বিকৃত ইতিহাস

বিকৃত ইতিহাস: রাম রাবণের যুদ্ধ বনাম সেকুলার ঝোল চচ্চড়ি/ দেবাশিস লাহা

বিকৃত ইতিহাস: রাম রাবণের যুদ্ধ বনাম সেকুলার ঝোল চচ্চড়ি/ দেবাশিস লাহারাম রাবণের যুদ্ধু বনাম সেকুলার ঝোল চচ্চড়ি/ দেবাশিস লাহা। রাম রাবণের যুদ্ধ নাকি আর্য অনার্যের যুদ্ধ !

একুশ শতকের মধ্যভাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া ভারতবর্ষে বসে এই ধরণের “পাণ্ডিত্য” যে কেবল হাস্যকরই নয়, বিভ্রান্তিকর, উদ্দেশ্য প্রণোদিতও বটে !

আর্য বলতে এখনও যারা একটি রেইস [race] বা বিশেষ শারীরিক আকার প্রকারযুক্ত জাতিগোষ্ঠী বোঝেন, তাঁদের জ্ঞানভাণ্ডারের শাখা প্রশাখায় ইদানীং যে কাক চিল বসাও ছেড়ে দিয়েছে, সে বলাই বাহুল্য। আর্য জাতি [Aryan Race ]   নামক এই ভুলভাল তত্ত্বটির আবির্ভাব উনিশ শতকের মধ্যভাগে ।

বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত এই ঝাল ঝোল চচ্চড়ির তত্ত্বটি বেশ বহাল তবিয়তে বর্তমান ছিল তাই নয়, অনেকেই তাঁদের ইচ্ছে মত ভাত রুটি ডুবিয়ে চুবিয়ে তারিয়ে তারিয়ে খেয়েছেন।

গোবিনো থেকে হাউস্টন স্টুয়ার্ট চ্যাম্বারলেইন, মুসোলিনি থেকে হিটলার এমনকি আমাদের বামপন্থী, সেকুলার নেতা বুদ্ধিজীবী পর্যন্ত নিজের নিজের আখের গোছানোর উদ্দেশ্যে এই আর্য জাতি তত্ত্বের “দৈববাণীটিকে” যথেচ্ছ ব্যবহার করেছেন।

এই তত্ত্বটির মূল প্রবর্তক যে ম্যাক্সমুলার সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। যদিও তিনি আর্য জাতি তত্ত্বের সঙ্গে Anthropology মেশানোর বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন। কিন্তু এমন একটি জাতি ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগের সঙ্গে নৃতত্ত্ব যে অনিবার্যভাবেই জড়িয়ে যাবে সে উন্মাদেও বুঝবে।

ছোটবেলায় ইতিহাস বইতে কি পড়েছিলেন নিশ্চয় মনে আছে। আর্য কারা ? দীর্ঘকায়, গৌরবর্ণ, টিকালো নাকযুক্ত একটি বিশেষ জনগোষ্ঠী যারা খ্রিষ্টপূর্ব [আনুমানিক] দেড় হাজার বছর আগে ভারত আক্রমণ করে এবং উত্তর ভাগটি [আর্যাবর্ত] নিজেদের দখলে নিয়ে আসে।

এঁদের প্রতিভা এমনই উচ্চমানের ছিল যে কালক্রমে যাবতীয় শিল্প সাহিত্য, বেদ উপনিষদ, ধর্ম দর্শন থেকে শুরু করে একটি বিজ্ঞানসম্মত সমাজব্যবস্থার পত্তন করে ফেলেছিলেন। বিশেষ করে বেদের মত মহাগ্রন্থগুলি যা ভারত তথা বিশ্বের এক উল্লেখযোগ্য সম্পদ।

তা এই মহান “আর্য জাতিগোষ্ঠীটি” কোথা থেকে এসেছিলেন ? সুদূর পূর্ব ইউরোপের পন্টিক কাসপিয়ান স্তেপ বা তৃণভূমি অঞ্চল !ইত্যাদি ইত্যাদি !

কি অসাধারণ তত্ত্ব বলুন তো ! ইউরোপ থেকে আগত একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীই ভারতের শিল্প সাহিত্য ধর্ম দর্শন থেকে শুরু করে যাবতীয় সভ্যতার বীজ বপন করে এই অন্ধকার পিছিয়ে পড়া আদিম ভূখন্ডটিতে আলোর সঞ্চার করেছে !

আসুন দেখে নিই এই ঝাল ঝোলের তত্ত্বটিতে কারা কারা ভাত রুটি ডোবাতে শুরু করল ! একটি নিরীহ নির্ভেজাল ভাষাগোষ্ঠীকে জাতি গোষ্ঠীর তকমা লাগিয়ে দিলে ফল যে কত মারাত্মক হতে পারে তার আভাষ পাওয়া গেল উনিশ শতকের মধ্যভাগে ।

ফরাসী ডিপ্লোম্যাট, লেখক তথা এথনোলজিস্ট [জনগোষ্ঠী বিশারদ] আর্থার ডি গোবিনো অনেক “ভেবেচিন্তে” white supremacy অর্থাৎ শ্বেতকায় প্রভুত্বের দর্শনটি জন্ম দিয়েই ফেললেন।

তাঁর কুশলী ছাত্র হাউস্টন স্টুয়ার্ট চেম্বারলেইন আর এক ডিগ্রি উপরে গিয়ে বললেন যে Aryan শব্দের অর্থ নাকি white race অর্থাৎ শাদা চামড়ার জনগোষ্ঠী। শুধু এঁরাই নাকি ইন্দো ইউরোপিয়ান ল্যাংগুয়েজ গ্রুপটির “অধীশ্বর” ছিল এবং সমগ্র পৃথিবীতে যত উন্নতি, অগ্রগতি ইত্যাদি ঘটেছে সব কিছু এঁদেরই অবদান !

আর তাই এঁরা semite অর্থাৎ ইহুদি, yellows অর্থাৎ হলুদ চামড়ার অধিকারী এবং blacks অর্থাৎ কালো চামড়ার মানুষ –ইত্যাদির চাইতে বহুগুণে উৎকৃষ্ট !

তার মানে কি দাঁড়াল ? না এই শ্বেতকায় “আর্যরাই” [অবশ্যই ইউরোপীয়] তৃতীয় বিশ্বের দেশ ভারত সহ সর্বত্র সভ্যতার আলোক পৌঁছে দিয়েছে। আহা ! কি আনন্দ ! কি গৌরব ! আমাদের ইংরেজ প্রভুদের বুকের ছাতি ফুলে ফেঁপে যে কত ইঞ্চি হয়ে গেল,ম্যাক্সমুলার জাতীয় ইউরোপিয়ান পণ্ডিতদের দিকে তাকালেই বোঝা যেত।

ব্যাপারটি যদি বুক ফুলে যাওয়া পর্যন্তই সীমিত থাকত, তেমন কিছু ক্ষতি হত না। কিন্তু যেহেতু ঝাল ঝোলের তত্ত্ব , সে তো গড়াবেই। এবার এই আর্য তত্ত্বের প্রবক্তাদের মধ্যে অনেকেই বলা শুরু করলেন এই শাদা চামড়ার মানুষগুলো আসলে নর্ডিক জার্মানিক ।

অতএব এঁরাই হল পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং উৎকৃষ্ট রেইস বা নৃগোষ্ঠী। ঝোলের প্রবাহটি এখানে থমকে গেলেও মন্দ হত না। কিন্তু তাতো হবার নয়। ততদিনে হিটলার এসে গেছেন যে !

তিনি কি আর এই সুযোগ ছাড়েন ! জার্মানিক রেইস-এর নামে এমন দরাজ সার্টিফিকেট ! অতএব যত non-Aryan আছে অর্থাৎ ইহুদী থেকে শুরু করে রোমা জিপসি সব কটাকে জার্মানি থেকে সমূলে উৎখাত করতে হবে। বাকি ইতিহাস আপনারা জানেন।

এ তো গেল ইউরোপিয়ানদের রুটি ডোবানোর গপ্প ! এদেশের রাজনীতি তথা রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী, থেকে শুরু করে আখের গোছানো সেকুলার তাঁরাও কি পিছিয়ে ছিলেন বা এখনও আছেন ? বস্তুত তাঁরাই এই তত্ত্বটিকে এদেশের ভুল ইতিহাস রচনায় কাজে লাগিয়েছেন।

শুধু তাই নয় এই তও্বটিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ঘৃণ্য রাজনৈতিক অভিসন্ধি চরিতার্থ করে চলেছেন। কারণ আর্যদের বহিরাগত প্রমাণ করতে পারলে সমগ্র ভারতীয় দর্শন, ধর্ম সাহিত্য সব কিছুকেই বহিরাগতদের সৃষ্টি বলে চালিয়ে দিতে সুবিধা হয় এবং ইসলামিক তথা মুসলিম আক্রমণকারীদের আর আলাদা করে উল্লেখ করার দরকার পড়েনা।

কারণ পুরো দেশটিই তো আক্রমণকারীদের দান ! এদেশে “আর্যরা” বিদেশি আর অনার্যরা মূলনিবাসী । তা এই আর্য কারা ? কেন জেনারেল কাস্ট [ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য] আর অনার্য কারা ? কেন শিডিউল্ড কাস্ট অর্থাৎ শুদ্র অর্থাৎ দলিতকুল ! বাহ দুর্দান্ত !

রাজনীতি করা কত সুবিধা হয়ে গেল ভাবুন তো ! Divide and rule মানেই ব্রিটিশের পেটেন্ট ! হা হা হা ! এদেশের ধান্দাবাজ পলিটিশিয়ানদের কাছে ওরা শিশু ! তারপর আর কি !

দলিতদের সঙ্গে “নিপীড়িত, অসহায়, শান্তিপ্রিয়” ইসলামিক জনগোষ্ঠীটিকে যোগ করে নিলে জলবল এবং শক্তি দুই-ই বাড়ে, অতএব শুভস্য শীঘ্রম ! কারণ এদেশের যত অনার্য “আর্যদের” অত্যাচারের ফলেই উল্লাস ধ্বনি দিতে দিতে মহান ইসলাম ধর্মটি গ্রহণ করেছিল। এবার দাও লড়িয়ে ! 

হে পণ্ডিত প্রবর বিলম্ব হইলেও কিঞ্চিৎ চক্ষু উন্মোচন তো করিতেই পারেন। আর্য যে নিছক একটি ভাষাগোষ্ঠির নাম তা ইতিমধ্যেই সুপ্রতিষ্ঠিত! এই ভাষাগুলি যারা ব্যবহার করতেন তাঁরা genetically diverse group of people who were united by shared cultural norms and language ! অর্থাৎ কি দাঁড়াল ?

এই ভাষাভাষীদের মধ্যে নিছক “গৌরবর্ণ, দীর্ঘকায়, টিকালো নাক”-এর জিন বিরাজমান নয়, কালো, বেঁটে, “কদাকার” সব রকমের মনুষ্যই এই আর্য ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ! এঁদের মধ্যে  সাংস্কৃতিক তথা ভাষাগত সাদৃশ্য ছিল মাত্র।

তাই সংস্কৃত থেকে আগত আর্য শব্দটি কোনো racial designation বা জাতিগত পরিচয় নয়, এর অর্থ হল noble / distingushed [ মহান, বিশিষ্ট] যা সম্মান জানানোর জন্যই ব্যবহৃত হত। তাই পারস্য [বর্তমান ইরান] সম্রাট দারাউস [যাকে আলেকজাণ্ডার হত্যা করেছিলেন] তাঁর সমাধি স্থলে “মহান আর্য” সম্বোধনটি উল্লিখিত থাকে, মহাভারতের রচয়িতা মহান আর্য ব্যাস মুনি এতই কৃষ্ণকায় তথা কদাকার যে তাঁর সঙ্গে সঙ্গমকালে [ক্ষেত্রজ সন্তান লাভের আশায়] অম্বিকা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেন ।

ফলশ্রুতি হিসেবে ধৃতরাষ্ট্রের জন্ম হয়। অম্বালিকা ভয়ে পাণ্ডুর [বিবর্ণ] হয়ে যান, কারণ তাঁকে বলা হয়েছিল আর যাই কর চোখ বন্ধ করা চলবে না, তবে আবার অন্ধ সন্তান জন্মাবে। তাঁর গর্ভে পাণ্ডুর জন্ম। ব্যাস মুনি যদি গৌরবর্ণ, সুদর্শন ইত্যাদি হতেন, বেচারা অম্বিকা অম্বালিকার এই দশা হত না।

আর্য ভাষাগোষ্ঠীটি আসলে ইন্দো ইউরোপিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ গ্রুপ । আসুন দেখে নেওয়া যাক এই ভাষাগোষ্ঠীটির মধ্যে কোন কোন ভাষাগুলি অন্তর্ভূক্ত। এই ভাষা পরিবারটির সুনির্দিষ্ট দশটি শাখা আছে।

বিকৃত ইতিহাস

১] আনাতোলিয়ান

২] ইন্দো ইরানীয়ান

৩] গ্রীক

৪] ইতালিক

৫] জার্মানিক

৬] আর্মেনিয়ান

৭] টকারিয়ান

৮] কেল্টিক

৯] বাল্টো শ্লাভিক ১

১০] আলবেনিয়ান

বিকৃত ইতিহাস

তবে কি দাঁড়াল ? এই ভাষাগুলি ব্যবহার করতেন বা করেন এমন যে কোনো মানুষই আর্য ! তিনি নির্দিষ্ট একটি সংস্কৃতির বাহক বা ধারক হতে পারেন, জিন অথবা জাতিগত কোনো বৈশিষ্ট দিয়ে এঁদের চিহ্নিত করা যাবেনা। জেনে রাখুন আর্যরা বহিরাগত নয়, এদেশেই বহাল তবিয়তে ছিলেন। যেমন অন্যান্য দেশেও ছিলেন। দারায়ুসের কথা আগেই বলেছি। 

তবু বিশ্বাস হচ্ছে না ! হা হা হা ! বিশ্বাস করলে যে সবই কেলো হয়ে যাবে। এমন সাজানো গোছানো ছকের রাজনীতিটি বানের জলে ভেসে যেতে এক মুহূর্তও লাগবেনা। তবু আসুন আর একটু গল্প করা যাক।

রাম রাবণের যুদ্ধ বললেন তো ! বেশ ! রাম আর্য আর রাবণ অনার্য তাই তো ? ইয়ে মানে আপনার মতে আর্য অনার্যের শারীরিক ব্যাপার স্যাপার যেমন হয় [আর্য হল গৌরবর্ণ দীর্ঘকায়, সুদর্শন ইত্যাদি, অনার্য হল কৃষ্ণকায়, খর্বকায় ইত্যাদি ইত্যাদি] সেভাবেই না হয় দেখে নেওয়া যাক।

তা রামচন্দ্র নিশ্চয় উজ্জ্বল গৌরবর্ণ ছিলেন ! হা হা হা ! একটু পড়াশোনা করে নবদূর্বাদলশ্যাম রামচন্দ্রের শারীরীক বর্ণনা একটু জেনে নিন। শ্রীকৃষ্ণই বলুন আর রামচন্দ্রই বলুন দুজনেই কৃষ্ণকায় ! আপনার আর্যজাতির সংজ্ঞার ধারের কাছে আসবেন না।

গোয়ালা পাড়ায় গোপালের দাপিয়ে বেড়ানোটিকেও যদি আর্য জাতির লম্ফ ঝম্প মনে করেন তবে কিছু বলার নেই। এবার আসি রাবণের কথায় !

তা তিনি বুঝি শুদ্র ? অনার্য মানে তো আপনারা সেটিই বোঝান ! রাক্ষস অসুর এসবই তো আপনাদের মতে নিপীড়িত অনার্য দলিত ! তা রাবণের দশটি মাথার তাৎপর্য জানা আছে তো !তাঁর আর একটি নাম দশগ্রীব। দশটি মাথার মধ্যে চারটি বেদ এবং ছটি ভিন্ন ভিন্ন শাস্ত্রের জ্ঞানকে সূচীত করে।

কিন্তু শুদ্রের তো বেদে অধিকার নেই। রাবণ কিভাবে এমন শাস্ত্রজ্ঞ বেদজ্ঞ হয়ে উঠলেন ! একজন অনার্যের এত ক্ষমতা ! রাবণের পিতা মাতার ব্যাপারে কিছু জানা আছে ! তাঁর পিতামহ ছিলেন পুলস্ত ! ইনি কে বলুন তো ? সপ্ত ঋষির অন্যতম। পুলস্তের পিতা কে বলুন তো ? স্বয়ং ব্রম্মা।

বিকৃত ইতিহাস

আর এই পুলস্তের পুত্র হলেন বিশ্রবাঃ । এই বিশ্রবাঃ দৈত্যরাজার মেয়ে পুষ্পকটার রূপে মুগ্ধ হয়ে [কি কাণ্ড দৈত্যের মেয়ে তো কদাকার হওয়ার কথা, অনার্য, শুদ্র !

কি ছকে মিলছে না তো!] তাঁর সঙ্গে মিলিত হন। ফলশ্রুতি হিসেবে দশ পুত্রের সমান ক্ষমতাসম্পন্ন রাবণের জন্ম হয়। ইনি আবার শিবের সবচেয়ে বড় ভক্ত ছিলেন। শুধু তাই নয় ব্রহ্মজ্ঞানী। ব্রহ্মার বরে ইনি মানুষ ছাড়া কারও হাতেই মরতেন না। তাই মানব রূপধারী রামচন্দ্রের হাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।

এবার বলুন রাবণ কি ? আর্য না অনার্য ? পিতামহ পুলস্ত, পিতা বিশ্রবাঃ –এঁরা নিশ্চয় আপনার মতে আর্য ! আর দৈত্যকন্যা পুষ্পকটা অনার্য ! তবে আপনারই মতে আর্য অনার্যের মিলনেই রাবণের জন্ম ! কিছু বুঝলেন ? হ্যাঁ এই হল বহুত্ত্ববাদ ! ওরা আমরার দর্শন নয় ! শাদা কালোর দর্শন নয়, বুর্জোয়া প্রলেতারিয়েতের দর্শনও নয়— এক মহামিলিনের বহুত্ববাদ ! ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন।

রাময়ণে আর কে অনার্য আছে ? ইয়ে মানে আপনাদের মতে ! কেন বানর, হনুমান এইসব ! শয়তান রামচন্দ্র বানর আর রাক্ষসদের মধ্যে ভেদ নীতি প্রয়োগ করে যুদ্ধজয় করেছিলেন। “অনার্য” রাবণের বিরুদ্ধে আর এক “অনার্য, শুদ্র” সুগ্রীবকে খেপিয়ে তুলে –ছি ছি !

আচ্ছা দাদা, মহাবীর বালীর পিতা কে জানা আছে ? স্বয়ং ইন্দ্র ! দেবরাজ ইন্দ কি অনার্য, শুদ্র এই সব ছিলেন ? আর সুগ্রীবের বাবা ? মহান সূর্যদেব ! কি চমকে উঠলেন তো ! দেখুন আবার সূর্য দেবতাটিকে অনার্য বলে বসবেন না। তবে কি দাঁড়াল !

আবার সেই বহুত্ববাদ ! হিন্দু শাস্ত্র আপনার শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্ব আর সারপ্লাস ভ্যালুর মত জোলো নয়, অনেক অনেক গভীর। অসংখ্য রূপক আর অনুষঙ্গের সমাহার। উপর উপর লাফালে চলে না। গভীরে ঢুকতে হয়।

আপনাদের মুখেই শুনেছি অসুর হল অনার্য ! মানে আপনাদের আর্য অনার্যের সংজ্ঞা অনুযায়ী তাই দাঁড়ায়। আচ্ছা এই অসুরদের গুরু কে বলুন তো ! শুক্রাচার্য ! সুর অসুর নির্বিশেষে গভীর শ্রদ্ধার পাত্র। কে এই শুক্রাচার্য !

একটি পুরাণ অনুসারে তিনি ভৃগুর পুত্র। এবং সপ্ত ঋষির অন্যতম। শুক্র গ্রহটি তাঁর নামেই। তিনিই দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য হিসেবে পরিচিত। এমন ঘোরতর আরর হয়েও তিনি অচ্ছুৎ শুদ্র অসুরদের গুরু হয়ে গেলেন  এবং নিজের দলের লোক দেবরাজ ইন্দ্রকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য অসুরদের জ্ঞান তথা বল দান করে অমিত শক্তিশালী করে তুললেন !

বিকৃত ইতিহাস

কি, সব গুলিয়ে যাচ্ছে না ? হ্যাঁ বহুত্ববাদ ব্যাপারটিই তাই –সব গুলিয়ে দেয়। সেই তুলনায় ওরা আমরা, মুমিন কাফের, প্রলেতারিয়েত বুর্জোয়া এসব সরল শ্রেণিবিন্যাস বুঝে ফেলা অনেক সহজ ! ভাবুন ভাবা প্র্যাকটিস করুন।

সদ্য পঞ্চায়েত গেল। তাই পঞ্চ সতী দিয়েই আলোচনা শেষ করব। যদিও সতী শব্দটির ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনার পরিসর এখানে নেই। আর এই একুশ শতকে তাকে আঁকড়ে থাকাও হাস্যকর। আমি কেবল আর্য অনার্য নামক বিভ্রান্তিকর প্রতীতিটিকে সামনে আনার জন্যই এর উল্লেখ করছি।

সতী শব্দটির মাধ্যমে সে যুগে নারীদের একটি তথাকথিত সম্মানজনক আসন দেওয়া হত। এই সব সতী নারীদের নাম এখনও অনেকের মুখে মুখে ঘোরে।

কিন্তু সেই সম্মান দেওয়ার ব্যাপারে কি কোনো ভেদাভেদ করা হয়েছিল ? রামায়ণেই আমরা বেশ কয়েকজন সতীর উল্লেখ পাই। আর পঞ্চ সতী বলতে যাদের উল্লেখ করা হয়েছে –তারা, মন্দোদরী, অহল্যা, দ্রৌপদী, কুন্তী। মহাভারত থেকে নেওয়া হয়েছে দ্রৌপদী এবং কুন্তীকে।

রামায়ণ থেকে অহল্যা, তারা এবং মন্দোদরীকে। বাকিদের ব্যাপারে না হয় বলাই যায় তাঁরা আর্য [আপনার সংজ্ঞা অনুযায়ী] ।কিন্তু তারা তো বাঁদরের বউ। প্রথমে বালির, পরে সুগ্রীবের। মানে ঘোরতর অনার্য !আর মন্দোদরী ? তিনি তো আবার রাক্ষসরাজ রাবণের সহধর্মিণী।

মানে ঘোরতর অনার্যা !তা এইসব ‘অখাদ্য কুখাদ্য” অনার্যা বানরী, রাক্ষসীদের সাথে মহান আর্যা নারীদের এক আসনে বসিয়ে এমন সম্মান দেওয়া কেন ? হা হা হা ! বহুত্ববাদের পোলাও দাদা ! গেলা মানেই হজম করা নয়। রামায়ণ নাকি আর্য অনার্যের যুদ্ধ ! ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন !

এই ইতিহসাটি পড়ুন

বখতিয়ারের কল্পিত বাংলা বিজয় ও লক্ষণ সেনের খিড়কি দিয়ে পালানো কতটা সত্য? বাংলা বিজয়ী বখতিয়ারের ঘোড়া আর গর্বিত বাঙালি মুসলমান। আসুন আসল সত্য জানার চেস্টা করি…

https://cutt.ly/4IuMMrq

বিকৃত ইতিহাস, বিকৃত ইতিহাস, বিকৃত ইতিহাস, বিকৃত ইতিহাস, বিকৃত ইতিহাস, বিকৃত ইতিহাস, বিকৃত ইতিহাস, বিকৃত ইতিহাস, বিকৃত ইতিহাস।

আর পড়ুন…