ইসলাম-ত্যাগ

ইসলাম ত্যাগ করে হিন্দু, ইহুদী, খ্রিস্টান, অজ্ঞেয়বাদী, নাস্তিক, নতুন ধর্ম প্রবর্তক হবার ইতিহাস

ইসলাম ত্যাগ করে হিন্দু, ইহুদী, খ্রিস্টান, অজ্ঞেয়বাদী, নাস্তিক, নতুন ধর্ম প্রবর্তক হবার ইতিহাস। যারা বলেন মিথ্যার কোন শক্তি নেই, সত্যের জয় হবেই হবে- তারা বোকা ও সরল মানুষ।

পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার ধর্ম এখনো টিকে আছে তা তো বেশির ভাগই মিথ্যের উপরই। পৃথিবীর প্রধান চারটি ধর্মের কোটি কোটি ধর্ম এখনো ভক্তদের মধ্যে টিকে আছে চরম মিথ্যার উপর ভর করে।

এর মধ্যে ইসলাম হচ্ছে অন্যতম ধর্ম যার প্রচার বা তাবলীগ চলে পুরোটাই মিথ্যার উপর নির্ভর করে। যেমন নিউজিল্যান্ডে হামলার পর থেকে একটা নিউজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে ‘নিউজিল্যান্ডে কয়েক হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে’। এরকম নিউজ তৈরি করে ইসলাম প্রচারকরা ইসলামের একটা প্রাদুর্ভাব ছড়াতে চান যাতে এই সুযোগে দুই-একটা অমুসলিমকে ইসলামের দিকে টেনে আনা যায়।

এতে যে মাঝে মাঝে কাজ দেয় না তা নয়। তবে যে সত্যটি ইসলামিস্টরা সব সময় আড়াল করে রাখে, শুধু তারা নয়, মুসলিম দেশের তথাকথিত উদার বা প্রগতিশীল দাবী করা মিডিয়াগুলো পর্যন্ত সত্যকে আড়াল করে থাকে- তা হচ্ছে ইসলাম ত্যাগীদের কথা।

বিখ্যাত কিছু মানুষের ইসলাম ত্যাগের কথা জানাই। সাধারণত মুসলমানরা দাবী করে অন্য ধর্ম ত্যাগ করে সবাই ইসলাম গ্রহণ করলেও কোন মুসলমান ইসলাম ত্যাগ করে হিন্দু ইহুদী খ্রিস্টান বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করার কোন নজির নেই। এই ডাঁহা মিথ্যাটি বহুল প্রচারিত। আসুন দেখি কিছু বিখ্যাত মানুষের ইসলাম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণের কিছু ইতিহাস। 

শ্রীলংকান ক্রিকেটার তিলকরত্ন দিলশান ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছেন। বিবিসি স্পোর্টস শ্রীলংকান প্রোফাইল সাইট থেকে এই তথ্যটি চেক করে নিতে পারেন। ভারতীয় অভিনেত্রী নার্গিস অভিনেতা সুনীল দত্তকে বিয়ে করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এদিকে বলা প্রয়োজন অভিনেতা ধর্মেন্দ্র ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন হেমামালিনিকে বিয়ে করার জন্য কারণ হিন্দু ধর্মে তখন তালাকের নিয়ম ভারতীয় আইনে ছিলো না। 

হেমামালিনিকে বিয়ে করার জন্য ধর্মেন্দ্র নামমাত্র ইসলাম গ্রহণ করে তার আগের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে হেমামালিনিকে বিয়ে করেছিলেন। বলাই বাহুল্য ধর্মেন্দ্র কোন ধার্মীক পুরুষ কখনই ছিলেন না। তার ইসলাম গ্রহণ ছিলো কেবলই আইনী সুবিধা গ্রহণের উছিলা।

ধর্মেন্দ্র ও তার পরিবার কেউই ইসলাম ধর্ম পালন করেন না কারণ তারা ফের হিন্দুই থেকে গিয়েছিলেন। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্র মোহন বিয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে আবার হিন্দু ধর্মে ফিরে আসেন।

ভারতীয় সেতার বাদক অন্নপূর্ণা দেবী জন্মেসূত্রে যার নাম ছিলো রুশনারা খান যিনি ইসলাম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। হরিলাল মোহনদাস গান্ধি যিনি মহাত্মা গান্ধির পুত্র, তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম নিয়েছিলেন আবদুল্লাহ গান্ধি। কিন্তু তিনি ইসলাম ত্যাগ করে আবার হিন্দু ধর্মে ফিরে আসেনহরিদাস ঠাকুর যিনি প্রথম জীবনে মুসলিম ছিলেন এবং পরে একজন হিন্দু সন্নাসী হয়ে যান। তিনি শ্রী চৈতন্যতদেবের সমসাময়িক। 

হিন্দু মৌলবাদীরা হরিদাস ঠাকুরকে জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে দেয়নি তার পূর্বের মুসলিম পরিচয়ের কারণে! শ্রী চৈতন্যদেব তার মৃতদেহটি গ্রহণ করেছিলেন এবং পুরীর সমুদ্র সৈকতে সমাধিস্থ করেছিলেন। মির্জা হুসাইন আলী যিনি ‘বাহাউল্লাহ’ নাম গ্রহণ করে বাহাই নামের নতুন এক ধর্ম প্রচলণ করেন।

তার মাধ্যমে মাধ্যপাচ্যের হাজার হাজার মানুষ ইসলাম ত্যাগ করে বাহাই ধর্ম গ্রহণ করেছে। কিন্তু মুসলিমদের কোপাণলে পড়ার ভয়ে বাহাইরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে বাহাই ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা ৬০ লক্ষ। মির্জা হুসাইন আলী ওরফে বাহাউল্লাহ ১৮১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। 

মিশর, ইরান, আলজারিয়াসহ মুসলিম বিশ্বের নানা দিক থেকে বিখ্যাত কিছু ব্যক্তি যেমন মির্জা আবুল-ফাদ্ল, মিশকিন-কালাম, নাবিল -ই-আযম, হাজি আখুন্দ, মির্জা মাহমুদ, আব্দুল করিম আমিন খাজা- যারা ইসলাম ত্যাগ করে বাহাই ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। নামের তালিকা দীর্ঘ বলে সবটা দেয়া সম্ভব হলো না। 

যেমন ইসলাম ত্যাগ করে স্বঘোষিত নাস্তিক বিখ্যাত ব্যক্তিদের তালিকা অনেক দীর্ঘ তাই সুপরিচিত কয়েকজনের তালিকা দিচ্ছি- ভারতীয় গীতিকার জাভেদ আখতার, আব্দুল্লাহ আল কাসেমী(সৌদি বংশোদ্ভুত মিশরীয় নাগরিক),আলিয়া মাগদা এলমাহদি  (মিশরীয় ইন্টারনেট কর্মী এবং নারী অধিকারমুলক আইনিজীবি), আহমেদ হারকান (মিশরীয় মানবাধিকার কর্মী এবং স্বঘোষিত নাস্তিক), হামেদ আবদেল সামাদ

 (জার্মান-মিশরীয় রাজনীতিমুলক বিজ্ঞানী, ইতিহাস বেত্তা, গ্রন্থাকার), আয়ান হিরসি আলি ( সোমালীয়-বংশোদ্ভুত ডাচ নারীবাদি, লেখক এবং রাজনীতিবিদ),কাচেম এল ঘাজালি  (মরক্কো- সুইস লেখক এবং আন্দোলনকর্মী), ফাওজিয়া ইলিয়াস (Atheist & Agnostic Alliance Pakistan এর প্রতিষ্ঠাতা), আয়াজ নিজামি (পাকিস্তানী ইসলামিক স্কলার), মুহম্মদ টিপু সুলতান (বাংলাদেশী মমানবাধিকার কর্মী এবং লেখক)।

ইসলাম ত্যাগ করে সংশয়বাদী, কেউ কেউ নিজেরাই অন্য ধর্মীয় নেতা হয়েছেন তাদের দীর্ঘ তালিকা থেকে বিখ্যাত কয়েকজন- সীমা মুস্তফা (ভারতীয় সাংবাদিক), ওয়াফা সুলতান (সিরিয়ান-বংশোদ্ভুত মার্কিন মনোচিকিৎসক), ইবনে ওয়ারাক ( ব্রিটিশ পাকিস্তানী), মিনা আহাদি (ইরানিয়ান বংশোদ্ভুত শান্তিবাদী, স্বধর্মত্যাগী প্রতিষ্ঠান “Zentralrat der Ex-Muslime”  সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা), ড.. ইউনুস শাইখ(পাকিস্তানী মেডিক্যাল ডাক্তার, মানবাধিকার কর্মী)। সবগুলো তথ্যই আপনারা ইন্টারনেটে সার্চ করে চেক করে নিতে পারেন। 

যেসব মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে আবার নিজের ধর্মে ফিরে গিয়েছেন তারা সকলেই জানিয়েছেন ইসলাম সম্পর্কে তাদের যেরকম জানিয়েছিলো পরে তারা সেরকম কিছুর মিল পাননি ইসলামে প্রবেশ করে। অর্থ্যাৎ তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছিলো। যাদের হাত ধরে তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তারাই মিথ্যাচারটা করেছিলো। 

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে মুসলিমদের সমাবেশে যে হাদিসটি পাঠ করেন সেটির অর্থও তাকে ভুল বুঝানো হয়েছে। যে বা যারা জেসিন্ডাকে হাদিসটি দিয়েছেন পাঠ করতে তারা এই হাদিসটিকে মানবজাতির ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বুঝিয়েছেন। কিন্তু এই হাদিসে একটি বর্ণবাদী জাতীয়তাবাদের ঐক্যের ডাকই কেবল বলা হয়েছে। জেসিন্ডা যে হাদিসটি পাঠ করেন, ‘পারস্পরিক উদারতা, সমবেদনা এবং সহানুভূতিতে বিশ্বাসীরা একটি শরীরের মতো। 

যখন শরীরের কোন একটি অংশ ব্যথা পায় তখন পুরো শরীরই সেই ব্যথা অনুভব করতে পারে’। এখানে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি হচ্ছে “বিশ্বাসীরা”। এই বিশ্বাসী হচ্ছে যারা নবী মুহাম্মদকে নবী বলে স্বীকার করেন, তিনি ও তার আল্লাহ যা হারাম ও হালাল করেছেন তা বিনাবাক্যে মেনে নেয় এমন বিশ্বাসীরা (মুসলিমরা) একটি শরীরের মত। মুহাম্মদ তার দলের নানা গোত্রের মধ্যে চাপা বিদ্রোহ, ঈর্ষা বিষয়ে জানতেন। আনসার ও মুহাজিবদের মধ্যে কলহ গোপন কিছু ছিলো না। 

পরবর্তীকালে কুরাইশদের প্রধান্য কলহকে আরো বৃদ্ধি করে তুলে। সেই বিভেদ ও কলহ দূর করতে ‘বিশ্বাসীদের’ একটি শরীরের সঙ্গে তুলনা করে তারা যেন একে অপরকে আঘাত না করে তার নছিহত করা হয়েছে এই হাদিসে। অমুসলিমদের স্বাভাবিকভাবেই ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকবে। তাই তাদের সহজেই বোকা বানানো যায়। 

এমনকি এসব ভুলভাল বুঝিয়ে তাদের ইসলামের ছায়াতলে আনাও খুব সহজ! কারণ মিথ্যার অনেক শক্তি। কয়েক হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার মিথ্যা রাজ্যত্ব করে চলেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে ধূর্ত মিথ্যাটি নানা রকম মিথ্যাচার করে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে নিজের রঙ খনে খনে বদল করে ফেলে।