্বাধীন ফিলিস্তিন থেকে ইজরাইলে আশ্রয় চাইবে না- বর্তমানে মুসলমানদের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতায় কি ভাবাটা অমূলক?

আর পড়ুন…